আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টি ভেজা কাক

লেখার মতো কিছু নেই গল্প.. বৃষ্টি ভেজা কাক লেখক ঃ ইসাকুল কবির অভি ------------------------------- ১৮ তম জন্মদিনে মৌরি তার বাবার কাছ থেকে যা উপহার পেয়েছে তা হল একটা মোবাইল আর সিম। এখনকার ছেলেপেলে বাচ্চাকাল থেকে মোবাইল ব্যাবহার করলেও মৌরি তা করেনি। আসলে বলতে গেলে বাবা করতে দেন নি। খুব কড়া নজরদারীর মাঝে উনি তার মেয়েকে বড় করছেন। তার স্ত্রী মারা গেছেন ১৬ বছর আগেই।

তারপর উনি বিয়ে করেননি। মানে করতে পারেন নি। মৌরির দাদী তার পুত্রের জন্য যে মেয়েই দেখেছেন, তার পুত্র সেই মেয়ের মধ্যে তার মৃত স্ত্রীকে খুঁজেছেন । এবং খুঁজে পান নি। কয়েকবছর পর মৌরির দাদী হাল ছেড়ে দেন।

কিন্তু বউ ছাড়া মানুষের জীবন যেমন হওয়া উচিত, কায়েস সাহেবের তেমন হয়নি। উনি বেশ ভালমত তার সংসার সামলেছেন । তবে তার একটা চিন্তা আছে। মৌরি দেখতে কালো। মেয়ের বিয়ে কিভাবে দিবেন, ছেলে ভালো পাবেন কিনা এই নিয়ে তিনি ইদানীং বেশ টেনশন করছেন।

যদিও মেয়ের বয়স মাত্র ১৮, তবুও। মৌরির দাদী সবসময় বলেন, “বুঝলি বাবা, মেয়েরা কুঁড়িতে হয় বুড়ি। আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ছিল ১২ বছর। তাতেই পাড়ার লোকেরা নানান উল্টাপাল্টা কথা বলত। আর তোর মেয়ের বয়স তো ১৮।

বুড়ির চেয়ে ২ বছর কম। ২ বছরের ছোট বুড়ি। ” এসব কথা শুনতে কায়েস সাহেবের ভাললাগেনা। মেয়েকে এখনও বাচ্চা মনে হয়। মনে হয় মেয়ে এই বুঝি চকলেট আর চিপস কেনার বায়না ধরবে।

মৌরি এখন ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ে। অবশ্যই মহিলা কলেজে। বাবা চান না ছেলেদের সাথে একসাথে তার মেয়ে পড়ুক। আর বখে যাক। তিনি নিজে তার অফিসের কয়েকজনের মেয়েকে এমন বখে যেতে দেখেছেন।

একজনের মেয়েতো ১৫ বছর বয়সে ১৬ বছরের এক বাচ্চা ছেলের সাথে পালিয়েছিল। মাঝে মাঝে তিনি অবাক হন, যেই বাচ্চার নাক টিপলে, এমনকি হা করলেও দুধ বেরোয় , সে পালায় কিভাবে? ********************************************** “কি করছিস মা?” দরজার ওপাশ থেকে বাবা জিজ্ঞাসা করলেন। মৌরি তখন তার মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত ছিল। “কিছুনা বাবা, মোবাইল দেখি, তোমার নাম্বার সেভ করি। ” “তোর সাথে জরুরী কথা আছে মা” “আমার সাথে?” মৌরি অবাক হয়।

বাবা খুব কমই জরুরী কথা বলেন। তবে যে কথা জরুরী বলে মনে করেন , দেখা যায় তা মোটেও জরুরী না। “বল বাবা” “তোর দাদী তোর বিয়ের কথা বলছিল” “কি !” কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে আশেপাশে তাকাতে থাকেন কায়েস সাহেব। তিনি মেয়ের কাছে জিজ্ঞাসা কড়া ছাড়া কোনও কাজই করবেন না। কিন্তু এখন কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে।

“হ্যা, কেন, তোর কি কোনও আপত্তি আছে ?” হেসে উঠে মৌরি। “আমার আবার কি আপত্তি। তা বিয়ে কখন?” “আরে, মাত্র তো তোর সাথে কথা বললাম, তুই কি মনে করেছিস তোকে না জিজ্ঞেস করেই আমি তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলব ?” একটু যেন মন খারাপ করেলেন তিনি। “আচ্ছা মা, তোর কি কোনও পছন্দ আছে?” “আমার আবার পছন্দ থাকবে কি করে !” এবার খুশি হন কায়েস সাহেব। মেয়ে পুরো তার মনমতো হয়েছে।

