আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা

এখানে আমি আমাদের সমাজে আর পরিবারে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা নিয়ে লিখেছি৷ আমার অল্প জ্ঞানে এগুলোকে কিছুটা পরিস্কার করে বলার চেষ্টা করেছি৷ এছাড়াও আমরা নব্য আতেলরা চায়ের স্টলে বসে যেসব বিষয়ে ঝড় তুলি, তেমন কযেকটা বিষয় সম্পর্কে লিখেছি৷ এগুলোকে কু-সংস্কার এর কাতারে ফেলা যাবেনা৷ এগুলো আসলে এক মুখ থেকে আরেক মুখ হতে হতে কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে আর আমরা সেটাই শুনি বা জানি৷ কথাগুলোর আদি উৎস জানা গেলে বোঝা যেত কেন কথা গুলো তৈরী হয়েছে৷ আসুন তাহলে আমার লেখা তৃতীয় ব্লগ এ একটু চোখ বুলিয়ে নেই৷ লবন খেলে রক্তচাপ বাড়ার ঝুকি থাকে - কথা টা ঠিক৷ কিন্তু সেটা প্রচলিত আছে এমনভাবে যে এটা সবার জন্যই প্রযোজ্য৷আসলে তা না৷ যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক তাদের ক্ষেত্রে লবন কতটুকু খেলো বা কাঁচা লবন খেলো এটা চিন্তার বিষয় না ৷ যাদের রক্তচাপজনিত রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমসসা হয়৷ তবে তাও খুব একটা সমস্যা করবে না যদি খাবারের তালিকায় কলা, আলু, মটরশুটি, শিম এগুলো থাকে৷ চর্বিমুক্ত, কম চর্বিযুক্ত খাবার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর - আজকাল বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের জন্য আরেক নতুন মূলো হলো এসব খাবার৷ কোনো খাবার কে চর্বি মুক্ত করতে হলে শুধু চর্বি ফেললেই হয়না৷ এই প্রক্রিয়াতে প্রতিটা খাবারের যে আলাদা একটা গন্ধ বা ফ্লেভার থাকে তাও চলে যায়৷ তখন সেই ফ্লেভার টা ফেরত আনতে সেখানে স্বাদবিহীন চিনি আর বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয় যা স্বাস্থের জন্য আরো খারাপ৷ তাই স্বাভাবিক খাবার খাওয়া আর শারীরিক পরিশ্রম করাটাই উত্তম পন্থা মূলো খাওয়ার চেয়ে৷ কারণ জানেন তো মূলো কোন প্রাণীর প্রিয় খাবার? ৩ লিটার - দিনে ৩ লিটার এর কম পানি খেলে কিডনীর সমস্যা হবে- এটা ভুল ধারণা৷ আমরা চা, জুস, দুধ, শাক-সবজি এমন কি ভাত থেকেও পানি পাই যা শরীরের অর্ধেক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম৷ তাছাড়া পানি কতখানি খেতে হবে তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে৷ একজন রিক্সাচালক যদি একজন অফিসে বসে কাজ করা কারো সমান পানি খায় তাহলে তো কড়া রোদের সময় অজ্ঞান হয়ে যাবে৷ আবার যদি দিনে ১৬ লিটার এর বেশি পানি খাওয়া হয় তাহলে উল্টো শরীরের