আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনে প্রথম একটি খুনের ঘটনার পরোক্ষ সাক্ষী হলাম

দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় দাগই ভালো আজ মাগরিব নামাজ মাত্র শেষ হয়েছে এমন সময় দেখি আমাদের মেসের সাথে (আমার মেস সিলেট আখালিয়া সুরমা) কয়েকজন লোক চিৎকার করছে। সে জায়গায় গিয়ে দেখলাম একটি লোকের (উচ্চতা ৫ ফুট ৪ এর মত হবে, দাড়ি আছে) হাতে দুইটি ছুড়ি। ও বলছে যে কেউ তাকে ধরতে আসলে তাকে সে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করবে। যদিও মাগরিব এর নামাজ মাত্র শেষ হবার কারণে প্রচুর লোক ছিল কিন্তু তার হুমকি র কারণে তার সামনে কেউ যেতে সাহস করছিল না। সে দৌড় দিলে সবাই তার পিছু নেই।

একজন লোক তার মাথায় বারি দিলে সে রাস্তায় লুটিয়ে পরে। তার হাত থেকে ছুড়ি গুলো কেড়ে নিয়ে তাকে ধরা হয়। তখন লোক মুখে জানতে পারলাম যে সে বৃহস্পতি বার লন্ডন হতে দেশে ফিরেছে। সে নাকি কিছুক্ষণ আগে তার বাবা ও স্ত্রী কে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে। আমি দোড়ে তার বাসার কাছে আসলাম।

সকলে লোক টিকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু কেউ তার বাবা বা স্ত্রী কে উদ্ধার করতে যায় নি। আমার হার্ট দুর্বল রক্ত দেখলে ভয় পাই তাই আমিও যাবার সাহস করি নি। এমন সময় আমাদের মেসের বড় ভাই সজীব (সামাজিক বিজ্ঞান ৩য় বর্ষ) সাথে আরো দুইজন লোক নিয়ে দুতলায় যায়। তিনি প্রথমে বয়স্ক লোক টিকে উদ্ধার করতে চাইলেন।

কিন্তু বয়স্ক লোক টি বলল "বাবা আমি বাচবনা আমার ছেলের বৌ কে দেখ বাচাতে পার কিনা" সজীব ভাই মহিলাকে কোলে নিয়ে বের হয়ে আসেন । সাথের দুই জন মিলে লোক টিকে নিয়ে আসে। উনাদের দুই জনকে দেখে ভয় পেলাম । কেউ কাউকে এত নিষ্ঠুর ভাবে মারতে পারে আমার কল্পনাতে ছিল না। পরে তাদের রাগিব রাবেয়া হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক লোকটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

আর মহিলা কে ওসমানী তে নিয়ে যেতে বললেন। সজিব ভাই আবার মহিলা কে ওসমানী তে নিয়ে যান। মহিলার রক্ত দরকার হলে সজীব ভাই রক্ত দেন। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মহিলা বেচে আছেন। খুনি লোক টির কাছে জানতে চাওয়া হলে সে বলে সে যদি আজ তার বাবা কে না মারত তবে তার বাবা তাকে মেরে ফেলত।

সে তাই তার বাবা কে হত্যা করে। তার স্ত্রী বাচাতে আসলে তাকেও ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে। সে এখন পুলিশি হেফাযতে আছে। এই ঘটনা দেখে একটি বিষয় স্পষ্ট হল। কোন বিপদে বিপদ চেয়ে চেয়ে দেখবার কিংবা মন্তব্য করবার মানুষ অনেক আছে।

কিন্তু সজীব ভাইদের মত সাহসী লোকদের বড় অভাব। তিনি আজ মহিলাকে হাসপাতালে ঠিক সময়ে না নিতে পারলে হয়তো তাকে বাচানো সম্ভব হত না। হাসপাতালে নয়ে তিনি ট্রলীর জন্য অপেক্ষা না করে নিজে কোলে নিয়ে মহিলাকে চার তলায় নিয়ে যান। এত সাহস এবং এত পরোপকারী লোক আমি আমার জীবনে কম দেখেছি । কিন্তু যদি আজ বলা হত যে লোক টিকে গন ধোলাই দেয়া হবে তখন মানুষের অভাব হত না।

সজীব ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা আমার অনেক গুণে বেড়ে গেল। দোয়া করি যেন মহিলা সুস্থ হয়ে উঠেন এবং সহীব ভাই এই কাজের যথাযথ পুরষ্কার পান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।