আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া মহানায়ক সালমান শাহ

তাশফী মাহমুদ *****সালমান যদি বেঁচে থাকতেন তাইলে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি অনন্ত জলিলকে এত টাকা খরচ করে বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা লাগতো না, সালমানের কল্যাণেই এতদিনে বাংলা সিনেমা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে যেতো। সালমান ঢালিউডের গণ্ডি পেরিয়ে আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন শিল্পি হতেন। আজ শাহারুখ যখন বাংলাদেশে আসে তখন সাকিব খান তার সাথে এক স্টেজে পারফর্ম করার চান্স পায় না কিন্তু সেই সময় সালমান যখন ভারতে যায় শাহারুখ তখন সালমানকে দাওয়াত করে তার স্ত্রীর সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলেন, একসাথে ছবি উঠিয়েছিলেন। ******* এ নাম দেশীয় চলচ্চিত্রের আকাশে ক্ষণজন্মা নক্ষত্রের নাম, বাংলাদেশের বিপুল জনপ্রিয় এক নাম, এ নাম অনেক সোনালী স্মৃতিতে মোড়ানো, অকালে চলে যাওয়া আমাদের প্রিয় নায়ক। আজ অবধি সিনেমা প্রেমীদের অন্তরে চাপা দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর পর বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী সূর্যটা চিরদিনের জন্য ডুবে গেছে।

সত্যিকারভাবেই তাই, তার মৃত্যুর পর ঢালিউডের প্রাণচাঞ্চল্য আর কোন নায়কই ফিরিয়ে আনতে পারেননি। ক্যারিয়ারের খুব অল্প সময়েই হাতে গোনা ক’টি ছবিতে তিনি দর্শকদের সবটুকু ভালবাসা জয় করে নিয়েছিলেন। হঠাৎ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার রহস্যঘেরা মৃত্যু হয়। বছর ঘুরে ফিরে এসেছে আজ আরেকটি ৬ সেপ্টেম্বর। বেঁচে থাকলে এবারে ৪১ বছরের নায়ক থাকতেন সালমান, আর মরে গিয়ে তার ভক্ত-অনুরাগীদের দান করলেন শোক ও বিরহের ১৬টি বছর।

বাংলা চলচ্চিত্রের অকাল প্রয়াত যুবরাজ সালমান শাহর স্মরণে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি। । বাবা বলে ছেলে নাম করবে ....... পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। পরিচালক-প্রযোজকদের উৎসাহে একটু কাটছাট করে পর্দা নাম ঠিক করেছিলেন সালমান শাহ। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী।

দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড়। ছোট ভাই শাহরান চৌধুরী ইভান। ১৯৭১ সালের এই দিনে রবিবার সকাল ৭-টায় সিলেটের দারিয়া পাড়ায় নানার বাড়িতে সালমান শাহর জন্ম হয়। দেশের মুক্তিযুদ্ধকে সঙ্গে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা এ নায়ক আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়নে। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি অভিনয়ের ওপর দুর্বল ছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দারুণ ফ্যাশবেল আর স্টাইলিস্ট। ৮৫-৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় কথার কথা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। এর কোন একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফ সংকেতের স্বকণ্ঠে গাওয়া এই গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটোই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত হয়। একজন সম্ভাবনাময় তরুণ তার পরিবারের নানারকমের ঝামেলার কারণে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল গানটার থিম।

গানের প্রধান চরিত্র অপূর্ব ও নাম ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে আগমন করেন। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। মিউজিক ভিডিওটি জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে না আসার কারণে দর্শক আস্তে আস্তে ইমনকে ভুলে যায়। তারও কয়েক বছর পর তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘পাথর সময়’ নাটকে একটি ছোট চরিত্রে কাজ করেন এবং সে সময়ে তিনি বেশকিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন। তবে নায়ক সালমানের আত্মপ্রকাশ ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ।

সময়টা ছিল রোজার ঈদের। হিন্দিতে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবির কপিরাইট বৈধভাবে কিনে আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানকে দিয়ে তৈরি করে কেয়ামত থেকে কেয়ামত। সে সময়কার জনপ্রিয় মডেল আনন্দবিচিত্রা সুন্দরী মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয় করেন অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিচিত ইমন। আর এ ছবির মাধ্যমেই ইমন হয়ে উঠলেন পুরো বাংলার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ। এই একটি ছবি দিয়েই তিনি দখল করে নিয়েছিলেন এদেশের সব শ্রেণীর দর্শকদের হৃদয়।

