আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রচলিত জঈফ হাদীস

I want to be a dedicated social worker. আমি ছোট সময় থেকে আমাদের স্থানীয় আলেম ও দেশের প্রখ্যাত আলেম ওলামেদর কাছ থেকে শুক্রবারের খুতবায় এবং বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে কথায় কথায় কিছু কমন হাদীস বলে থাকেন। কিছুদিন হল আমি জানতে পারলাম সে হাদীসগুলো জঈফ বা জাল বা মুনকার বা অযোগ্য বা বাতিল হাদীস। আপনারা শুনে আশ্চর্য হবেন যা আমাদের বুজুর্গগণ কি শিখেছেন আর এখনও শিখাচ্ছেন। যাদের সহীহ ও জঈফ হাদীস সম্পর্কে এই জ্ঞান রাখেন তারা কি করে আমাদের পরকালে নাজাদের জন্য কি শিক্ষা দেন। তাদের ওয়াজ নছিহত আমাদের কি করে পরকালে নাজাতের ফয়ছালা হবে? এসব হাদীস নিয়ে আমি আমার স্থানীয় কিছু আলোমদের কাছে গিয়েছি।

এবং তাদের প্রশ্ন করা হলে তারা যে উত্তর আমাকে দিয়েছেন তা শুনে আপনারা হতবাক হবেন। কেউ কেউ আমাকে বলছেন যে আমি নাকি তাদের বিভ্রান্তিতে নিয়ে যাচ্ছি। এই যদি হয় আমাদের দেশের আলেমদের ঈমানি শক্তি হবে কি করে তাদের দ্বারা ইসলামের সঠিক জ্ঞান বের হবে। কোরআন ও হাদীস সম্পর্কে কিছু জানতে গেলে তারা বিভ্রান্তিতে পরে। এখন হাদীস ও কোরআন এর ব্যাখ্যা সহীহ ভাবে জানতে শুধু সহীহ নিয়ত থাকাটাই জরুরী।

বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। এখন প্রচার মাধ্যম অনেক সচেতন। ইণ্টান্টেএর মাধ্যমে এখন সবই জানা সম্ভব। তাহলে কেন আলেমরা আমাদরে গোমরাহিতে রাখছে। তারাতো নিজেরা সঠিকটা জানবেও না আমরা কিছু বলতে গেলে আমাদের কথাও শুনবে না।

তার কারণ হল আমি বা আমরা মাদরাসায় পড়ি নি। সুতরাং কোরআন ও হাদীস সম্পর্কে আমরা কিছু জ্ঞান রাখি না। এখন সব কিছুরই সহীহ দলিল সহকারে পাওয়া যায়। হাজারও কিতাব লিখা হয়েছে সহীহ ও জঈফের হাদীস সম্পর্কে। আরেকটা মজার বিষয় হল যে, যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় যে কোথায় পেয়েছেন এই হাদীস? তারা উত্তর করে যে, কোন কিতাবে পড়েছি মনে নেই তবে আছে।

চিন্তা করেন তাদের অবস্থা। তারপর আমি চিন্তা করলাম কাঠমোল্লাদের কাছে আর যাব না। খুজে বের করলাম একজন মুফতি সাহেবকে। তার তার কাছে যাওয়ার পর তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি আমাকে সকল কিছু দলিল সহকারে যুক্তির সাথে বুঝিয়ে দিলেন। পরে জানতে পারলাম তিনি ভারত থেকে লেখাপড়া করে এসেছেন।

তার পরপরই যেটা আমার মাথায় আসে সেটা হল আমাদের দেশের কাঠমোল্লারা সঠিকটাতো জানবেই না বরং ভারতের মতন দেশের নাম শুনলেই নাক ছিটকাবে। বলবে তারা নিপাত যাক। কিন্তু এই মুফতি সাহেব ভারত থেকে লেখাপড়া করে এসে সুন্দর করে মানুষকে ইসলামরে সঠিক পথের দিশরী হচ্ছে। আলমাহামদুলিল্লাহ। অনেক কথা হয়ে গেলো।

এখন আপনাদের খেদমতে আমি কিছু আমাদের দেশের আলেম ওলামাদের দ্বারা কিছু কমন জঈফ হাদীসের বর্ণনা করছি। ১নং হাদীসঃ হযরত মোহাম্মদ ( স: ) বলেছেন, তোমরা এলেম বা বিদ্যা শিখতে যাও যদি চীন দেশেও যেতে হয়। হাদীস সম্পর্কে বিস্তরিতঃ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবু আতেকা নামক এক ব্যক্তি। **হাদীস সম্পর্কে বলতে গিয়ে আল্লামা আলবানী ( রহ: ) যিনি বিংশ শতাব্দির সবচেয়ে মহাদ্দেছ ছিলেন তিনি তার "ছিলছিলা যঈফ ওয়া মুজয়" নামক কিতাবের ১ম খন্ডে ৬০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন হাদীসটি বাতিল বা মুনকার। **ইবনে আদী ( রহ: ) তার "আল কামেল" কিতাবের ২য় খন্ডের ২০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে, এই হাদীসটির বর্ণনাকারী হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত।

