আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অচেনা চীনে ৫

সাত আটটা সিড়ি ডিঙ্গিয়ে একটা উঁচু জায়গার মত। তারপর আবার সিড়ি বেয়ে দোতলা। মোটামুটি ভাল চেহারর এক রিসেপসনিস্টের সাথে হাসি বিনিময়ের পর ঢুকলাম মেইন অফিসে। আমাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে ভেন বলল হোয়াত ইয়উ ওয়ান্ট টু ডু নাও? বললাম তোমাদের কাছে শিখতে এসেছি, এখন তোমার বন্দবস্ত। তুমি কি করাতে চাও বল।

ওকে বলে বেরিয়ে গেল ভেন, একটু পরে ফিরে এল তার ভিজিটিং কার্ড নিয়ে। কনফিউজড হয়ে গেলাম কার্ড দেখে। ভেন ইয়েন (উচ্চারণ হবে ইন), মিনিস্ট্রি অব ফরেইন ট্রেড। এক কোনায় আবার পুক্সিনের লোগো। ভেন কি তাহলে সরকারি লোক? - আমাদের জেনারেল ম্যানেজার একটু পরে তোমার সাথে দ্যাখা করবে।

ভেনের কথায় আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল। কেঊ কার্ড বাড়িয়ে দিলে ভদ্রতা হল নিজের কাডটাও তাকে এগিয়ে দেওয়া। সম্ভবত দুটি কারনে এটি করা হয় একটি হল তার সৌজন্যতার সমাদর করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করা। কুনমিং সেনঝেনের দৌড়াদৌড়িতে কার্ডের ছোট্ট বক্সটি কোথায় ফেলে এসেছি জানি না।

পরিচয় নিশ্চিত করার জন্যে ওয়ালেট হাতড়াতে থাকলাম। যদি একটি কার্ডও পায়াযায়। আবার চলে গেল ভেন। একটু পর ফিরে এসে বলল আমি একটু পরে তোমাকে একটা প্রেজেন্টেশন দেবো। তার আগে আমরা আমদের দুই একটা জিনিষ ঘুরে দেখাতে পারি।

জেনারেল ম্যানেজারের সাথে মোলাকাতের ব্যপারে আর কোন কথা হল না। আমি মনে মনে ভাবতে থাকলাম। জেনারেল ম্যনেজারের দেমাগ কত! আমি তো আমার কোমাপানীর বাংলাদেশের প্রধান, আমার কাছে বিদেশি গেলে সেই তো হত আমার প্রথম প্রায়োরিটি। কার্ড নেই বলে আবার ত্যদড়ামি করছে না তো। কাজের ফাঁকে ভেন কে এটা সেটা জিগাসা করতে থাকলাম।

এই কোম্পানিতে সে বছর তিনেক আগে এসেছে। যেহেতু ইংরেজিটা তার জানা তাই কোম্পানী থেকেই দেওয়া হয়েছ বৈদেশিক বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব। সেনঝেন তার শহর নয়। দূরের কোন এক গ্রামে তার মা, বাবা আর ছোট বোন থাকে দাদুকে নিয়ে। দাদি গত হয়েছেন বছর বিশেক আগে।

সেই গ্রাম শীতের জন্যে ভাল নয়। বরফে ঢেকে যায় মাঠ ঘাট। গ্রীস্ম কালটা মনোরম অথচ কাজের খাতিরে তাকে গ্রীস্ম কাটাতে হচ্ছে গরমের জায়গা সেনঝেনে। বললাম তোমার কোন ভাই? বলেই মনে হল একটা গৃহপালিত চতুস্পদীর মত হল প্রশ্নটা। ভেন বলল আ’ম লাকি তু হ্যাভ আ সিস্টার, মেনি পিপল দু নট হ্যাভ নো বডি।

