আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টিতে

অনুতাপ নিপীড়িত ব্যাথিত জনের শক্তিধরে অস্ত্রধারী শত সিপাহের ‘আকাশ এতো মেঘলা যেওনাকো একেলা এখনই নামবে অন্ধকার...। ’ আকাশ মেঘলা ছিল না, এমনকি তখন বিকালও হয়নি। বেলা দুুপুর। এই গানটিতে একলা বেরুতে বারণ করা হলেও কর্ম ও কর্তব্যের আহ্বানে একাকী বের হতে হলো। দিনটি ছিল আষাঢ়ের প্রথম দিন।

আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল। দিনটি ছিল পহেলা আষাঢ় অর্থাত্ বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন। তাই গাঢ় নীল শাড়ি গায়ে জড়িয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছি। হঠাত্ আম্মা মনে করিয়ে দিলেন ছাতাটা ব্যাগে ভরে নিয়েছি কি-না। মায়ের কথা তো আর ফেলবার নয়।

তাই সঙ্গে ছাতাটা নিয়েই কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ছয়তলা সিঁড়ি বেয়ে যেই নিচে পৌঁছলাম, ঠিক তখনই শুরু হলো বৃষ্টির রসিকতা। হঠাত্ শুরু হলো অঝোর বৃষ্টি। আমার ছিল অফিসে দ্রুত পৌঁছানোর তাড়া। তাই বৃষ্টি প্রবল বেগ উপেক্ষা করে বের হয়ে পড়লাম।

ছাতা মাথায় দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে রিকশা নিলাম। কিন্তু প্রবল বৃষ্টির ধারা আমাকে যে কোনোভাবেই হোক ছুঁয়ে দেবে। তাই হলো! আষাঢ়ের রসিক বৃষ্টি রসিকতা করে ভিজিয়ে দিল আমার শাড়ির আঁচল, মাথার চুল। রিকশায় যদিও পলিথিন দিয়ে ঢেকে বসেছিলাম। কিন্তু ছাতা, কাগজ সব বৃষ্টি নিরোধক ব্যবস্থা উপেক্ষা করে বৃষ্টি ভিজিয়ে দিল।

বৃষ্টির শীতল স্পর্শ মনকে উদাস করে দেয়। রোমান্টিক ভাবনার অতলে হারিয়ে গেলেও অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছলাম। অফিসের কাজে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করলাম বার বার। কিন্তু উদাস মন! সে কি আর বাধা মানে! তাই তো আনমনে গেয়ে উঠলাম... আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে জানিনে জানিনে কিছুতেই যে মন কেন লাগে না। ‘বর্ষা’ শব্দটি উচ্চারণ করতেই কানে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ সুরের ঝঙ্কার তোলে।

বৃষ্টিভেজা সুখ মন ছুঁয়ে যায় ‘বর্ষাকাল’ এলেই। বর্ষা শব্দটি ভাবতেই মনের মধ্যে নানা ছন্দের দোল লাগে। সুমধুর গানের সুর মনকে করে তোলে উদাসী, রোমাঞ্চিত। বাংলা ষড়ঋতুর মধ্যে বর্ষা তার রূপ, রস, গন্ধে চার পাশ সজীবতায় ভরে তোলে। বর্ষা স্নিগ্ধ-শীতল আবেশে অনন্য আসন দখল করে আছে।

বর্ষার সতেজতা-সজীবতা ও স্নিগ্ধ রূপে যুগে যুগে কবিরা মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন বর্ষাকাল আর বৃষ্টি নিয়ে অজস্র গান ও কবিতা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও বর্ষাকাল ছিল অত্যন্ত প্রিয় ঋতু। তাই তো বর্ষায় মানসী প্রিয়ার ধ্যানে মগ্ন কবি লিখেছেন— ‘এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘন ঘোর বরিষায়। ’ কর্মব্যস্ততায় আমরা যতই নিমগ্ন হয়ে থাকি না কেন, বর্ষার বৃষ্টিঝরা স্পর্শে হৃদয়ময়ূরী অজান্তে পাখা মেলে। আকাশের বুকচিরে যখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে, সে স্বচ্ছ বৃষ্টির জল হাত স্পর্শ করতে ইচ্ছা হয়।