বিশেষ করে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার পাশাপাশি সালমান প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান তারুণ্যের আইকন হিসেবে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির ব্যবসা বা সালমানের জনপ্রিয়তার রেকর্ড তার পরবর্তীতে আর কোন নায়কই ভাঙতে পারেননি। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশী বাংলা ছবির প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে সেই প্রাচীন আমলে রহমান এবং নায়করাজ রাজ্জাকের পর সালমানই একমাত্র নায়ক যিনি সর্বমহলে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। বাংলা ছবির নায়কদের মধ্যে সালমান ছাড়া অন্য কারও ফ্যাশন, স্টাইল লোকে তার আগে বা পরে কখনোই অনুসরণ করেনি। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দর্শকরা ছবি দেখার অনভ্যাস, সিনেমা হলের পরিবেশের কারণে হলে না গেলেও নায়ক হিসেবে সালমানকে বরণ করে নিয়েছিল নীরবে নীরবে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই।

সব কিছুকে পিছনে ফেলে সালমান দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চললেন তার আপন গন্তব্যে। কখনও মৌসুমী, কখনও শাবনুর, কখনও আবার শাবনাজ, শাহনাজ, লিমাকে নিয়ে উপহার দিতে থাকলেন দর্শকপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল ছবি। তোমাকে চাই ছবিতে পাগল প্রেমিক, মায়ের অধিকার ছবিতে মায়ের জন্য ব্যাকুল সন্তান, বিক্ষোভ ছবিতে সালমান দর্শকের সামনে এলেন নিজেকে একেবারেই ভেঙ্গেচুরে নতুন আঙ্গিকে, এ্যাকশন হিরো হিসেবে। এভাবেই বৈচিত্রময় চরিত্র দিয়ে নিত্য নতুন স্টাইল আর ফ্যাশনে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনেক উঁচুতে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকাবস্থায় ছোট পর্দাতেও কাজ করেছিলেন সালমান শাহ।

বলা চলে এখানেও তিনি ছিলেন সাফল্যেও বরপুত্র। তিনি বিটিভির নিজস্ব প্রডাকশন মামুনুর রশীদের ধারাবাহিক ইতিকথা এবং আরও কিছু প্যাকেজ নাটকেও অভিনয় করেন। বিটিভির নিজের নাটক, এমনকি প্যাকেজ নাটকের শিল্পীদেরও যে সামান্য পারিশ্রমিক সেটা সালমান কোন ছবির এক শিফটের কাজ করেও এর চেয়ে বেশি পেতেন। কিন্তু নিজের তারকা ইমেজকে তিনি বাংলা ছবির তথাকথিত নিয়মিত দর্শকদের মধ্যে সীমিত না রেখে সর্বজনীন জনপ্রিয়তা পেতে চেয়েছিলেন এবং এ কাজে তিনি দুর্দান্তভাবে সফলও হয়েছিলেন। সালমানের এই প্রবণতাই লক্ষ্য করা গেছে চলচ্চিত্রাভিনেতা রিয়াজের মধ্যে।

বলাবাহুল্য ক্যারিয়ারে শীর্ষ সময়ে রিয়াজ দারুণভাবে সাফল্য অর্জন করেন নাটক-টেলিফিল্ম-বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছোট পর্দার দর্শকদের মন জয় করতে। বেশকিছু ছবিতে নায়ক হিসেবে সাফল্য পাওয়ার কয়েক মাস পরই সালমান বিয়ে করেন জাতীয় দলের প্রাক্তন উইকেটকিপার-অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা এবং থাইল্যান্ডের নাগরিক চট্টগ্রামের বিউটিপার্লার ব্যবসায়ী লুসির কন্যা সামিরাকে। বিয়ের পরবর্তী সময়ে সালমান-শাবনুর জুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ায় তারা একসঙ্গে প্রচুর ছবিতে কাজ করতে থাকেন। সালমানের সর্বমোট মুক্তিপ্রাপ্ত ২৭টি ছবির ১৪টিতেই তার নায়িকা ছিলেন শাবনুর। স্বাভাবিকভাবেই এই জুটিকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে-বাইরে কানাঘুষা শুরু হয়।

স্ক্যান্ডাল ব্যাপক আকার ধারণ করলে সালমান একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে খুব শীঘ্রই সবার সামনে শাবনুর ও সামিরাকে একসঙ্গে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবার ঘোষণা দেন। তিনি আশা করছিলেন, এই লং ড্রাইভের ছবি পত্রিকায় এলে মানুষের মনে এই ত্রিভুজ প্রেম নিয়ে সব সন্দেহ ভেঙে যাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই সময় আর তিনি পাননি। তার আগেই তাকে পৃথিবী ছেড়ে পরপারের উদ্দেশে লং ড্রাইভে চলে যেতে হলো। সালমান আজ নেই।

