আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনে র জল রং - ৬



(১০) আর মাত্র কিছুণ পরেই ডেভিডের ফাইট। আজ ওকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছে সাথে ওর মাও যাচ্ছেন। ওর বাবা তিন দিন আগেই মাত্রই কানাডা গেছেন। বাইরের সব লোকেরা জানে ডেভিড মারাত্মক রোগে আক্রাš-। তার চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে হবে।

কিন্তুনীতু সুমন ও অপু জানে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ডেভিডরা সব ছেড়ে ছুড়ে একেবারেই কানাডাতে স্যাটেল হচ্ছে। নীতু তার মতো করে সেজে রোজকার রুটিন মাফিক অফিসে গেলো। সুমন ডেভিডের সাথে আছে ফাইটের আগে ডেভিড অথবা সুমন যে কেউ নীতুকে কল করবে এটা নীতু ভালোই অনুমান করতে পারছে। তবু তার মন বলছে এত দেরী করছে কেন ওরঅ এতনেতো তাদের চেকইন হয়ে যাবার কথা।

সে মোবাইল হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো। ভাবছে সুমনকেই কল করবে কীনা টিক সে মূহুতের্ ডেভিডের ফোন এলো- কেমন আছস নীতু --------- তা ভালো বলতে পারো, তোমরা সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছো ডেভিড ভাই? --------- কেনরে তুইইতো টানা ঘন্টা দেড়েক আমাকে জ্ঞান দিলি চলে যেতে আর তুই ই এখন জানতে চাচ্ছিস, তোর কি মনটা খারাপ নতিু। --------- মনতো খারাপ হবেই, কবে আবার তোমাদের দেখতে পাবো জানিনা। এতদিন তোমাকে তোমার বাব মা কত বুঝাতে চাইলেন তুমি রাজী হলে না। আর আমার সামান্য কথাতে তুমি রাজী হলে কেন বলতে পারো? --------- তোর কথায় যথেষ্ট যুক্তি ছিলো, খানিকটা যাদুও ছিলো বোধহয়।

আজ হোক কাল হোক তোর কথা গুলো সত্যি হতোই। তাই শেষমেষ রাজী হয়ে গেলাম। তুই খুমী হতে পারিসনি? --------- অবশ্যই হয়েছি তবে তোমাদের খুব মিস করবো ডেভিড ভাই। পৌছেই কল করবে। মাঝে মাঝে কল করবে খোজ খবর দেবে।

ঠিক আছে? --------- হু ঠিক আছে। নিজের প্রতি যতœ নিস, চাচা চাচীকে সালাম দিস আর ঋতুকে বলবি আমি তার কথা রাখবো। --------- আচ্ছা, বলে ফোনের সংযোগটা কেটে দিল নীতু। আসলে মানুষ কত সহজেই আপন হয়ে যায়। চলতে ফিরতে আমরা কত উপদেশ অনুরোধ করি চেনা মানুষ গুলোকে।

কখনও এগুলো মেনে নিলে আমরা খুশীই হই আবার কখনও কখনও খুমী এবং বিষাদ যুগপৎ আমাদের ঘিরে রাখে। আসলে আমরা বড় বেশী স্বার্থপর আপন আপন স্বার্থ রায় আমরা বড় বেশী তৎপর থাকি সব সময়। হয়ত জগৎ সংসারের মানুষগুলো এরকমই সব সময়। হয়তবা তার উল্টো। দ্বীপ্ত কি করছে এ মুহুর্তে বড় জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।

কি করা যেতে পারে অপু নিশ্চয় তার খবর জানতে পারে কিন্তু ওতো ঢাক তেই নেই। অফিস থেকে ফেরার পথে চারদিকে সে চোখ রাখলো তাকে দেখতে পেলো ক’জন বন্ধুদের সাথে কথা বলতে। কমন বন্ধু এরা সবদিন একসাথে আড্ডা দেয় ওরা ওদের সবাইকে নীতু চেনে বলেই মনে হলো। সে দ্বীপ্তের কোন পরিবর্তন নজরে আনেত পারেনি। সে ভাবলো তারচেয়ে বিরাট প্রভাবশা লীরা দেশ ছাড়ছে ওকীনা আড্ডায় মশগুল।

ওর কি পালিয়ে যাওয়াটাই যুক্তিসংগত নং। নীতু ঠিক করলো দীপ্ত আগামী কালই বানাতে হবে ডেভিড ভাই চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর জাননি তিনি সেখান থেকে কানাডায় যাবেন এবং সেখানেই সেটেল হবেন তার বাবা মাস সাথে। দ্বীপ্তের গুরুর মতো যারা তারআই পালাতে চাচ্ছে আর দ্বীপ্ত এখনও ভাবছে সব ঠিকঠিাক এটা মেনে নিতে পারছে না নীতু। গোসল সারতে সারতে এ কথাগুলো সে ভাবছিলো। গোসলটা সেরেই পারিবারিক ঐতিহ্য রার্থে তাকে চায়ের টেবিলে আসতে হবে।