তার অফিসের আবুল সাহেবের মেয়ের মতো বেয়াদপ না। বাবা চলে গেলেন। মৌরির মন খারাপ হয়ে গেলো। বাবাকে সে মিথ্যা বলেছে। সে একজনকে পছন্দ করে।

যদিও পছন্দ করার কোনও কারন নেই , তারপরও। মৌরি যেখানে কোচিং করে, সে বাসায় থাকে ছেলেটি। বয়সে তার চেয়ে কয়েক বছরের বড়ই হবে। স্যার কোচিং করান নিচ তলায়। আর ছেলেটি থাকে ২য় তলায়।

বেশিরভাগ সময় ছেলেটি বারান্দায় উদাস হয়ে বসে থাকে। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মৌরি তার নাম জানেনা। কেউই জানে না। ছেলেটি তার বাবা মা সহ এসেছে মাত্র ৫ মাস হল।

মৌরি কখনও কাউকে ওই ছেলে সম্পর্কে কোনও কথা বলতে শুনেনি। তাই সে ছেলেটির নাম জানতে চায় কিন্তু পারছেনা। *********************************************** “মায়া, একটা কথা বলি, কাউকে বলিস না,প্লিজ?” কোচিং শেষে হাঁটতে হাঁটতে বান্ধবীকে বলল মৌরি। “কি কথা, আর প্লিজ বলার কি আছে?” “লজ্জা লাগছে। ” “ও আচ্ছা, তুই কারো প্রেমে পরেছিস মনে হচ্ছে।

” হাসতে হাসতে মায়া বলল। “প্রেম না, কৌতূহল। ” “কাকে নিয়ে, আমাদের বাদল স্যারকে নিয়ে?” “ধুর, বাদল স্যার তো একদম বুড়া” ২ বান্ধবী হাসতে থাকে। বাদল স্যার বুড়া হলে কি হবে, উনার রসবোধ এখনও প্রখর। রসবোধের চেয়ে চোখের নজর আরও প্রখর।

আড়ালে অনেকে উনাকে পরিমল ডাকে। “না, ২য় তলার ছেলেটি। ” অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলে মৌরি। “আচ্ছা আচ্ছা, সেই দেবদাস ছেলেটি? যে সারাদিন বারান্দায় বসে তোকে দেখে?” “আমাকে আবার কখন দেখল?” “আমার তো মনে হয় তোকে দেখার জন্যই এখানে বসে থাকে” “কি করা যায় বল তো” “ফোন দে। তোর তো এখন মোবাইল আছে।

” “নাম্বার পাব কিভাবে? নামও তো জানি না” “আমি জেনে তোকে জানাব। আচ্ছা এক কাজ করি। সফিক কে বলি, সে জেনে তোকে জানাবে সব। ” মৌরি খুশি হল। সফিক হল মায়ার বয়ফ্রেন্ড।

সে খুবই ভালো এবং করিৎকর্মা ছেলে। “তবে প্লিজ তুই সফিক ভাইকে কিছু বলিস না। যতটা না জানিয়ে নেওয়া যায়। ” “আচ্ছা, ঠিক আছে। ” ********************************************** রাতেই মায়ার ম্যাসেজ পেল মৌরি।

ছেলের নাম জানা যায় নি। তবে এতটুকু জানা গেছে তার বাবার নাম মাহবুবুর রহমান। আর বাসায় টেলিফোন নাম্বার। মৌরি কিছুটা হতাশ হল। বাবার নাম দিয়ে ও কি করবে? পরদিন সকালেই ফোন দিল।

প্রথমে কেউ না ধরলেও ২য় বারে ধরল। কণ্ঠ সুনেই চমকে গেলো। এত সুন্দর কণ্ঠ! “হ্যালো, এটা কি মাহবুবুর রহমান সাহেবের নাম্বার?” গম্ভীর গলায় মৌরি জিজ্ঞাসা করলো। “জি, কিন্তু বাবা তো বাসায় নেই। ” “আপনি কি তার ছেলে?” “বাবা বাসায় নেই বললাম, আমি তো ছেলেই হবো, নাকি আমার কণ্ঠ শুনে মেয়ে মনে হচ্ছে।

” “বাহ, আপনি তো বেশ মজার। ” “তো বাবাকে কি দরকার?” “আসলে আপনার বাবাকে না, আমি আপনাকেই খুঁজছিলাম” “আপনি কে?” “আচ্ছা পরে কথা হবে। ” বলেই মৌরি ফোন রেখে দিল। এবং হাঁপাতে লাগলো। সে কখনও অপরিচিত কারো সাথে এভাবে কথা বলেই।

