চোরাপথে অবৈধভাবে আনা হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর গ্লুটাথিওন ইনজেকশন। এই ইনজেকশন ব্যবহার করা হচ্ছে ত্বক ফর্সা করার জন্য। আর ত্বকের চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ দেশের কিছু অতি মুনাফালোভী চিকিৎসক ও কথিত এসথেশিয়ানরা তরুণী-মহিলাদের ত্বক ফর্সা করার জন্য অতি উচ্চমূল্যে ব্যবহার করছে এই ইনজেকশন। আর ব্যবহারকারীদের শতকরা ৯৯ ভাগই মহিলা। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ফুড এ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তারা কখনও এই এন্টি-অক্সিডেন্ট ইনজেকশনটি ত্বক ফর্সা করার ওষুধ হিসেবে অনুমোদন দেয়নি।
এফডিএ উল্লেখ করেছে ত্বক ফর্সা করার ক্ষেত্রে গ্লুটাথিওন ইনজেকশন মোটেও নিরাপদ নয় এবং এই ইনজেকশন ব্যবহারকারীদের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই ইনজেকশনের ত্বক ফর্সা করার কোন ক্ষমতা নেই। এই ইনজেকশন গ্রহীতাদের ত্বক সাদা হয়ে যাওয়া অন্যতম প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আর ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা যত বেশি হবে স্কিন তত সাদা হবে।
জেনে-শুনে কোন রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা এক ধরনের অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ডার্মাটোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক একিউএম সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ত্বকের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা জটিলতা হতে পারে এই ইনজেকশন ব্যবহারকারীদের। লিভার, কিডনির সমস্যা, ড্রাগ রিঅ্যাকশন, স্টিভেনজনসন সিনড্রোম ও টক্সিক এপিডার্মাল নেকরোলাইসিসসহ নানা মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। তাই কোন অবস্থাতেই ডার্মাটোলজিস্ট অথবা এসথেটেশিয়ানদের কোন ভাবেই এই ইনজেকশন ব্যবহার করা উচিত নয়। ড্রাগ প্রশাসন অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, গ্লুটাথিওন অবশ্যই ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ব্যতীত আমদানি ও ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তারা কখনও ইনজেকশন, ভিটামিন বা কোন ওষুধ আমদানির অনুমোদন বা সনদপত্র দেন না। তাহলে এ ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ কিভাবে আনা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হাতে গোনা কয়েকটি লেজার ও এসথেটিক সেন্টার, বিউটি পারলার ও কসমেটিক সেন্টারে গ্লুটাথিওন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। ঢাকার একটি বহুল সমাদৃত লেজার সেন্টারের কর্ণধার অত্যন্ত জোরালোভাবে বললেন, গ্লুটাথিওন ইনজেকশন এক ধরনের কসমেটিক। এটা কোন ড্রাগ নয়।
তাই তিনি ব্যবহার করে থাকেন। তিনি বলেন, যদি এটা ড্রাগ হবে তবে সরকার বা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ধরছে না কেন। অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে গ্লুটাথিওন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। আর এই ইনজেকশন ব্যবহারের ফলে স্কিন সাদা হয়ে যাওয়া ছাড়াও চুলপড়া, নখে সাদা স্পট সৃষ্টি হওয়া, হাতে পায়ে অবশ ভাব, হতাশা, উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। এছাড়া তীব্র এলার্জি, ত্বকে প্রদাহ, ফোস্কা পড়ে কালো হয়ে যাওয়া, কিডনি ও লিভারের সমস্যাসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া কিডনি ও লিভার সমস্যা, গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে অ্যাজমা রোগীরা এই ক্ষতিকর ইনজেকশন ব্যবহার করলে মারাত্মক জটিলতা হতে পারে।
এদিকে, এক শ্রেণীর লাগেজ পার্টির মাধ্যমে ক্ষতিকর গ্লুটাথিওন ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ চোরাপথে আসছে। এমনকি এয়ারপোর্ট থেকে বিশেষভাবে ছাড়িয়ে নিচ্ছে এসব ক্ষতিকর ইনজেকশনসহ অন্যান্য ড্রাগস। এই চক্রটিই বিভিন্ন লেজার সেন্টার, স্কিন সেন্টার, এসথেটিক সেন্টারে সরবরাহ করছে। আর এ ধরনের ইনজেকশনের ত্বক ফর্সা করতে ব্যয় করতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এসব খোদ রাজধানীতে অবাধে চললেও দেখার কেউ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ড্রাগ প্রশাসনেরও এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।