আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

****ছুতে ইচ্ছে হয় হারিয়ে যাওয়া সেই মুহুর্তগুলোকে****

**তবুও কিছু কথা না বলাই থেকে যায়** দিনগুলো ঠিক এমন করেই একদিন দু দিন কেটে যাবে। সময়কে তো আর কেও আটকে রাখতে পারেনা যে ইচ্ছা হলেই কেও তার খুব মজার ক্ষনটির সাথে নিজেকে বেঁধে ফেলবে। অথবা একটি পর্যায়ে এসে সময়কে আর বাড়তে দেবেনা। কিংবা খুব প্রিয় কোন মুহুর্তেই এসে চিরদিনের জন্য থেমে যাবে। ইসসসস এমন যদি করা যেত কতই না মজা হত!!!ধুর অবাস্তব সব ভাবনা!! যদি জানতে চাওয়া হয় ‘আপনি কোন সময়টায় আবার ফিরে যেতে চান?’ জানি সবাই একটাই উত্তর দেবে সেটা হচ্ছে ছোটবেলায়।

কারন এই সময়টা যখন হারিয়ে যায় বা অতীত হয়ে যায় ঠিক তখনই কেবল বোঝা যায় সেই হারানো সময়টা কত মজারই না ছিলো। কতটা প্রিয় ছিল !! আমারও মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় ছোট বেলায় ফিরে যেতে। বিশেষ করে স্কুল লাইফটাতে। কারন এই সময়টাই ছিল সবচেয়ে বেশি মজার আর মনে রাখার মত। স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যেত আমাদের বান্দরামী ।

আর টিফিন টাইমটা ছিলো আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি বান্দরামী করার সময়। ঘন্টা পড়ার সাথে সাথেই এক দৌড়ে কে কার আগে চটপটি খাইতে পারে সেই প্রতিযোগীতায় নামতাম। আমাদের ১৩ জনের একটা গ্রুপ ছিলাম। সবাই বলত আন লাকি থার্টিন। কিন্তু আমরা বলতাম আমরা হচ্ছি লাকি থার্টিন যত ঝগড়াই হোক ঝাটিই হোক বেলা শেষে ঐ এক সাথ হবই।

যাই হোক আমাদের তেরো জন ফ্রেন্ডের মধ্যে আমি আর আরেকজন আমরা দুই জন ছিলাম বেশি ফাজিল টাইপের । অন্যদের টিফিন সব গপ গপ করে গিলতাম অথচ তাদের দেয়ার বেলায় কিপ্টার মতন সামান্য একটু দিতাম। কেও কিছু কইতেও পারতো না সইতেও পারতোনা তবে আমরা মজা করে বাকি ১১ জনের টিফিনের সব সাবার করতাম। তবে একটা কথা আমরা কিন্তু খাদক ছিলাম না!! সারাদিন বান্দরামি করে বেড়ালেও পড়ার বেলায় ঠিক ঠিক পড়া নিয়ে হাজির থাকতাম বলে স্যার ম্যাডামদের কাছে দুষ্টামীর জন্য বোকা খেলেও আদরের পরিমানটা বেশিই ছিলো। স্কুল জীবনে শুধু মাত্র দুষ্টামীর জন্য আমি আর সেই আরেকজন কয় হাজার বার যে কান ধরতে হইসে সেটা আর নাই বা বললাম।

এক দিনের ঘটনা বলি। স্কুলের সবচেয়ে বেশি বোরিং ম্যাডাম ছিলেন রাবেয়া ম্যাডাম। কিন্তু আমাদের জন্য উনার ক্লাস মানেই ছিল খেলাধুলার ক্লাস। উনার ক্লাসেই আমরা অনেক বেশি মজার সময় পাস করতাম। উনার কাজ হচ্ছে ক্লাসে এসে বই হাতে নিয়া টানা রিডিং পড়া।

