আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় খেলোয়াড়, প্রিয় মানুষ; শচীন টেন্ডুলকার

যাহার পা-দুটা আছে, সেই ভ্রমণ করিতে পারে; কিন্তু হাত দুটা থাকিলেই তো আর লেখা যায় না ! সে যে ভারি শক্ত। - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শচীন টেন্ডুলকার ODI থেকে অবসর নিয়েছে। এই খবর শুনে মন প্রচন্ড খারাপ হলো। শুধু ব্যাটসম্যান শচীনকে না, এই মানুষটাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

কেন ? জানি না কেন। তবে একদম ছোটবেলায় যখন ভারত-পাকিস্তান বুঝতাম না, তখনও আমি শচীনের ব্যাটিং বুঝতাম। জানতাম সে এই গ্রহের সবচেয়ে নিখুঁত ব্যাটসম্যান। সে কোন দলের হয়ে খেলে এসব জানার প্রয়োজন ছিল না। আগেও অনেকবার তার অবসর নিয়ে কথা উঠেছে।

অনেকের সাথেই তর্ক করে গেছি। আরে, একসময় তো অবসর নিতেই হয়। ৫০ বছর পর্যন্ত খেলবে নাকি? - হ্যাঁ, খেলবে! সমস্যা কোথায়? এখন রান পাচ্ছে না, কিন্তু রিফ্লেক্স, টাইমিং ঠিক আছে। ফিরে আসবে। আগেও বার বার ফিরে আসছে! সে তো ম্যাচ উইনার না।

সারাজীবন রান করে গেছে শুধু! - কে বললো? তার যতগুলা ম্যাচ উইনিং ১০০ আছে, ততগুলা ১০০ ও ওনেক ভালো ব্যাটসম্যানের নাই! তাছাড়া খেলা কি শুধু জয়-পরাজয়ের ব্যাপার? ইন্ডিয়া জিতলেই আমার কী? খেলা দেখি ভালো লাগে তাই। শুধু জয়-পরাজয় হিসাব করলে তো ক্রিকইনফো থেকেই সব জেনে নিতে পারতাম। ব্যাটিংকে শিল্পের পর্যায়ে নিছে কোন ব্যাটসম্যান ? এভাবে তর্ক, তর্ক থেকে ঝগড়া, কদাচিত যুক্তির বাইরেও নিজ ইচ্ছায় পা রাখা! খুব সামান্য কয়জন মানুষের জন্যই আমি এমন পাগলামি করি, যাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যুক্তির বাইরে পা রাখতেও খারাপ লাগে না। নইলে যুক্তির বাইরে গিয়ে তর্ক খুব অপছন্দ! বাইরের দেশের যেই দুই-একজনের জন্য এমন পাগলামি করি, তাদেরকে মানুষ হিসেবেও কেন যেন খুব ভালো মনে হয়, ঘরের মানুষের মতো আপন মনে হয়! অদ্ভুত লাগতে পারে, তবে এটাই সত্যি। মাঝখানে একটা সময় শচীন লম্বা বিরতি দিয়ে খেলতো।

প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম তার মাঠে হেঁটে আসা দেখতে। খেলার আগের দুই-তিনদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর দিন গুনতাম, ৩, ২, ১; এভাবেই! তার ব্যাটিং নিয়ে একটু বেশিই পাগলামি ছিল। এখন আর তাকে রঙিন পোশাকে মাঠে নামতে দেখবো না এই সত্য মেনে নিতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে সে চাইলেই ফিরে আসতে পারতো। আরেকটু সময় যদি নিতো! আগেও তো বহুবার ফিরে আসছে! জানি আবেগ থেকেই এভাবে ভাবা।

অনেকটা সময়ই তো পার করলো সে। দিনের সমাপ্তি অস্বীকার করলেও তো রাত আসে, আসতে হয়! ২৪শে এপ্রিল শচীন টেন্ডুলকারের জন্মদিন ছিল। সেদিন তাকে নিয়ে নিচের এই অংশটুকু লেখা- ~ একদম ছোটবেলায় যখন ক্রিকেট খেলা দেখা শুরু, তখন তেমন কিছু বুঝতাম না। শুধু মোটা কাঠ দিয়ে গোলাকার কিছু একটার উপর অত্যাচার করা হচ্ছে এইটুকু বুঝতাম। এক সময় বুঝলাম এই খেলার অনেক কায়দাকানুন আছে।

