আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিছানায় নেওয়ার ভাষা সব দেশের পুরুষেরই এক

ব্লু মস্ক থকে হাজিয়া সোফিয়ার মাঝে একবোরে অল্প একটু পথ আছে। পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের মত লাগে। আমি য্খন হাজিয়া সোফিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম তখন একজন ছেলে ইস্তানবুলের গাইড বুক নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসেন। প্রথমে পঁয়ত্রিশ লিরা দাম চাইলেও আমি পাঁচ লিরা দিয়ে তা কিনে নিই। এরপর ছেলেটি আমার পিছনে পিছনে আসতে থাকে এবং জিজ্ঞাসা করে 'তুমি কি একা?' আমি জবাবে বলি 'হ্যাঁ'।

ও সাথে সাথে বললো, 'আমি কি তোমার সাথে আসতে পারি?" আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেনো? ও জবাবে বললো যে সে ছাত্র এবং আমার সাথে ইংরেজি র্চচা করতে চায়। আমি তাকে আমার সাথে আসবার জন্য সম্মতি জানালাম। ও সাথে সাথে পাশের একজনকে গাইডবুকগুলো দিয়ে আমার সাথে হাজিয়া সোফিয়ার দিকে হাঁটতে লাগলো। আমি তার নাম জানলাম মুজাহদি। একটি ছবি তুলে দেবার জন্য অনুরোধ জানালাম।

ছবিটা আমি 'ব্লু মস্ক' এবং 'হাজিয়া সোফিয়া'র মাঝে তুললাম। আমি ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে বললাম চমৎকার। মুজাহদি বললো হ্যাঁ, একেবারে মেয়েদের উদ্ধত স্তনের মতো। আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি বললেন? একটু বিষদভাবে বর্ণানা করে বললো, নারীর স্তন যেমন পাশাপাশি মাঝে একটু জায়্গা রেখে এক বক্ষে অবস্থান করে, ঠিক তমেনি 'ব্লু মস্ক' এবং 'হাজিয়া সোফিয়া' পাশাপাশি মাঝে একটু জায়্গা রেখে একই সুলতান আহমেতে অবস্থান করে। আমি মুজাহিদের রসিকতায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

তারপর দু'জনের জন্য দু'বোতল পানি কিনে রওনা হয়ে গেলাম হাজায়া সোফিয়ার দিকে। হাজিয়া সোফিয়া বা আয়া সোফিয়া হাজিয়া সোফিয়া বাইজেনটাইন আমলে সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান বলে গণ্য করা হত। ‘হাজিয়া সোফিয়া’ শব্দটির অর্থ হলো ‘পবিত্র ভাবনা’, হাজিয়া সোফিয়া ৯১৬ বছর চার্চ হিসেবে ও ৪৮১ বছর মসজিদ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমানে তা জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মুসলিম সম্প্রদায় হাজিয়া সোফিয়াকে আবারো মসজিদ বলে খুলে দেবার জন্য প্রতিবাদ করে যাচ্ছে।

আমি যেদিন যাই সেদিন বড় ধরনের প্রতিবাদ সভা চলছিল, পথভরা ছিল পুলিশ ও প্রতিবাদীদের মিছিলে। হঠাৎ করে বাংলাদেশের সমাবেশের কথা মনে পড়ে গেল। আমি এতে একেবারে বিব্রত হইনি কিন্তু অন্য বিদেশিরা এতে যথেষ্ট ভয় পেয়ে যান। সেদিন মনে হয়েছিল যে বাংলাদেশে চলে অভ্যস্ত হবে সে বিশ্বের সব দেশে টিকে যাব। কোনওকিছুই তাকে আর বিচলিত করবে না।

আমি দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কিনে হাজিয়া সোফিয়াতে প্রবেশ করলাম। অনেক ট্যুর কোম্পানি টিকেট বিক্রি করে থাকে তাই যারা সময় বাঁচাতে চান তাদের জন্য টিকেট একটু আগে থেকে কিনে নেওয়াই ভালো। দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে শরীরের সব উৎসাহ চলে যায়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আমি হাজিয়া সোফিয়াতে প্রবেশ করলাম। প্রবেশ পথেই চোখে পড়ল বড় দেওয়ালের ওপর ভার্জিন মেরির কোলে যিশুখ্রিস্টের ছবি এবং পাশেই বড় করে লেখা ‘আল্লাহ’।

