আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক্সট্রিম ট্রেকিং,বান্দরবান-২০১২...(শেষ পর্ব)

কিছু আলো জ্বলে নিভে থেকে। এক্সট্রিম ট্রেকিং,বান্দরবান-২০১২...(প্রথম পর্ব) এক্সট্রিম ট্রেকিং,বান্দরবান-২০১২...(প্রথম পর্ব) আমাদের পরবর্তি টার্গেট রুমানা পাড়ার.যাত্রার শুরুতেই পরলাম গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে.শুরু করলাম ট্রেকিং.পাসিং পাড়ায় যেয়ে হালকা খাবার খেয়ে আবার হাটা শুরু.এবার খাড়া পাহাড় নামা.রাস্তাটা খুবই অসাধারন.অনেকটা রেইন ফরেস্টের মত.এর মাঝে একটি ঝিরিপথ,সাথে ছোট একটি ঝর্নার কাছে চলে আসলাম.এই ঝর্নাটা দেখার জন্য আমি,রেজওয়ান ভাই আর গাইড আপেল রওনা দিলাম,বাকীরা উপরে অপেক্ষা করছিলো.ঝর্না দেখে আবার রওনা দিলাম রুমানা পাড়ার উদ্দেশ্যে.পথে পেলাম সুংসাং পাড়া.পাড়াটা একটু আধুনিক আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে হলো.সুংসাং পাড়া পার হয়েই আর্মি ক্যাম্প.ক্যাম্পে রিপোর্ট করে আবার হাটা.আর্মি ক্যাম্প থেকে রুমানা পাড়া যাওয়ার রাস্তাটা জোকের অভয়ারন্য.রুমানা পাড়া পৌছালাম দুপুর ২:১৫ তে.আমাদের প্ল্যান ছিলো রুমানা পাড়া থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে ওখান থেকে রওনা দিয়ে রামানা পাড়ার ৪ টা ঝর্নার দেখে রুমা খাল ক্রস করে লুথসামি পাড়া হয়ে দার্জিলিং পাড়ায় উঠবো.কিন্তু রুমানা পাড়ার কারবারির সাথে কথা বলে জানলাম এইভাবে যাওয়া সম্ভব না,কারন রাস্তা ভয়াবহ খারাপ.যদিও আমরা এক্সট্রিম ট্রেকিং এর জন্য বের হইসিলাম কিন্তু রাস্তার বর্ননা শুনে দলের সিনিয়রদের সিদ্ধান্তের জন্য বসে ছিলাম.ডিসিশন হলো আমরা যে পথে আসছি ঠিক সেই পথেই বগালেক ফিরবো,সাথে সাথে মাথায় হাত.দুপুরের খাবার খেয়ে রুমানা পাড়া ঝর্নার দিকে আগালাম. বৃষ্টিকে মোরা করিনে ভয়!!! পাসিং পাড়ার পাশ দিয়ে সেই খাড়া পাহাড় বেয়ে নামা কাঠের ব্রিজ,নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝিরি সেই ছোট ঝর্নার উপরে দাঁড়িয়ে আমি আর রেজওয়ান ভাই ঝর্নার উপর থেকে জোক মামা সুংসাং পাড়া সুংসাং পাড়া আর্মি ক্যাম্প দুপুরের খানা আগালাম.ট্রেকিং অবস্থায় অনেক বাজে রাস্তা পার হইসি,কিন্তু রুমানা পাড়ার মত দূর্গম রাস্তা আমি দেখিনাই.এক কথায় ভয়াবহ রাস্তা.এর সাথে জোকের ভয়.শেষ পর্যন্ত পৌছালাম রুমানা ঝর্নায়.সময়ের অভাবে রুমানা পাড়ার ৪টা ঝর্নার মদ্ধে দুটো দেখে ফিরতি পথ ধরলাম.রুমানা পাড়ায় পৌছে রেডি হলাম পরবর্তি এক্সট্রিম ট্রেকিং এর জন্য.কিছুক্ষন পরেই শুরু হবে কঠিন এক যাত্রা.টার্গেট বগালেক.রুমানা পাড়া থেকে রওনা দেবার আগে রুমানা পাড়ার সবার মুখে ছিলো একটাই কথা ‘আপনারা বগা যাইতে পারবেন না’.আমরা সবাই ছোট একটা হাসি দিয়ে কথাটার প্রতিউত্তর দিয়ে রওনা হলাম.শুরু হলো হাটা.আর্মি ক্যাম্পের আগে হঠাৎ শুরু হলো বৃষ্টির মত জোকের আক্রমন.হাত পা থেকে সমানে জোক ফালানো হচ্ছে,যার পুরাটাই করেছে রুবেল ভাই.একটা সিন জীবনেও ভুলবো না,রুবেল ভাই আমার আর উনার জোক ফালাচ্ছে আর দুইপাশ দিয়ে সেই জোকগুলা আবার আমাদের দিকেই আসছে . এক সময় বুঝলাম আর্মি ক্যাম্পের আগ পর্যন্ত দাড়ানো যাবেনা.