আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্পাদকদের বিবৃতি ও সংবাদমাধ্যমের আত্মনিয়ন্ত্রণ

আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার ৪৫ দিন আগে ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর পত্রিকায় ‘নাস্তিকতার আড়ালে ইসলাম-বিদ্বেষ’ শিরোনামে এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে ব্যবহার করে রাজাকারবিরোধী প্রচারণার আড়ালে বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। ...কয়েকজন তথাকথিত পেশাদার আওয়ামীপন্থী সম্পাদক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ এবং আমার গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার চালাচ্ছেন। এদের এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি বিশেষভাবে অবহিত আছি। এদের পেছনে যে একটি বিশেষ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সক্রিয় রয়েছে, সে তথ্যও আমার জানা। ’
১১ এপ্রিল থেকে কারারুদ্ধ এই সম্পাদকের মুক্তি ও আমার দেশ-এর ছাপাখানা খুলে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১৮ মে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন ১৫টি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকেরা।

মাহমুদুর রহমানের ভাষ্য অনুসারে ‘ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে’ যে ‘অধিকাংশ মিডিয়া’, এই সম্পাদকদের অন্তত কেউ না কেউ নিশ্চয়ই তার অন্তর্ভুক্ত। কারণ, দেশের প্রথম সারির এই ১৫টি জাতীয় দৈনিক বাদ দিয়ে ‘অধিকাংশ মিডিয়া’ হয় না। অবশ্য যে ‘কয়েকজন তথাকথিত পেশাদার আওয়ামীপন্থী সম্পাদক’ আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করা এবং তার সম্পাদককে গ্রেপ্তার করার জন্য ‘সরকারের বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার’ চালাচ্ছিলেন বলে মাহমুদুর রহমান লিখেছেন, তাঁদের কেউ এই ১৫ জনের মধ্যে আছেন কি না, তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু আমরা জানি, মাহমুদুর রহমান যখন স্বনামে তাঁর নিজের পত্রিকায় বাংলাদেশের অধিকাংশ ‘মিডিয়া’কে ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করেছিলেন, তখন কোনো ‘মিডিয়া’ এর প্রতিবাদ করে তাঁকে লেখনী সংযত করার পরামর্শ দেয়নি। শুধু তা-ই নয়, আমার দেশ যখন সাংবাদিকতার সংস্কৃতি ও নৈতিকতার বিরোধী এবং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক আচরণ করছিল (যার কিছু দৃষ্টান্ত গতকালের লেখায় উল্লেখ করেছি), তখন এই সম্পাদকেরা সংবাদমাধ্যমের সাধারণ দায়িত্বশীলতার স্বার্থে নিবৃত্তিমূলক কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই।


লক্ষ করুন, গ্রেপ্তার হওয়ার অনেক আগেই মাহমুদুর রহমান নিজের বাসভবন ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন আমার দেশ-এর কার্যালয়ে। আড়াই মাসের বেশি সময় সেখানেই নিজেকে ‘অবরুদ্ধ’ রেখে ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন যে সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করবে, তাঁর পত্রিকাটি বন্ধ করে দেবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে সরকার সে রকম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি শাহবাগ আন্দোলন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করার দাবিতে আলটিমেটাম দেওয়ার পরেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ইতিমধ্যে মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

গতকালের লেখায় উল্লেখিত দৃষ্টান্তগুলোতে সীমা লঙ্ঘনের কিছু স্বাক্ষর রয়েছে। ঘৃণা-বিদ্বেষ, উসকানির দ্বারা সরকারকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করতে করতে মাহমুদুর রহমান নিজেই যেন নিজের গ্রেপ্তারকে অনিবার্য করে তুলেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক। এটা ঘটতে পেরেছে আমাদের সাংবাদিকতার সংস্কৃতিতে ন্যূনতম আত্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কার্যকর নেই বলে। বিবৃতিদাতা সম্পাদকদের এ দেশের সংবাদমাধ্যমের অভিভাবকের মর্যাদায় স্থাপন করে বলা যায়, তাঁরা যদি যৌথভাবে আমার দেশকে সংযত করার উদ্যোগ নিতেন, তাহলে একজন সম্পাদকের গ্রেপ্তার ও তাঁর পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত গড়াতে না-ও পারত।

এমন ভাবনা এ দেশে অবাস্তব মনে হলেও সংবাদমাধ্যমের আত্মনিয়ন্ত্রণের সম্মিলিত প্রয়াসের একটি সূচনা এভাবে ঘটতে পারত। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমেও আমার দেশ বা মাহমুদুর রহমানকে সতর্ক করার সুযোগ ছিল। কিন্তু সরকার বা সংক্ষুব্ধ অন্য কেউ প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করেনি। তাতে কোনো ফল হতো কি না, সেটা পরের কথা। প্রেস কাউন্সিল ও সম্পাদকদের অগ্রাহ্য করে মাহমুদুর রহমান ও তাঁর পত্রিকা যদি সাংবাদিকতার নৈতিকতাবিরোধী ও আইনের দৃষ্টিতে অন্যায় আচরণ চালিয়ে যেত, তাহলে অবশ্যই প্রচলিত আইন প্রয়োগের প্রশ্নটি এসে পড়ত।

