আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেডিক্যাল ভর্তি ও মেধাবীর স্বপ্নভঙ্গ

মোঃ রাইসুল করিম রিয়াদ ঘটনা ১: আমার এক বন্ধু । তার জীবনের স্বপ্ন ছিল সে ডাক্তার হবে । পড়াশুনাতেও সে খুব ভালো ছিল । এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ ৫ পায় । কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত সে এইচএসসি পরীক্ষার সময় খুব ‍অসুস্থ হয়ে পড়ে ।

অসুস্থ অবস্থায় সে পরীক্ষা দেয় । তাই পরীক্ষার রেজাল্ট খুব একটা ‍ভালো করতে পারেনি, জিপিএ ৪.৫০ পায় । সে খুব ভড়কে যায় । ভাবে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুঝি ভেস্তে গেল । কিন্তু দেখা গেল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় সে খুব ভালো রেজাল্ট করল ।

তার মেধা তাকে এগিয়ে দেয় । ঘটনা ২: সুজন (ছ্বদ্য নাম) আমার পরিচিত । পড়াশুনায় খুব একটা ভালো ছিল না । আড্ডা দিয়ে ও ঘুরা ফিরে সময় কাটাতো । আমরা তার নাম দিয়ে ছিলাম লাফাঙ্গা ।

এইএসসি পরীক্ষার ২ মাস আগে ওর কাছে শুনি ওর নাকি কিছু বইই কেনা হয়নি । তারপর সে কিছুদিন পড়ে পরীক্ষা দিল । পরীক্ষার কয়েকদিন পর তাকে জিজ্ঞেস করি পরীক্ষা কেমন হলো । সে হেসে যে উত্তর দিল তাতে ওকে আর যাই বলি ছাত্র বলা যায় না । ওর ভাষায় ”পাস করতে পারলেই বাচিঁ, দুই একটা প্রশ্নের উত্তর নিজে দিছি, দুই একটা পাশের বন্ধুর খাতা দেখে লিখছি আর যা না পারতাম তা মনের ইচ্ছে মত বানিয়ে দিছি ।

কোন রকমে ৮০ এনসার করে আসছি । ” যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দিল তখন আমরা তো থ খেয়ে গেলাম । ও নাকি জিপিএ ৫ পাইছে । ঘটনা ৩: আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষনা দিলেন, এখন নাকি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হবে না, ভর্তি হবে জিপিএ এর ভিত্তিতে । কথাটা শুনে কতটা যে হতবাক হয়েছি তা বলে বুঝাতে পারবো না ।

যতটা না হতবাক হয়েছিলাম সুজনের জিপিএ ৫ পাওয়াতে তার চেয়ে বেশি আশ্চার্য হয়েছি এমন ঘোষনাতে । তাদের কাছে কি প্রথম ঘটনার ছেলেটির চেয়ে ২য় ঘটনার ছেলেটি বেশি মেধাবী ? আমি এই নিয়মের তীব্র ও ঘোরতর নিন্দা জানাই । কেননা আমাদের দেশের বোর্ড পরীক্ষার দ্বারা কোন ছাত্রকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয় । আমি মনে করিনা বোর্ড পরীক্ষা গুলো এখনো সে মানের হয়নি যার ফলাফল দিয়ে মেডিক্যাল এর মত জায়গায় ভর্তি করা উচিত । আমাদের দেশে পাশের হার ও ভালো ফলাফলের হার বাড়লেও পড়ালেখার মান কিন্তু বাড়ে নি ।

শিক্ষকমন্ডলীরা ছাত্ররা কিছু লিখলেই নাম্বার দিচ্ছে । হোক তা প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক । এ বিষয়ে প্রচলিত আছে এটা নাকি তাদের বোর্ড থেকে নির্দেশ আছে । কারণ পাশের হার বেশি মানে সরকারের একটা ক্রেডিট । আমাদের দেশে এখনো পুরোপুরি নকল মুক্ত পরীক্ষার পরিবেশ হয়নি ।

হয়তোবা শহর অঞ্চল গুলোতে এর প্রবনতা কম থাকলেও মফস্বল এলাকাতে এখনো নকলের প্রবনতা আছে । আর এক জনের খাতা দেখে আরেক জনের পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা তো সবারই জানা । তার সাথে আছে রাজনৈতিক দলগুলোর অংগ সংঘঠন গুলোর ছাত্রদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া । তাই আমি আশা করবো সরকার এ বিষয়ে আরো ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নিবে । কারণ ডাক্তারী শুধু একটা মহৎ পেশা না এটা তার চেয়েও বেশী কিছু ।

কেননা একজন ভালো প্রশিক্ষিত ডাক্তারই পারে একজন মানুষের সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.