কথাটা সত্যি বটে। ভেনের বাবারা ছিলেন তিন ভাই বোন। ভেনদের কালে সেটা হবার নয়। চীন সরকার যতই বাজারের দরজা খুলে দিক জনসঙ্খ্যা যেন না বাড়ে। পুক্সিনের অফিসটা আহামরি কিছু নয়।

নীচ তলাটা ওয়্যার হাউস হিসাবে ধরা যায়। সেখানে বায়োডাইজেস্টারের সরঞ্জামের স্তুপ। ছাড়াও আছে ১০০মিটার কিউব একটা ডাইজেস্টারে একটি কাঠামো। (আমরা বাংলাদেশে বানাই সরবোচ্চ ১০ মিটার কিউব ডাইজেস্টার) পাশের একটি ছোট্ট রুমে পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে একটি ১২ কেভিএ জেনারেটর। সেখানে দেখি অখন্ড মনোযোগে পাইপ জোড়াচ্ছে হান সাহেব, আমাদের আজ সকালের দ্রাইভার।

পাশে দাঁড়িয়ে সমানে উতসাহ দিচ্ছে পুক্সিনের চীফ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিয়ার। তাদের কথা থেকে বোঝা গেল হান সাহেব থোড়াই কেয়ার করেন অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের। পাইপ জোড়া দিতে পারা, গাড়ির প্লাগ বদলি করা ইঞ্জিনিয়ারিং এর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আর কমই যদি হবে তাহলে হান সাহেবের কাছে তাদের মাঝে মধ্যে ধরনা দিতে হয় কেন? পরের যুক্তি আরও কঠিন, সে তো গাড়ি চালানো ছারাও কিছু কাজ করে কই ইঞ্জিনিয়ার রা তো গাড়ি চালায় না? এরপর ভেন আমাকে নিয়ে গেল বাইরে বসানো একটি ১০০ মিটার কিউব ডাইজেস্টারের কাছে। চিকন একটা বাঁশের মই বেয়ে তর তর করে ১৫ ফুট উঠে গিয়ে বললো তুমি ঊঠতে চাঊনা? অগত্যা কি আর করা, নিচ থেকে হান আর উপর থেকে ভেন চেপে ধরে রাখলো মই।

আমি কোন মতে উঠলাম ডাইজেস্টারের গঠন প্রনালী দেখতে। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশ হল দোতলায়। ৩০ -৩৫ জন বসার মত একটি কনফারেন্স টেবিলের এক প্রান্তের দু পাশের দুটি চেয়ারে মুখোমুখি বসলাম আমি ভেন। এ রুমের বাইরে প্রায় ৬০ জন লোকের ওয়ার্ক স্টেশন। সেখনেই বসে অন্যান্য কর্মী।

ভেনের প্রেজেন্টেশনটা মন দিয়ে শুনছিলাম। হঠাত পিছনে তাকিয়ে দেখি মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন বললেন সরি একটা জরুরী কাজে আটকা পড়েছিলাম কোন অসুবিধা হচ্ছেনা তো। ভেন একটু থেমে বলল হি ইস মিস্তার ওং, আ’ জেনারেল ম্যানেজার। ভদ্র লোক আমাকে একটা কার্ড দিলেন। প্লিজ কন্টিনিঊ।

উই’ল মিট লেটার। প্রেজেন্টেসনের এক ফাঁকে ভেন জিজ্ঞাসা করলো আমি নুডুলস খাই কিনা। বায়োগ্যাসের প্ল্যান্ঠে গোবর ছাড়াও কিচেন ওয়েস্ট থেকে শুরু করে অন্য অনেক বর্জ্য কাচামাল হিসাবে দেওয়া যায়। আমি ভাবলাম সে জন্যেই মনে হয় এই প্রশ্ন। বললাম হ্যা বাংলাদেশে তো অনেকেই নুডুলস খায়।