কারণ, আইনের ঊর্ধ্বে তো কেউই থাকতে পারেন না।
সভ্য পৃথিবীজুড়ে সাংবাদিকেরাই সম্ভবত একমাত্র পেশাজীবী, যাঁরা নিজেদের ভুল-ত্রুটি-অপরাধের দায়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর আগে প্রেস কাউন্সিল ধরনের মধ্যবর্তী বিচারিক ব্যবস্থার সুবিধা ভোগ করেন। তাঁদের এই সুবিধার স্বীকৃতি এসেছে এমন প্রত্যয় থেকে যে সংবাদমাধ্যম নিজেই নিজের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ দায়িত্বশীলতা। দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করে সে নিজেই, আত্মনিয়ন্ত্রণ চর্চার মধ্য দিয়ে।

সংবাদমাধ্যমের লোকেরা নিজেরাই সম্মিলিতভাবে তৈরি করে নেন নিজেদের আচরণবিধি। যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ও সংবাদপ্রতিষ্ঠানগুলো যে আচরণবিধি মেনে চলেন সেটাকে বলা হয় ‘এডিটরস কোড অব প্র্যাকটিস’। নিজেদের তৈরি একটি কমিটির মাধ্যমে সম্পাদকেরা নিজেরাই এটি প্রণয়ন করেছেন। যুক্তরাজ্যের সরকার দেশটির সংবাদমাধ্যমকে সেলফ-রেগুলেশন বা আত্মনিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার দিয়েছে প্রেস কমপ্লেইন্টস কমিশনের মাধ্যমে। এটি সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব অভিভাবক সংস্থা।

কোনো সংবাদমাধ্যমের আচরণে সংক্ষুব্ধ যেকোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান প্রথমে এই কমিশনের কাছে অভিযোগ করে, কমিশনের বিচারে সন্তুষ্ট না হলে আদালতে যায়। এটাই সাধারণ রীতি।
একটি প্রেস কাউন্সিল আমাদেরও আছে, সেটি একটি আধা বিচারিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোনো সংবাদপত্র কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি ঘটালে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানটি প্রেস কাউন্সিলে প্রতিকার চাইলে প্রেস কাউন্সিল খুব জোর সংবাদপত্রটিকে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করতে পারে, সংক্ষুব্ধের প্রতিবাদ ছাপানোর নির্দেশ দিতে পারে এবং অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে দিতে পারে। এগুলোকে লঘু শাস্তি মনে করে কেউ সাধারণত প্রেস কাউন্সিলে যেতে চান না, বরং সরাসরি আদালতে মামলা করেন।

অবশ্য কিছু ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলি সান-এ প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানিকর ভিত্তিহীন লেখালেখি ছাপানোর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিকার পেয়েছেন দুবার। প্রথমবার কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে প্রেস কাউন্সিল তিরস্কার, ভর্ৎসনা ও সতর্ক করে। দ্বিতীয়বার ডেইলি সানসহ ওই দুটি পত্রিকাকে সতর্ক করে। ওই তিনটি পত্রিকা দুঃখ প্রকাশ করে এর পুনরাবৃত্তি হবে না বলে অঙ্গীকার করেছে, কাউন্সিলের রায় ছেপেছে এবং আদেশের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে মানহানিকর লেখালেখি বন্ধ করেছে।

কিন্তু এ রকম ইতিবাচক দৃষ্টান্ত অত্যন্ত বিরল।
সম্প্রতি গঠিত ‘সম্পাদক পরিষদ’ এই অবস্থা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে পারে। যুক্তরাজ্যের ‘এডিটরস কোড’-এর মতো একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করে প্রেস কাউন্সিলের সঙ্গে যৌথভাবে সংবাদমাধ্যমের আচরণ নিয়ন্ত্রণের একটা কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। এ রকম উদ্যোগ নেওয়া এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ভোগ করার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার কাজটিও প্রাথমিকভাবে সংবাদমাধ্যমকেই করতে হবে, সরকারের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না।

সরকার যখন সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করার উদ্যোগ নেয়, তখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, যেমনটি এখন দেখা যাচ্ছে। সম্পাদকদের যৌথ বিবৃতিতে সরকারের পদক্ষেপকে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের ওপর আশঙ্কাজনক হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে।
তাঁদের যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশের পরদিনই ১৫ জন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এর সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিও আলাদা বিবৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, আবদুল মান্নান প্রমুখ বিশিষ্টজন সম্পাদকদের বিবৃতির সমালোচনা করে সংবাদপত্রে কলাম লিখেছেন।