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ চারপাশ বর্ষার আগমনে সজীব-সতেজ হয়ে ওঠে। বর্ষার নবধারার জলে যেমন হাস্যোজ্জ্বল তরুণী আনন্দে স্নান করে, তেমনি তৃষ্ণার্ত বৃক্ষরাজি বৃষ্টিতে ভিজে নতুন করে প্রাণ খুঁজে পায়। গাছের সবুজ পাতাগুলোও সারাদিনের বৃষ্টিতে ভিজে ময়লা-ধুলো ধুয়ে-মুছে নতুন চকচকে সবুজ হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে প্রাণহীন গাছ-পালা, বন, চারপাশ বর্ষার বৃষ্টিভেজা মায়াবী ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। এমন ঝরঝর বাদল দিনে কিছুতেই মন ঘরে বসতে চায় না, কেবলই কল্পনায় হারিয়ে যেতে চায় সুদূরে, অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে।

রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে মন কখনও ব্যাকুল হয়ে ওঠে, কখনও প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভিজে হয়ে যেতে চায় একাকার। তাই তো আনমনে গেয়ে উঠি— ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে, এসো কর স্নান নবধারা জলে। ’ বৃষ্টির ছন্দের তালে তালে শিশুদের বাঁধভাঙা উচ্ছল ছুটোছুটি সেই শৈশবের, সেই দূরন্ত দিনগুলোর কাছে হাত টেনে নিয়ে যায়। শুধু বৃষ্টিতে স্নাত হয় না, কল্পনায়ও করি অবগাহন। গাছে গাছে কদম ফুলের সতেজ হাসি আর কৃষ্ণচূড়ার টকটকে লাল রূপ মনকে মুগ্ধ করে, করে উদাসী-আনমনা।

এর মধ্যে পেটে ক্ষিদে সুড়সুড়ি দেয়। নাকে ঘ্রাণ আসে মায়ের হাতের রান্না ভুনা খিচুড়ি-মাংসের। বেশ মজা করে খাওয়া হয় সবাই মিলে। বর্ষায় ঘরে ঘরে দুপুরে খিচুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। বৃষ্টির দিনে অলস বিকালে মুড়িমাখা খাওয়া, তারপর গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জানালায় টাপুরটুপুর বৃষ্টি পড়া দেখার তুলনা হয় না।

বর্ষাকালে রাস্তার পাশে বা দোকানে রং-বেঙের ছাতার ডালি সাজিয়ে বসে থাকেন বিক্রেতারা। সেই সঙ্গে রেইনকোট ও পানি নিরোধক সামগ্রীর চাহিদাও বেড়ে যায় দারুণভাবে। ফ্যাশন হাউসগুলো বর্ষা ঋতুকে প্রাধান্য দিয়ে নানা বর্ণের পোশাকের পসরা সাজিয়েছে। বর্ষাকালে নানা অসুখ-বিসুখ হয়। তারপরও কিছু বিড়ম্বনা থাকা সত্ত্বেও বর্ষার দান অপরিসীম।

বৃষ্টির পানির শান্তির পরশ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে শিহরণ তোলে। এক অসাধারণ কাব্য-ব্যঞ্জনায় মনকে অনুরিত করে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কর্মব্যস্ততায় আমরা যতই নিমগ্ন হয়ে থাকি না কেন, বর্ষার বৃষ্টিঝরা স্পর্শে হৃদয়ময়ূরী অজান্তে পাখা মেলে। আকাশের বুকচিরে যখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে, সে স্বচ্ছ বৃষ্টির জল হাত স্পর্শ করতে ইচ্ছা হয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ চারপাশ বর্ষার আগমনে সজীব-সতেজ হয়ে ওঠে।

বর্ষার নবধারার জলে যেমন হাস্যোজ্জ্বল তরুণী আনন্দে স্নান করে, তেমনি তৃষ্ণার্ত বৃক্ষরাজি বৃষ্টিতে ভিজে নতুন করে প্রাণ খুঁজে পায়। গাছের সবুজ পাতাগুলোও সারাদিনের বৃষ্টিতে ভিজে ময়লা-ধুলো ধুয়ে-মুছে নতুন চকচকে সবুজ হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে প্রাণহীন গাছ-পালা, বন, চারপাশ বর্ষার বৃষ্টিভেজা মায়াবী ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। এমন ঝরঝর বাদল দিনে কিছুতেই মন ঘরে বসতে চায় না, কেবলই কল্পনায় হারিয়ে যেতে চায় সুদূরে, অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে। রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে মন কখনও ব্যাকুল হয়ে ওঠে, কখনও প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভিজে হয়ে যেতে চায় একাকার।

তাই তো গুনগুনিয়ে আনমনে গেয়ে উঠি— ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ। ’ Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।