আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

!!!~আমার প্রিয় মনুষ্য বশীকরণ বিদ্যা ~ সন্মোহন বা হিপনোটিজম !!!

সন্মোহন বা হিপনোটিজম অথবা মনুষ্য বশীকরণ বিদ্যায় নাকি আদিকালের সাধু সন্যাসী ও কামরুপ কামাখ্যার ডাকিনী যোগিনীরা সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তারা নাকি কি সব মন্ত্রবলে সন্মোহিত করে ফেলতে পারতো যে কোনো মানুষকেই। জেনে নিতে পারতো যে কারো মনের কথা। একজন সন্মোহিত ব্যাক্তি নাকি সন্মোহনকারীর যে কোনো আদেশ নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য হত অবলীলায়। আহা কতই না মজা হত এ বিদ্যা যদি আমার জানা থাকতো সেই ছোটবেলা থেকে তাহলে আমি আমার অসহ্যরকম অংক টিচারকে সন্মোহিত করে তাকে দিয়েই হোমওয়ার্কের অংক করিয়ে ছাড়তাম নিশ্চয়ই।

আর বড়বেলায় জানলেই কি আর কম উপকার হতো। একটু নয়ছয় হলেই ধরে ধরে সন্মোহন করে ফেলতাম এক একজন অবাধ্য মানুষকে। সে যাইহোক সন্মোহন বা হিপনোটিজম কথাটার সাথে পরিচয়ই আমার জুয়েল আইচের যাদু দেখতে গিয়ে সেই ছোট্টবেলায়। একটা জলজ্যান্ত মানুষের নাকের সামনে হাত ঘুরিয়ে বিড় বিড় করে কি সব মন্ত্র বলে নিমিষেই ঘুম পাড়িয়ে ফেললেন তিনি। আর তারপর একটা রিং এর মধ্যে তাকে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখলেন বেশ কিছুক্ষন।

এমন আশ্চর্য্য বিদ্যার নাম যে সন্মোহন তা তখনই আমার জানতে পাওয়া। সে যাই হোক, এরপর আর একটু বড় হবার পর জানলাম আর একটু বেশী কিছু। যদিও বহু প্রাচীনকাল থেকেই সাধু সন্যাসী বা ডাকিনী যোগিনীদের প্রিয় বিদ্যা ছিলো এ সন্মোহন বিদ্যা তবে আঠারো শতকে অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে বসবাসরত একজন ডক্টর ফ্রাণ্ডস্‌ অ্যান্টন মেজমার আবারও সম্মোহন বিদ্যার চর্চা শুরু করেন। তার নামানুসারে এই বিদ্যার নামও হয়ে যায় তখন ‘মেজমেরিজম’ । ১৮৪০ সালে স্কটল্যাণ্ডের আরেক ডাক্তার জেমস ব্রেড আবার এ বিদ্যার নতুন নামকরণ করেন হিপনোটিজম।

কারণ গ্রিক শব্দে ঘুমের দেবতার নাম ‘হুপ্‌নস’ আর এ শব্দের অর্থ হল ঘুম। সম্মোহিত ব্যক্তিকে ঘুমের ঘোরে কাজ করিয়ে নেওয়া হয় বলেই এই বিদ্যার নাম দেওয়া হয়েছিলো ‘হিপনোটিজম’। আর তারপর থেকে এ বিদ্যার নাম হিপনোটিজমই রয়ে গেলো। ঠিক কী শরীর বৃত্তীয় কারণে মানুষ সম্মোহিত হয়ে পড়ে তারও বেশ কিছু যৌক্তিক ব্যাখ্যাও রয়েছে তবে সেসব থাক মজার ব্যাপার হলো চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই বিদ্যাকে ব্যবহার করেছেন ইংল্যাণ্ডের এক ডাক্তার এস ডেল। তিনি সম্মোহন করে রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে ছোটখাট অপারেশনও করে ফেলতেন।

তবে মানসিক রোগ, বিষন্নতা বা অবসাদ কাটানোর চিকিৎসাতেও এই বিদ্যার ব্যাবহার সবচাইতে লক্ষ্যনীয়। এখন বলি কিভাবে একজন মানুষকে করা যায় এই সন্মোহন বা হিপনোটাইজড তারই কিছু নিয়ম কানুন...... একজন মানুষকে হিপনোটাইজড বা সন্মোহিত করতে যে সেশনটা করা হয় তাকে বলা হয় হিপ্নোটিক সেশন। হিপ্নোটিক সেশনটা হয় ৫ টা ভাগে। 1. pre-talk - এখানে হিপনোটাইজ করা হবে এমন ব্যাক্তিকে হিপনোটিজম ব্যাপারটা সম্পূর্নভাবে এক্সপ্লেইন করতে হবে। এখানে তার কোনোরকম ক্ষতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই সেটাও বুঝিয়ে বলতে হবে।