আর্মি ক্যাম্পে পৌছাবার পর শুরু হলো জোক ছুটানোর পালা.সেই সময় আর্মিরাও আমাদের সাহায্যে এগিয়া আসলো.কথা নাই বার্তা নাই ঠিক আর্মি ক্যাম্পে থেকা রওনা দেবার আগেই তারা বলে বসলো এই রাতের বেলা আমরা কোথায় যাচ্ছি?গাইড আপেল বলে বসলো ‘এইতো সামনেই সুংসাং পাড়ায় থাকবো’.এই বলে কোনরকম আর্মির হাত থেকে নিস্তার পেয়েই দে ছুট.ততক্ষনে রাতের আধারে গ্রাস পুরা বান্দরবনের দূর্গম পাহাড়ি এরিয়া.বিপদ যখন আসে চারিদিক দিয়া আসে,রওনা দেবার কিছুক্ষনের মধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি.আমাদের উপর ততক্ষনে কঠিন নির্দেশ জারি হইসে যে টর্চ লাইট কেও আকাশের দিকে উঠাতে পারবে না.কারন আর্মিরা দেখলেই বগাতে জানায় দিবে,তাইলে সমস্যা.ততক্ষনে জোকের ভয়ে সেই খাড়া পাহাড়,যেটা রেইন ফরেস্টের মত বলসিলাম সেইটায় চলে আসছি.আমরা.জোকের প্রটেকশন হিসেবে পায়ে অডোমাস আর গুল যা মাখসিলাম বৃষ্টির পানিতে তা ততক্ষনে ধুয়ে শেষ.শুরু হলো সেই খাড়া পাহাড় বাওয়া.ওই সিচুয়েশনে ছবি তোলা হয়ে উঠেনাই .আমাদের সবার মাথায় তখন একটাই চিন্তা ‘পাসিং পাড়া’ পর্যন্ত পৌছাতে হবে.পুরা পাহাড়টা ওঠা অবস্থায় আমরা একটা কাঠের ব্রিজে ৫ মিনিটা বাদে আর কোনরকম রেস্ট না নিয়ে পাসিং পাড়া পৌছালাম. রুমানা পাড়া ঝর্নায় যাবার পথের সেই দূর্গম রাস্তা কেমনে যে পার হইলাম তা এখনও চিন্তা করি!!! দূর থেকে রুমানা পাড়া ঝর্না জিনসিয়াম সাইতার জিনসিয়াম সাইতারের উপরে দাঁড়িয়ে আমি,রেজওয়ান ভাই আর স্থানীয় গাইড। রুমানা পাড়া ঝর্নার সামনে টিম মেম্বাররা সাথে গাইড আপেল জোকে কখন রক্ত খাইয়া পগারপাড় বুঝি নাইক্কা!!! ততক্ষনের টিমের আমি সহ কয়েকজন গাইগুই শুরু করলাম পাসিং নাইলে দার্জিলিং পাড়ায় থাকার জন্য.কিন্তু সিদ্ধান্ত হলো মরি নাহয় বাঁচি বগালেক যাবই.বৃষ্টির মধ্যে রাতের অন্ধকারে আবার শুরু হলো হাটা.কেওংকারাডং ক্রস করে দার্জিলিং পাড়া আর আসেনা!!!হাটি তো হাটি,দার্জিলিং পাড়া আর আসেনা.শেষে দার্জিলিং পাড়া পৌছে আমাদের টিমের তিনজন যারা জাদেফাই থেকে আমাদের থেকে বিদায় নিসিলো।কারন তারা এত এক্সট্রিম ট্রেক করতে পারবেনা,তাদেরকে মোবাইলে জানানো হলো আমরা রাস্তায় বগার পথে.উনারা তিনজন তখন বগালেকে চরম উৎকন্ঠায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে.শেষ পর্যন্ত ১৯ ঘন্টার টানা ট্রেকিং শেষে রাত দুইটায় আমরা বগালেক পৌছালাম.চরম উৎকন্ঠা থেকে মুক্ত করালাম আমাদের বাকী তিনজন সহ বগালেকের অনেককে.মহান আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া জানালাম.রাত আড়াইটায় বগাতে গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুম.পরদিন ঢাকার পথে যাত্রা.শেষ হলো আমাদের এক্সট্রিম বান্দরবান ট্রেকিং. টিম মেম্বাররা যথাক্রমে-ফারুক ভাই,রুবেল ভাই,সৌদ ভাই,আলিম,রেজওয়ান ভাই,কবির ভাই,আতিক ভাই,সাজিদ এবং আমি নেস্টর।আমাদের গাইড ছিলো আপেল. ফুল টিম


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.