আমি ব্লগার; ধর্মান্ধ জঙ্গী আর ধর্ম নিয়ে কটুক্তিকারী উভয়কেই সমান ঘৃণা করি! কনফারেন্স উপলক্ষে তাইওয়ান, সিংগাপুর এবং মালয়েশিয়া ঘুরে আসলাম গতমাসে। প্রতিটি দেশে গড়ে ৫/৬ দিন করে থাকা হয়েছে, একটা দেশ সম্পর্কে জানার জন্য ৫/৬ দিন অবশ্যই খুব কম সময়, তারপরও যতটুকু জেনেছি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে লেখার চেষ্টা করব। বাংলাদেশে জন্মেছি এবং বড় হয়েছি, জাপানে আছি ৪ বছরের বেশী; সুতরাং আমার পর্যাবেক্ষনে স্বভাবতই এই দুটি দেশের সাথে কিছু তুলনা থাকবে !
তাইওয়ানে গিয়ে প্রথম যে খটকাটা লাগল তাহলো গাড়ীতে উঠতে গিয়ে; লেফট হ্যান্ড ড্রাইভিং। হোটেল থেকে মার্সিডিজ বেঞ্চ (চাঞ্ছে গাড়ীর নামটা বলে দিলাম!) এসেছে আমাকে এবং আমার আমার প্রফেসরকে (স্বস্ত্রীক) নিতে। আমি উনাদের পিছনের ছিটে বসতে দিয়ে সামনে বাম পাশের সিটে বসতে গেলে ড্রাইভার মুচকি হেসে আমাকে ডান পাশে বসতে বল্ল ; বুঝলাম এরকম ভুল অনেকেই করে থাকে।
গাড়ী যখন হাইস্পিডে চলছিল খুব উশখুশ লাগছিল ... এই মনে হয় সামনের গাড়ীর সাথে মুখোমুখি লেগে যায়! বিশ্বে গাড়ী ড্রাইভিংইয়ের এই দুই রকম নিয়ম থাকার মাজেজা বুঝলাম না। এক পাশে চালানোর অভিজ্ঞতা থাকা মানুষের পক্ষে অন্য পাশে বসে গাড়ী চালানো তো রীতিমত অসম্ভব!
যাই হোক, গাড়ী শহরের মধ্যে ডুকেছে, একটা সিগনালে দাড়ালো, উল্টা দিকের দেখি ৫০/৬০ টি মটর সাইকেল আর তাঁর পিছনে ৫/৬ টা গাড়ী সিগ্নালে দাঁড়ানো। এত মটর সাইকেল দেখে ভয় পেয়ে গেলাম! মিছিল টিছিল এর সামনে পড়লাম না তো (যার যেমন চিন্তা আর কি! )। ড্রাইভার আশ্বস্ত করল, তাইপে শহরে নাকি যত মানুষ আছে তার অর্ধেক পরিনামে বাইক আছে। তার কথার প্রমান পরবর্তী কয়েক দিনে ও পেয়েছি।
জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে সম্ভাবত বাংলাদেশের পরেই তাইওয়ান এর অবস্থান। কিন্তু ঢাকা শহরের যানজটের ধারের কাছেও তাইপেতে কিছু চোখে পড়ল না। এর আর যাই কারন থাকুক না কেন, চার চাকার গাড়ীর পরিবর্তে দুই চাকার মটর সাইকেল কে উৎসাহিত করাটা এক্ষেত্রে সুফল বয়ে এনেছে বলে আমার ধারনা। ইদানিং ঢাকা শহরেও নাকি বাইকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, এগুলোকে পারকিং সুবিধা সহ অন্যান্য নিয়ম কানুনের মধ্যে আনতে পারলে তা ঢাকা শহরের যানজট কিছুটা কমবে বলে আমার বিশ্বাস। যা'হোক, বিদেশে ভাল কিছু দেখলে তা দেশের জন্য প্রয়োগ করার অযাচিত জ্ঞ্যন (অরণ্যে রোদন) দেওয়ার বদঅভ্যাসটা অধিকংশ প্রবাসীর মত আমার ও হয়ে গেছে!
এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ১ ঘন্টা লাগল হোটেলে পৌছুতে।
ইতিমধ্যে ম্যাডাম ড্রাইভার কে বুকিং দিয়ে ফেলেছেন Jiufen যাওয়ার জন্য। ঠিক হলো গাড়ি বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে, আমরা হোটেলে ব্যাগ রেখে ২০ মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে এই গাড়ীতেই করেই যাব কিন্তু এই কথা হোটেলে জানানো যাবে না, কারন হোটেলের মাধ্যেমে এই গাড়ী নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। সিস্টেমের সেই পুরানো গন্ধ পেলাম , জাপানে থাকতে থাকতে এই ধরনের সিস্টেমের কথা প্রায় ভুলেই গেছিলাম।
যাইহোক, রওনা হলাম Juifen এর পথে; Juifen হচ্ছে একটি পাহাড়ি প্রাচীন শহর; স্বর্ণ খনির জন্য এক সময় বিখ্যাত ছিল। এই স্বর্ণ খনি নিয়ে জাপান-চীন-তাইওয়ান এর মধ্যে অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে।
জাপানী এনিমেশন মুভির জন্য এই জায়গাটা এখন ও বিখ্যাত। এখন মূলত এটা পর্যটনের জন্যই বিখ্যাত কি্ন্তু ড্রাইভারের ভাষ্যমতে এখনও নাকি অনেক সোনা লুকিয়ে আছে এই পাহাড় গুলোর পেটের ভিতর! একসময় তাইওয়ান ছিল জাপানিজদের দখলে, এখনও পর্যটকদের অধিকংশ জাপানীজ। জাপানীজ পর্যটকদের খাতির যত্ন ও এখানে বেশী; প্রায় প্রতিটি দোকানী জাপানী ভাষা জানে। এখানে একটা রেষ্টুরেন্টে চা খেলাম; গ্রিন টি। চা বানানোর সরঞ্জাম এবং সিস্টেম ভিন্ন রকমের; নিজ হাতে বানাতে হয়, একই চা পাতা তিন বার পানি দিয়ে বানালে তিন রকম স্বাধ-গন্ধ !
জায়গাটা আসলেই অনেক সুন্দর! পাহাড় – সমুদ্র –প্রাচীন শহর – দূরে আধুনিক শহর এর অপূর্ব সমন্নয়! একখান ছবি দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না ...
আজ এই পর্যন্তই; জীবনের প্রথম ভ্রমন কাহিনী লিখছি ... আর আগাতে সাহস পাচ্ছি না।
আপনাদের ভাল লাগলে চলবে ... ... ... ভালো না লাগলে এখানেই খ্যান্ত !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।