চা পানের সাথে সাথে খুচরা আলাপ চলতে থাকবে সবাই সবার মতামত পেশ করবে বিভিন্ন পর্যায়ে। এটা সেই বুঝতে শেখার বয়সটা থেকেই নীতু করে আসছে এবং তা করতেই থাকবে ওর নিজের সংসারেও। এতে পারিবারিক নন্ধনটা আরো সুদৃঢ় হয়। একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে এসে নিজের ভালোবাসা টুকু বিলিয়ে দেয়া যায়। সুমন ভাইটা যেন একটা কি।

সেই কবে বের হয়েছে একটা কলও করলো না। আলাই জানেন ফাইটা শেষ পর্যš- হয়েছে কি না। একী! ভাইয়া তুমি বাসায় চলে এসে চায়ের টেবিলে চলে এসেছ! ফাইটের পর পরই তোমাকে কল করতে বলেছিলাম আর তুমি বাসায় এসেও খবরটা চেপে আছো! সুমন চায়ের টেবিলে কথাটা বলার জন্য তৈরী হচ্ছিল। নীতুর অপো করছিলো সে। ভনীতা না করে সুমন সোজাসাপ্টা বলেই ফেল বাবা-মা তোমাদের দু’জনকে ডেভিড সালাম দিয়েছে।

হাসান সাহেব সামান্য ঘাবড়ে গেলেন সালাম মানেই কোন কিছুর জন্য কাছে আহবান একটা ব্যবসার রীতির মধ্যেই পড়ে তা ডেভিড তার কাছে কিসের আহবান করতে পারে। নিেিজক স্বাভাবিক করে নিয়ে হাসান সাহেব হঠাৎ সালাম পাঠালো এর মানে কি? কথাটা সুমনকেই জিজ্ঞেস করলেন তিনি। --------- ও আজ চলে গেছে বাবা, সিঙ্গাপুর থেকে কানাডায় যাবে। কানাডাতেই সেটেল হবে তারা স্ব-পরিবারে। --------- তাই নাকি ভালো বেশ ভালো।

--------- ঋতু তোর বেশ একটা ম্যাসেজ আছে আমার কাছে এটা আমি তোকে দিতে পারি। নীতু তাকে বলায় এতনে ঋতু মুখোললো। --------- তাই? ম্যাসেটি তোমাকে কে পৌছিয়েছে শুনি। --------- তাতে কি হবে? কে পৌছিয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না ম্যাসেজটা গুরুত্বপূর্ণ। --------- বহনকারীর উপর নির্ভর করে ম্যাসেজের গুরুত্ব আপু।

ঠিক আছে বলেই ফেলো কি ব্যাপার। --------- ডেভিডভাই বলেছে সে তোর কথা রাখবে। কি কথা বলেছিলি তাকে, হু? বলেই ঋতুর কপালে আলতো খোঁচা মারলো নীতু। --------- ও এই ব্যাপার। ওটা কিছু না আপু তাকে শুধু বলেছি আপনি কোথাও সারা জবিনের জন্য চলে গেলেও বাঙ্গাঁলি মেয়েকেই বিয়ে করবেন।

তাতে আর যাই তোক আপনার চাঁপা শুটকীর ভর্তার মায়াটা টিকে থাকবে। আমি জানতাম তিনি একদিন পালাবেনই। সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সত্যি বলতে কি তার মতো মানুষের কোন ব্যারিয়ার গড়ে উঠেনা। তারা দপ করে জ্বলে উঠে এবং দপ করেই আবার নিভে যান।

তাই উনাে বলেছিলাম সেদিন। যাহোক শেষ পর্যš- চলে গেলেন এটাই তার সুভাগ্য। --------- আমিও তাকে চলে যাবার জন্য বলেছিলাম কিন্তু ভাবিনি ও চলে যাবে। শুধু ভাইয়া বললো ও আমাকে খুবই ভালোবাসে অনেকটা তার বোনদের চেয়ের বেশী। এই সামান্য পূঁজি নিয়েই তাকে বলেছিলাম বানাডাতে সেটেল হতে যেটা তার মা-বাবাও চান।

হাসান সাহেব মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুধু শুনে গেলেন এতণ। তিনি বললেন একটা কথা বলতেই হচ্ছে তোরা তলে তলে এতটুকু করছিলে আমাকে জানালেও না। আমার ওতো দু’একটা কথা বলার থাকতে পারে। --------- ঋতু বলল ওটা বলে কোন লাভ নেই বাবা। তুমি এবং মা দু’জনেই তাকে দাদা সম্ভোদন কর্ োতোমাদের কতার কোন মূল্য তার কাছে নেই।

হয়ত তোমাদের কথা শুনার মতো সময়ই সে তোমাদের দিতো না। --------- নীতু তাকে থামিয়ে বলল, তবু তাকে বলার থাকলে বলে দিও বাবা। পৌছেই ফোন করবে। ভাইয়া তোমাকে ডেকে ডেবে। হাসান সাহেব খানিকটা গম্ভীর হয়ে আছেন।

