আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে বৃটেনকে-রিচার্ড ব্রানসন

Passion spills Into my sea. Enter in And come with me. একটি সত্যিকার মহৎ ব্যবসার লক্ষণ হলো তা সমাজ জীবনের পরিবর্তন আনে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের মতো মহৎ উদাহরণ খুব কমই আছে। এই ব্যাংক ১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলে এনেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো পথপ্রদর্শকের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে লালন করা উচিত, যেখানে বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে আর বেশি কিছু করার প্রয়োজন এসে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়ে দৃশ্যত সবকিছু ভাল যাচ্ছে না।

এ ব্যাংক কোন জামানত বা জিম্মাদার ছাড়া দেশের গরিব মানুষের কাছে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে যাচ্ছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই ব্যক্তিকে তার প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক থেকে জোর করে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর কারণ, তার বিরুদ্ধে অন্যায্য কলঙ্ক দেয়া হয়েছে। এ ব্যাংকের শতকরা ৯৭ ভাগ মালিকই এর ঋণগ্রহীতা। বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চাইছে।

বিশ্বের দারিদ্র্য নিরসনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ত্বরিত পদক্ষেপ আমি প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের সময়ে ও সমাজে তার দেখানো গ্রামীণের শিক্ষা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর মূল্য অপরিমেয়। গ্রামীণ ব্যাংক এ প্রমাণ দিয়েছে। ড. ইউনূস যে কাজ করে যাচ্ছেন তা আমাদের কাছে বিশাল এক অনুপ্রেরণা, বিশেষ করে বিশ্বের যুব সমাজের কাছে।

গ্রামীণ ব্যাংকে হস্তক্ষেপ এক ট্র্যাজেডি। ১৯৮৩ সালে এ ব্যাংক ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হয়েছিল। বর্তমানে তা ৮০ হাজারেরও বেশি গ্রামে পরিচালিত হচ্ছে। গ্রামের অতি দরিদ্রদের কাছে গ্রামীণ ব্যাংক ১০০০ কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। এখন উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় সব দেশে গ্রামীণ ব্যাংককে মডেল ধরে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান আছে।

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন- যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে, এত বিপুল সংখ্যক মানুষের, পরিবারের, সমাজের পরিবর্তন এনেছে, সেই প্রতিষ্ঠান নিজে ও এর প্রতিষ্ঠাতা শান্তিতে ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন- তাকে তো এদেশের সরকারের উচিত সেলিব্রেট করা। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলো- বাংলাদেশে সে ঘটনা দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভায় এ ব্যাংকে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে গ্রামীণ ব্যাংক ভেঙে যাবে এবং যা অর্জন করেছে তা হুমকির মুখে ফেলা হবে। এ ব্যাংকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন লাখ লাখ ঋণগ্রহীতা মালিক।

কিন্তু সরকার নিয়োজিত চেয়ারম্যান এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ও এ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেবেন। এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হবে। শিগগিরই এ ব্যাংক যা ছিল, সেই আদলে থাকবে না। এর মালিকদের সিদ্ধান্ত নেয়ার যে অধিকার ছিল ভবিষ্যতে তা কেড়ে নেয়া হবে। সারা বিশ্বে সম্মানের চোখে দেখা হয় যে প্রতিষ্ঠানকে তার দুঃখজনক ইতি এভাবেই ঘটবে।

দুর্নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার পর বিশ্বব্যাংক সমপ্রতি বাংলাদেশের জন্য বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আর্থিক সহযোগিতা তহবিল বাতিল করেছে। ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তি এবং বাংলাদেশের জন্য কাজ করছেন এমন নেতারা, যাতে তাদের প্রাপ্য সম্মান নিয়ে দেশে বসবাস করতে পারেন সে জন্য স্বচ্ছ, অবাধ এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশী সরকারকে জবাবদিহি করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃটেনের বর্তমান সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক দাতা দেশ। বাংলাদেশ সরকারের ওপর এর সাংঘাতিক প্রভাব রয়েছে তার। বাংলাদেশ সরকার যাতে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ হয় সেটা নিশ্চিত করতে বৃটিশ সরকারের এই প্রভাবকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

বৃটেনের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করেছে এবং মানুষের মর্যাদাকে অসম্মান করেছে এমন দেশকে সমর্থন না করার ব্যাপারে গত মাসে বৃটিশ সরকার তাদের পদক্ষেপের নমুনা দেখিয়েছে। কঙ্গোতে বিদ্রোহীদেরকে সহযোগিতা করার অভিযোগে রুয়ান্ডা সরকারের জন্য বৃটিশ সরকারের বরাদ্দকৃত সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বেলারুসের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়নি। গ্রামীণ ব্যাংক এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা বৃটেন মেনে না নেয়ার বিষয়টিও ভেবে দেখতে পারে। বৃটিশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য আগামী তিন বছরে এক বিলিয়ন পাউন্ডের যে সরাসরি সহযোগিতা দেয়ার কথা রয়েছে সেটা যেন দারিদ্র্য হ্রাস এবং বাক-স্বাধীনতা জোরদার করতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়।

এ অর্থ যেন গ্রামীণ ব্যাংকের মতো দারিদ্র্য হ্রাসের প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ বা ধ্বংস করার কাজে ব্যবহৃত না হয়। ড. ইউনূস সমমনা জনগণকে এগিয়ে এসে বাংলাদেশের গরিব জনগণের গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানার অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃটিশ সরকারের এ কাজে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। ব্যাংকের শেয়ারের অধিকারী এসব মালিক গ্রামীণ ব্যাংকে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গ্রামীণ ব্যাংক তাদেরই ব্যাংক।

এ ব্যাংকের নেতৃত্বে কে থাকবেন সেই সিদ্ধান্ত তাদেরই নেয়া উচিত। এভাবে সুশীল সমাজের অধিকার কেড়ে নেয়া তাদের প্রতি বড় ধরনের একটি হুমকি ও আঘাত, যে সুশীল সমাজ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সহকর্মীরা সৃষ্টি করেছেন কঠোর শ্রমে। গ্রামীণ ব্যাংক অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। লাখ লাখ নারী ও তাদের পরিবারের আশা, স্বপ্ন ও অনুপ্রেরণা এই ব্যাংক বহন করে। গ্রামীণ ব্যাংক শুধু বাংলাদেশের জন্যই প্রয়োজন নয়।

সারা বিশ্বের গরিব সব নারীর আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে এই প্রতিষ্ঠান। বৃটিশ বা আন্তর্জাতিক অর্থদাতা অথবা কোন বাংলাদেশীর উচিত হবে না এই প্রতিষ্ঠান অদৃশ্য হতে দেয়া। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সবার নীরবতা ভাঙতে হবে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিস্ময়কর কাজের সমর্থনে পাশে দাঁড়াতে হবে। রিচার্ড ব্রানসন, বিশ্বখ্যাত ভার্জিন গ্রুপ অব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা (গত ২৪শে আগস্ট লন্ডনের দ্য টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার অনুবাদ) সুত্র মানবজমিন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.