দেবী দুর্গা মহাদেবের স্ত্রী৷ মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গচ্যুত দেবতারা ব্রহ্মার শরণ নিলে ব্রহ্মা, শিব ও অন্য সকলকে নিয়ে বিষ্ণু কাছে আসেন৷ তাঁদের দুর্দশার কথা জানিয়ে তাঁরা ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা করেন, এর থেকে মুক্তির পথ কী? স্বয়ং ব্রহ্মার দেওয়া বরেই মহিষাসুরকে বধ করতে পারবেনা কোনও পুরুষ৷ বিষ্ণু এর উত্তরে বলেন, এই পরাক্রমশালী অসুরকে বধ করতে হলে নিজের নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ে নিজ নিজ তেজের কাছে প্রার্থনা করতে হবে যে তাঁদের মিলিত তেজ থেকে যেন এক নারীমূর্তির আবির্ভাব হয়৷ বিষ্ণুর কথা মতো কাজ শুরু করেন দেবতারা৷ দেবতাদের দেহ থেকে তেজ নির্গত হয়ে সৃষ্টি হয় এক অপরূপা দেবীর৷ যে দেবতাদের দেহ থেকে তেজ নির্গত হয়েছিল, তার মধ্যে ছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মা, শিব, বিষ্ণু ও ইন্দ্র৷ দেবতারা তাঁদের নিজেদের অস্ত্র এই দেবীকে দান করেন৷ পুরুষদের 'অবাধ্য' মহিষাসুরকে তিন বার বধ করেন এই দেবী৷ প্রথম বার অষ্টদশভূজা উগ্রচণ্ডা রূপে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার দশভূজা দুর্গারূপে৷ রাতে স্বপ্নে ভদ্রকালীর মূর্তি দেখে মহিষাসুর বলেন, "আপনার হাতে মৃত্যু হতে আমার কোনও দুঃখ নেই৷ কিন্তু আমিও যেন আপনার সঙ্গে পুজিত হই, তারই ব্যবস্থা করুন৷" দেবীর উত্তর, "উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী ও দুর্গা—এই তিন মূর্তিতে তুমি সব সময় আমার পদতলে থেকে দেবতা, মানুষ ও রাক্ষসদের পূজ্য হবে৷" (দেবী ভাগবত, মার্কণ্ডেয় চণ্ডী ও কালিকা-পুরাণ) সত্যযুগে সুরথ রাজা ও সমাধি বৈশ্য দুর্গা মূর্তি তৈরি করে তিন বছর পুজো করেছিলেন, ত্রেতাযুগে রাবণ চৈত্রমাসে এঁর পুজো (বাসন্তী পুজো) করতেন৷ রাবণ বধের জন্য রামচন্দ্র এই দেবীর শারদীয়া পুজো করেন৷ বাল্মীকি রামায়ণে এর উল্লেখ না থাকলেও পুরাণে এর উল্লেখ আছে৷ বৈদিক সাহিত্যেও দুর্গার উল্লেখ রয়েছে৷ তন্ত্র ও পুরাণে বিশেষ আলোচনা বিধি ও পূজাবিধি আছে৷ দুর্গা, মহিষাসুরমর্দিনী, শুলিনী, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা—ইত্যাদি বহু নামে এই দেবীর পুজো হয়৷ তন্ত্রে তিনি চতুর্ভূজা, সিংহস্থা, মরকতবর্ণা৷ পুরাণ অনুসারে বাংলায় অতসী পুষ্পবর্ণা ইত্যাদি৷ আশ্বিনে শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্রে শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্রে বাসন্তী নামে এই দেবীর পুজো হয়৷ প্রথম দিকে এই পুজো ছিল একান্তই ঘরোয়া৷ ইতিহাস বলে, নদীয়ার মহারাজা কৃষচন্দ্রের উত্তরসুরী ভবানন্দ ১৬০৬ সালে প্রথম দুর্গাপুজো করেন৷ সেই সময় পুজো হত রাজবাড়ির অভিজাত ঠাকুরদালানে, রাজার ব্যক্তিগত উদ্যোগে৷ অত্যন্ত আড়ম্বড়ে পুজো হলেও তা দেখার দরজা সাধারণ মানুষদের জন্য খোলা থাকত না৷ হুগলীর গুপ্তিপাড়ার এক ধনী গৃহস্থের বাড়ির পুজোয় অংশ নিতে না পারার জন্য বারো জন মানুষ ক্রুদ্ধ হয়ে সেখান থেকে বারিয়ে আসেন এবং ঠিক করেন, তাঁরা নিজেরাই মিলেমিশে চাঁদা তুলে নতুন করে পুজো করবেন৷ গৃহস্থের দালান থেকে বেরিয়ে যেহেতু বারো জনের উদ্যোগে দুর্গাপুজোর এই নতুন ধরনের সূচনা, তাই এর নাম হয় 'বারোয়ারি'(বারো-ইয়ারি)৷ কয়েক জন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বারোয়ারি এই পুজো প্রথম হয়েছিল ১৭৬১ সালে৷ তবে এই নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে বিতর্ক রয়েছে৷ তবে ক্রমশ বারোয়ারি পুজো রূপ নিল সর্বজনীন উৎসবের৷ ১৯১০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কলকাতায় প্রথম সর্বজনীন দুর্গোৎসব করে৷ ( COPY PASTE )
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।