কে শুনছে বা কে কি করছে সেদিকে উনি কখনই খেয়াল রাখতেন না। তো উনার ক্লাসে আমরা ফ্রেন্ডরা সবসময় সবার কাছ থেকে ১ টাকা উঠিয়ে টয়লেটে যাওয়ার নাম করে তেতুল কিনে এনে ক্লাসে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে মজা করে খেতাম। আর গেটের দারওয়ান ছিলো আমাদের দলে। আর থাকবে নাই বা কেন। তারও জানা আছে আমাদের কথা না শুনলে তার পরিনতি কেমুন হবে তবে তারে মাঝে মইধ্যে একটা দুইটা সিঙ্গারা ঘুষ দিতাম।

যাতে কামের সময় তার হেল্প পাই। এবং পাইতামও। ঘুষ খেয়ে আমাদের সব কথাই শুনতো । বেচারা দারোওয়ান আঙ্কেল!! যাই হোক একদিন ম্যাডাম চেয়ারে বসে সেই চিরাচরিত সিস্টেমে হাতে বই নিয়া গুন গুন করে পড়ছিলেন। পেছনে বসায় আমাদের কারও কানে কিছু না ঢূকলেও এমন ভাব যে খুব মনোযোগ দিয়ে সব শুনছি।

কিন্তু কিছুক্ষন পর দেখি উনি ঘুমে ঝুরতেছেন। আর পায় কে!! টেনিস বলটা বের করে ক্লাসের মধ্যেই ক্যাচ ক্যাচ খেলা শুরু করে দেই। আমরা খেলছি আর উনি মজার ঘুম দিচ্ছেন। বাহ এরকম ইন্টারন্যাশনাল ক্লাস মনে হয় আর কোন স্কুলেই হয়না। এমন করতে করতে এক সময় বলটা গিয়া সোজা ম্যাডামের মাথায় গিয়া পড়ে।

ধুম করে তাহার মজার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঐ দিনই বুঝতে পেরেছিলাম রাবেয়া ম্যাডামও যে রাগতে পারেন রাগের চোটে আমাদের কি শাস্তি দিয়েছিলেন সেটা আর বলা যাবেনা। নিজের সম্মান কোন ছাগলে পাংচার করতে চায় কন ?? আহারে কি জানি সেই ম্যাডামটা এখন কেমন আছেন কোথায় আছেন!!যেখানেই থাকুক অনেক ভালো থাকুক !! আরেক দিনের ঘটনা। আমাদের একটা অভ্যাস ছিলো টিফিনের সময় শেষ হবার যে ঘন্টা দেয় ঐ ঘন্টা পড়া মাত্রই কে কার আগে দৌড়ে গিয়া ক্লাসে যাইতে পারে সেই রেস লাগা। এমুন ভাব যে আগে যাইতে পারলে গোল্ড মেডেল দেবে কেও!! তো একদিন আমি আর আমার সেই ফ্রেন্ড ঘন্টা শুনে দৌড়ে ক্লাসে যাচ্ছিলাম।

পিছে ফিরে দেখি সে অনেক পেছনে পড়ে গেছে। আমি সিড়ির কাছের দেয়ালে নিজেকে আড়াল করে ভাবছিলাম তারে ভয় দেখামু। লুকিয়ে লুকিয়ে তার হাটার শব্দ পাচ্ছিলাম। শব্দটা ক্রমেই কাছে আসছে। এক সময় বুঝলাম এবার ভয় দেখানো যায়।

যেই ভাবা সেই কা্জ চোখ মুখ বন্ধ কইরা চিৎকার দিইয়া এমুন জোরে ভাউ করলাম যে না ভয় পাইয়া যাবে কই!!কিন্তু চোখ খুলে তাকাই দেখি ওমা আমার সামনে তো আমার সেই ফ্রেন্ড টা নেই। এ যে আমাদের স্কুলের সবচাইতে রাগী ম্যাডাম নাসিরা ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন। যার ভয়ে সারা স্কুলের পুলাপান ঠান্ডা হইয়া থাকতো। এমন জোরে ভয় দেখাইলাম জীন ভুত সবাই ভয় পাবেই পাবে। ম্যাডামও ভয় পেয়েছিলেন আর সেটা দেখে আরেকটু পিছে মিজান স্যার দাঁড়িয়ে মুচকী মুচিকি হাসছিলেন।