- ওকে,ওকে দেয়ার ইস নূডল টু ডে ফর লাঞ্চ। চীনে আসা এস্তক ভেন কে দেখছি আমার খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে। - ডু ইউ হ্যাভ চিকেন তাক? সে আবার কি জিনিষ মুখে বললাম। মনে মনে ভাবলাম চীনাদের খাবার দাবার নিয়ে যে সব গল্প শুনেছি আবার মুরগির নাড়ি ভঁউড়ি খাইয়ে দেবে না তো? ভেন তখন ইন্তার নেট খুলে বসল। পর্দায় দেখি হাসের ছবি।

দিস ইজ টাক, ইউ দু নট ইট। বললাম কি তুমি টাক টাক করছো !এটাতো ডাক। ও কে, দিস ইজ আওয়া’র টু মরোজ মেনু। ইউ হ্যাভ? আমাদের গত কালের ড্রাইভার মিঃ হং দেখি একটা বিশাল সস প্যান নিয়ে হাজির। খাওয়া দাওয়া এ রমেই হয়, বুঝা গেল।

লাঞ্চ ব্রেক। ভেনের প্রেজেন্টেশন শেষ হতে হতে আরও কিছু মানুষ এলো এ রুমে। সবার হাতেই নিজের নিজের প্লেট। এরই মধ্য হং তার সব খাবার দাবার আনা ছাড়াও প্রত্যেকের চেয়ারের সামনের টেবিলে খবরের কাগজ বিছিয়েছে। কম বয়সী একটা মেয়ে আমাকে খাবারের ট্রে এগিয়ে দিল।

সাথে একটি স্টিলের বাটি, চামচ আর এক জোড়া চপ স্টিক। মেনুতে নুডুলস ছড়াও আছে ভাত, ডিম, মুরগীর রান আর বাঁধা কপি। আমি ভাত, মুরগি আর বাঁধা কপির সবজি নিয়ে কোনার দিকের এক চেয়ারে বসে দেখলাম বাকিরা তখনও লাইনে দাঁরিয়ে খবার বাঁছাই করছে। ভেন যাবতীয় খবার দাবার এবং দুটি ডিম সহ আমার পাশে বসলো। আমি বললাম চপ্সটিক কেমন করে ধর দেখি? সবাই উৎসুক চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে।

ভেন বলল ইউজ স্পুন। লাঞ্চের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল অফিসের সবার জন্যেই একই মেনু একই জায়গা। আমাদের প্রাক্তন কুক, বর্তমান কুকও খেতে বসেছে আমাদের সাথে। ভেন আমার দিকে একতা ডিম এগিয়ে দিল তুমি ডিম নাওনি বলে তোমার জন্যে নিয়ে এসেছি। আমি তো তখনও বাচ্চাঅলা ডিমের গল্পের ঘোরে আছি।

বললাম ডাক্তারের বারণ খাওয়ার পরে সবাই যার যার প্লেট সহ বেরিয়ে গেল। পড়ে থাকলোনা বিছানো খবরের কাগজ ও। আমি কি করবো বুঝে ঊঠতে পারছিলাম না। ভেন বললো প্লেট রেখে যাও হং তোমার টা নিয়ে যাবে। সামনে এক বয়স্ক ভদ্র মহিলা বসে ছিলেন, তার সাথে ভেনের বাতচিত একটু দ্রুত লয়ে হতে দেখে ঘাবড়ে গেলাম।

ভেন কে বললাম উনি কে ? আমাকে নিয়ে কথা বলছেন মনে হয়! ভেন বলল শি ইজ অয়ান অব দ্য ফাউন্ডার অব দ্য কমানী ( কম্পানী)। তুমি রাত্তিরে কি খাবা জিগ্যেস করছেন। বললাম আ’ল ম্যানেজ। আবার দু’ পক্ষের বাক্য বিনিময়। তারপর ভেনের প্রস্তাব, তমার রুমে যদি ব্রেড পৌছ দি তা হলে অসুবিধা আছে।

আমি বললাম ভেন আনার অনেক কাজ আছে আগে টাকা ভাঙ্গাতে হবে। (অসমাপ্ত) । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।