মাথায় অনেক গল্প আসে; কিন্তু লেখার মত পর্যাপ্ত ধৈর্য-শ্রম-অধ্যবসায় নেই। গল্পগুলোকে তাই ছোট করে কবিতা বানাই....
রেনোয়া - ইম্প্রেশনিস্টদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রতিভাবান শিল্পীদের একজন। মানুষটা তার সারাটা জীবন ব্যয় করে গেছেন ক্যানভাসে, আর তাই তার প্রতিটা ক্যানভাস হয়ে উঠেছিল জীবন্ত ! যে চার-জন বন্ধু মিলে পরবর্তীতে একটা গ্রুপ তৈরি করে পৃথিবীর চিত্রশিল্পের ইতিহাস নতুন করে লিখতে শুরু করেছিল - রেনোয়া ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। এক দর্জি'র ছেলে'র শিল্পজগতের গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে ওঠার গল্প বলব আজ। যে ছেলের জীবনের অনেকটা সময়জুড়ে ছিল দারিদ্র আর কষ্টের ছড়াছড়ি - অথচ সারাটা জীবন সে এঁকে গেল এক আলোময় জগৎ, আনন্দময় এক্সপ্রেশনে ভরা সব মানুষজনের ছবি ! তাহলে গল্পটা শুরু করা যাক।
ইম্প্রেশনিস্টদের সেই আলোকিত-আনন্দময় ভুবনে আপনাকে স্বাগতম !
সেল্ফ-পোর্ট্রেট
পিয়ের-আগুস্তে রেনোয়া (Pierre-Auguste Renoir)। জন্ম ১৮৪১ সালে, ফ্রান্সে। বাবা ছিলেন দর্জি, তাই কাপড়ে দাগ কাটার চক দিয়েই আঁকিবুকি'র হাতে খড়ি। কৈশোরেই টাকার জন্য শুরু করলেন Porcelain drawing বা চিনামাটিতে কারুশিল্পের কাজ। এবং অল্প সময়ের মধ্যে তিনি একাজে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠলেন যে, ওই বয়সের ইনকামেই তার পরিবারের জন্য একটা ভাল বাসার ব্যবস্থা পর্যন্ত করে ফেললেন ! আর এই কারুকাজই তাকে স্বপ্ন দেখাতে লাগল পেশা হিসেবে 'আর্ট'কে বেছে নেয়ার জন্য।
পোর্সেলিন আর্ট
প্রথম জীবনের ওই পোর্সেলিন আর্টের অভিজ্ঞতাই কিন্তু রেনোয়া'কে পরবর্তী সকল শিল্পী থেকে একদম আলাদা করে দিয়েছিল ! কারণ পোর্সেলিন আর্টে তুলি'র ব্যবহার হয় খুব সুক্ষ্ণ, রং-এর মিশ্রণ হয় খুব অন্যরকম, আর তার সাথে 'রেনোয়া' টাইপের কোনও প্রতিভা মিশলে তৈরি হয় ইতিহাস !
তো, পোর্সেলিন শিল্পী থেকে পুরোদস্তুর আর্টিস্ট হওয়ার চেষ্টায় রেনোয়া নেমে পড়লেন আঁটঘাট বেঁধে। ল্যুভ'রে গিয়ে আর্টের শ্রেষ্ঠ মাস্টারদের ছবি স্টাডি করতে লাগলেন কৈশোর বয়সেই !
বয়স যখন আঠারো-উনিশ, রেনোয়া গিয়ে উপস্থিত হলেন Charles Gleyre-এর আর্ট স্কুলে। ঠিক ওই সময়টাতে গ্লেয়ারের স্টুডিওতে ছাত্র হিসেবে যোগ দিল তার মত আরও ক'জন তরুণ - ক্লদ মনে', ফ্রেডরিখ বাযিল, আলফ্রেড সিসলী। এখানেই গড়ে উঠে সেই ঐতিহাসিক চার বন্ধু'র সার্কেল, যাদের কীর্তি নিয়ে প্রায় দেড়শ বছর পর BBCকে 'Gang of Four' শিরোনামে ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানাতে হয় ! রেনোয়ার দুর্দশা'র অবস্থা তখন বেশ ভালই বলা চলে, রং কেনার পয়সা পর্যন্ত যোগাড় হতো না অনেক সময়। আজ বাযিল-এর স্টুডিওতে, কাল অন্য কারও ঘরে গিয়ে প্র্যাকটিস চালিয়ে যেতে লাগলেন।
এর মাঝেও রেনোয়া যে খানিকটা আলাদা - সেটা ওস্তাদ গ্লেয়ারের ঠিকই চোখে ধরা পড়ল। বিষয়বস্তুর তোয়াক্কা না করে এই ছেলে যেন ছবি আঁকছে শুধু নিজের আনন্দের জন্য ! একদিন রেনোয়া'কে ডেকে বলেই বসলেন, "Young man, you are very talented, very gifted; but it looks as if you took up painting to amuse yourself !"