আর এদিকে আমার তো ম্যাডামের ঝারির ভয়ে মরে যাওয়ার দশা। হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে আসছিলো। আমার করুন দশা দেখে ম্যাডামের মনে হয়ত করুনার উদ্রেক হয়েছিলো । তাই তিনি তেমন কিছু বলে শুধু বললেন-‘ তোমরা এরকম দুষ্টামী না করলে হয়না!!যাও ক্লাসে যাও..’ সেইবারের মতন মাইরের হাত থেকে বাঁইচা গেসিলাম কত শত স্মৃতি!! এই ম্যাডামটাই যখন স্কুল ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান তখন সারা স্কুল তাঁর জন্য অনেক অনেক কান্না করেছিল। ভালোবাসা মনে হয় এমনই।

যখন কাছে থাকে তখন বুঝা যায় না কিন্তু যোজন যোজন দূরে চলে গেলে তখন মনে হয় মানুষটার প্রতি যে কতটা তীব্র ভালোবাসা জমে ছিল ক্লাস নাইনে থাকতে দল বেধে ৫জন একসাথে ইংলিশ পড়ার জন্য রশিদ স্যারের বাসায় যেতাম। ওই সময়টাও অনেক বেশি মজার ছিলো। এইখানেও বান্দারামী পিছু ছাড়েনি। একদিন আমি আর আমার ঐ ফাজিল ফ্রেন্ডটাই স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। আর বাকিরা কেও যায়নাই।

স্যার অনেক তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেয়ায় দুই জনে মিলে প্যান করলাম কার বাসায় যাওয়া যায়। একটাই উদ্দেশ্য বিকালে বাসায় গেলে তো কিছু না কিছু নাস্তা পানি দেবেই। এই ভেবে দুই জন ফ্রেন্ডের বাসায় হানা দিলা কিন্তু পরিতাপের বিষয় সেই দুই বাসা থেকে খালি মুখে ফেরত আসতে হইলো। এরপর কইলাম তনিমার বাসায় যামু। এই মেয়ের বাসায় গেলে কখনই খালি মুখে যেতে দেয় না।

যেই ভাবা সেই কাজ। গেলাম। দেন অবশেষে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হইলো। এখনও মনে আছে কি খেতে দিয়েছিলো। স্যান্ডউইচ বিস্কীট চানাচুর আর চা।

আমরা চা নিয়ে ছাদে গিয়ে ৩ জনে মিলে বসে বসে খেলাম। ইসস মনে হচ্ছে দিনটা যেন চোখের সামনে ভাসছে !! মনে পড়ে ছোট বেলায় আমরা বোনরা সারাক্ষনই এক জন আরেকজনের পিছে লেগেই থাকতাম। টুকটাক ব্যাপার নিয়েই কাউ মাউ লেগেই থাকতো। মানে ঝগড়া আর কি!আহা কি সেই মধুর ঝগড়া। যার সাথে ঝগড়া হত রাগের চোটে জারি করা হত তাকে যে যে জিনিস দিয়েছিলাম সেই জিনিসগুলা যাতে ফেরত দেয়।

মনে আছে একদিন আমি স্কুলে যাওয়ার আগে ফ্রিজের কোনায় আইস্ক্রীম লুকিয়ে রেখেছিলাম এসেই যেন খেতে পারি অথচ ওটা বের করে খেতে গিয়ে দেখি নাই। সে কি রাগারাগী। এমন মেজাজ খারাপ হয়েছিল যে মারাত্মক চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছিলাম। রাগারাগি দেখে কেওই বলছিলনা কে খেয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ভাইয়া গিয়ে দোকান থেকে সবার জন্যই আইসক্রীম নিয়ে আসে।

