আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিটি বাস ইন চিটাগাং

সিটি বাস। নিম্ম-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের এক পরিচিত বাহন। আমরা যারা এই বাস সেবা (!!!)নিয়মিত গ্রহন করি তারাই বুঝি এই সেবার মান কতটুকু উন্নত ও সহনীয়। ধরা যাক একজন যাত্রী আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দার হাট যাবে সিটি বাস এ করে, এই সামান্য পথটুকু যেতে তার সময় লাগবে সোয়া এক ঘনটা থেকে দেড় ঘণ্টার মত। আপনারা ভাবছেন নিশ্চয়ই অনেক জ্যাম।

মোটেও না। এখনও চট্টগ্রাম শহরের জ্যাম ঢাকা শহরের অবস্থায় যায়নি। এই বিলম্বের কারন অন্যখানে। প্রথম স্টপেজ থেকে ছাড়ার কালে যতক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী ঠাসাঠাসি না হবে ততক্ষন কোন যাত্রী বাস ছাড়ার কল্পনা করে না। ওইসময় বাস এক কদম সামনে যায় ত দু কদম পেছনে আসে।

যাতে যাত্রীরা বুযে এই ছাড়ল বলে। মাঝে মাঝে পেছন থেকে কোন একজন যাত্রী অধৈর্য হয়ে বলে উঠে ‘এই ড্রাইভার, গাড়ি ছাড়িস না কেন’,সাথে অশ্লীল গালির কথা নাই বা উল্লেখ করলাম। তারপর চলার পথে ৫ কিলোমিটারএ অন্তত ৩০ জায়গায় থামে, প্রতি বার অন্তত কম করে হলেও ৫ মিনিট সময় নিয়ে। যাত্রীদের নানা কথা ও গালাগালি না হলে সে চলতেই চায় না। আরেকটা সমস্যা যেটা যাত্রীরা প্রায়ই সম্মুখীন হয় সেটা হল টাকা দিয়ে বাকি টাকা ফেরত না পাওয়া।

অন্তত একটা না একটা বাহানা দেখাবে, ভাংতি নেই, অপেক্ষা করেন পরে দিচ্ছি। কিন্তু যাত্রী যদি এক টাকা কম দেয় তাহলে সম্মান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পরে। ‘ভাংতি টাকা ন লই গারিত কিল্লাই উইত্তু’। তারপর ত কন্ডাক্টর এর নানা অপ্রিয় কাণ্ডকারখানা। সাইড হই দারান, চাপি খারান, উযু হই দারান, আরও পিছনে জান, জাগা দেন আরও নানা বাহানা সে করতে থাকে।

কেও উচ্চবাচ্য করলে তার আর রক্ষা নেই। একটা না একটা কটু কথা তাকে শুনতে হবে। আর আমাদের যাত্রীরা দর্শক হয়ে সে কাণ্ড দেখে। কেও প্রতিবাদ করে না। অজানা কারনে করার সাহসও পায়না।

কারো ইচ্ছা থাকলেও কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলার সাহস করে না। কারন তারা তারা মাসতুত ভাই, যা পায় ভাগে যোগে খায়। মাঝে মাঝে কোন কোন যাত্রী চরম সাহস দেখিয়ে ফেলে। এই যেমন সেদিন বাসে করে যাচ্ছিলাম মার্কেট থেকে অক্সিজেন। হটাত দুই নম্বর গেটে এক যাত্রীর তর্কাতর্কি থেকে ড্রাইভার এর সাথে ধস্তাধস্তি।

ড্রাইভার পরোয়া না করে গাড়ি দিল টান। এ কিলায় ত ড্রাইভার টানে। একসময় দেখি গাড়ি এলোমেলো চলে একবার বায়ে একবার ডানে। সবার মধ্যে ভয় ঢুকে যায়। ড্রাইভার আবার গাড়ি উল্টিয়ে দেয় কিনা।

পেছন থেকে আমাদের কয়েক জনের অসহায় আরতনাদ। ‘ড্রাইভার গাড়ি থামাও, ভাই অরে আর মাইরেন না’। কে শুনে কার কথা। সমানে মাইর চলতেই আছে আর ড্রাইভার গাড়ি এলোমেলো চালাতেই আছে। কয়েকজন উপায়হীন হয়ে বাস থেকে লাফ মারার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং লাফ দিলাম চলন্ত গাড়ি থেকে।

