আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অচেনা চীনে ৬

। পুক্সিন কোম্পানিতে বেলা বারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত লাঞ্চ ব্রেক। তিরিশ মিনিটের মধ্যে লাঞ্চ শেষ হয়ে যায়। তার পর কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না প্রায় এক ঘন্টা। ভেনের দেখা না পেয়ে ঢু মারতে গেলাম অফিসে।

দেখি প্রায় সারা রুমই অন্ধকার। টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে সবাই। আর লাউঞ্জে বসে চা খাচ্ছে কয়েকজন। ভেন সেখানেও নেই। পাশেই একটা রুমের দরজায় লেখা টেবিল টেনিস।

ভাবলাম দেখি একটু ঢু মেরে। রুমে এক গাদা টেবিল টেনিস ব্যাট আর বল গড়াগড়ি খাচ্ছে, জন মানুষ নেই। বের হবার জন্যে দরজা খুলেই ভেনের সাথে দেখা । সেও নাকি আমাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। বলল ইউ ব্লে পিম পমচু? বললাম তোমার কথা বুঝিনা।

-ইউ ওয়ান টু ব্লে দিস গেইম? -আমাদের না ব্যাঙ্কে যাবার কথা! -তোমার আবার টাকা লাগবে কেন? কাল না ভাঙ্গিয়ে দিলাম। -ওতে আমার হবেনা। দ্যাখ বেন বিদেশে কোথায় কখন টাকা লাগে তার ঠিক আছ? -তিনটায় গেলে হবে না? - তুমি জানো। আমার দরকার টাকা ভাঙ্গানো তিন টায় যদি ভাঙ্গানো যায় আমার কোন আপত্তি নেই। - আসলে মিঃ হ্যান একটু রেস্ট নিচ্ছে।

আমরা তিন টার দিকে গেলেই ভাল হবে। মনে মনে গালি দিলাম ড্রাইভারকে। গাড়ি ই তো খুব একটা বেশি চালায়নি এখন আবার রেস্ট কিসের। বললাম চল পিম্বাম.... -নো নো পিম্পম চু। উচ্চারণ শিখতে শিখতে ভেনের সাথে খেলা শুরু করলাম।

সে বলল আমি খেলেটা ভাল পারি না। -বল কি সব চাইনিজই তো খেলতে পারে শুনেছি। ২০ বছর পর ব্যাট হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে খেলতে শুরস করলাম। ভেন আসলেও খুব একটা ভালো খেলে না। একটু পরে বলল ওকে মে বি উই ক্যান রেস্ট এ লিটল নাউ।

তিনটার সময় গাড়িতে উঠব, ড্রাইভার কি যেন কিচির মিচির করে উঠল। ভেন বলল উই হ্যাভ টু ওয়েট ফ আ হোয়াইল। আমি তোমার কিছু সিঙ্গাপুর ডলার কিনতে পারি। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। সিড়ি বেয়ে নেমে এলেন লাঞ্চের সেই ভদ্র মহিলা।

তিনিও আমাদের সাথে যাবেন। তাঁর জন্যেই এতক্ষন অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। তিনি শুধু কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের একজনই নন, কোম্পানির ভাইস জেনারেল ম্যানেজার এন্ড হেড অব ফাইনান্সও। তার সাথে সিঙ্গাপুর ডলার নিয়ে কথা বারতা হল ভেনের। মনে হল ভেন কে তিনিই ডলার কিনতে বলে ছিলেন।

সিঙ্গাপুর ডলারের কথা শুনে এখন পিছিয়ে যাচ্ছেন। এরই মাঝে আমরা পৌছে গেছি কাছের একটি ব্যাংকে। যেয়ে বুঝলাম শুধুই ব্যাংকে ডলার ভাঙ্গানো হয় বলে যে তথ্য জেনেছিলাম। তা পুরোপুরি ঠিক নয়। সব ব্যাংকে সব টাকা কেনা বেচ্যা হয় না।

