আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্যালিলিও গ্যালিলি

ওই সময় দুটো বাঁকানো কাঁচ বা লেন্স দিয়ে দূরবীন তৈরি করা হতো। দুই লেন্স বসানো হতো একটা ধাতব টিউবের ভেতর, বাঁকানো কাঁচ বা লেন্স মোটামুটি একটা কাজই করে। তা হচ্ছে আলোকে গতিপথে বাঁকিয়ে দেয়া। দূরবীনের লেন্স এমন ভাবে বসানো হয় যে, তা শুধু আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। শুধু তাই নয় এটি বস্তুর প্রতিবিম্ব বড়ও করে তোলে।

ফলে দূরের বস্তুকে একদম কাছের মনে হয়। মহান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও জন্মেছিলেন ১৫৬৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। আর মৃত্যু-৮ জানুয়ারি ১৬৪২ খ্রি। এই তারিখের উল্লেখ রয়েছে 'দি নিউ এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা' থেকে। তার বাসস্থান ছিল- ইতালির তুসকানের গ্র্যান্ডডাচিতে।

১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের শেষভাগে পাদুয়া পরিত্যাগের কিছু পূর্বে গ্যালিলিও শনির বলয় আবিষ্কার করেন। “এই বিশ্ব, এই জগৎ, এই পৃথিবী আর আগের অবস্থায় নেই। প্রাচীনযুগের গন্ডি পেরিয়ে এই পৃথিবী এগিয়ে গেছে আরো অনেক....অনেক দূর! ” ১৬১০ সালের জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখ। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও তার তৈরি দূরবীন দিয়ে চোখ রাখলেন রাতের আকাশের সবচে উজ্জ্বল বস্তু, বৃহস্পতি গ্রহের দিকে। অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে বন্দীদশাকালে তিনি গতির নিয়ামক সম্পর্কিত সূত্রাবলী শীর্ষক গ্রন্থ রচনা করেন।

নানা দুঃখ কষ্ট আর অভাব অনটনে এই মহান বিজ্ঞানী ও মহামানব জ্বরে ধুকে ধুকে গৃহবন্দীর নয় বছরের মাথায় মৃত্যুবরণ করেন। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মতে আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেনি। গ্যালিলিও ছিলেন বাবা মা'র সাত সন্তানের (কারও কারও মতে ৬) মধ্যে সবার বড়। গ্যালিলিও এবং মারিনা গ্যামবা তিন সন্তানের জন্ম দেন, কিন্তু তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। পৃথিবীর বড় বড় আবিষ্কারগুলোর বেশির ভাগেরই প্রায় একই ইতিহাস—হঠাত, হঠাত, দৈববানীর মত উদয় হয় সাধকের মনে—হয়ত বাগানে, গোসল করতে গিয়ে, কিম্বা খেলার মাঠে।

এমনকি টয়লেটে বসেও মহান দিব্যদৃষ্টি লাভ করেছেন অনেকে, যেমন মার্টিন লুথার। বৃহস্পতির চারটি চাঁদের নাম হলো, আয়োহ, ইউরোপা, গানিমিড ও ক্যালিস্টো। এই চার চাঁদকে একত্রে গ্যালিলিও সম্মানে বলা হয় গ্যালিলিও চাঁদ। ‘পৃথিবী সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত’ এর বিরোধিতা করে তিনি মহাবিশ্ব সৌরকেন্দ্রিক বলে মতপ্রকাশ করেন। তিনিই প্রথম যিনি টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশের দিকে তাকান।

১৬২২ সালে গ্যালিলিও তার বিখ্যাত বই দ্য অ্যাসাইয়ার (Saggiatore) রচনা করেন যা ১৬২৩ সালে স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রকাশিত হয়। ১৬২৪ সালে পৃথিবীর প্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। গ্যালিলিও দেখিয়েছিলেন যে সকল বস্তুই একই সাথে ভূমিতে পড়ে, তাদের ওজন যাই হোক না কেন। আগে ধারণা করা হত যে ভারি বস্তুটাই আগে ভূমিতে পড়বে। কথিত আছে যে গ্যালিলিও এটা প্রমাণ করার জন্য পীসার হেলানো স্তম্ভ থেকে ভারি আর হালকা বস্তু নিচে ফেলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পালোমার পর্বতের ওপর রাখা টেলিস্কোপটির দর্পণ সবচেয়ে বড় লেন্সের চেয়ে পাঁচ গুণ বড়। ১৬১০ সালের মার্চে গ্যালিলিও তার বিভিন্ন আবিষ্কারগুলো নিয়েThe Starry Messenger নামে একটা বই প্রকাশ করেন। ১৬৩৩ সালে তাঁকে রোমের কোর্টে হাজির হতে হয়। সেখানে তাকে জোর পূর্বক স্বীকার করানো হয় যে পৃথিবীই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত। কিন্তু তিনি বিড়বিড় করে বলেছিলেন, “Yes it does move”।

