আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রচলিত ভুলসমূহ

আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বহুল প্রচিলিত কিছু ভুল ধারণা রয়েছে যেমন: মুহাম্মদ (সা: ) আমাদের মত মাটির মানুষ ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন নুরের তৈরী, তিনি (সা: ) মারা যাননি বরং তিনি (সা: ) জীবিত এবং নবী (সা: ) গায়েবের খবর জীবিত অবস্থায়ও রাখতেন এবং এখনো রাখেন (নায়ুজুবিল্লাহ)। যদি কেউ এই আকিদা (বিশ্বাস) রাখে তবে তার ঈমান নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। যদিও তাদের (এবং ছোটবেলা থেকে আমিও এই বিশ্বাস নিয়েই বড় হয়েছি) এই আকিদা গড়ে উঠার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন আমাদের দেশের বেশকিছু হুজুর ও ওলামায়ে কেরাম যারা কোরান হাদিস বাদ দিয়ে মানুষরচিত গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে দিনের পর দিন মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে চলছেন। মহানবী (সা: ) যে মৃত্যুবরণ করেছেন এই বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানে এরশাদ করেছেন: "Everyone has to taste death" (আল-আম্বিয়া:৩৫) “Everyone who is on it (the earth) has to perish.” (আর-রহমান:২৬) “We did not assign immortality to any human (even) before you (Muhammad). So, if you die, will they live forever?” (আল-আম্বিয়া:৩৪) “Surely, (oh Muhammad) you are to die and they (too) are to die.” (আয-জুমার:৩০) “And Muhammad is no more than a messenger, many messengers have already passed away before him; if then he dies or is killed will you turn back upon your heels? And whoever turns back upon his heels, he will by no means do harm to Allah in the least and Allah will reward the grateful.” (আল-ইমরান:১৪৪) প্রিয় নবী (সা: ) এর প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা দেখাতে গিয়ে অনেকেই এই আকিদা রাখেন যে তিনি (সা: ) গায়েবের খবর রাখতেন (এবং এখনো রাখেন) এবং তিনি হাজির-নাজির (মানে তিনি সব জায়গায় হাজির হতে পারেন এবং সবকিছু দেখেন)। আর এই আকিদায় ভর করে অনেক বিদাতি হুজুর মিলাদের মাঝে উঠে দাড়ান এই বিশ্বাস নিয়ে যে নবী (সা: ) আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন যা প্রকারন্তরে আমাদেরকে শিরকের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে কারণ উপরের আয়াতগুলো এটাই প্রমান করে যে মুহাম্মদ (সা: ) জীবিত নেই এবং এই মহাবিশ্বে শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনই চিরঞ্জীব এবং শুধুমাত্র তিনিই সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।

অতএব, মুহাম্মদ (সা: ) কে হাজির-নাজির মেনে আমরা নিজেদের অজান্তেই শিরক এ লিপ্ত রয়েছি। আল্লাহ বলেন: "অনেক মানুষ আল্লাহ এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে" (ইউসুফ:১০৬) আর মহানবী (সা: ) কখনই গায়েবের খবর জানতেন না বরং আল্লাহপাক যতটুকু জানাতে চাইতেন ঠিক ততটুকুই জানতেন, এর বেশি নয়। তিনি (সা: ) যদি গায়েব জানতেন তাহলে তায়েফে গিয়ে রক্তাক্ত হতে হত না, তিনি (সা: ) যদি গায়েব জানতেন তবে তার (সা: ) প্রেরিত ১০০শ জনের মত হাফেজে কুরআনকে (রা: ) ইহুদিরা হত্যা করতে পারত না, তিনি (সা: ) গায়েব জানলে উহুদের ময়দানে তার (সা: ) দন্ত-মুবারক শহীদও হত না। তিনি (সা: ) ছিলেন মানবজাতির প্রতি আল্লাহ এর রহমত সরূপ, একজন বার্তাবাহক, তিনি (সা: ) ছিলেন আবুদ (বান্দা) আর আল্লাহ তার মাবুদ। অতএব, নবী (সা: ) গায়েব জানতেন, এই কথা বলে আমরা প্রকিতপক্ষে তাকে(সা: ) মাবুদের (আল্লাহ) স্থানে বসাচ্ছি যা শিরকেরই নামান্তর।