আছেন তার নায়িকারা, অনেক প্রিয় মানুষ ও কাজের সহকর্মীরা। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মৌসুমী। নিজের নায়িকা জীবনের প্রথম নায়ক সালমান স্মরণে বলতে গিয়ে মৌসুমী বলেন, ‘গত ১৫টি বছরে যতবারই এই তারিখটি এসেছে, ততবারই থমকে দাঁড়াতে হয়েছে। এই একটি দিন আমাদের সবার কাছেই অভিশপ্ত দিন। চলে গেল সালমান শাহ।

আমার নায়ক ছিল সে। আমার বন্ধু ছিল। সবই আজ স্মৃতি। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। ৬ সেপ্টেম্বর দিনটি এলেই ওর দুষ্টুমিতে ভরা মুখটা যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

জোরে জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পারি না। এই নিষ্ঠুরতা কার, ইমনের নাকি প্রকৃতির? টিভি চ্যানেলগুলো এখনো বিশেষ বিশেষ দিনে সালমানের সঙ্গে আমার পুরনো ছবিগুলো প্রদর্শন করে। ছবিগুলো অনেকবারই দেখানো হয়েছে। তার পরও দেখানো হয়, নতুন প্রজন্ম দেখছে এবং জানছে সালমান সম্পর্কে। আমি টিভি-পর্দার দিকে তাকাতে পারি না।

খুবই কষ্ট হয়। একটা কথাই মনে হয়, এভাবে প্রিয় মানুষের চলে যাওয়া ঠিক নয়। ’ নবাগত নায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে প্রথম ছবিতে জুটি বাঁধলেও পরবর্তীতে শাবনূরের সঙ্গে জুটি গড়ে একের পর এক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দেন সালমান। ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তির পর মাত্র ৪ বছরের মধ্যেই করে ফেলেন ২৭টি ছবি। মৃত্যুর আগে যেসব ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন কিন্তু কাজ করতে পারেননিÑশেষ ঠিকানা, প্রেমের বাজি, আগুন শুধু আগুন, কে অপরাধী, মন মানে না, ঋণ শোধ, তুমি শুধু তুমি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

ক্যারিয়ার যখন জনপ্রিয়তা আর সাফল্যের তুঙ্গে, দেশের তরুণ সমাজ যখন সালমান শাহ-তে মাতোয়ারা ঠিক তখনই ঘটে যায় আকস্মিক দুর্ঘটনাটা। কোটি কোটি ভক্তদের শোক সাগরে ভাসিয়ে বুকের ভেতর গোপন কষ্টের চাপা অভিমান ধরে রেখে জীবনের ওপারে পাড়ি জমালেন তিনি। কি সেই অভিমান আজও সুরাহা হয়নি তার! মাত্র ২৭ বছর বয়স ছিল তার তখন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে তিনি আত্মহত্যা করেন। কিন্তু তাদের পরিবারবর্গের দাবি ছিল এটা আত্মহত্যা নয়।

তাকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগের দিন রাতে পরিচালক মতিন রহমানকে সালমান শাহ বলেছিলেন, “বাবা, আমি ভালো হয়ে গেছি। আগামীকাল থেকে আর কাউকে কষ্ট দেব না। তোমাদের চেষ্টায় আজ আমি ইমন থেকে সালমান। আগামীকালের সকাল হবে সবার জন্য প্রিয় সকাল।

” উল্লেখ্য, পরিচালক মতিন রহমানকে বাবা বলে ডাকত সালমান। পরের দিন সকাল বেলা চলে গেল সালমান চিরতরে ভাল হওয়ার পথে। অথচ এত বছর পরও জানা হলো না সালমান শাহর বুকের জমিনে কি এত বেদনা বাসা বেঁধেছিল? তার এই উক্তি থেকে বোঝা যায় তার পক্ষে আত্মহত্যা করা স্বাভাবিক ছিল। যা হোক, যে চলে গেছে তাকে নিয়ে সমালোচনা করার দরকার নেই। তাকে আমরা স্মরণ করছি হৃদয়ের গহীন থেকে।

সালমানের মৃত্যু নিয়ে হাজারো বিতর্ক থাকলেও তার অকালে চলে যাওয়া যে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি, তা নিয়ে কারোর মধ্যেই কোনো দ্বিমত নেই। সালমানের মায়ের সূত্রে জানা যায়, এ নায়ক সবসময় স্বপ্ন দেখতেন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, সেবা করার। তাই একটি শিশু হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো। সালমান ছিলেন দেশের নায়কদের জনপ্রিয়তার সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়ার সৌভাগ্যধারী।