অসুস্থ ও বৃদ্ধ বিজ্ঞানীকে জোর করে ফ্লোরেন্স থেকে রোমে নিয়ে যাওয়া হয়, হাটু ভেঙ্গে সবার সামনে জোড় হাতে ক্ষমা প্রার্থনা করিয়ে বলতে বাধ্য করা হয় এতদিন গ্যালিলিও যা প্রচার করেছিলেন তা ধর্মবিরোধী, ভুল ও মিথ্যা। বাইবেলে যা বলা হয়েছে সেটিই আসল, সঠিক - পৃথিবী স্থির অনড় - সৌর জগতের কেন্দ্রে। গ্যালিলিও প্রাণ বাঁচাতে তাই করলেন। গ্যালিলি ছিলেন মূলত গণিতের লোক, ল্যাবরেটরির কাজ সাধারণত করতেন টরেসিলি নামক তাঁর সুযোগ্য সেক্রেটারি। গ্যালিলিও যে বছর মৃত্যুবরণ করেন, সে বছরই জন্মান আইজ্যাক নিউটন।

পৃথিবীতে বর্তমানে যে দুই ধরনের টেলিস্কোপ ব্যবহূত হচ্ছে, সে দুটোর উদ্ভাবনও এই দুজনের হাতেই। প্রাচীন পৃথিবীর বিখ্যাত এক জ্ঞানী মানুষ--এরিস্টোটল তাঁর নাম--বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্কের সাহায্যে একদা প্রমাণ করেছিলেন, উপর থেকে দুটি বস্তু ছেড়ে দিলে ভারী বস্তুটি সর্বদা হালকা বস্তুর চেয়ে আগে মাটিতে পড়বে। ৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মারা যান এরিস্টোটল, কেটে যায় প্রায় ২০০০ বছর। আর এই সুদীর্ঘকাল টিকে থাকে এরিস্টোটলের পড়ন্ত বস্তুর মতবাদ। 'আলো এবং বর্ণ বায়ুতে মিশ্রিত হয় না' এ হাইপোথিসিসকে পরীক্ষা করতে গিয়ে আল-হাতেম পৃথিবীর প্রথম ক্যামেরা, অবস্কিউরা (Obscura) উদ্ভাবন করেন, পর্যবেক্ষণ করেন আলো সূক্ষ্ম ছিদ্রের ভেতর দিয়ে গমন করার পর কী ঘটে, এবং ফলাফল লিপিবদ্ধ করেন।

বিজ্ঞানের ধর্মই এমন যে এক সমস্যার সমাধান সাধারণত নতুন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। গ্যালিলিওর টেলিস্কোপের উদ্ভাবনের ৪০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০৯ সাল আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বর্ষ হিসেবে পালিত হয়। গ্যালিলির জীবনকালে ইতালির একদল শ্রমিক একটা সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন তাঁর কাছে। কুয়ো থেকে নল আর পিস্টনের সাহায্যে, বা খাল থেকে পানি তোলার সময় দেখা যায় যে নলের ওপর দিকটায় খালি জায়গা থাকা সত্ত্বেও পানি বড়জোর ৩৩ ফুট পর্যন্ত ওঠে, তার ওপরে কিছুতেই তোলা যায় না, হাজার পরিশ্রম করেও না। তার কারণটা কি? যে ওমর খৈয়ামকে আমরা কবি হিসেবে জানি, আদিতে তিনি ছিলেন অঙ্কবিদ ও জ্যোতির্বিদ।

এক রাতে তিনি তাঁর মানমন্দিরে নিমন্ত্রণ করলেন ‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ’ ইসলামিক চিন্তাবিদ ঈমাম গাজ্জালীকে (যিনি একসময়ে নাস্তিক হয়ে গিয়েও পরে আধ্যাতিকতা ও আনুষঙ্গিকতার (রিচুয়ালিষ্টীক) সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ধার্মিক হয়ে যান)। খৈয়াম জিজ্ঞেস করলেন ‘গাজ্জালী আপনি কী দেখছেন?’ গাজ্জালীঃ ‘আকাশে অনেক তারা’। খৈয়ামঃ ‘এখন কী দেখছেন?’ গাজ্জালীঃ ‘তারাগুলি আমার চারপাশে ঘুরছে’। খৈয়ামঃ ‘না তারাগুলি নয়, আপনিই ঘুরছেন, তারাগুলি দাঁড়িয়ে আছে’ বলে আলো জ্বালিয়ে দেখালেন যে তিনি যে মঞ্ছে দাঁড়িয়েছিলেন সেটিই ঘুরছে, কৃত্রিম ভাবে বানানো তারাগুলো স্থির ছিল। বলেছিলেন, আমাদের পৃথিবীটাও সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।