আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকার গোপন গোয়েন্দা জগত (প্রথম পর্ব)

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই প্রায় তিন হাজার সংস্থা আর সাড়ে আট লাখ কর্মী বাহিনী নিয়ে আমেরিকার সুবিশাল টপ সিক্রেট জগৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশিত সাংবাদিক ডানা প্রিষ্ট ও উইলিয়াম আরকিনের রিপোর্ট অবলম্বনে এখানে সেই রহস্যময় জগতের কিছু অংশ তুলে ধরা হল। আমেরিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমেরিকার আছে এক সুবিশাল প্রায় অদৃশ্য নিরাপত্তা দেয়াল যারা নিরলস সারা দুনিয়ার ওপর চোখ রেখে যাচ্ছে।

এ হল আমেরিকার ভেতর আর এক আমেরিকা। এই দেয়াল দেখা যায়না শোনা যায়না কিন্তু মাঝে মাঝে অনুভব করা যায়। ৯/১১ র সন্ত্রাসী হামলার পর সেই জগত এত বিশালত্ব আর রহস্যময়তা লাভ করেছে যে, সেই জগতে কত লোক কাজ করেছে? কারা কাজ করেছে? কি পরিমান কার্যক্রম চলছে? কত টাকা ব্যায় হয়েছে তার সঠিক হিসাব মনে হয় কেউ জানে না। এখানে যারা কাজ করেছে এমন কি তারাও জানে না এর সঠিক কাঠামো কি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রর সারা দেশে ১০ হাজারস্থানে সন্ত্রাস দমন, অভ্যান্তরীন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ১২৭১টি সরকারী সংস্থা ও ১৯৩১টি প্রাইভেট কোম্পানী কাজ করে চলছে দিন রাত ২৪ ঘন্টা।

এসব কাজ করার জন্য টপ সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সপ্রাপ্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৫৪হাজার অর্থ্যাৎ ওয়াশিংটন ডিসিতে যত লোক কাজ করে তার প্রায় দেড় গুন। মজার ব্যাপার হল এর প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার জনই প্রাইভেট কন্ট্রাকটর এই অফিসগুলোর নিরাপত্তা বিধানে থাকে ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক লক, রেটিনাল ক্যামেরা এমন সব দেয়াল যা আড়িপাতা কোন সরঞ্জাম দিয়ে ভেদ করা যায় না। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ১৬টি। যেমন সিআইএ, এফবিআই, ডিআইএ, এনএসএ, এনআরও ইত্যাদি ইত্যাদি। আমেরিকার গোয়েন্দা বাজেট বিশাল ২০০৯ সালে ঘোষিত বাজেট ছিল প্রায় ৭৫০০ কোটি ডলার যা প্রায় ৯/১১ সময়ের থেকে আড়াইগুন।

এর বাইরেও থাকে বিশাল গোপনীয় ফান্ড যা জনসন্মূখ্যে প্রকাশ পায় না। আমেরিকার টপ সিক্রেট জগতটা যে কত গোপনীয়তায় ঢাকা তার উদাহরন হল পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্রের যত গোয়েন্দা কার্যক্রম আছে তার দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা দপ্তরের অধীন। অথচ এই দপ্তরের কর্মকান্ডের জানার সুযোগ আছে মাত্র হাতে গোনা দুই চার জনের। এদের কে সুপার ইউজার বলা হয়।

এখানকার কর্ম কান্ড এত জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চালিত হয় যে এর দায়ীত্ব বা ক্ষমতা কোথা থেকে আসছে তা উপলদ্ধি করা এক দূরুহ ব্যাপার। আমেরিকার টপ সিক্রেট জগতের রাজধানী হল ওয়াশিংটন অঞ্চল। ৯/১১ র পর ওয়াশিংটন ও এর আশে পাশে এলাকায় অতি গোপনীয় কর্মকান্ড চালানোর জন্য ৩৩টি ভবন কমপ্লেক্স নির্মান হয়েছে অথবা নির্মানাধীন অবস্থায় আছে। এগুলো যদি পাশাপাশি রাখা হয় তবে এরমধ্যে ২২টি ক্যাপিটাল ভবন ধারন করা যাবে। নাইন ইলিভেনের জবাবে সব সুদ্ধ ২৬৩টি সংস্থা গঠিত বা পূর্নগঠিত হয়েছে।

প্রতিটি স্ংস্থায় অধিক হারে কর্মচারী দরকার হয়েছে, এদের জন্য দরকার হয় আবার লজিষ্টীক সাপোর্ট, এতসব কর্মচারী এত সবসংস্থা এগুলোর দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়ে তৈরী হয় এক জটিল অবস্থা। এই অবস্থা নিরসন কল্পে বুশ প্রশাসন ও কংগ্রেস ২০০৪ সালে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে তৈরী করেন অফিস অভ দি ডিরেক্টর অভ ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স। এর কার্যালয় লিবার্টি ক্রসিংয়ে। এই সংস্থার দায়িত্ব ও কর্মকান্ড অনেক সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তাও জানেন না। আগেই উল্লেখ্য করা আছে আমেরিকায় টপ সিক্রেট কাজ করে ১৯৩১টি।