নিজের এক লেখায় পরিচালক মতিন রহমান সালমান শাহকে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দেন, ‘সালমান চলচ্চিত্রে আসার আগে বাঙালী দর্শক একজন আধুনিক চিন্তার, যুব বা যুবাজনের পছন্দ-স্বপ্নের তারকার অভাব বোধ করছিল। এই অভাববোধের জন্ম নায়ক জাফর ইকবালের মৃত্যুর পর। জাফর ইকবাল শুধু নায়ক ছিলেন না; মনেপ্রাণে, আচার-আচরণে, পোশাক-পরিচ্ছদে, চলনে-বলনে একজন আধুনিক যুবকের উদাহরণ ছিলেন। সেই জাফর ইকবালের শূন্যতা পূরণ করে সালমান শাহ্। তার চিন্তা, রুচি, বাচনভঙ্গি, দৈহিক প্রকাশ অথবা সিনেম্যাটিক এ্যাপ্রোচÑ সবই যুগোপযোগী।

এবং তার অভিনয়ের মধ্যে ছিল ন্যাচারাল সরল যোগের শুদ্ধতা। এই গুণ আমি আজও সালমান পরবর্তী কোন নায়কের মধ্যে খুঁজে পাইনি। ’ সালমান নেই বহুদিন গত হয়েছে। তবু চির ধরেনি তার জনপ্রিয়তায়। স্যাটেলাইট চ্যানেল ও রেডিওগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল বাংলা সিনেমার গান নিয়ে কোন অনুষ্ঠান করলে এখন পর্যন্ত দর্শকের কাছ থেকে যত গানের অনুরোধ আসে তার নব্বই ভাগই সালমান অভিনীত গানের জন্য।

এখানেই শেষ নয় সালমানে মুগ্ধতার গল্প। তিনি মুগ্ধ করে রেখেছেন তার পরবর্তী প্রজন্মের নায়কদেরকেও। নতুন প্রজন্মের নায়করা আজও চলচ্চিত্র সালমানকেই ‘গুরু’ বলেন ও মানেন। সিলেটের শাহজালাল মাজারে সমাহিত হয়েছেন এ নায়ক। তাঁর কবরের সামনে এখনো প্রতিদিন ভিড় হয়।

১৬ বছরেও শোকের আগুনে ভাটা পড়েনি। প্রযোজক-পরিচালকরা বলেন, ‘সালমানের বিকল্প এই এতদিনেও পাওয়া যায়নি। সালমানের গুণ, বিনয় আর প্রতিভার অনেকটা থাকলেও অনিয়ম ও সময়ের সদ্ব্যবহারের অভাবে রিয়াজও হারিয়ে যাচ্ছেন বাংলা চলচ্চিত্র থেকে। অথচ তাঁর দেখানো পথেই চলচ্চিত্রে এসেছিল এক ঝাঁক নতুন শিল্পী। রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান কিংবা শাকিব খান- কেউই তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।

’ মোট ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সালমান, এর মধ্যে ২০টি ছবিই ব্যবসায়িকভাবে সফল। এরকম সাফল্য আমাদের দেশে আর কারও নেই। দু’হাত ভরে যিনি চলচ্চিত্রকে অপার দানে ঋণী করে গেলেন তাকে আমরা কিছুই দিতে পারিনি। অবাক হওয়ার বিষয় হলো, এফডিসিতে মৃত চলচ্চিত্রকর্মীদের একটি নামফলক রয়েছে। সেই তালিকায় নেই সালমানের নাম।

অনেক মৃত অভিনেতার নামে ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছে, এখানেও উপেক্ষিত সালমান। বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র প্রয়াত শালমান শাহর জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে এমন ঘোষণা মাঝখানে হঠাৎ শোনা গেলেও তার আর কোন ফলোআপ পাওয়া যায়নি। অকৃতজ্ঞ বাংলা চলচ্চিত্র, নাটক-বিজ্ঞাপনের মাধ্যমের মানুষেরা এদেশে সর্বকালের সেরা স্টাইলিস্ট ও ফ্যাশনেবল আইকন হিরো সালমানকে ভুলে গেলেও আজীবন তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। তিনি নয়নের আড়ালে থেকেও চিরদিন চির ভাস্বর থাকবেন বাংলাদেশের মিডিয়ার তার বিচরণের প্রতিটি অঙ্গনের পরতে পরতে। মৃত্যুঞ্জয়ী সালমানের মৃত্যু নেই, হবেও না কোনকালে।

সালমান শাহর ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। সালমান শাহ অভিনীত ছবির তালিকা----- কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, বিক্ষোভ, স্নেহ, প্রেমশক্তি, কন্যাদান, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, আঞ্জুমান, মহামিলন, আশা ভালোবাসা, বিচার হবে, এই ঘর এই সংসার, প্রিয়জন, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী, জীবন সংসার, মায়ের অধিকার, চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়সী, স্বপ্নের নায়ক, শুধু তুমি, আনন্দ অশ্রু, সত্যের মৃত্যু নেই এবং বুকের ভেতর আগুন। ~~~~~~~~~~{সংগ্রহীত}~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।