তাঁদের সেসব লেখার মধ্য দিয়ে ভিন্ন মত, অন্য চিন্তার প্রতি অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটেছে। একই রকম অসহিষ্ণু সমালোচনা হয়েছে টিভির টক শোতেও।
কিন্তু মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও আমার দেশ-এর পুনঃপ্রকাশের ব্যবস্থা দাবি করা অসংগত নয়। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ অবশ্যই আমলযোগ্য এবং সেসবের বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। এমনকি সংক্ষুব্ধ আরও কেউ তাঁর বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়ের করতে পারেন।

কিন্তু বিচার করার জন্য তাঁকে কারাগারে অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকে রাখতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তিনি জামিনে মুক্ত থাকলেও মামলার বিচারকার্য চলতে পারবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা অনেক হয়, কিন্তু তাঁদের গ্রেপ্তার করার ঘটনা সব গণতান্ত্রিক দেশেই কম। গুরুতর অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হলেও অচিরেই জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। যেমন, ফোন হ্যাকিং কেলেঙ্কারির পর বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর সাবেক সম্পাদক অ্যান্ডি কুলসন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা ব্রুকসেক ২০১১ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

রাজপরিবারের সদস্য, অনেক বিশিষ্ট নাগরিক ও সেলিব্রেটিসহ প্রচুর মানুষের ব্যক্তিগত টেলিফোন আলাপে আড়িপাতা, ভয়েস মেইল হ্যাক করার কাজে রিপোর্টারদের উৎসাহিত করা, পুলিশ ও সরকারি-বেসরকারি গোয়েন্দাদের অর্থ দিয়ে তথ্য নেওয়া, শপথপূর্বক মিথ্যা বলা ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সে জন্য গ্রেপ্তার করে তাঁদের অনির্দিষ্টকাল আটক রাখা হয়নি। গ্রেপ্তার করার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা উভয়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, মামলার বিচারকাজ চলছে। বিচারে তাঁদের কারাদণ্ড হওয়ারও আশঙ্কা আছে।

কিন্তু সে জন্য তাঁদের কারাগারে আটকে রাখার প্রয়োজন হয়নি। আরেকটি উদাহরণ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তিনি ধর্ষণ মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও ব্রিটেনের আদালত শেষ পর্যন্ত তাঁকে জামিন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন; তিনি বিচারকার্য এড়াতে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও (এবং শেষ পর্যন্ত তিনি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে পালিয়ে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন)। এর অন্যতম কারণ উইকিলিকসের ‘প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক’ হিসেবে তিনি সাংবাদিক-প্রকাশকের পরিচয় অর্জন করেছেন।
বিচারকার্য এড়ানোর লক্ষ্যে মাহমুদুর রহমানের নিরুদ্দেশ হওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে বলে মনে হয় না।

তাই জামিনে তাঁর মুক্তির দাবি করাই যায়। কারামুক্তি চাওয়া মানে মামলা থেকে অব্যাহতি চাওয়া নয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করে, তাঁর বিচারকার্য বিলম্বিত করে, অথবা আদৌ বিচার না করে তাঁকে অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকে রাখার কৌশল যদি সরকার নিয়ে থাকে, তবে অবশ্যই তা পরিত্যাগ করা উচিত। বরং তাঁর বিচার হওয়া উচিত। সে জন্য আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া জরুরি।

আমার দেশ-এর প্রকাশনার ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন পত্রিকাটির প্রকাশনায় কোনো বাধা নেই, কারণ এর ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়নি। কিন্তু ছাপাখানায় তালা ঝুলিয়ে রেখে কারিগরি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং অন্য ছাপাখানায় সংবাদপত্র ছাপানোর ব্যাপারে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ রাখা একটি অপকৌশল বটে। এটা বাদ দিয়ে পত্রিকাটি যাতে আবার ছাপা হয়ে পাঠকের হাতে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করা উচিত। পাঠকদের স্বার্থ ছাড়াও পত্রিকাটির সঙ্গে অনেক সাংবাদিকের জীবিকা জড়িত, যা উপেক্ষণীয় হতে পারে না। তবে আমার দেশকে অবশ্যই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাকেই প্রধান অগ্রাধিকার দিতে হবে।


মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তার ও আমার দেশ-এর প্রকাশনা সাময়িক বন্ধ থাকার এই ঘটনাকে আমরা সংবাদমাধ্যমের জন্য সতর্কতা হিসেবে দেখতে চাই। এর তাৎপর্য হলো, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সর্বোপরি তার দায়িত্বশীলতার শর্তাধীন। আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আমাদের সাংবাদিকতার সংস্কৃতি উন্নত করার প্রয়াসের বিকল্প নেই।
মশিউল আলম: সাংবাদিক। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।