নয়তো বা তার সাবকনসাস মাইন্ড তাকে সন্মোহিত হতেই দেবেনা। নেতিবাচক মনোভাব বা ভীতির কারণে অনিচ্ছুক ব্যাক্তিকে সন্মোহিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। 2. induction- এটা এমন একটা প্রক্রিয়া যেখানে যাকে সন্মোহিত করা হবে তার স্নায়ুকে শিথিল করে দিতে হবে। এখানে সন্মোহনকারীকে থাকতে হবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও অবিচল কিন্তু কোমল আর অবশ্যই তার সকল আদেশ নির্দেশ হতে হবে ইতিবাচক। আরাম চেয়ারে বসিয়ে বা শুইয়ে দিয়ে তাকে এমন কিছু নির্দেশ দিতে হবে...... হাতদুটো আরাম করে কোলের উপর রাখো...... এখন তাকাও আমার হাতের দিকে।

ছোট আঙ্গুলের দিকে তাকাও ...তাকিয়ে থাকো..... নিশ্বাস নাও ........অনেক জোরে নিশ্বাস টেনে নাও বুক ভরে..... ধরে রাখো................. Dave Elman Induction সম্পূর্ণ স্ক্রিপটির লিন্ক এখানে দেওয়া হলো। Click This Link Modified Dave Elman Induction http://www.ukhypnosis.com/ElmanInduction.htm 3.deepener - Induction অংশটুকুর মাঝেই deepener আসে। তার পরও সন্মোহনকারীও পারিপার্শ্বিক কিছু এ্যাড করতে পারেন । যেমন সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে গানটার সাথে সাথে তাকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে চাঁদনীরাতে কোনো সুন্দর মুহুর্তে। প্রতিটা অর্ডার পজিটিভলী হতে হবে।

সন্মোহনকারীর প্রতিটা কথায় বাক্যে বা নির্দেশে সন্মোহিত ব্যাক্তি চলে যাবে আরও শিথিলতায় আরও রিলাক্সেশনে। প্রতিটি নিঃশ্বাস তাকে নিয়ে যাবে আরও আরও রিলাক্সেশনে। সন্মোহনকারীই তার সমস্ত ইন্দ্রিয়কে পরিচালিত করবে সে কোথায় যাবে কি করবে কি ভাববে সবকিছুই। Inductions and Deepeners: Styles and Approaches for Effective ... Click This Link 4.suggestion -সন্মোহিত ব্যাক্তির এর হাতের দু আঙ্গুল এক করে ধরে একটু চাপ দিয়ে যদি তাকে বলা হয় তোমার দু আঙ্গুল জুড়ে দেওয়া হয়েছে যাদু দিয়ে এখন দু আঙ্গুল একসাথেই লেগে থাকবে। বলা যাবেনা তুমি আর আঙ্গুলদুটো খুলতেই পারবেনা।

মানে কখনও নেতিবাচক বা না শব্দটা উচ্চারণ করা যাবেনা। তাহলে সাবকনসাস মাইন্ড পাওয়ারফুল হয়ে যাবে আর তা না শব্দটা গ্রহন না করায় সন্মোহন কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সে যত চেষ্টা করবে ধীরে ধীরে বলতে হবে যাদুর আঠায় তোমার আঙ্গুল আরও বেশী জোড়া লেগে যাচ্ছে। যখন সে আর পারবেনা তখন বলতে হবে আমি এক, দুই, তিন ( অপেক্ষাকৃত জোরে) বলার সাথে সাথে তোমার আঙ্গুলের জোড়া খুলে যাবে। ডিপেনার বাড়ানোর জন্য বলা যেতে পারে ১০ থেকে ০ পর্যন্ত গুনব।

প্রতিটি সংখ্যার সাথে সাথে তুমি আরও ২ গুন ডিপ এ চলে যাবে। ১০,৯,৮,৭ এভাবে ধীরে ধীরে গুনতে হবে। সন্মোহিত ব্যাক্তির হাতে গ্যাস বেলুন বেধে দিয়ে বলা যায় যে হাত হাল্কা হয়ে যাচ্ছে। বেলুন উপরে উঠে হাত উপরে উঠিয়ে নেবে আরও ৫০/৬০টা বেলুন বেধে দিয়ে আরও হাল্কা করে দেওয়া যায় হাত যত উপরে উঠবে বলতে হবে তোমার হাত হালকা হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে আর তুমি ভালো ফিল করছো। যত চাইছো ততই উপরে উঠছে হাতটা।

এবার বেলুন এর সুতো কেটে দেওয়া যেতে পারে। প্রথমে হাতটা উঠতে একটু সময় লাগতে পারে আর তখনএকটু হাতটা উঠাতে সাহায্য করতে হবে তবে একবার উঠা শুরু করলে আর কোনো সমস্যা হবেনা। 5.awakening -জাগানোর জন্য বলতে হবে, আমি ১ থেকে ৫ পর্যন্ত গুনব আর ৫ বলার সাথে সাথে তুমি জেগে উঠবে আর তোমার অনেক ভালো লাগবে অনেক অনেক। খুব ভালো একটা ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর তোমার যেমন চনমনে লাগে ঠিক তেমনি। ।