গ্লেয়ারের চোখ ভুল করেনি। রেনোয়া তীব্র অর্থকষ্টের মাঝেও ক্যানভাসে সবসময় এঁকে গেছেন আনন্দময় জীবনের গল্প। তবে টাকার যোগান দিতে তাকে প্রতিনিয়ত আঁকতে হয়েছে সম্ভ্রান্ত বা চেনা-পরিচিত অনেকের পোর্ট্রেট।
রেনোয়া ধীরে ধীরে গুস্তাভ ক্যুরবে (Gustave Courbet), ইউজিন দেলাক্রোয়া (Eugène Delacroix), কামিল করোট (Camille Corot)-এর মত গ্রেট আর্টিস্টদের সংস্পর্শে আসেন।
তার প্রথম দিকের ছবিগুলোতে এদের প্রভাবও দেখা যায়। ১৮৬৪ সালে রেনোয়া'র পেইন্টিংস প্রথমবারের মত ঐতিহ্যবাহী স্যালন এক্সিবিশনে মনোনীত হয়। তবে শিল্পীসমাজে পরিচিতি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও দশ বছর, ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ! মনে করবেন না - যাক, তারপর ছেলেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল, কাহিনী খতম ! এই সিরিজের সাথে থাকলে বোঝার কথা, আমাদের ইম্প্রেশনিস্টদের গল্প এখান থেকে সবে শুরু হয় !
১৮৫০ থেকে ১৮৭০ - এই দুই দশকে প্যারিসে পরিবর্তন আসছিল ঝড়ের গতিতে। এর মাঝে ফ্রান্সে রেল-লাইন বসল, বানের জলের মত নগরে লোক আসতে লাগল (বিশ বছরে জনসংখ্যা হয়ে গিয়েছিল দ্বিগুন !), নাগরিক জীবনেও আসতে লাগল বিশাল পরিবর্তন। শহরে রেসকোর্স, পার্ক, ডান্স-বার, কনসার্ট, বুর্জোয়া-সমাজের জন্য বিনোদনকেন্দ্র গজাতে লাগল সবখানে ! আর এই উদ্দাম প্রাণপ্রাচুর্য দেখে তাতেই ছুটে গেলেন সারাটা জীবন অনটনে বড় হওয়া রেনোয়া।
তিনি যেন তার ক্যানভাসেই ধরে রাখবেন সমস্ত ফূর্তি আর উচ্ছলতা ! ক্লাসিকাল শিল্পীরা গাঢ় রোমান্স থেকে আঁকেন ভেনাস বা আফ্রোদিতি'কে, আর রেনোয়া সেই একই আবেগে নিখুঁতভাবে আঁকেন পার্কে ঘুরতে যাওয়া বা বারে নাচতে থাকা তরুণী মেয়েটাকে !
