আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জিন্স পরা মেয়েটার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! মালঞ্চ গাড়ীর হেলপার আবার আমাকে বলল -মামা জলদি উঠেন । সিগনাল ছাইড়া দিছে ! আমি একবার হেলপারের মুখের দিকে তাকালাম আর একবার তাকালাম মেয়েটার দিকে । মেয়েটি আমার পাশ দিয়েই হেটে চলে গেল । এতোক্ষন আমার পাশেই দাড়িয়ে ছিল । এই গাড়ীর পেছনে আরো বেশ কয়েকটি গাড়ীর লাইন ।

নিশ্চই কোন একটাতে উঠবে । সেদিনতো রাজধানী পরিবহনে উঠেছিল । আজ ও নিশ্চই ঐ গাড়ীতেই উঠবে । মেয়েটাকে এখনও দেখা যাচ্ছে । আমি আরো খানিকক্ষন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম ।

এখন আমার সামনে দুইটা অপশন আছে । এক. আমি মালঞ্চ গাড়ীতে উঠে পড়তে পারি । তারপর সোজা বাসায় । এটাই অবশ্য যুক্তি সংগত কাজ । সারাদিন খাটাখাটনি পর এখন সোজা বাড়ি যাওয়াই উচিত্‍ না কিনা একটা অচেনা জিন্স পরা মেয়ের পেছনে যাওয়া ।

দুই. আমি মেয়েটার পেছনে যেতে পারি । কেন যাবো যার পিছনে কোন যুক্তিসংগত কারন নাই । কিন্তু মন কি আর কোন যুক্তি মানে ? আমি গাড়ি না উঠে মেয়েটার পিছন পিছন হাটা শুরু করলাম । কি পাগলের মত একটা কাজ !! আশ্চার্য ! আজ সারা দিন আসলেই অনেক পরিশ্রম গেছে । সেই সকাল বেলা বের হইছি বাসা থেকে ।

পরীক্ষা ছিল । পরীক্ষার পর আবার টিউশনীতে । টিউশনী থেকে যখন বের হলাম তখন বিকেলের আযান দিয়ে দিয়েছে । শাহবাগ বাস কাউন্টারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি ঠিক তখনই মেয়েটাকে দেখলাম । একটু ফর্সা করে চেহারাটা ।

একটা ঘিয়ে কালালের জিন্স আর শর্ট কামিজ পরে আছে । ওড়নার বদলে একটা স্কার্প পরে আছে কাঁধে একটা ব্যাগ । এক পায়ের উপর ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে আপন মনে । আমার মতই বাসের জন্য দাড়িয়ে আছে । আমার এই একটা দোষ আছে ।

জিন্স পরা এরকম মেয়ে দেখলে চোখ ঘুরে তার দিকে চলেই যায় । আর মেয়েটাকে লক্ষ্য করার আরো একটা কারন আছে । গত কাল ঠিক একই ভাবে মেয়েটাকে দেখেছিলাম । গতকাল মেয়েটা একটা নীল রংয়ের জিন্স পরেছিল । আর একই ভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল বাসের জন্য ।

গত কালের আবাহাওয়াটা কেমন ভেজা ভেজা ছিল । থেকে থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল । যেই বৃষ্টি শুরু হচ্ছিল কাউন্টারের আশেপাশে থাকা সব মানুষ কেমন কাউন্টারের বড় ছাতির নিচে জড় হয়ে যাচ্ছিল । কেবল মেয়েটা দাড়িয়ে ছিল একই ভাবে । বৃষ্টি আসলেই ছাতি মেলছিল ।

ছাতি আমার কাছেও ছিল । বৃষ্টি আসলে আমিও একই কাজ করছিলাম । ভালই লাগছিল ! মেয়েটাও বৃষ্টিতে ছাতির নিচে দাড়িয়ে ছিল আমিও ছিলাম !! আজ অবশ্য আকাশে বৃষ্টি নেই । আমি একটু দুর থেকেই মেয়েটাকে দেখছিলাম । যদিও বারবার এরকম তাকানো ঠিক হচ্ছে না তবুও মেয়েটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছিলই ।

কয়েকবার তাকানোর পর মনে হল যে মেয়েটা মনে হয় টের পেয়ে গেছে যে আমি ওর দিকে বারবার তাকাচ্ছি । মেয়েটার এটিচিউড কেমন যেন একটু বদলে গেল । কেমন যেন একটু অস্বস্তি বোধ করতে লাগল । মুখের ভাবটাও কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম । কিন্তু মেয়েটার দিক থেকে কিছুতেই চোখ ফেরাতে আমি পারছিলাম না ।