অনেক ভালো লাগবে তোমার। এবার ১ থেকে ৫ পর্যন্ত গোনা শেষ হলেই সন্মোহিত ব্যাক্তি সন্মোহন কেটে জেগে উঠবে। Book "Hypnotherapy" by Dave Elman এখন দিচ্ছি নিজেকেই নিজে হিপনোটাইজড করে ঝরঝরে মনে জেগে ওঠার কৌশল ......... Self-Hypnosis Click This Link ১.ভিডিও- সেল্ফ রিল্যাক্সেশন হিপনোসিস Click This Link Click This Link ২.হিপনোসিস ভিডিও ফর মোটা মানব মানবী-মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে যাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের জন্য বড় উপকারী একটি হিপনোসিস ভিডিও......... http://www.youtube.com/watch?v=SN2k-xWsnCM ৩.হিপনোসিস ভিডিও ফর ইনসমোনিয়াকস- রাতে যাদের ঘুম আসেনা চোখ দুটো চেপে আটকে ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা শুয়ে থাকার পরেও..... http://www.youtube.com/watch?v=d0BnOkfiP3E Click This Link ৪.হিপনোসিস ফর বদরাগী, অমিশুক, অসামাজিক ও ভীতু মানবমানবী Click This Link ৫.হিপনোসিস ফর অতীতের সব রাগ, দুঃখ বেদনা ও ভয়ের অভিজ্ঞতা ভুলতে চাওয়া মানুষজন...... http://www.youtube.com/watch?v=WkQ_hVzLWnQ ৬.হিপনোসিস যারা ভালোবাসা খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত বা প্রেমভিখারীদের জন্য..... Click This Link ৭.হিপনোসিস ফর যারা ক্ষুধামন্দায় ভুগে ভুগে হাড় জিরজিরে সাস্থ্য মন্দায়ও ভুগছেন ........ http://www.youtube.com/watch?v=ozVU6d6jFu8 ৮.হিপনোসিস ফর ব্যার্থ প্রেমিক/ প্রেমিকা বা ছেকু পার্টি এর দুঃখ ভুলে নতুন প্রেমসন্ধানে মেতে ওঠা...... Click This Link ৯.হিপনোসিস ফর পড়ালেখা মনে থাকেনা যাদের তাদের জন্য মানে ফেলটু পার্টি আর কি তারা অবশ্যই এই হিপনোসিস থেকে উপকৃত হবেন..... Click This Link ১০.হিপনোসিস ফর যারা একটুতেই রেগে মেগে ভুত হয়ে যায়.... আর তারপর ..... http://www.youtube.com/watch?v=gcaTGWQlE_U ( হুম এটা মনে হচ্ছে আমার দরকার আর আমার নেক্সট পোস্ট এটা নিয়েই...) যাইহোক, সন্মোহন বা হিপনোটিজম অবশ্যই একটা মজার বিদ্যা। নিজের সেলফ রিলাক্সেশন বা কিছু কিছু অকৃতকার্য্য বিষয় ওভারকাম করার কনফিডেন্স বাড়ানোর জন্য এ বিদ্যা আসলেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে বলেই আমার বিশ্বাস, তবে চাইলেই যে কাউকে সন্মোহিত করে ফেলা মোটেও সহজ কর্ম নয়। শুধুই মাত্র সন্মোহিত হতে রাজী থাকা মানুষগুলোকেই সহজে সন্মোহন করা যায়।

তাই অনিচ্ছুক ব্যাক্তিকে সন্মোহন করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে অনেক অনেক চর্চায় আর তন্ত্র মন্ত্র বলে প্রাচীনকালের সাধুসন্যাসীদের মত বা কামরুপ কামাখ্যার যাদুকরী ডাকিনী যোগীনিদের মতও নিশ্চয়ই অনিচ্ছুক শত্রুকেও সন্মোহিত করে ফেলা যাবেই। বশীকরণ বিদ্যা দিয়ে বড়শী গেঁথে- টোপ ফেলাবো ঝুম দুপুরে, তোর মন পুকুরে- সন্মোহনের মোহন বাঁশির সূর বাঁজাবো- ঘোর লাগাবো তোর হৃদ মুকুরে! জ্যোস্নাস্নাত হাস্নাহেনার গন্ধমাতাল রশনী উথাল চাঁদনী রাতে হ্যাচকা টানে- আনবো টেনে, মরণ ফাঁদে - ফাঁস লাগাবো বিনিসুতোর কঠিন বানে! হ্যামিলনের রুপক সূরে যাদুকরী ভ্রম জাগাবো, চোখের কোনে, কামাখ্যার ঐ ডাকিন যোগীর মন্ত্র পড়ে ঘুম পাড়াবো নিঝুম বনে! পোস্টটা কাকে উৎসর্গ করা যায়!!! ভাবছি............. আমার প্রিয় একজন স্পষ্টবাদী মানুষ Click This Link বেঈমান আমিকেই উৎসর্গ করলাম। বার বার কমেন্ট ব্যান করায় নিশ্চয় তার মনটা ভীষন খারাপ। আমার হাবিজাবি পোস্টটা পড়ে একটুও যদি তার মনটা ভালো হয়।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.