এই ছবি আঁকার জন্য রেনোয়া এই বলডান্সের আসরে গিয়েছিলেন টানা ছ'মাস। ছবির লোকজনগুলো কেউই বেনামী না, সবাই ছিলেন তার চেনা-পরিচিত।
বন্ধু ক্লদ মনে'র সাথে গিয়েও বিভিন্ন পার্ক বা আসরের ছবি আঁকতে লাগলেন। এবং ট্র্যাডিশনাল স্টাইলে নিখুঁত ফিনিশিং-এ না, বরং জোরালো ব্রাশ স্ট্রোকে 'ইম্প্রেশনিস্ট' স্টাইলে।
ক্লদ মনে'র আঁকা La Grenouillère
রেনোয়া'র আঁকা La Grenouillère
এই সমস্ত কার্যকলাপ একাডেমিক লোকজনের পছন্দ হওয়ার কথা না।
ফলে, এর আগেই স্যালনে বেশক'বার ছবি দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়া রেনোয়া আর তার বন্ধু'রা মিলে শুরু করলেন নিজেদের আলাদা এক্সিবিশন। এই এক্সিবিশনে মাউন্ট অলিম্পাসের দেব-দেবীরা নেই, বাইবেলের আদি-কাহিনী'র মহাপুরুষেরা নেই - প্যারিসের লোকজন এসে দেখতে পেল - এই সমস্ত ছবি তাদের আশেপাশের মানুষজনদের নিয়েই ! শিল্পের মত বিশুদ্ধ একটা বিষয়ে এইরকম কর্মকান্ড দেখে হতভম্ব ভাব কাটতে পাবলিকেরও সময় লাগে। তাই ইম্প্রেশনিস্টদের নিয়ে সমালোচনা হতে লাগল অনবরত। তবু তারা তাদের স্টাইলে এক-পৃথিবী'র গল্প বলে যাচ্ছিলেন অবিরাম।
পিসারো'র ছবিতে কর্মব্যস্ত জনজীবন বা দেগা'র ছবিতে অসাধারণ মুভমেন্টের কাজ তো ওই পোস্টগুলোতেই দেখেছেন, এবার রেনোয়া'র ছবিতে খেয়াল করুন মানুষগুলোর চেহারা ! অন্যদের পুরো ছবি হয়তো একটা গল্প বলে যেত, রেনোয়া'র ছবিতে একেকটা চেহারা'ই একেকটা গল্প বলে যায় !
মেয়েটার মুখে কী সুস্পষ্ট রোমান্টিক অভিব্যক্তি ! বাস্তবের মত কানে কানে কথা শুনে গাল লাল হয়ে আসা !
এই মেয়ের এক্সপ্রেশন কি বলে দিচ্ছে না, লোকটা তার সাথে ফ্লার্ট করছে? একই সাথে লাজুক আবার আনন্দের একটা আভা - কোনওটাই কি সে লুকাতে পারছে?
আরেকটা মাস্টারপিস দেখুন~
বাস্তবের মতই ছবির প্রতিটা মানুষের মুখে যেন আলাদা আলাদা একেকটা গল্প ! একদম ডানে হলুদ হ্যাট-পরা শিল্পী গুস্তাভ কাইবট', দূরে তাকিয়ে কিসের যেন গল্প বলছে, পাশের মেয়েটা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছে।
ওপরে দাঁড়ানো লোকটার আগ্রহ আবার ঐ মেয়েটার প্রতি ! একেবারে বামে কুকুর হাতে তরুণী অ্যালাইন (Aline) - যাকে পরে রেনোয়া বিয়ে করেছিলেন। একটু দূরে রেলিঙে হাত রেখে দাঁড়ানো আরেকটা মেয়ে, চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যায় মৌজে আছে। তবে বোঝা যায় না একদম মাঝখানে বসে মুখে গ্লাস-ধরা মেয়েটাকে। দৃষ্টি কোথায় যেন প্রসারিত, মেয়েটা ওখানে থেকেও যেন ওখানে নেই ! এই মেয়েকে প্রথম খেয়াল করি French Film - 'Amelie' দেখে। তারপর থেকে আর ওই দৃষ্টি থেকে বেরোতে পারিনি !
এভাবে পিসারো'র মত ছবির প্লট অথবা দেগা'র মত ফিগার মুভমেন্টা না শুধু, রেনোয়া গল্প বলতে লাগলেন মানুষগুলোর মুখের এক্সপ্রেশনে, চোখের তারায় বা গালের ভঙ্গিমায় ! নিচের ছবিগুলো দেখুন, অন্যান্য ডিটেইলসের কাজ তেমন না থাকলেও মুখের অভিব্যক্তি কী স্পষ্ট !