পরলাম গিয়ে রাস্তার ধারে। হাতে পায়ে সামান্য একটু চোট লাগল, আর গাড়ি গিয়ে থামল এক পেট্রোল পাম্পের পিছনে। দউরে গিয়ে দেখলাম ড্রাইভার অর্ধমৃত হয়ে স্টিয়ারিং এর উপর পড়ে আছে। কেও বলে আছে, কেও বলে নাই। আমি চলে এলাম অকুস্তল থেকে।

মরলে পুলিশের ঝামেলা। কে পড়ে সে ঝামেলায়। তবে একটা লাভ হয়েছে, আমার ফিটনেস টা পরীক্ষা হয়ে গেল। এত উপর থেকে লাফ দিলাম তাও চলন্ত গাড়ি থেকে, একটু চোট ছাড়া আর কোন ক্ষতি হয়নি। ওয়াও!! হাত পা ত ভাঙতে পারত।

যা হোক, বাসায় গিয়ে আমার কন্যাতুল্য ৩ বছর বয়সী স্নেহময়ী ভাতিজির সেবা শুস্রসায় অল্প সময়ে ভাল হয়ে গেলাম। এবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আর একবার ত ট্রেন এ চাপা পরার অবস্থা। ষোলশহর রেল গেট এর উপর বাস এসে স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল, অইদিকে ট্রেন এর হুইশেল এবং ট্রেন বেশি হলে একশ হাত দুরে। কি করব ভাবতে পারছি না, গাড়িও স্টার্ট হয় না।

আমিও আমার সহকর্মী রাশেদ দিলাম লাফ,সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট । ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা থেকে সবাই রক্ষা পেলাম। এই হল চট্টগ্রাম শহরের সিটি বাস সেবা। সকালে ত অফিসে যেতে হয় সি এন জি চালিত ট্যাক্সি তে। তারাও আরেক ধরনের কুশিলব।

সে কথা না হয় পড়ে আলাপ করব। যে কথা বলছিলাম, এই বাস ওয়ালারা আপনার সময় অসময় বোঝে না। আপনার করমস্থলে দেরিতে গেলে কি অবস্থা হবে সেটা তারা বুঝতে চায় না বা বুঝার চেষ্টাও করে না। তাদের দরকার টাকা, আপনার কষ্ট তাদের কাছে ভিত্তিহিন। আমি মনে করি এর পিছনে সংশ্লিষ্ট মালিকদেরও একটা দায়িত্বহীনটার লক্ষণ দেখা দেয়।

একটা বড় অংকের টাকা মালিক কে দিতে হয় তারপর যা বাচে টা ড্রাইভার হেল্পার মিলে ভাগ করে। এর মধ্যে জ্বালানি আর ছোট খাট রক্ষনাবেক্ষন খরচ ত আছেই। আসলে এই জনদুরভুগের জন্য একটা চেইন দায়ী বলে মনে করি। সরকার-মালিক-চালক। এই তিন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট পলিসি গুলো যথাযথ প্রয়োগ করতে পারলে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যাবে।

এইখেত্রে সিটি কর্পোরেশন উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে পারে। স্ট্যান্ডিং সার্ভিস বন্ধ করা খুব দরকার। গাড়ির ইন্টারনাল ডেকোরেশন উন্নত করা দরকার। প্রত্যেক স্টপেজে বড়জোর এক মিনিট দাঁড়ানোর বিধান রাখা উচিত। টিকেট সিস্টেম চালু করা উচিত।

সর্বোপরি ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ খুব বেশি জরুরি। তাহলে উচ্চবিত্ত লোকজন বাস এ চড়বে, মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা কমবে, ট্রাফিক জ্যাম কমবে। উপরিউক্ত বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের বিবেচনা করলে অনেকাংশে এই সিটি বাস সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করি। তাহলে সীমিত আয়ের লোকজনসহ অনেকে উপকৃত হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.