**ইমাম বুখারী রহ: বলেছেন, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে আবু আতেকা অযোগ্য। **ইমাম ওকাইনি, ইমাম হাকিম, আবু রাজে, সোলেমান, ইয়াহিয়া ইবনে মঈর, ইমাম আবু আহম্মদ, ইমাম ইবনে জউযি ( রহ: ) বলেছেন হাদীসটি দুর্বল এবং বাতিল বা অযোগ্য। ২নং হাদীসঃ রাসূলুল্লাহ ( স: ) বলেছেন, কিয়ামতের ময়দানে জ্ঞান চর্চাকারীর কলমের কালী ও শহীদের রক্তের ওজন দেয়া হবে। তখন শহীদের রক্তের চেয়ে জ্ঞান চর্চাকারীর কলমের কালির ওজন বেশি হবে। হাদীস সম্পর্কেঃ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন- আবদুল্লাহ বিন মাছলেমা।

** আল্লামা ইবনে আলবানী (রহ: ) তার"ছিলছিলা যঈফ ওয়া মুজয়" নামক কিতাবের ৭ম খন্ডে ৩০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন হাদীসটি বাতিল বা মুনকার বা অচেনা। **ইবনে ইউনুছ (রহ: ) বলেছেন: বর্ণনাকারী জাল হাদীস বর্ণনা করত। তার থেকে হাদীস নেয়া জায়েয না। ৩নং হাদীসঃ রাসূলুল্লাহ (স: ) বলেছেন, এক ঘন্টা জ্ঞান চর্চা করা ৬০ বছরের ইবাদতের সমান। ** আল্লামা ইবনে আলবানী (রহ: ) তার"ছিলছিলা যঈফ ওয়া মুজয়" নামক কিতাবের ১ম খন্ডে ৩২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন হাদীসটি বাতিল বা মুনকার।

** ইমাম মউজি (রহ: ) তার "আল মজুয়াত" কিতাবে ৩য় খন্ডে ১৪৪ পৃষ্ঠায় বলেছেন এটি অযোগ্য হাদীস। এছাড়া ইমাম ইবনে হিব্বাল, ইমাম হাকেম, ইয়াহিয়া ইবনে কাত্তাল বলেছেন যে এ হাদীস বর্ণনাকরী হল সাঈদ বিন মায়শারা যিনি হাদীসে ক্ষেত্রে জাল হাদীস বর্ণনা করত। সহীহ হাদীসটি হলঃ রাসুলুল্লাহ স: বলেছেন যে, ইলম অর্জন করা অবশ্যই নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। ৪নং হাদীসঃ এখন যে হাদীসটি বর্ণনা করব তা প্রায়শই আলেম ওলামারা বলে থাকেন, মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামায পড়লে ১ লক্ষ রাকাত নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়, একবার আল্লাহ বললে ১লক্ষ বার আল্লাহ বলার সওয়াব পাওয়া যায়। ১বার কোরআন খতম দিলে ১লক্ষ বার কোরআন খতম দেবার সওয়াব পাওয়া যায়।

সহীহ হাদীসটি হল: রাসুলুল্লাহ স: বলেছেন, যদি কেউ মসজিদুল হারাবে ১ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তবে ১লক্ষ সালাত আদায় করার বরাবর। সুতারং শুধু সালাত আদায় করার কথা বলা হয়েছে। অন্য কোন ইবাদত নয়। ৫নং হাদীসঃ রাসুলুল্লাহ স: বলেছেন, যে কোন সৎ সন্তান যদি মাতা-পিতার দিকে রহমতের নজরে একবার তাকায় তবে একটি নফল কবুল হজ্বের সওয়াব পাবে। তখন সাহাবারা জিজ্ঞাসা করল যদি দিনে ১০০ বার রহমতের নজরে তাকায় তবে? জবাবে নবীজি স: বলেছেন যে আল্লাহ তার এরচেয়েও মহান।

দিনে যদি ১০০বারও মাতা-পিতার দিকে রহমতের নজরে দেখে তবে ১০০ নফল কবুল হজ্ব এর সওয়ার লেখা হবে। হাদীসটি রয়েছে মিশকাত শরীফের ৪৯৪৪নং হাদীসে। এ হাদীস সম্পর্কে পূর্বে ন্যয় বিভিন্ন মুফতি, মুহাদ্দেস যারা বিশ্ব বরেণ্য। যাদের অসংখ্য জাল, জঈফ, বাতিল ও অযোগ্য হাদীস সম্পর্কে কিতাব রয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ যেন আমাদের হক কথা শুনা ও বুঝার তউফিক দান করেন।

আমি ও আমাদের সকলকে যে সঠিক দীনী ইলম শিখার ব্যবস্থা করে দেন। আমিন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।