আরে আমি তো চাইছিলাম একা একা সবাইরেই লোভ দেখাই খাবো অথচ কি হইলো!!এখন কিনা সবাই মজা করে খাচ্ছে। আইসক্রীম ফ্রীজে না দেখে যতটা না রাগ হয়েছিলো সবাই খাচ্ছে দেখে তার চেয়েও দ্বিগুন রাগ হল। কি ভেবেছিলাম আর হইলোটা কি !!কিন্তু কিছুই করার ছিলো না তাই অগত্যা চুপচাপ খেলাম। ছোটবেলার সেই হিংসাত্মক কথাগুলা মনে পড়লে এখনও হাসি পায়। আমার ছোটবেলার সবচেয়ে মজার স্মৃতি আমার আম্মুকে নিয়ে।

কখনই ভুলবোনা। সবার আম্মুই সবার কাছে সেরা জানি কিন্তু আমার আম্মু মনে হয় একটু বেশিই ভালো। এটা কেন বলেছি যদি কোন দিন সময় পাই তাহলে অন্য কোন পোস্টে বলবো। আমার ম্যাট্রিক আর ইন্টার এর সময় প্রতি পরীক্ষায় আম্মুর হাত ধরে পরীক্ষার হলে যেতাম। প্রতিটা পরীক্ষা শেষে বাসায় ফেরার সময় আম্মুর একটা কথাই সবসময় জিগেস করতেন 'কোন আইস ক্রীম খাবা নাকি সেভেন আপ??' যেটা চাইতাম আমাকে রিক্সা ঠিক করে বসিয়ে রেখে নিজে দোকানে গিয়ে সেটা কিনে নিয়ে আসতেন।

অথচ এখন কত শত পরীক্ষা দেই সেই আম্মুর কাছ থেকে পওয়া আইস্ক্রীম আর খাওয়া হয়না। আর পাওয়া হয়না সেই মমতা ভরা কন্ঠে জিজ্ঞাসা ‘কেমন হল পরীক্ষা’কিছু নিষ্ঠুর সময় কেড়ে নিয়ে যায় না ভোলা কিছু মুহুর্তকে!! মাঝে মাঝে মনে হয় কেন বড় হলাম। সেই মিষ্টি সময় গুলো কেন এত তাড়াতাড়ি হারিয়ে গেল!!কেন বারে বারে নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাই ছোটবেলার সেই মুহুর্তগুলোর মাঝে। আজ যেন অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। ছোট বেলার সেই বন্ধুরা সব অনেক অনেক দূরে চলে গেছে।

কারও জীবনে নেমে এসেছে অমানিষার ঘোর অন্ধকার। কেও বা আবার হয়েছে বিদেশ বিভূইয়ে। কারও সাথে আবার হাজারও কথা বলার ইচ্ছা জাগলেও কথা আর বলা হয়ে উঠেনা। জানি শত ব্যস্ততার মাঝে একবার হলেও সবারই মনের ছোট্ট ঘরে ঠিকই হানা দিয়ে থাকে সেই ক্ষনগুলো। হারিয়ে যাওয়া মুহুর্তগুলো।

যেগুলো হারিয়ে গেলেও এই হৃদয়ের মাঝ থেকে বিন্দু মাত্রও হারাইয় নি। !!! **ভেবেছিলাম ঘড়ির কাঁটা যখন ১২ টা ছুবে তখন পোস্ট করবো। কিন্তু সেই পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছিলোনা তাই পোস্ট করে ফেললাম। আর হ্যা আরেকটা কথা এতক্ষন যে বকবকাইলাম এর জন্য কেও ডিসটার্বড হলে তার কাছে আগে থেকেই স্যরি বলে নিচ্ছি। ** একটা গান শেয়ার করলাম।

খারাপ না ভালোই শুনতে পারেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.