আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রথম চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট এ খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা

দেশটা আমাদের। এর জন্য ভাল কিছু করতে হলে আমাদেরই করতে হবে। Mail:rabiul@gmail.com সময়টা ছিল ১৯৮৫ সাল। আমরা থাকতাম মতিঝিল কলোনীতে। আমি তখন পড়ি ১ম শ্রেনীতে।

সন্ধায় যেতে হবে মিডনাইট সান মোহাম্মদপুরে। আমার এম্নিতে মুরগির মাংস খেতে খুবই মজা লাগে। চায়নিজ রেষ্টুরেন্টী মুরগীর ঝাল ফ্রাই নাকি খুব মজা। সারা দিন মনে আনন্দ,জিহবায় পানি এসে থাকত। চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট এ খেলার নাকি অনেক জায়গা থাকে।

তাছাড়া খাওয়া গুলো নাকি একটু অন্য রকম। তবে সে খানে নাকি তেলেপোকা আর ফড়িংয়ের ভাজি ও পাওয়া যায় আমার এক বন্ধু স্কুলে বল্ল। খুব উত্তেজনা সারাদিন। তখন ঢাকা শহর এ রাস্তায় কোন বাতি ছিল না। রাত হলেই অন্ধকার।

এরশাদ সরকার তখন্নো রাস্তায় টিউব লাইট লাগায় নি। রাস্তায় রিকশা গুলোতে হারিকেন লাগানো থাকতো। সন্ধায় তিন ভাই আর মা বাবা মিলে গেলাম মিডনাইট সান মোহাম্মদপুরে। তিন ভাইয়ের পরনে ছিল হাফ শাট আর হাফ পেন্ট। মা বাবা যেখানে বসতে বল্ল সেখানেই বসে রইলাম।

আমরা যেখানে বসে ছিলাম তার পাশেই ছিল প্রকান্ড দুটো আলমারি। আসলে তখন বুঝি নাই যে ওই দুইটা হলো এসি। এসির পাশে বসাতে শুরুতেই প্রচন্ড ঠান্ডার ধাক্কা খেলাম। কিন্ত বুঝতে পারি নাই যে ওই গলোই আসলে ঠান্ডার জন্মদাতা। হাফ পেন্ট আর হাফ সাট হওয়াতে তিন ভাইয়ের অবস্থা অল্প কিছুক্ষনেই কাহিল হয়ে গেল।

তিন জনই এই ভয়ংকর রুম থেকে কিভাবে খেয়ে তাড়াতড়ি বের হওয়া যায় তার পথ খুজতেছিলাম। কিন্তু খাওয়া তো আর আসে না। খাওয়া কেন আসছিল না সেটার কারনও বুঝতেছিলাম না । আসলেতো তখন মাত্র খাওয়ার অডার দেয়া হয়েছে। আমরা তো ভাবছিলাম যাব আর খাব।

কিন্তু দেরি হওয়াতে ভাবছিলাম না খেয়েই এখন কিভাবে বের হওয়া যায়। কিন্তু বিষয়টা বাবাকে কে বলবে?আমি বাবাকে বল্লাম বাবা খেলার জায়গা কোথায়?বাবা যেভাবে চোখ মেলে চাইলেন তখন আর কথা বল্লাম না। বাবা হাত ধূয়ে আসতে বল্লেন। তিন ভাই মায়ের সাথে যখন হাত ধোয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলাম তখন খেয়াল করলাম যে এই খানে ঠান্ডা অনেক কম। তাছাড়া সেখেনে চোবাচ্চার মত ছিল আর সে চোবাচ্চার পানিতে ব্যং,কুমিরের ছোট ছোট মূতি ছিল।

আমরা সেগুলো নিয়ে খেলা শুরু করলাম কিন্তু রুমে কেঊই যেতে চাচ্ছিলাম না আবার ঠান্ডায় পড়ব বলে। অবশেষে মায়ের বকা খেয়ে আবার রুমে ফিরে আসতে হল। আবার সেই ভয়ংকর ঠান্ডা। তবে এবার কিছুক্ষন অপেক্ষার পরই এলো খাবার। কয়েকটা আইটেম মজা পেলেও বাকি গূলো খাওয়ার কোন ইচ্ছা করছিলো না কারন সু্প এত ভাল লেগে ছিলো যে অনেক খাওয়া হয়ে গিয়েছিল।

যে মুরগীর ঝাল ফ্রাই এত পছন্দ সেটা আইটেমের মধ্য পেলাম না। আসলে সেটা তখনো রান্না হচ্ছিল। আমরা জানতাম না চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট এ এভাবে একটা একটা করে আইটেম আসবে। ঝাল ফ্রাঈ না দেখে বাবার উপর আমি খুবই খেপলাম কিন্তু মুখে কিছুই বল্লাম না। টেবিলে যা পেলাম তার কয়েক্টা আইটেম বেশী করে খেয়ে পেট ভরে ফেল্লাম তবে সবই মজা লেগেছিল।

মজার খাওয়া গুলো আসল পরে। তখন আর পেটে জায়গা নেই। ছোট পেটে আর কতোই বা আটবে। এখন বুঝি আসলে শুরুতে সু্প খেলে আর খাওয়াতে তেমন রুচিও থাকেনা। তাছাড়া ঠান্ডায় শুধু পালাই পালাই করছিলাম।

সুতরাং খাবার রয়ে যাচ্ছিল কিন্তু আমরা খাচ্ছিলাম না। ঠান্ডায় জিবনে আর চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট এ আসবনা বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। এদিকে না খাওয়াতে কিছুক্ষন পর আব্বা শুরু করল বকা। বকা দেয়ার কারন আব্বার মনই খারাপ হয়ে গেছে ছেলেদের বুঝি চায়নিজ রান্নাই পছন্দ হয়নি। এত শখ করে আব্বা আমাদের চায়নিজ এ আনলেন আর আমরা খাচ্ছিলাম না।

অবশেষ এ এক সময় আব্বা আম্মার খাওয়া শেষ হলে আমরা চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট থেকে বিদায় নিলাম। যেতে যেতে আব্বা বল্লেন এদের আর কোন দিনই চায়নিজ এ আনবো না। তখন আমার আব্বার উপর খুব রাগ হচ্ছিল এই কারনে যে কেন আমাদের এই রকম জঘন্য ঠান্ডার জায়গাতে আনা হল কিন্তু মুখে কিছুই বলিনি। তবে মনের মধ্য একটা জিনিষ গেথে গিয়েছিল যে চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট মানে খুবই ঠান্ডার জায়গা সেখানে কোন ভাবেই হাফ পেন্ট পরে যাওয়া যাবেনা। গায়ে অবশ্যিই গরম কাপড় পরে যেতে হবে।

আর আবশ্যিই মজার খাবারগুলো সেখানে সবার পরে আসে তাই সেখানে গেলে খাবার দিলেই খাওয়া যাবে না। শেষের দিকে খাওয়া শুরু করতে হবে। এর কয়েক দিন পরেই আমার এক মামার ফার্মগেট এ চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট এ বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল। আমরা তিন ভাই ভয়ে আর ওই বিয়েতে যাইনি। আমি দীর্ঘ সময় পর অনার্স পড়ার সময় একদিন মোহাম্মদপুরে যাওয়ার সময় প্রথম মিডনাইট সানকে দেখি আর ভাবি এইখানেই আমার প্রথম চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট এ খাওয়ার ভীতির জন্ম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.