এর মধ্যে একশত দশটি আছে সমগ্র গোয়েন্দা কর্মকান্ডের ৯০% করে। এর মধ্যে আছে জেনারেল ডাইনামিক্স। ১০ বছর আগেও এরা গতানুগতিক যুদ্ধাস্ত্র যেমন সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান ইত্যাদি তৈরী করত এখন সেখানে করছে হাজার হাজার সফটওয়্যার যার মাধ্যমে শত্রু দেশের যেকোন টেলিফোনে আড়িপাতা যায়। একজন মাত্র লোকের পক্ষে প্রতি মুহুর্তে লক্ষ্য লক্ষ্য ডাটা বাচ বিচার করা যায়। গোয়েন্দা জগতে একছত্রতা রাখতে যেয়ে কৃত্রিম উপগ্রহ, ডাটা ইন্টারপ্রিটেশন, সারভাইল্যান্সের উপর এক্সপার্ট আরো ছোট ১১টি কোম্পানীর সাথে জয়েন ভেঞ্চার এ গেছে জেনারেল ডাইনামিক্স।

কোম্পানীর আয় ২০০০ সালের এক হাজার কোটি ডলারের জায়গায় ২০০৯ সালে গিয়ে দাড়ায় ৩১৯০ কোটি ডলার। ২০০০ সালে লোকবল ছিল ৪৩৩০০ আর ২০০৯ সালে ৯১৭০০। জেনারেল কোম্পানীর মত অতিকায় কোম্পানীর পাশে কাজ করছে ১৮১৪টি সংস্থা। ৯/১১ র পর সরকার গোয়েন্দা জগতকে ঢেলে সাজাবার জন্য অকাতরে অর্থ ঢেলেছে, সেই অর্থ বাগাবার জন্য রাতারাতি গজিয়ে ওঠে বিপুল গোয়েন্দা অফিস, আর এই সুযোগে যারা গোয়েন্দা কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে ছিল তারা প্রায় সবাই একটা করে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। এমনই এক কোম্পানী আব্রাকাক্স কোম্পানী।

কোম্পানীর মালিক হলেন সিআইএর এক সাবেক কর্মকর্তা। কোম্পানীটি অতি দ্রুত সি আই এ র একজন বড় কন্ট্রাক্টর এ পরিনত হয়েছে। এরকম আর এক কোম্পানী হল SGIS। মাত্র ৩০ জন লোক নিয়ে ২০০২ সালে গঠিত হলেও আজ এর অফিস সংখ্যা ১৪টি, লোকবল ৬৭৫। বার্ষিক আয় ১০ কোটি ডলারের ওপর।

টপ সিক্রেট আমেরিকায় যত গোয়েন্দা কোম্পানী আছে তার মধ্যে আইটি কোম্পানীর রমরমা অবস্থা। প্রায় ৮০০ ওপর আইটি কোম্পানী কাজ করে। প্রতি নিয়ত এরা ডেভপলপমেন্ট করছে সেই সব সুবিধা সমূহ যা আস্তে আস্তে গ্লোবালাইজেশন এর প্রভাবে আপনি ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক তাতে জড়িয়ে পরবেনই, তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেনই আর নিজের অজান্তে ক্রিয়ানক হয়ে পড়বেন ওই সব গোয়েন্দা আইটি কোম্পানীর হাতে। আপনার ব্যাক্তিগত জীবন তখনই ওদের হাতে এক রকম জিম্মি। ধরুন আপনার হাতের মোবাইলের কথাটা।

আর আপনাকে চাইলেও হোক না চাইলেই হোক আপনাকে মোবাইল ব্যাবহার করতে হবেই আর আপনার আজান্তেই আপনি মনিটর হয়ে যাচ্ছেন। ধরুন একটি সফটওয়্যার যাতে ১০০০ ইংলিশ বা বাংলায় বা হিন্দিতে দেয়া আছে আপনি ওই এক হাজারের যেকোন একটি শব্দ উচ্চারন করলেই আপনার কথা সব যেয়ে একটি নিদির্ষ্ট ড্রাইভে চলে যাবে সেখানে আবার আর একটি প্রোগামের মাধ্যমে তারমধ্যে থেকে যাচাই বাচাই হয় ওই কথা দৃষ্টগোচর করবে মূহুর্তের মধ্যে সংলিষ্ট ব্যাক্তিকে। পুরা প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হচ্ছে সামান্য কয়েকজন লোকের কর্মদক্ষতায় সময় লাগছে কয়েক মিনিট। আমেরিকার টপ সিক্রেট জগতে কন্ট্রাকটর চাহিদা উত্তোরোত্তোর বৃদ্ধি পাছে। সি আই এর মোট লোকবলের এক তৃতীয়াংশই হল ওই ১১৪টি ফার্মের কর্মচারী যাদের লোক সংখ্যা দশ হাজারের বেশী।

সি আই এ র এই কন্ট্রাক্টররা ইরাকে গুপ্তচর নিয়োগ দিয়েছে, আফগানিস্তানে ঘূষ দিয়ে গোপন তথ্য বের করছে, ইতালীর রাজপথ থেকে চরমপন্থী সন্দেহে অপহরন করেছে, নিজেদের গোপন কারাগারের লোকজনদের নিয়ে জেরা করছে। চলবে কৃতজ্ঞতাঃ টপ সিক্রেট আমেরিকা ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.