খেলতে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। কারো নাম আলাদা করে জানতাম না। তবে অনেকের মাঝে ছোটখাট গড়নের এক ব্যাটসম্যানকে আলাদা করে চিনতে পারতাম। কেন যেন মনে হতো সে আর সবার মত না। সে সময়ে (৯৮-৯৯ সাল) এই ব্যাটসম্যান, শচীন টেন্ডুলকার ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে ছিল।

ব্যাট ঘুরতো তলোয়ারের মত। ওয়ার্নের মত বোলাররা তার সামনে মুখ ভোতা করে বল করত। কারন, জানে ডাউন দা উইকেটে আসা মানেই ছক্কা। দিন বাড়তে লাগল, আমি ক্রিকেট খেলার মুগ্ধ থেকে মুগ্ধতর দর্শক হতে লাগলাম। তখন আমি কঠিন শচীন-ভক্ত, অন্যদের ব্যাটসম্যানই মনে হয় না! শচীনে মুগ্ধতা এত বছর পরও কিছুমাত্র কমে নাই।

শচীন খেলবে ফিক্সচারে দেখার সপ্তাহ খানেক আগে থেকে দিন গোনা শুরু হয়ে যায়। ক্যারিয়ারে বিভিন্ন সময় সমালচকেরা তার পথের সামনে এসে দাড়িয়েছে। কবে ক্রিকেট ছাড়বে তা জানার জন্য অতি উৎসাহ দেখিয়েছে। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর অনেক সমালোচকই টেন্ডুলকারের (২০০৬ এ বলা হতো এন্ডুলকার !) পতনের শব্দ কান পেতে শুনে নিয়েছিল। সে সময় ইয়ান চ্যাপেল এক কলামে লিখেছিল যেখানে শচীনকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করার উপদেশ দিয়েছিলেন- "Mirror, mirror on the wall should I retire?" The answer would be; "Yes." ২০০৭ এর এন্ডুলকার আবার ২০০৯ এ ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে চ্যাপেলরা তখন মাধ্যম হিসেবে আয়না না ধরেই তাঁর প্রশংসা করতে শুরু করল ! ২০১২ সাল।

সমালোচকদের চুলকানি আবার শুরু হয়ে গেল। নিজেরা অবসর নেওয়ার পর অন্য কার কার অবসর নেয়া উচিত সেটা ঠিক করে দেওয়ার মহৎ দায়িত্ব তো তাদেরই ! শচীন জানে সে শেষ হয়ে যায় নাই। তাঁর ব্যাট সুইং শেষের কবিতা শোনায় না। সে তাঁর মত খেলে যাক এবং সমালোচকেরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাক। আর আমার কাজ খেলা উপভোগ করা, আমি তা'ই করি ! শচীনের একটা বড় দূর্ভাগ্য সে একেবেরে ভঙ্গুর একটা দলে ২৩ বছর কাটিয়ে দিয়েছে।

সে শূন্য রানে আউট হলে দল ভেঙে পড়তো, সে ১০০ রান করে আউট হলেও দল কাচের মত ভেঙে পড়তো এবং পড়ে। ফলাফল বিষন্ন শতক, সাথে নানান জনের উপহাস। ক্রিকেট যদি শিল্প হয় তবে শচীন টেন্ডুলকার এই শিল্পের শ্রেষ্ঠ শিল্পী। শচীনকে একজন ইন্ডিয়ান হিসেবে ঘৃনা না করে, এই গ্রহে জন্ম নেয়া একজন ক্রিকেট-সন্ন্যাসী হিসেবে শ্রদ্ধা করা উচিত। নইলে প্রতারণাটা নিজের সাথেই করা হয়! ~ মনে রাখা উচিত, বর্ডারের ওই পারে আপনি কিংবা আমিও জন্মাতে পারতাম।

তাতে আমি বা আপনি নতুন কিছু হতাম না। আমি আমিই থাকতাম, আপনি আপনিই! আপনাকে আমি কিংবা আমাকে আপনি ঘৃণা করতেন কোন অধিকারে? কোন বিবেচনায়? মানুষের মানুষের সম্পর্ক ঘৃণার হতে পারে না। প্রত্যেকটা মানুষই স্বতন্ত্র। স্থান বিবেচনা না করে প্রত্যকটা মানুষকে আলাদাভাবে বিচার করতে শেখা উচিত। ( তারপরও পাকিস্তানি ইতরগুলা জাতিগত ভাবেই এমন বেজন্মা কেমনে হলো সেটা একটা রহস্য! ব্যতিক্রম যে নাই তা না।

সেই ব্যতিক্রমকেও আলাদা করে চিনে নিতে হয়! ) খেলোয়াড় শচীনের জন্য শ্রদ্ধা, ব্যক্তি শচীনের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.