ক্ষতি হবে৷ মিষ্টি খেলে বুদ্ধি বাড়ে - অনেকে বলে ছোট বেলায় বেশি মিষ্টি খেলে বুদ্ধি বেশি হয়, মনোযোগ বাড়ে, পড়াশোনায় ভালো হয়৷ যদি তাই হত তাহলে বাংলাদেশের সব স্কুল এ টিফিন হিসেবে মিষ্টি দেয়া উচিত ৷ এটা যদি বলা হত যে পড়তে বসার আগে এক গ্লাস গ্লুকোস পান করলে ওই সময়টাতে ব্রেন ভালো কাজ করবে সেটা ঠিক হত৷ কারণ খাবার হজম হওয়ার পর গ্লুকোস তৈরী হয়ে ব্রেন এ যেতে যে সময় লাগে তার চেয়ে সরাসরি গ্লুকোস পান করলে কম সময় লাগে৷ কিন্তু ভুল ধারণা মেনে অল্প বয়সে অকারণে বেশি মিষ্টি খেলে হয়ত শুধু পেট এ কৃমি ই হবে৷ আনারস + দুধ = মৃত্যু - আনারস আর দুধ একসাথে খেতে অনেকেই মানা করে৷ কয়েক দিন আগে আমাদের দেশের একটা ইংরেজি পত্রিকায় দেখলাম খুব ফলাও করে আরেকটা মৃত্যুর খবর খুব সুন্দর করে লিখেছে৷ এমন যদি হত তাহলে দেশের সব গুলো ভালো খাবারের দোকান থেকে "পাইনাপেল মিল্কশেক" পানীয়টাই তুলে দেয়া উচিত সরকারের৷ আনারস এর উৎসেচক (এনজাইম) টা পাকস্থলীতে দুধকে দই বা ছানাতে রুপান্তরিত করে৷ একারণে যাদের হজম প্রক্রিয়া দুর্বল বা দুধ জাতীয় খাবার এমনিতেই কম সহ্য হয় তাদের দেখা যায় বমি হয়৷ অনেকে আবার মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে খেতে গিয়ে ভয় পেয়ে আরেক কান্ড ঘটায়! ব্যাপারটা মানসিক শারীরিক দুর্বলতায় হয়ে থাকে আর দোষ হয় নির্দোষ এই দুই খাবারের৷ আঙ্গুল ফোটালে বাতের ব্যথা হয় - আঙ্গুল ফোটালে ছোটবেলায় অনেক ধমক দেয়া হত বয়স বাড়লে বাতের ব্যথা হবে এই ভয়ে৷ এখনো অনেক সহ চিকিত্সককে বলতে শুনি একই কথা৷ জানতে চাইলে সদুত্তর পাওয়া যায়না কারণ আসলেই এর কোনো উত্তর নেই৷ হাত, পা-এর হাড়গুলো একটা প্রকোষ্ঠের ভিতরে যুক্ত হয় যেখানে দুটি হাড়ের মাঝখানে থাকে কিছু তরল পদার্থ৷ যখন আঙ্গুল ফোটানো হয় তখন প্রকোষ্ঠের ভিতরে জায়গা কমে যায় আর তরলের মধ্যে দ্রবীভূত থাকা বিভিন্ন গ্যাস ( অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ) গুলো চাপের কারণে দ্রুত বের হয়ে আসে৷ এ কারণে শব্দ হয়৷ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় গেলে রক্ত থেকে তরলে গ্যাস গুলো ফিরে আসে৷ বাতের ব্যথা হয় এমন কথা কোনো তথ্য আসলে চিকিত্সা শাস্ত্রে মানা হয়না৷ খুব জোরে ফোটালে পেশী ছিড়ে যেতে পারে কিন্তু সেটাতো তো অন্য ব্যাপার৷ দাড়ি কামালে ঘন ও শক্ত হয় - না কাটা দাড়ির মাথা টা থাকে কোন এর মত চিকন ৷ কাটলে যে দাড়িটা বের হয় তার মাথা টা আগের মত না হয়ে বের হয় অনেক টা সিলিন্ডার এর