আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্বাসরুদ্ধকর দিনগুলি - ৪

ওই যে নদী যায়রে বইয়া... স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও তাঁর অনুসারীদের নদীর তীরের জমি অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে বিপণীবিতান তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে আমার বিরুদ্ধে শুরু হয় ধারাবাহিক সাজানো মামলার দুর্যোগ। ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালের ২১ আগস্ট। আর আমার বিরুদ্ধে সাজানো মামলাগুলো দায়ের করা শুরু হয় ৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকে। ১৩ সেপ্টম্বরের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে করা মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় চার-এ। এর মধ্যে ৮ সেপ্টম্বর রাতে করা মামলাটিতে আনা হয় চাঁদাবাজি ও জোর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ।

১০ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা পাঁচ মিনিটে এক নারীকে বাদী করে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করানো হয়। এ মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পাঁচ মিনিট পরে অর্থাৎ রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগের মামলাটির বাদীর প্রতিবেশী ও আত্মীয় অপর এক নারীকে বাদী করে আরেকটি মামলা করা হয়। এ মামলায় প্রতারণা ও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তোলা হয়। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আরো একটি মামলা করানো হয় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে। উল্লেখিত চারটি মামলার মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ এনে করা মামলাটি ছাড়া বাকি তিনটি মামলায় আমার ছোট ভাই আমার দেশ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি সাইমুন রহমান এলিটকেও আসামী করা হয়।

একের পর এক মামলার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ারই কথা আমার। কিন্তু আমার এ দুঃসময় দেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যম ও সর্বস্তরের সংবাদ কর্মীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গণমাধ্যমে আমাদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসি ড. আরেফিন সিদ্দিকী স্যার, প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মুসা, সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহামুদ, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরসহ অনেক প্রথিতযশা ও বরেণ্য ব্যক্তি। আলতাফ মাহামুদ এবং তৎকালীন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ.শ.ম রেজাউল করিম বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে আমাদের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য রাখেন। আমাদের পক্ষে সরাসরি কলম ধরেছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান (মতি ভাই)।

তিনি প্রথম আলোয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। বিভিন্ন পত্র-ত্রিকায় আমাদের পক্ষে বিশেষ কলাম প্রকাশিত হয়েছে। আর সংবাদ-প্রতিবেদন তো ছিল নিয়মিত বিষয়। আমাদের পক্ষে প্রথম আলো ছাড়াও সমকাল, মানব জমিন, যুগান্তর, ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন পত্রিকা বেশ জোড়ালো অবস্থান নেয়। অধিকাংশ ইলোকট্রনিক মিডিয়া অর্থাৎ টেলিভিশন চ্যানেল আমাদের পক্ষে অবস্থান নেয়।

সারা দেশের সংবাদকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। জেলায়-উপজেলায় প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। পটুয়াখালী প্রেসক্লাব প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন, কলম-ভাঙা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আমাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সাজানো মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয় পটুয়াখালী ও বরগুনা প্রেসক্লাব। এদিকে বসে থাকেননি সেই প্রভাবশালীরাও।

তাঁরাও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছিলেন। মোটা অংকের টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন আকারে আমার গীবত গেয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকের বরাবর খোল চিঠি প্রকাশ করেন। ওই খোলা চিঠিতে তিনি নিজের জানাশোনা ও জ্ঞানের পরীক্ষা দেওয়ার আকাঙ্খাও প্রকাশ করেন। তাঁর অনুসারীরা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো করে স্থানীয়ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক সভা-সমাবেশ-মিছিল করেন। এরই একটি সমাবেশ থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে লাঠি-যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সমাবেশ শেষে মিছিলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে 'ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়মু না। *** (প্রভাবশালী নেতার নাম) ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। ' ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। তবে সুখকর ব্যাপার হল, তাঁদের এসকল কর্মসূচি পালনের কয়েকদিন আগে থেকেই স্থানীয় আ.লীগের মধ্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। দলে এ ভাঙ্গনের জন্য ওই প্রভাবশালী নেতার দলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী কার্যকলাপ ও স্বেচ্ছারী আচরণকে দায়ী করা হলেও মুখ্য কারণ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করে তাঁদের হয়রানি করা বলে দলের একাধিক সূত্র তখন জানিয়েছিলেন।

দলের স্থানীয় নেতাদের বেশ বড় একটা অংশ দলের সভাপতির নেতৃত্বে ওই প্রভাবশালী নেতার পক্ষ ত্যাগ করে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার ঘটনা তাঁদেরকে ক্ষুব্ধ করে। দলীয় সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা গণমাধ্যমে আমাদের পক্ষে বিবৃতি দিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাঁরা অনেকটা প্রকাশ্যে আমাদের পক্ষে জনমত তৈরি করতে থাকেন। এসকল নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা আ.লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বাবু কাশীনাথ দত্ত, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আ. ওহাব খলিফা, অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শামীম মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মো. শাহ আলাম, সামসুজ্জামান লিকন প্রমুখ।

আমাদের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী সেই নেতার অনুসারীদের সমাবেশ ও মিছিলের ঘটনায় ২০০৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোয়ে ওই সংবাদের শিরোনাম ছিল - "গলাচিপায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাংসদের সমর্থকদের বিক্ষোভ, আ.লীগের একাংশের নিন্দা" প্রথম আলো, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯। ওই দিনই প্রথম আলোয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। পাঠকদের সুবিধার জন্য সম্পাদকীয়টি ছবি আকারে দেওয়া হলো। (বাকি অংশ পঞ্চম পর্বে) শ্বাস রুদ্ধকর দিনগুলি - ৩ শ্বাসরুদ্ধকর দিনগুলি - ২ শ্বাসরুদ্ধকর দিনগুলি - ১  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.