হয়তো আজও পারত না। যদি না মায়া সব শিখিয়ে দিত। *********************************************** পরদিন একই সময় আবার ফোন দিল। আবারো ছেলেটি ধরল। “আচ্ছা আপনার নাম বলবেন দয়া করে” “আপনি আমার নাম দিয়ে কি করবেন।

আর আমার এত দয়া নেই। ” “কিন্তু আপনাকে দেখে তো দয়ামায়াহীন ছেলে বলে মনে হয়নি। ” “আপনি আমাকে আবার কখন দেখলেন?” “কোচিং করতে এসে প্রতিদিনই তো দেখি” মুখ ফসকে বলে দিল মৌরি। ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেলো। “আচ্ছা, আপনি তাহলে বাদল স্যারের ব্যাচে পড়তে আসেন।

” মৌরি চুপ করে গেলো। এবং ফোন রেখে দিল। ************************************************ “গতকাল ফোন দেন নি কেন?” ছেলেটি জিজ্ঞাস করলো। “এমনি” “লজ্জা পেয়েছেন নাকি? লজ্জার কি আছে। আমি তো কাউকে আর বলে দিচ্ছি না।

” “আচ্ছা আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন?” “কিভাবে চিনব। শুনেছি অনেক মেয়ে নাকি পড়তে আসে” “শোনার কি আছে। সারাদিন তো বসে বসে এই দেখেন। ” “নাহ, দেখি না। ” “তাহলে বারান্দায় বসে থাকেন কেন?” “এমনি, কোনও কাজ নেই তাই বসে থাকি” “কই কাজ নেই, আকাশের দিকে তাকানোই তো আপনার প্রধান কাজ।

আপনি কি করেন একটু বলবেন?” “আপনি অনেক ভালো মেয়ে”- আচমকা বলে উঠলো ছেলেটি। মৌরি অবাক হল। সে জিজ্ঞাসা করে কি আর ছেলে বলে কি। “কিভাবে বুঝলেন। ” “আমি মানুষ বুঝতে পারি ।

আমার মনে হয় আপনি অনেক সুন্দর মানুষ। ” “নাহ, আমি সুন্দর না। আপনাকে ক্লু দেই। আমি অনেক কালো দেখতে। ” “কালো মানুষ কি সুন্দর হয়না?” “সবাই তো তাই বলে।

” “বলা উচিত না। মানুষের গায়ের রং দিয়ে কি হয় বলেন। এই জীবন আর কয়দিনের?” মৌরি অবাক হয়। ছেলেটি কেমন জানি এক কথা থেকে আরেক কোথায় চলে যায়। *********************************************** “জানেন কাল কি হয়েছে? আমার বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষ এসেছিলো, কিন্তু আমি বিয়েতে রাজি হবো না” “কেন? আপনি বুঝি কাউকে ভালবাসেন?” মৌরি চুপ করে থাকে।

“আমাকে ভালোবাসার কোনও কারন নেই, আপনি বিয়েতে রাজি হয়ে যান। ” মৌরি চুপ করে থাকে। ছেলেটি বলতে থাকে, “আমি বুঝতে পারিনি প্রথমে। বুঝতে পারলে আপনার সাথে কথা বলতাম না। আমার কথা বলার কেউ নেই তাই বলতাম।

আমি খুব নিঃসঙ্গ। কিন্তু আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। ” মৌরি চুপ করে থাকে। ********************************************** আজ আবার পাত্রপক্ষ এসেছে। মনে হয় এদেরও মৌরিকে পছন্দ হয়নি।

কেউ দেখেনি মৌরি কতোটা ভালো মেয়ে। সবাই শুধু দেখেছে তার গায়ের রং কালো। সেদিনের পর থেকে অন্ধ ছেলেটির সাথে তার আর কথা হয়নি। ছেলেটি তার ফোনের তার কেটে দিয়েছে। অন্ধ কাউকে মৌরি ভালবেসে কষ্ট পাক সেটা ছেলেটি চায়নি।

সে জানে মৌরি কিছুদিন পর আস্তে আস্তে সব ভুলে যাবে। মৌরি এখন তার বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে । পাশের বাড়ির কার্নিশে বসে বৃষ্টিতে ভিজছে ১ টি কাক। মৌরি ভালো মতো খেয়াল করলো, কাকটি একা।

সাধারণত দেখা যায় ২/৩ টি কাক একসাথে বসে কা কা করে। কিন্তু এই কাকটি একা। কালো রঙের সেই কাকটি প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ভিজছে। মৌরির খুব ইচ্ছে করছে ভিজতে। কিন্তু বাবার জন্য ভেজা যাবেনা।

সে হাত বাড়িয়ে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার চেষ্টা করে। আর কল্পনা করতে থাকে, ভেজা কাকটির মতো সেও একদিন বৃষ্টিতে ভিজবে। Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.