আফগানিস্তানে মোতায়েন বাড়তি ৩৩ হাজার সেনা গোপনে সরিয়ে নিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন। আফগানিস্তানে তালেবান হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছর আগে এসব বাড়তি সেনাকে আফগানিস্তানে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত জুলাই থেকে এসব সেনা সরিয়ে নেয়ার তত্পরতা শুরু হয়। তবে এমন এক সময় তাদের সবাইকে গোপনে সরিয়ে নেয়া হলো যখন আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হামলায় দেশটিতে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে।
এ ধরনের হামলার ঘটনাকে ‘গ্রিন অব ব্লু’ বা ‘অভ্যন্তরীণ হামলা’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের এ ধরনের হামলার মুখে দেশটিতে মোতায়েন মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান কমিয়েছে। গত মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শুধু গত মাসেই গ্রিন অন ব্লু’র ঘটনায় ন্যাটো বাহিনীর ১৫ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া ন্যাটোর হিসাব মতে, চলতি বছর আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৬টি হামলায় নিহত হয়েছে ৫১ বিদেশি সেনা।
এছাড়া, মহানবীকে (সা.) নিয়ে আমেরিকায় অবমাননাকর চলচ্চিত্র তৈরির প্রতিবাদে যখন আফগানিস্তানসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে পশ্চিমা বিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে তখন এসব সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলো। মূলত ইসলাম-বিরোধী ওই সিনেমা বানানোর প্রতিবাদে আফগান হামলা থেকে বিদেশি সেনাদের রক্ষায় আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে, আফগানিস্তানে এখনও ৬৮ হাজার মার্কিন এবং ৪০ হাজার ন্যাটো সেনা মোতায়েন রয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্রা এক বিবৃতিতে প্রত্যাহারের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন। তিনি দ্ব্যার্থহীনভাবে বলেন, অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন সাফল্য বয়ে এনেছে।
তালেবানদের বিতাড়িত ও আল কায়দা মিত্রদের বিধ্বস্ত করার উভয় ক্ষেত্রেই সাফল্য বয়ে আনার পেছনে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন লড়াই ক্ষেত্রে তালেবানদের গতি উল্টো পথে ঘুরাতে এবং একই সঙ্গে নাটকীয়ভাবে আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর আকার ও সামর্থ্য বাড়াতে সাহায্য করেছে। এই আকার ও সামর্থ্য বাড়ার কারণে আমরা ও আমাদের ইসাফ অংশীদার জোট বাহিনী আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দায়িত্বভার অর্পণের প্রক্রিয়া শুরুর সুযোগ এনে দেয়। এই প্রক্রিয়া শিগগিরই সব প্রদেশেই পর্যায়ক্রমে বিস্তৃত হবে। একই সঙ্গে আল কায়দা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আমরা বড় ধরনের ব্যাপক আঘাত হেনেছি।
আল কায়দাদের অভয়ারণ্য গুঁড়িয়ে দিতে এবং আল কায়দাকে ভেঙে দিতে ও পরাভূত করার মূল লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্যানেট্রা বলেন, ২০১৪ সালের মধ্যে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সঠিক পথেই এগুনো হচ্ছে।
এদিকে আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো বাহিনীর রসদ সরবরাহকারী অন্তত ১১টি গাড়ি ধ্বংস করেছে অস্ত্রধারীরা। গত রাতে ফারাহ প্রদেশে হেরাত-কান্দাহার হাইওয়েতে গেরিলাদের হামলায় ওইসব গাড়ি ধ্বংস হয়। তালেবান ওই হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, তাদের হামলায় ন্যাটোর রসদ সরবরাহকারী ৭টি ট্রাকসহ অন্তত ১১টি গাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
এ হামলায় ১৪ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে বলে তালেবান দাবি করেছে। তবে কোনো নিরপেক্ষ সূত্র থেকে হতাহতের খবরের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এর আগে গত মঙ্গলবার যাবুল প্রদেশে তালেবানের হামলায় ন্যাটোর বেশ কয়েকটি তেল ট্যাংকার ও গাড়ি ধ্বংস হয়। এসব গাড়িতে করে সাধারণত ন্যাটো বাহিনীর জন্য পাকিস্তান থেকে জ্বালানিসহ বিভিন্ন রসদ আফগানিস্তানে নিয়ে আসা হয়। কোনো সাগরের সঙ্গে আফগানিস্তানের সংযোগ না থাকায় ন্যাটো বাহিনী পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে তাদের রসদ আনতে বাধ্য হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।