সৃষ্টিশীল
কবি আপন মাহমুদের পায়ে কি ফোসকা ছিল? আর হৃদয়ে ক্ষত চিহ্ন? আজ নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে যতদূর মনে পড়ে, তাঁর মধ্যে তেজ ছিল, অহংবোধও। ক্রমাগত সুন্দরের সাধনা করে গেলে, যে দ্যুতি ছড়ায়, ছিল তা। আমি দেখেছি।
আমরা তখন চারটা ডাল-ভাত জুটাতে একটি বহুতল ভবনের তিনতলায় শ্রম খাটতাম।
সমবয়েসী, তবুও পরস্পরকে বস বলে সম্বোধন করতাম। স্পষ্ট মনে পড়ে, অপেক্ষাকৃত ছোট আর শক্ত এক জোড়া জুতা ছিল তাঁর পায়ে। কাকের রঙের। এমন জুতা পরলে, পায়ে ফোসকা না পড়ার কোনো কারণ নেই। ফোসকাকে পাত্তা না দিয়ে গট গট করে চলতে হতো তাঁকে।
পকেটে টাকা থাকত না। দুপুরে ভাত নয়, পেটে পড়ত সিঙ্গারা কিংবা কলা, পাউরুটি আর সকাল থেকে জ্বাল হতে থাকা চা। খেয়ে না খেয়ে, এমনও গেছে দিন।
তখন পাগলা কুকুরের খুব উপদ্রব ছিল। ছাল নাই, অথচ বাঘা নামের একটা কুকুর।
কাজী সাবের পোষা। বের হয়ে আসা জিহ্বা থেকে অবিরল লালা ঝরছে। খালি কুঁইকুঁই করে। কামড়াতে আসে। কেন? এর পেছন দশ কারণ।
একটা হলো : আপনের পক্ষপাত ছিল সুন্দরের প্রতি। সৃজনের ব্যথা ছিল তাঁর। হবে হয়তো, ছোটবেলা নারিকেল আর দুধমালাই আইসক্রিম চেটে চেটে খেতেন। কিন্তু সেই অভ্যাস টেনে, কারও পদলেহন করা যায়, এটা একদম বরদাস্ত করতেন না আপন। এ জন্য বহুবার কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
আমরা মাঝেমধ্যে সেই তিনতলা থেকে নিচে নামতাম। রাস্তার পাশের একটা টঙ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা পান করতাম। আপন সিগারেট ধরাতেন। ব্যথায় ছটফট করতেন। বাতাসে ধোঁয়া ছেড়ে অদ্ভুত হাসতেন।
তাঁর সংবেদনশীল আত্মা মুক্তোদানার মতো ছড়িয়ে পড়ত। এখানো আমার চোখে ভাসে।
কয়েক মাস আগের ঘটনা। রাত তখন নয়টা হবে। জাদুঘরের সামনের আইল্যান্ডের কাছে দেখা।
আমরা চিৎকার করে উঠলাম, কী আচানক প্রায় সমস্বরে, আরে বস্। কোলাকুলি করলাম। আইল্যান্ডে বসলাম। এরপর নানা বিষয়ে কথা। ঠেকল গিয়ে, ধ্যানের শক্তির বিষয়ে।
এই নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ তাঁর। বলেন, বস্ পাইয়া গেছি। মারাত্মক বিদ্যা। আগে আয়ত্ব করি। পরে ধ্যানের মাধ্যমে অন্যের মগজে ঢুকে পড়ব।
সেখানে বসে, সব গলিজ বের করে দেব।
কবি আপন মাহমুদ সেই রাতে জেগেছিলেন। ভোরের দিকে বমি করেছিলেন। হবে হয়তো, এর মধ্য দিয়ে সংকেত পাঠাতে চেয়েছিলেন, তরুণ কবির দল নিজের ভেতরের গলিজ উগরে দাও। আর হৃদয়ের ক্ষত আড়াল করে লড়ো।
আমার মতো তেজ থাকতে থাকতে মরো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।