আকার নিয়ে৷ এ কারণে দেখলে মনে হয় অনেক দাড়ি৷ এটাকে দৃষ্টির বিভ্রম বলা যায়৷ আর ছোট দাড়ি একটু শক্ত হয় যে কারণে আরো ঘন হয়ে উঠেছে ধারণা করা হয়৷ একটু বড় হলেই দাড়ি কিন্তু আগের মতই নরম হয়ে যায়৷ বানর তোমার পূর্বপুরুষ - যে লোকটার দোহাই দিয়ে এসব বলা হয় তার পুরো থিওরি পড়েও আমি কোথাও পাইনি যে বানর থেকেই আমরা এসেছি৷ এমনকি সম্মানিত কোনো জীব বিজ্ঞানী এটাকে সমর্থনও করেন না৷ আসলে ওই সময়ের ধর্মীয় গুরুরা ডারউইনকে বদনাম করতেই এটা বলে বেড়াত যে সে বলেছে আমাদের আদিপিতা হলো বানর৷ ডারউইন এর "থিওরি অফ এভোলিউশন" এ লেখা আছে অনেক অনেক আগে কোনো একটা প্রজাতি থেকে জিনগত পরিবর্তনের (মিউটেশন) কারণে আরো কিছু নতুন প্রজাতি তৈরী হয়৷ একারণে দেখা যায় মানুষ আর বানর এর জিনগত কিছু মিল আছে৷ তাই আদিপিতা না বলে দূরসম্পর্কের চাচাত ভাই বলতে পারেন৷ বেদের মেয়ে জোসনা - বাংলাদেশের বিখ্যাত এই চলচিত্র বা ভারতীয় অনেক চলচিত্রে দেখানো হয় অভিনেতা/অভিনেত্রীকে বাঁচাতে সাপুড়ে বাঁশি বাজায় আর বাঁশির সুরে পাগল হয়ে সাত-সমুদ্র তের নদী পার করে নির্ভুল ভাবে পথ চিনে সাপ এসে তার বিষ তুলে নেয়৷ জন্মবধির সাপ গুলো কিভাবে এই কাজ করে তা কেবল পরিচালকরাই বলতে পারবে৷ সাপ বাস্তবে শুধু সাপুরের বাঁশি, হাত বা যেকোনো কিছুর নড়াচড়ার কারণে যে কম্পন তৈরী হয় সেটা বুঝতে পারে আর সে অনুযায়ী মাথা নাড়ায় আর ছোবল দেয়৷ চাঁদের বুড়ি কি দেখতে পায় - চাদের বুড়িও কি এই বয়সে কম দৃষ্টিশক্তি নিয়ে দেখতে পায় নাকি চশমা ব্যবহার করে চিনের প্রাচীর দেখতে? এপোলো ১৩-র কোনো নভোচারী কখনই বলেননি তারা চিনের প্রাচীর দেখতে পেয়েছেন৷ এমন কি পৃথিবীকে কাছে থেকে প্রদক্ষিনকারী কোনো যান থেকেও প্রাচীরটা দেখা যায়না৷ পরীক্ষামূলক একটা নভোযান অল্প কিছু দূর গিয়েই ফিরে আসে আর তার একজন নভোচারী বলেন, "এখান থেকেও চিনের প্রাচীর দেখা যাচ্ছে৷" সে কথাটাই চাঁদ থেকে দেখা যায় বলে প্রচলিত হয়েছে৷সুন্দরবনটা দেখা গেলে ভালো হতো৷ তাহলে "নাম্বার ওয়ান সাকিব খান"....সরি নাম্বার ওয়ান সুন্দরবন হতে আর বাধা থাকত না৷ ) পেট ভরে নাকি চোখ ভরে - খেতে বসলে আমরা কখন বুঝি যে পেট ভরে গেছে? খাবার হজম হয়ে তারপর পুরো শরীরে যখন প্রয়োজন মাফিক পুষ্টি পৌছাতে থাকে তখন মস্তিষ্কে চিঠি (!!) পাঠায় যে আর খাওয়া যাবেনা৷ এতে কমপক্ষে ২০ মিনিট লাগতে পারে৷ তার আগেই আমাদের চোখ বলে দেয় এই পরিমান খাওয়া হয়েছে আর খাওয়া ঠিক হবেনা৷ দেখা গেছে চোখ বেধে খেতে দিলে ৮২% লোকই অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছে৷ তাই চোখ ই আসলে বলে দেয় যে কতখানি খেতে হবে৷ অনেকের অবশ্য চোখ ও বলে দিতে দেরী করে৷ "চোখের ক্ষুধা বেশি" এই কথাটার উত্পত্তি কোথা থেকে বুঝতেই পারছেন৷ লাল রং জীবনঘাতী - গ্রামের দিকে এখনো প্রচলিত যে লাল রং এর কাপড় পড়ে ষাড় এর সামনে যাওয়া যাবেনা৷ এতে ষাড় উত্তেজিত ( আগে সংবাদ পত্রে এভাবেই লেখা হতো ) হয়ে আপনাকে জখম করতে পারে৷ আসলে ষাড় বর্নান্ধ হওয়ায় তার কাছে লাল রংটা ব্যাপার না৷ ষাড় বেশিরভাগ সময় নিজের ক্ষতির আশংকায় উত্তেজিত হয়ে অন্যকে জখম করে৷ চিউইংগাম গিলে ফেললেই মহাবিপদ - এখনো মনে হয় সেইসব ভয়ের দিন যখন শুনতাম চিউইংগাম গিলে ফেললে নাকি সেটা পেটে রয়ে যাবে আর কয়দিন পর পেট ফুলে উঠবে নয়তো পেটের ভেতরে সব জোড়া লেগে একটা ভজঘট পাকাবে৷ ছোটবেলায় "পেটজট" এর এই ভয় পায়নি এমন কম লোক ই আছে৷ চিউইংগাম আসলে হজম হয়না৷ অন্যান্য বর্জ পদার্থের সাথে বের হয়ে যায়৷ শুধুমাত্র ভারী ধাতু যেমন পারদ অনেক দিন পেট এ রয়ে যায়, এমন কি পাকস্থলী ক্যান্সার এর কারণ ও হতে পারে৷ আমি = আলবার্ট আইনস্টাইন - অনেকে কোনো পরীক্ষা খারাপ হলে বা কোনো কাজে সফল না হলে এই উদাহরণ টানে, আসলেই টানে৷ কয়দিন আগে বন্ধুদের আড্ডায় একজন বলল, "আইনস্টাইন অংকে খারাপ করেও এত বড় বিজ্ঞানী আর আমি পারবনা কেন?" আইনস্টাইন কখনই অংকে খারাপ করেননি৷ তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে দুই রকম ক্যালকুলাস এ দক্ষতা অর্জন করেন৷ যদিও তিনি ১৮৯৫ সালে একটি পলিটেকনিক- এ পরীক্ষা দিয়ে বাদ পড়েন বয়স কম হওয়াতে, কিন্তু সে পরীক্ষাতেও তিনি অংকে খুবই ভালো করেন৷ বাঁশি বাজাচ্ছিলো? কনসার্ট করেনি? - শেষ করতে চাই স্কুল এর সেই ট্রান্সলেশন টা দিয়ে "রোম যখন আগুনে পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলো" ৷ মতান্তরে ভায়োলিন বাজাচ্ছিলো৷ ইতিহাস ঘটলে দেখা যায় সেই সময় বাঁশি বা ভায়োলিন এর প্রচলন ছিলনা৷ এগুলো অনেক পরে আসে৷ তাছাড়া নিরো আগুনের খবর পেয়ে ছুটে যায় রোম এ৷ নিজের টাকাতেই ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার আর থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে৷ এই ঘটনার পর ই রোম শহরে এরকম দুর্ঘটনা ঠেকাতে অনেক উন্নত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ এত ভালো আর জনপ্রিয় শাসক কে নিয়ে এমন কথা কিভাবে প্রচলিত হলো টা আজ ও রহস্য৷ ধন্যবাদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।