এ রকম মিউজিয়াম আমার কোনও দিন চোখে পড়েনি। হাজিয়া সোফিয়া বাজেনটাইন স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় ও অন্যতম নিদর্শন। এর গম্বুজগুলো মারবেল ও মোজেক দ্বারা বেষ্টিত। এর কারুকাজের বর্ণনা শুধু হাজিয়া সোফিয়া নিজেই দিতে পারে। চমৎকারভাবে নির্মিত এই হাজিয়া সোফিয়া।

হাজিয়া সোফিয়াও ‘ব্লু মস্ক’-এর মতো দোতলা বিশিষ্ট। এর স্থাপত্যে পশ্চিমার সংস্কৃতি, রোমের সংস্কৃতি ও মুসলিম স্থাপত্যের মিশ্রণ দেখা যায়। এর নির্মাণ কাঠামোটি একটু জটিল প্রকৃতির বলে মনে হয়েছে। হাজিয়া সোফিয়ার ডোমে ৪০টি জানালা রয়েছে। হাজিয়া সোফিয়া তার রহস্যময় আলোর জন্য বিখ্যাত।

এর ভেতরকার আলোতে কোথায় যেন রহস্য লুকিয়ে আছে। চার্চটি সম্পূর্ণভাবে মোজেক দ্বারা বেষ্টিত এবং ডিজাইনগুলো খানিকটা জ্যামিতির মতো। মোজেকের কারুকাজ দর্শনের মতো। এত সুন্দর নিখুঁত মোজেকের কারুকাজ খচিত মিউজিয়াম এখন বোধ হয় শুধু তুরস্কতেই আছে। হাজিয়া সোফিয়া দর্শন শেষে মুজাহিদ আমাকে জিজ্ঞাসা করল যে তুমি কি দুপুরের খাবার খয়েছো? আমি জাবাবে বললাম না।

ও বললো চলো তোমাকে আজ র্তুকীর কাবাব খাওয়াব। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। ও আমাকে একটি বিখ্যাত কাবাব রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। আমরা খাবার অডার করে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। অপেক্ষারত অবস্থায় মুজাহিদ আমাকে দিনের বাকি অংশের এবং পরবর্তী দিনের র্কমসূচী জিজ্ঞাসা করল, আমি বললাম রাতে বোসফারাস ট্যুরে যাব এবং এর আগে একটু কেনাকাটা করব।

ছেলেটি জবাবে বললো যে ‘ব্ল মস্কের’ নীচে অটোমান বাজার আছে সেখানে সে আমাকে খাবার শেষে নিয়ে যাবে। ওর পরিচিত সস্তা দোকান আছে। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। ক্লান্তি চিরতরে বিদায় হল। খাবার পরিবেশন করা হল।

মিক্সড গ্রিলড কাবাব ও তুর্কী মাঠা। তুরস্কে মাঠা খুবই জনপ্রয়ি। খেতে খেতে মুজাহিদ আমাকে জিজ্ঞাসা করল সেদিন রাতে আমার কি প্ল্যান? আমি বললাম বোসফারাস ট্যুর থেকে এসে ঘুমাবো। মুজাহদি চোখ চকচক করে বললো আমার সাথে নাইট ক্লাবে যাবে? আজ থাকো সারারাত আমার সাথে। আমার বুক একটু ধ্বক করে উঠলো।

কেমন জানি কিসের আভাস? বিশ্বভ্রমন একটা জিনিস আমাকে খুব ভালোভাবে শিখিয়েছে এবং সেটা হচ্ছে রহস্যময় নারীদেহের প্রতি পৃথিবীর সব পুরুষই বিচিত্রভাবে আকৃষ্ট। সে দেহ যে দেশেরই হোক না কেন? বাংলাদেশী অথবা তুর্কী দেহ। দেহ হলেই হল। সে দেহের স্বাদ সব পুরুষই গ্রহণ করতে চায়। হোক না সে দেহের সাথে এক মিনিটের পরিচয়।

পুরুষমাত্রই কেন জানি যে কোনও জায়্গায় যে কোনও সময়ে বস্ত্র উন্মোচনে প্রস্তুত। বিছানায় নেবার ভাষা সব দেশের পুরুষেরই এক। ভালোবাসা না থাকলেও তাদরে শরীর জাগ্রত হতে সময় লাগে না। আর শরীরে লাল বাতি তো সব সময়ই জ্বালানো থাকে। আমি ইঙ্গিত বুঝে বললাম ট্যুর শেষে রাতে ফোন করব।

- তানিয়া হোসেন, অনলাইন পত্রিকা থেকে নেয়া। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.