পবিত্র কোরানে আল্লাহ এরশাদ করেছেন: "আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোনো অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। " (আল-আরাফ:১৮৮) "বলুন, আল্লাহ ছাড়া নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানে না এবং জানে না যে তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে। "(আল-নামল:৬৫) আবার অনেকে নবী (সা: ) কে অতিরিক্তি মর্যাদা দিতে গিয়ে এই আকিদা রাখেন যে তিনি (সা: ) মাটির তৈরী নন বরং নূরের তৈরী।

কিন্তু তারা ভুলে যান যে মাটির তৈরী আদম (আ: ) কে সন্মানিত করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন নূরের তৈরী ফেরেশতাদেরকে সিজদা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাহলে মাটির তৈরী হলে সন্মান বেশি না নূরের তৈরী হলে? তারা বিশ্বাস করেন যে রাসূল(সা: ) আমাদের মত রক্ত-মাংশের মানুষ নন। অথচ, রাসূল(সা: ) নিজেই বলছেন যে তিনি আমাদেরই মত মানুষ ছিলেন (অবশ্যই সন্মানের দিক থেকে নয়): “..I am a human being like you and liable to forget like you. So if I forget, remind me..” (Narrated by Abdullah: Book of Salat: Saheh Bukhari) হযরত আয়েশা (রা: ) এর এই হাদীস দ্বারা ও তা প্রমানিত হয় যে নবী (সা: ) ও আমাদের মত রোগ-শোক ও যাদু দ্বারা আক্রান্ত হতেন: “Allah’s Apostle was affected by magic, so much that he used to think that he had done something which in fact, he did not do, and he invoked his Lord for a remedy” (Narrated by Aisha: Book of Invocations: Saheh Bukhari) যেখানে কুরআন দ্বারা প্রমানিত যে রাসূল(সা: ) গায়েবের কথা জানতেন না, সেখানে আমাদের দেশের তথাকথিত পীরগন গায়েবের জ্ঞান রাখেন বলে দিনের পর দিন মুসলিমদের সাথে পীর-মুরিদের ব্যবসা করে যাচ্ছে আর তাদের স্বপ্নে পাওয়া দ্বীনের নিচে চাপা পরে যাচ্ছে রাসূল(সা: ) এর রেখে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম। আমরা এত এত মাজহাব আর তরীকার মাঝে ভুলতে বসেছি রাসূল(সা: ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণ "আমি তোমাদের জন্য দু'টো জিনিস রেখে যাচ্ছি: কোরান আর আমার সুন্নাহ (হাদিস), যতদিন তোমরা তা আকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা কেউ পথভ্রষ্ট হবে না। " আর আমরা মুসলিমরা আজ কুরআন-হাদিস ছাড়া সব কিছুই আকড়ে ধরছি (মানুষ রচিত গ্রন্থ এবং পীরদের দেখানো তরিকা আর বিদাতি ওলামায়ে কেরামদের নসিহত) নাজাত লাভের আশায়, বেহেশত লাভের আশায়।

এখনো খুব বেশি দেরী হয়ে যায়নি এইসব পীর আর বিদাতি হুজুরদের ছেড়ে কুরআন-হাদিস এর ছায়াতলে এসে নিজের ঈমানকে মজবুত করার। আল্লাহ যেন আমাদেরকে ভালো-মন্দ বোঝার তৌফিক দান করেন এবং আমাদের ঈমানকে মজবুত করেন, জাজাকাল্লাহ.... (Google transliteration use করে বাংলা লিখেছি, তাই ভুল হলে ক্ষমা করবেন, আর আমার জন্য দোআ করবেন সবাই) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।