আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাবা

ফর্ক একমাত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। দরিদ্র বাবা অর্থ সংকুলান করতে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন জমি িবক্রির। চার শতক জমি। শতক ২ লাখ করে ধরলে ৮ লাখ। বিয়েটা ভালভাবে চালিয়ে আরো কিছু থাকবে আশা করা যায়।

ইদানিং জমির দালালের সাহায্য ছাড়া জমি বিক্রি প্রায় অসম্ভব। তাই তিনি দালালের সাহায্য চাইলেন। দালাল খবর নিয়ে আসল, তালুকদার সাহেব ১ লাখ করে দাম করেছেন। জমিটা যেহেতু তালুকদার সাহেবের বাসার পাশে, তাই তার এ জমির প্রতি আগ্রহ। এ কথা শুনে মেয়ের বাবা হতবাক।

তালুকদার সাহেবের ছেলের সাথেই তো তার মেয়ের বিয়ে! তালুকদার সাহেব এলাকার ক্ষমতাধর ব্যক্তি। রাজনৈতিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক ক্ষমতা, পেশী শক্তি - সবকিছুর প্রাচুর্য রয়েছে তার। আর এ জমির প্রতি তালুকদার সাহেবের লোভ অনেক দিনের। তাইতো আজ সুযোগ পেয়ে গোপনেই প্রস্তাবটি পাঠালেন জনৈক জমি দালাল কর্তৃক। ১ লাখ টাকায় এ জমি বিক্রি করা মানে পানির দামে জমিটি ছেড়ে দেয়া।

শিক্ষকতা করে অনেক কষ্টে কিনেছিলেন এ জমি। তাই তাৎক্ষণিক মতামত না দিয়ে তিনি গোপনে গোপনে ভাল একজন ক্রেতা খুঁজতে থাকলেন এবং ভাগ্য ভাল থাকায় অথবা জমিটি লোভনীয় স্থানে হওয়ায় ভাল দামে বিক্রি করার মতো ক্রেতা খুঁজে পেলেন। তবু জমিটা বিক্রি করতে পারলেন না কারণ খবর পেয়ে তালুকদার সাহেব গোপনে ঐ ক্রেতাকে হুমকি দিয়ে সরিয়ে দিলেন। এবং আর কোন ক্রেতা এগিয়ে আসল না। এ অবস্থায় জামিল সাহেবের সামনে দুইটি অপশন থাকল: ১. পানির দামে জমিটি বিক্রি করে দেয়া।

অথবা, ২. মেয়ের ঠিক হয়ে যাওয়া বিয়ে বাতিল করে দেয়া। জামিল সাহেব তার রাজা বাঁচালেন। মানে প্রথম অপশনটি বেছে নিলেন। পিন তালুকদার সাহেবের ছেলে করিম ছেলেবেলা থেকেই জামিল সাহেবের মেয়ে বেলার প্রেমে পতিত। কিন্তু বেলা কিছুতেই করিমকে তার যোগ্য মনে করে না।

কারণ বলার মত গুন তার তেমন কিছুই নাই। তবে শেষের দিকে বেলা বুঝতে পেরেছিল যে অ্যাট লিস্ট একটা গুন করিমের আছে। সেটা হল; বুলডগস্ টিনাসিটি। মানে কোনকিছু নিয়ে লেগে থাকায় করিমের জুরি মেলা ভার ছিল্। টানা ১০ বছরের চেষ্টায় করিম সক্ষম হল বেলার সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে।

তারপর কোন একদিন তার গাড়িতে বেলাকে তুলে জোর করে কিছু আপত্তিকর দৃশ্য তুলল এবং হুমকি দিল তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে বেলাকে তার সাখে বিয়েতে রাজী হতে হবে। অবস্থা এমন যে হয় বিয়েতে রাজী হও নয়তো তোমার আর তোমার বাবার মুখে চুনকালী। চেকমেট অনেক অনেক দিন পর। বৃদ্ধ করিম শয্যাশায়ী।

বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। বেলা তার পাশে বসে আছে। তাদের একমাত্র সন্তান আবীর এখন অনেক বড়। করিম ইশারা করে বেলাকে বলল আবীরকে ডাকতে। করিমের নয়নের মনি আবীর।

তার বংশের বাতি। সারাক্ষণ তাই করিম পাশে পাশে রাখতে চায় আবীরকে। আবীর কাছে থাকলে শান্ত থাকে করিম। দূরে গেলে অসুস্থতা বেড়ে যায়। বেলা আবীরকে ডাকে না।

করিমকে তার কিছু কথা বলার আছে। ডাক্তার করিমকে বাঁচানোর আশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেক আগেই্। তাই বেলা ভাবে আজ কথাগুলা না বললে হয়তোবা আর কখনো বলা যাবে না। বেলা তাই করিমের হাতে এক টুকরো কাগজ গুঁজে দিয়ে পড়তে বলে। কাগজে লেখা- শোন করিম, তোমাকে আমার কিছু কথা বলার ছিল্।

তুমি খুব ভাল করেই জান তোমাকে বিয়ে করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার ছিল না। তুমি একটা নোংরা খেলা খেলে বাধ্য করেছিলে তোমাকে বিয়ে করতে। আমি পারতাম বিয়েতে রাজী না হতে। কারণ, বেলা ওরকম চুনকালীর খুব কমই পরোয়া করে। শুধু বাবার দিকে চেয়ে আমি রাজী হয়েছিলাম।

নয়তো এ জীবনে তোমার ভাগ্য হতো না আমাকে পাওয়ার। আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসতে। কিন্তু তোমার ভালবাসার সংজ্ঞাটা বোধ হয় অন্যরকম ছিল। তাই তুমি আমাকে বিয়ে করার পরও মেয়ে মানুষ নিয়ে সময় কাটাতে। আমাকে মিথ্যে কথা বলে রাতের পর রাত বাইরে থাকতে।

যেদিন প্রথম জানতে পারলাম তোমার এই বদভ্যাসটির কথা সেদিনই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে পারতাম। কিন্তু আমি চাইনি আমার বাবা আমার কারনে কোন কষ্ট পাক। তাই সয়ে গিয়েছিলাম ঘটনাগুলো। তবে আমি আমার মতো করে প্রতিশোধ নিয়েছি তোমার সব কাজের। জানি, তুমি আমাকে খারাপ ভাববে।

কিন্তু তুমি যে খারাপ কাজগুলা করেছ আমার সাথে, তার পাল্টা হিসেবে আমার এই জঘন্য কাজটি করে আমি ভুল করিনি। আমি আমার মনকে শান্তি দিতে গিয়েই কাজটি করেছি। আমি জানি হয়তো আমার মতো করে আর কেউ চিন্তা করতো না। কি করবে বল! সব মানুষতো আর সমান না। ব্যাপারটি যদি তুমি না জেনে যাও তবে আমার খুব খারাপ লাগবে।

প্রতিশোধ আর প্রতিশোধ থাকবে না। তোমার জানা উচিত যে, আবীর তোমার ছেলে না। হ্যা, ব্যাপারটা অবিশ্বাস করার মতো জানি। তবু এটা ঠিক যে, যে আবীর বলতে তুমি অজ্ঞান প্রায়, সে আবীর তোমার ঔরসজাত না। আমি চরম আনন্দ পেতাম যখন দেখতাম তুমি আবীরকে নিজ ছেলে ভেবে নিয়ে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরছ।

সেটাই ছিল আমার প্রতি তোমার সকল খারাপ আচরণের জবাব। জানি সমাজ এ ঘটনা জানলে আমাকে নিন্দা জানাবে। তবু আমি জানি আমি কোন ভুল করিনি। আমার কাজের জবাব আমার কাছেই আছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।