আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাইলাতুল ক্বদর- শুধুই কি ২৭ এ রামাদান? ( ৪র্থ পর্ব)

কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা দেখতে দেখতে রমাদান প্রায়ই শেষের পর্যায়ে। আর মাত্র ১০ দিন বাকি। জানিনা আমরা আমাদের গুনাহ কতটুকু ক্ষমা করাইতে পারছি। কিন্তু এখনো আমাদের হাতে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ চাবি আছে যেইটার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করাইতে পারি, আল্লাহর কাছ থেকে রহমত আশা করতে পারি, হেদায়েত আশা করতে পারি। সেইটা হল লাইলাতুল ক্বদর।

কতটা গুরুত্বপূর্ণ হলে আল্লাহ শুধু এই রাতের ফযিলত বর্নণা করার জন্য পবিত্র কোরআনে একটা সুরা নাযিল করে থাকেন, তা আমাদের বুঝার সময় কখনোই হয় না। অথবা বুঝলে সেই মোতাবেক আমল করার কোন চেষ্টায় আমাদের অধিকাংশের মধ্যেই নাই। কিন্তু কেন আল্লাহ সারা বছরের মধ্যে মাত্র কেন একটা রাত এত বরকতময় করে রাখছেন, আমরা কিভাবে সেইটা খুজার চেষ্টা করব সেইটা নিয়ে একটু লিখার ইচ্ছা হল। কারন অধিকাংশ মানুষের ভুলের কারনে অথবা অঘ্ঘতার কারনে এই রাতের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কি আছে এই মহান রাতে? আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য কি উপহার প্রস্তুত করে রেখেছেন ? আমরা আল্লাহর কাছ থেকে কি আশা করব? - উত্তর টা হচ্ছে প্রশ্নটাকে উল্টো করে দেওয়া।

কি নেই এই রাতে? আয়েশা (রঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) প্রশ্ন করল " ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ), আমি যদি লাইলাতুল ক্বদর কোন রাত সেইটা বুঝতে পারি তাহলে আমি আল্লাহর কাছে কি বলব? রাসুলুল্লাহ (সঃ) দুয়া শিখিয়ে দিলেন " للْهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي Allahumma innaka `afuwwun, tuhibbul `afwa, fa`fu `annee O Allah, You are forgiving, and You love to forgive, so forgive me আমরা অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহর কাছে গুনাহ ক্ষমার জন্য দোয়া করব। বেশী বেশী করে আল্লাহর কাছে গুনাহ ক্ষমার জন্য দোয়া করব। এছাড়া ও আল্লাহ যেন আমাদের হেদায়েত করে, জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত যেন ইসলামের মধ্যে থাকতে পারি, মৃত্যুর সময় যেন কলেম পড়তে পারি, কবরের আজাব যেন আমাদের মাফ হয়ে যায়, কেয়ামতের দিন যেন আমরা আল্লাহর সাক্ষাত পাই, আল্লাহ যেন আমাদের জান্নাত দান করে, আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেই আর ও অনেক অনেক। শুধু কি এই সব চাইব আল্লাহর কাছে? আর কিছু চাইব না? আমাদের পড়াশোনা, চাকরির প্রমোশন, গাডি, বাড়ি.. আরো আরো যা যা আমাদের মাথায় আসে এবং আমাদের দরকার সব কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে আমরা এই রাতে বেশি বেশি করে দোয়া করব। কারন আমরা জানি আল্লাহ এই রাতে আমাদের ভাগ্য লিখে থাকেন।

একে বারে তুচ্ছ জিনিস হলে ও আমরা আল্লাহর কাছেই চাইব। আল্লাহ ছাড়া এই তুচ্ছ জিনিসটা কেউ আমাদের দিতে পারবে না। কেন ২৭ রমাদান কে বেছে নেওয়া? আল্লাহর অশেষ রহমতে পৃথিবীর প্রায় সব মসজিদ ২৬ শে রমাদান দিবাগত রাতে (২৭শে রমাদান) তিলধারনের জায়গা থাকে না। কিন্তু আসলেই কি ঐ রাতেই কি লাইলাতুল ক্বদর? আল্লাহ এবং তার রাসুল (সঃ) কোথাও বলেন নাই ২৭ শে রমাদান লাইলাতুল ক্বদর। যেই জিনিসটা আল্লাহ এবং তার রাসুল (সঃ) বলে জান নাই সেইটা জিনিসটা আমরা নির্ধারন করার কে? লাইলাতুল ক্বদর যদি ২১ অথবা ২৩ অথব ২৫ অথবা ২৯ হয় তাহলে কি আমরা কি লাইলাতুল ক্বদর এর যে নিয়ামত সেইটা কি আমরা পাচ্ছি? অবশ্যই না।

যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন শেষের ১০ রাত অথবা শেষের ১০ রাতের বিজোড় রাত্রি গুলোতে তালাশ করতে। সেই ক্ষেত্রে ২৭ বাদে ও অন্য যে কোন রাত হতে পারে। তাই আমাদের উচিত রাসুলুল্লাহ (সঃ) এ কে অনুসরণ করা। অন্তত বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর খুজে দেখা। ৫ রাত ইবাদাত করা কি আমাদের জন্য একটু বেশী হয়ে যাই? শবে ক্বদর এর ফজিলত যদি আমরা ভাল করে বুঝার চেষ্টা করি, এইটার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি তাহলে ৫/১০ রাত মোটেও কিছু না।

তারপরে ও আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে একটা প্রশ্ন করা যাই। বছরের ৩৬৫ রাতের মধ্যে কত রাত আমরা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি? আমি নিশ্চিত এই সংখ্যাটা কেউ টিক মত হিসাব করতে পারবে না। তবে সেইটার সংখ্যা অবশ্যই অবশ্যই ৫ এর চেয়ে বেশী। কেন আমরা এই সব রাতে ঘুমায় নাই? মুভি দেখা, সিরিয়াল দেখা, আড্ডা দেওয়া, মেহেদী অনুষ্টান বিয়ের অনুষ্টান এ এটেন্ড করা এই সবের কথা বাদই দিলাম, পড়াশোনার জন্য অথবা এসাইন্ট্মেন্টের জন্য অথবা অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই আমরা সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিই। এই না ঘুমানোর ফলে আমাদের লাইফ এ কি এমন ক্ষ্তি বা লাভ হয়েছে? আমরা কি সবাই পড়াশোনা করে আইনস্টাইন হয়ে গেছি নাকি না ঘুমানোর ফলে পরের দিন হসপিটালে ভর্তি হয়েছি? আসলে তেমন কিছু হয় নাই।

কিন্তু সামনের রাত গুলো একটু ভিন্ন। সামনের ১০ রাতের মধ্যেই আছে সেই মহিমান্বিত রাত, যেই রাতে এবাদত করলে আল্লাহ জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবে, যেই রাতের এবাদাত হাজার মাসের এবাদত অপেক্ষা উত্তম, যেই রাতে আমরা আল্লাহ্কে আমাদের কষ্টের কথা গুলো খুব কাছ থেকে বলতে পারব, আল্লাহর আমাদের কথা শুনার জন্য বসে আছেন, আল্লাহ তার রহমত আমাদেরকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন, সেই রাতে আমরা কেন ঘুমাব? আল্লাহর সাথে কথা না বলে আমরা কিভাবে ঘুমাব? সেই রাত পাওয়ার জন্য কি আমরা ৫ টা রাত এবাদাত করতে পারব না? এই ৫ রাত না ঘুমালে আমাদের জীবনে এমন কষ্টকর কিছু হবে না কিন্তু আমরা আল্লাহর অনেক অনেক কাছে চলে আসতে পারব। আমরা হয়ে যাব নিস্পাপ। আল্লাহ আমাদেরকে আরো বেশী ভালবাসবেন। আল্লাহ আমাদের সব সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে, আমাদের কে টেনশেন থেকে মুক্তি দিবে, এর চেয়ে আনন্দের, ভাললাগার আর কি হতে পারে?[b] মাত্র ৫ টা রাতই তো[/b]! … আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল ক্বদর এর রাতে এবাদাত করার তাওফীক দান করুক।

আমিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।