আসলে কেবল জিন্স পরা বলে না মেয়েটার চেহারার ভিতর কেমন যেন একটা অভিব্যাক্তি ছিল যা আমাকে বার বার কাছে টান ছিল । খুব ইচ্ছা করল যে মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করি । একটু কথা বলি ! কিন্তু কিভাবে করবো ? মেয়েটার পিছু পিছু উঠে পরলাম রাজধানী পরিবহনে । যদিও রাজধানী বাসটা অনেক ঘুরে যায় তবুও আরো কিছুটা সময় মেয়েটার সাথে থাকা যাবে এটা একটা আনন্দের বিষয় । বাসটাতে বেশ ভিড় ছিল ।

প্রথম আমরা দুজনেই দাড়িয়ে ছিলাম কিন্তু সায়েন্স ল্যাবের কাছে আসতেই মেয়েটা ডাবল সিটে একটা সিট পেয়ে গেল । আমি দাড়িয়েই রইলাম । আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে মেয়েটা আমাকে লক্ষ্য করছে । কারন বেশ কয়েকবারই মেয়েটার সাথে আমার চোখাচোখি হয়েছে । প্রতিবারই মেয়েটার চোখের দৃষ্টিতে কেমন একটা জিজ্ঞাসা ছিল ।

মেয়েটা যেন জানতে চাচ্ছে আমি কে ? কেনই বা ওর দিকে বারবার তাকাচ্ছি ? আসাদ গেটের কাছে আমি মেয়েটার আচরনে কেমন অবাক হলাম । আসাদ গেটে এসে মেয়েটার পাশের সিটে লোকটা উঠে গেল । ঠিক তখনই মেয়েটা আমার দিকে তাকাল । আমার হয়তো বুঝতে ভুল হতে পারে কিন্তু কেন জানি মনে হল যে মেয়েটা চাচ্ছে আমি যেন মেয়েটার পাশে বসি । বড় অদ্ভুদ ! কিন্তু আমার বসার আগেই মেয়েটার পাশের সিট টাতে আর একজন বসে পড়ল ।

স্পষ্টই মেয়েটা বিরক্ত হল । বিরক্ত আমিও হলাম ঐ লোকটার উপর । একটা সুযোগ ছিল মেয়েটার পাশে বসার । পাশে বসলে মেয়েটার নাম নিশ্চই জিজ্ঞেস করা যেত ! কিন্তু তা আর হল না । মেয়েটা আদাবর এসে নেমে গেল ।

আমিও নেমে গেলাম মেয়েটার পিছন পিছন । মেয়েটি আমার দিকে একবার তাকিয়ে হাটা শুরু করল । আমি মেয়েটার পিছু নিলাম । একবার মনে হল এসব আমি কি করছি ? কেন করছি ? কোন না কোন একটা মেয়ে, তার পিছু নিয়ে এতোদুর চলে এলাম ? মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলেই হত, আপনার নাম কি ? ইত্যাদি ইত্যাদি ! মেয়েটার চেহারা খুব বেশি এগ্রসিভ মনে হল না । মেয়েটার চেহারায় একটা নমনীয় ভাবও আছে ।

নাম জিজ্ঞেস করলে মেয়েটা হয়তো বলে দিত । এতো দুর আসার কোধ দরকার ছিল না । কিন্তু ...! মেয়েটা একটা গলির ভিতর ঢুকে গেল । আমি একটু দাড়িয়ে রইলাম । আমি ঢুকবো কি না এমন কথা ভাবতে ভাবতে গলির মধ্যে ঢুকে গেলাম ।

ঢুকেই থ ! গলিটা তো শুরুর আগেই শেষ । আর মেয়েটা গেল কই । কোন বাড়ির মধ্যে ঢুকলো ? আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে গলির মধ্যে থেকে বের হয়ে এলাম । কি রে ভাই কই গেল মেয়েটা ? মন খারাপ নিয়েই বাসায় ফিরলাম । মেয়েটার নাম জানা তো হল না !! কদিন ধরে কি যেন হয়েছে !! কিছুতেই লিখতে ইচ্ছা করছে না ।

অবশ্য কারন আছে ! সারাদিন রোজা, পরীক্ষা, টিউশনী করে এসে শরীর খুব ক্লান্ত লাগে । কিছুই লিখতে ইচ্ছা করে না ! একদম করে না !! ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।