অবিকল চেহারার ছবি যেকোনও পোর্ট্রেট আর্টিস্ট আঁকতে পারেন, কিন্তু নিখুঁতভাবে জটিল এবং বাস্তব অনুভূতিগুলো - কৌতুহলী চোখ বা অবজ্ঞা'র মুখ, এসব এত জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলতে নিশ্চয়ই রেনোয়া হওয়া লাগে।
আর এতে কাজে লাগল তার সেই পোর্সেলিন আর্টের অভিজ্ঞতা, যেখানে প্রতিটা দাগ দিতে হত অতিসুক্ষ্ণ তুলি'র আঁচড়ে ! তার সুক্ষ্ণ তুলি'র কাজে প্রতিটা সুক্ষ্ণ অনুভূতি যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল !
কী আগ্রহ নিয়ে মেয়েটা মাত্র চোখ তুলে যেন তাকাল, চোখে কী একটু কৌতুকও দেখা যায়?
এই মেয়ে যেন সরাসরি দর্শককে প্রশ্ন করছে, 'কী জানতে চান?'। কী নিঃসংকোচ আর আত্মবিশ্বাসী দৃষ্টি !
রেনোয়া এমন সব মেয়েদের ছবি আঁকতে লাগলেন, চিত্রশিল্পের জগতে যারা একদম নতুন আর অভিনব ! এই মেয়েগুলো দূর্বল আর পরাধীন না, এরাই ছবিতে রাজত্ব করছে আর ছবিকে করছে প্রাণবন্ত ! BBC'র ডকুমেন্টারি'র ভাষায়~
"They are the new women, the women of today, enjoying freedoms they'd never had before"
ভাল কথা, এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি, শিল্পীর জীবনের গল্পে আমি পুরোপুরি ইতিহাসের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কোনও ছবি নিয়ে কথা বলার সময় আমি আমার ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাল লাগা'র কথাও বলে ফেলি স্বাভাবিকভাবেই, যেটা সবসময় আপনার মতের সাথে নাও মিলতে পারে। অতএব, চিন্তা-ভাবনা না করে আপনি নিশ্চয়ই শাহেদের বিশ্লেষণের সাথে একমত হয়ে যাবেন না। আপনি অবশ্যই রেনোয়া'কে শাহেদের চোখে দেখবেন না, আপনার নিজের চোখে দেখবেন - এবং শাহেদও সেটাই চায়।
এই সিরিজের পোস্টগুলোর উদ্দেশ্য শুধু যারা জানতেন না, তাদের পরিচিত করিয়ে দেয়া। আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা চাপিয়ে দেয়া নয়।
আচ্ছা, এখন এত চিন্তা করতে হবে না। আমরা আবার রেনোয়া'র গল্পে ফিরে যাই? এর মাঝে রেনোয়া একবার বেরিয়ে পড়লেন আলজেরিয়া আর ইতালী সফরে। স্টাডি করতে লাগলেন রেনেসাঁ মাস্টারদের কাজ নিয়ে - রোমে রাফায়েল(Raphael)-এর পেইন্টিংস, আর ফ্লোরেন্সে তিশিয়ান (Titian)-এর মাস্টারপিসগুলোর ওপর।
আলজেরিয়ান মেয়ে
ফিরে আসার পরও বেশ কিছুদিন আগের স্টাইলে ছবি আঁকলেন। তবে তার মনে হতে লাগল তিনি এতদিন ভুল পথে আগাচ্ছিলেন ! শ্রেষ্ঠ শিল্পগুরুদের কাজ দেখে তিনি আবার কেমন ক্লাসিকাল আর্টের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন ! বেশ ক'টা বছর ওভাবে এলোমেলোতায় কাটল। অবশেষে ১৮৯০-এর পর তিনি স্থির হলেন, এবং ফিরে এলেন নিজের পুরানো রূপে - যে স্টাইলে তিনিই ছিলেন ইউনিক স্রষ্টা ! রেনোয়া'র বয়ানেই শুনুন, "I have gone back to my old soft style of painting, with a light brush, and I shall not give it up again."