সিঙ্গাপুর ডলার ভাঙ্গানোর জন্যে যেতে হবে ব্যাঙ্ক অব চায়নায়। ভদ্র মহিলা একটু পরে নেমে গেলেন। আমি ভেন কে জিগ্যেস করলাম, তুমি না বললে উনি ফাঊন্ডারদের এক জন, তা হলে আবার ভাইস জেনারেল ম্যানেজার কেন? - কারন আমাদের জেনারেল ন্যানেজার আর উনি মিলেই কোম্পানিটা শুরু করেছিলেন। শি ইজ অলসো দ্য ওয়াইফ অব দ্য জেনারেল ম্যানেজার। - মানে কি তা হলে কোম্পানির মালিক কে? - ওনারা দু’জনই।

এবার আমার ভিমরি খাবার অবস্থা এত বড় একটা কোম্পানির মালকিনের সাথে এতদূর এলাম অথচ টেরই পেলাম না। আমি এর আগে বাংলাদেশের যে কোম্পানিতে চাকরি করেছি, সেখানে মালিক কেন মালিকের ছেলের আগমনেই শুভেচ্ছা স্বাগতমের নহর বয়ে যেত। বিশ্ব বাণিজ্যে চীনা সম্রাজ্যের বিস্ময় কর উত্থানের রহস্য এখানেই। ব্যাংক অব চায়নায় বিশাল লাইন। আমার সিরিয়াল ৫১৯২।

তখন কেবল ৫১৫৪ নম্বর টাকা ভাঙ্গাচ্ছে। হ্যান সাহেব একবার চেয়ারে বসছে একবার গাড়িতে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণ পর পর ভেনের সাথে কিচির মিচির করছে। ভেন কে বললাম কোন সমস্যা? -না। মিঃ হ্যান বলছেন। সিঙ্গাপুর ডলার ভালোনা।

ভাংতে সময় লাগে। ঘন্টা খনেক পর ডাক পড়ল কাউন্টারে। চীনে ডলারের দাম পড়তির দিকে। ১০০ ডলারে পাওয়া যায় ৬৩৭ ইঊয়ান। বছর খানেক আগেও পাওয়া যেত ৮০০ ইঊয়ানের উপরে।

সিঙ্গাপুর বিকোলো ৪.৯৫এ। ইত মধ্যে মিসেস ওয়াং আবার যোগ দিয়েছেন আমাদের সাথে। ভেন বলল আর কোন কাজ না থাকলে তোমাকে হোটেলে নামিয়ে দেই। আমার কিছু কাপড় চোপড় ধোয়ার দরকার ছিল। চাইনিজ লেখা বুঝিনা বলে জানতে ড়ারিসি হোটেলে লন্ড্রি সারভিস আছে কি না।

মিসেস ওয়াঙ্গের চোখে প্রশ্ন ফুটে উঠতে দেখে ভেন তাকে চাইনিজে ব্যাখ্যা করলো বিষয়টি। বুঝলাম সমাধান পাওয়া গেছে। আমাদের সঙ্গে মিসেস ওয়াংও নামলেন হোটেলের লবিতে। রিসেপসনিস্টের সাথে কি বাত চিত হল জানি না। ভেন বলল একটু পরে কেউ একজন যাবে তোমার রুমে তাকে কাপড় চোপড় বুঝিয়ে দিও।

সত্যিই একটা মেয়ে এল একটু পর তাকে কাপড় বুঝিয়ে দিয়ে কম্পিঊটার খুলে মন ভাল হয়ে গেল। আমার এই ছাই ছাতা দেশের মানুষ পড়ছে। তাদের কমেন্ট পড়ে মনে হল আল্কজেন্দার সেলকারকের ( কোন এক ক্লাশের পাঠ্য ছিল I am the monarch of all I survey….) যুগে ইন্টারনেট না থাকায় ড্যানিয়েল ডিফো কবি হতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের ব্লগারদের উৎসাহে আমি পত্র লেখক হয়ে উঠছি। মোবাইল বেজে ঊঠলো হঠাত করেই, ও প্রান্তে ভেন, দ্য ক্লথ ইউ গিভেন ফ ক্লিনিং, ওয়ান অব দোজ ইস ব্রোকেন।

(অসমাপ্ত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।