আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাম্বা কাহিনী (রম্য)

বুইড়া হওয়ার আগে কখনো অনুধাবন করিতে পারি নাই যে সৃষ্টিকর্তা ঈদের আনন্দ শুধুমাত্র শিশুদের লাগিয়াই বরাদ্দ করিয়া রাখিয়াছেন। ঈদ আসে, আবার চলিয়া যায়। কিন্তু সেই আনন্দের শিহরন আর অনুভূত হয়না। আবারো আসিয়াছে ঈদুল আযহা। অর্থাৎ হাম্বা ঈদ।

এই ঈদের নামটা শুনিলেই যেন Bullshit এর গন্ধ আসিয়া নাকে আঘাত হানে। আর মনের আয়নায় ভাসিয়া উঠে মায়াবী চোখের অধিকারী সুদর্শন গরুর ভোলাভালা মুখচ্ছবি। গরুর চক্ষু দুইটা কিন্তু আসলেই মায়াবী! একবার নাকি এক রেস্টুরেন্টে প্রেমিক তাঁর প্রেমিকার চোখ দুটো কে গরুর চোখের সাথে তুলনা করিয়া তাহার সৌন্দর্য বর্ণনা করিতে থাকে। ফলসরূপ, প্রেমিকা স্যুপের ভাটি দিয়া তাহার মাথায় সজোরে আঘাত হানিয়া সেই স্থান ত্যাগ করিয়া চলিয়া যায়। প্রেমিক বেচারা বুঝিয়াই উঠিতে পারেনা যে এত মায়াবী চোখের সাথে তাহার চোখের তুলনা করাতে কি এমন ক্ষতি হইয়াছে! যাহা হোক, বুড়োরা ঈদের আনন্দ হইতে পুরোপুরি বঞ্চিত হয় বলাটা বোধয় একেবারে সমীচীন নয়।

কিছুটা আনন্দ উহারা উপভোগ করিয়া থাকে, তবে তাহা নিজেদের গুনে নয়। বরং শিশুদের গুনে। ওদের অকৃত্রিম বিশুদ্ধ আনন্দ দেখিয়া নিজেদের শৈশব স্মৃতি কে রোমন্থন করিয়া কিঞ্চিত আনন্দ লুটিবার সুযোগ তাহারা ভুলেও হাতছাড়া করেনা। আমিও তাহাই করি। ঘরে শিশু বলিতে আছে দুটো ভাতিজা।

ছোটটা তো ঘো ধরিয়া বসিয়া আছে যে বাজার থেকে ফুল দিয়ে সাজানো বড় সাইজের তাজা গরু না আনিলে তাহার চলিবে না। প্রেস্টিজের ব্যাপার। ভাবখানা এমন যেন বাজার থেকে সাজানো সুন্দর একখান বউ কিনিয়া আনিবে যাহা দর্শাইতে জনসমাগম হইবে, আর সুন্দর না হইলে তাহার জাত যাইবে! তাদের এই ছোট ছোট অনুভূতি গুলো অনুভব করিয়া একটু শিহরিত হইবার চেষ্টায় লিপ্ত হই। ঈদকে ঘিরিয়া এই শিশুদিগের প্রতিটা শিরা উপশিরায় ও রন্দ্রে রন্দ্রে আনন্দ প্রবাহিত হইতেছে। ভাবিতেই ভালো লাগে! ছোট বেলায় ঈদের পাঁচ- ছয়দিন আগে থাকিয়াই গরু বাজার পরিদর্শন করিতে থাকিতাম।

গরুর লাথি খাইয়া ও Bullshit এ পা পিছলাইয়া পড়িয়া গেলেও সন্ধ্যার আগে বাজার ছাড়িতাম না। বাজারের বিশেষ জায়গায় বিশাল সাইজের গরু গুলো রাখা হইত। মায়ের কাছ থেকে নেয়া দশ টাকা থেকে দুই টাকার ঝালমুড়ি কিনিয়া লইয়া খাইতে খাইতে বিশাল আকৃতির এই গরু গুলোকে দর্শন করিতাম। ওদের সুবিশাল মাংসল পাছা গুলোর দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত চাহিয়া থাকিতাম। আর ভাবিতাম, এত বড় গরু কে বা কাহারা কিনিয়া থাকে? কখনোইতো কাউকে কিনিতে দেখিলাম না! লেজ ধরিয়া নাড়াইতে ইচ্ছা করে কিন্তু সাহসে কুলায় না।

যদি লাথি মারে, হাত থাকিয়া ঝালমুড়ি পড়িয়া যাইবে। আমাদের ঘরে পুরুষমানুষ না থাকায় ছোট হইলেও আমাকেই পাশের ঘরের চাঁচাদের সাথে গরু কিনিতে যাইতে হইত। নাচিতে নাচিতে চলিয়া যাইতাম। চাঁচারা গরু দেখাইয়া পছন্দ হইয়াছে কিনা জানিতে চাহিলে নিজেকে খুব মানি লোক মনে হইত। অবশেষে ছোটখাটো মাংসল পাছাওয়ালা গরু কিনিয়া লইয়া দড়ি ধরিয়া বাড়ির পথ ধরিতাম।

রাস্তায় গরু মাঝে মাঝে দৌড় দিলে দড়ি ধরিয়া আমাকে হেছরাইতে হইত! বাড়ি আসিয়া বিশাল একখান ভাব নিয়া গরু দেখাইতাম, যেন আমি একলাই কিনিয়া আনিয়াছি! কোন একবার ঈদের আগের দিন গরু কিনিতে গিয়া সারা দিন খুঁজিয়াও পছন্দ করা গেলনা। সেই বাজারেই আমার জ্যাঠামশাই নিজের একখান গরু বিক্রি করিতে গিয়াছিল। সেও সারাদিনে সুলভ মূল্যে বিক্রি করিতে পারেনাই। শেষে তাহার গরু খানিই আমাদের কিনিতে হইল। এই ব্যাপারটায় আমার মুখ মলিন হইয়া গেল! এই গরু তো আগে থেকেই দেখিয়া আসিতেছি।

এইটারে বাড়িতে নিয়া গেলে কেউই দেখিতে আসবেনা। কারন এটা আমার পাশের ঘরের গরু! যদিও গরুটা মোটা তাজাই ছিল। সেই বারের আনন্দটাই যেন মাটি হয়ে গেল! শিশুকালের এইসব স্মৃতি বর্ণনা করিয়া শেষ করা যাইবে না। আবারো ঈদ আসিয়াছে, বাড়ি যাইব। ভাতিজারাই গরু কিনিয়া আনিবে! তাহাদের আনন্দ দেখিয়া হয়তো শিশুকালটা আবারো ফিরিয়া পাইব, আবারো শিহরিত হইব! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.