এর মাঝে বিয়ে করেন তার অনেক ছবির মডেল অ্যালাইন'কে। অ্যালাইনের সাথে প্রেমের কথা অনেক বছর পর্যন্ত পুরোপুরি গোপন রেখেছিলেন, এমনকী সন্তান হওয়ার পরও ! ১৮৯০-এর পর যখন পরিচিত করিয়ে দিতে আসলেন, বার্থ মরিস'সহ অন্যান্য শিল্পীরা চমকে গেলেন - অ্যালাইন তার স্ত্রী আর সাথের পাঁচ বছর বয়সী পিচ্চিটাও পিয়ের-রেনোয়া জুনিয়র !
ছবিতে রেনোয়া'র দ্বিতীয় পুত্র জাঁ রেনোয়া, সাথে তার নার্স বা ন্যানি গ্যাব্রিয়েলে। গ্যাব্রিয়েলে ছিলেন অ্যালাইনের কাজিন।
কী এক চাপা-অভিমানে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে ! এটা রেনোয়া'র পুত্র (জ্বী, কন্যা নয়) জাঁ রেনোয়া (Jean Renoir)। মুভিপাগলরা ভ্রু-কুঁচকে তাকাতে পারেন, আমিও চমকে গেছিলাম - এই সেই কিংবদন্তি সিনেমা-পরিচালক Jean Renoir ! সিনেমার জগতে ক্লাসিক মুভিগুলো নিয়ে "Greatest films ever made"-টাইপের যত র্যাঙ্কিং/তালিকা হয়েছে, তাদের প্রায় সবগুলোতেই Jean Renoir-এর ২টা মুভি উপরের দিকেই থাকে - Grand Illusion (1937) আর The Rules of the Game (1939) ! বাপকা বেটা !
তবে আমাদের শিল্পীর জীবনে কষ্টের কমতি দেখা যায় না। তার শরীরে রোগ দানা বাঁধতে থাকে। সেই আলজেরিয়া সফরে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন, যেটা তার শ্বসনতন্ত্রের চিরস্থায়ী ক্ষতি করে যায়। পরে ১৮৯২ সালে ধরা পড়ে আর্থ্রাইটিস।
ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে যেতে থাকেন। জীবনের শেষ দুই দশক রেনোয়া হুইলচেয়ারে বসে ছবি এঁকেছেন। হাতের অবস্থাও এত খারাপ হয়ে যাচ্ছিল যে, তার আঙ্গুলের মাঝে ব্রাশ বসিয়ে দেয়ার জন্যও অন্য কাওকে লাগত ! এই অবস্থায় রেনোয়া এঁকে যাচ্ছিলেন একের পর এক মাস্টারপিস ! প্রথম জীবনের দারিদ্র আর শেষ জীবনের রোগ-যন্ত্রণা, এর মাঝে থেকে রেনোয়া সারাটা জীবন এঁকে গেছেন শুধু আনন্দময় এক পৃথিবী'র গল্প ! তার ব্যাক্তিগত জীবনের কষ্টগুলো থেকে তিনি যেন তার ছবির জগতের মানুষগুলোকে রক্ষা করে যাচ্ছিলেন। তার কথায় - "There are enough ugly things in life for us not to add to them"
সেল্ফ পোর্ট্রেট, ১৯১০
পিয়ের-আগুস্তে রেনোয়া, এক আলোময় পৃথিবীর কারিগর। ক্লাসিকাল একঘেঁয়ে থিম ছেড়ে তিনি বাস্তব পৃথিবীর মানুষগুলোর আনন্দকে তুলে আনলেন চিত্রশিল্পে, আর এই শিল্পের মুড'টাই পাল্টে দিলেন চিরদিনের মত - পাল্টে দিলেন শিল্পীদের আর দর্শকদের অনুভূতিকে দেখার ভঙ্গি ! ১৯১৯ সালে মারা যান এই রং-তুলির জাদুকর।
তবে মারা যাওয়ার আগে এক বিরল সম্মান দেখে যেতে পেরেছিলেন। সেই যে কৈশোর বয়সে আর্টের সমস্ত ওল্ড-মাস্টারদের কাজ দেখার জন্য ল্যুভ'রে ছুটে যেত এক অভাবী কিশোর, মারা যাওয়ার ক'মাস আগে তার সামনে তার পেইন্টিংসও ঝোলানো হয় ল্যুভ'রের গ্যালারীর দেয়ালে।
চক হাতের সেই দর্জির ছেলে যে এখন নিজেই একজন গ্র্যান্ডমাস্টার !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।