ঋতুর মতো মেয়েরা গুছিয়ে কথা বলার চেয়ে খুচিয়ে কথা বলতে এতো ভালোবাসে কেন তাই ভাবতে লাগলেন। ও রকম একটা কথা বলবেই এটা তিনি জানেন তারপর তিনি কেনযে কথা বলনেব তার জন্যই আপসোস হচ্ছে। যাহ শালা! সন্ধ্যেটাই মাটি হয়ে গেলো। তিনি উঠলেন, চেয়ার ছেড়ে সোজা তার কামরার দিকে হাটতে লাগলেন। সবাই যার যার কামরার দিকে রওয়ানা হলো একে একে।

আজ সুমনের মনটা ভালো নেই। থাকবেই বা কি করে ডেভিড চলে গেলো। অপুও যেন ফিরবার নামটি নিচ্ছেনা। হতচ্ছাড়াটা থাকলে অš-ত জমিয়ে আড্ডা দেয়া যেত। পুরোনো স্মৃতি গুলো হাতড়ে হাতড়ে সময়টা কেটে যেতো জু’জনের।

সে গাড়ীটা স্টার্ট দিয়ে নিলিদের বাসা পর্যš- এলো। ঢৃকবে কি না মনস্থির করতে পারছে না। ওর একবার ইচ্ছে হচ্ছে ভেতরে ঢুকি আবার ইচ্ছে হচ্ছে না ঢুকেই বা কি হবে। শেষমেষ ও নিলিদের বাসায় না ঢুকার সীদ্ধাš- নিল। অপুর রুমে যাওয়া যায়।

ওকে পাওয়া যাবে না এটা নিশ্চিত। ঢাকাতে এলে ও গোসল সারার আগেই বাসায় চলে আসতো। তবে রু মেটকে পেলেই হলো। রেহান ছেলেটা মন্দ না। তার সাথে কথা বলে সময়টা কাটানো যাবে ভালো ভাবেই।

অপুর কোন সংবাদ থাকলে তাও জানা যাবে। সে রেহানকে রুমেই পেলো। ছবি আঁকছে সে। তাকে দেখে রেহান ব্রাশ ছেড়ে হাতটা মুছেই হ্যান্ডসেক করতে হাত বাড়ালো। রেহান প্রথমেই বলে ফেলল বুঝলেন সুমন ভাই আমি বড় বেশী কাš- হয়ে গেছি।

--------- রেষ্ট নাও ঠিক হয়ে যাবে। --------- রেষ্ট নেবো কি যে বলেন আপনি। রেষ্ট নিতে নিতেই কাš- হয়েছি। অপু নেই কথা বলার কেউ না থাকলে কাš- হওয়াটা স্বাভাবিক। এ হচ্ছে কোন কথা না বলার কাš-।

--------- কেন তোমার সব বন্ধুরাই কি হল ছেড়েছে নাকি? --------- তা ছাড়েনি তবে সব কথা সবাইকে বলা যায় না। কেউ কেউ সমনও থাকে যাদের সাথে কথা বলে আরাম পাওয়া যায়। এটা একেক মানুষের পসাথে একেক রকম অনুভূতি দেয় আমাকে। অপু মানুষটা দুঃখী কি না জানিনা তবে সে যে সবাইকে সুখী করতে পারে এটা ভালো করেই জানি। যত কষ্টই আমার থাক না কেন তাকে বললেই একটা না একট া সে আমাকে আমার কষ্টটাকে সুখে পরিনত করতে চাইতো।

ওর চিš-া চেতনা সবই পজেটিভ। তাই ওকে দারুণ পছন্দও আমার। --------- তাই বলো। তুমি কি জানো সে নিজেই দুঃখের কালো পাহাড়। নিজেই দুঃখ সেজে আছে সে, তাই আঘাতের যন্ত্রনা কত তীব্র সে জানে।

আচ্ছা বলোতো ও কবে ফিরবে কিছু বলে গেছে? কিংবা ওখানে তার সাথে যোগাযোগের কোন ফোন নাম্বার। সুমন কথাগুলো বলে রেহানের দিকে তাকালো এতণ সে তাকিয়েছিলো নীতুর ছবিটার দিকে আসলে ঐ ছবিটাতে নীতুকে অন্য রকম লাগছে। --------- না সুমন ভাই জানা নেই তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি কোন ফোন নাম্বার জোগাড় করতে পারি কিনা। যাদের বাড়ীতে ও থাকবে তাদের পরিবার বিরাট বিত্তশালী শুনেছি। ফোন টোন থাকলেও থাকতে পারে।

আজই খোজ নিতে পারতাম। দেখি চেষ্টা করে, কাল বিকালে আসুন ব্যবস্থা একটা করে ফেলবো ভাববেন না। ইমাম সাহেবের সাথে কিছুণ কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে অপুর কিন্তু তাকে পাওয়া গেলো না। সে তার মায়ের কবরের সামনে বসে পড়ল। ভাবতে থাকল অতীতের স্মৃতিগুলো।

প্রতিদিন ভোরে মা তাকে ঘুম থেকে তুলে পড়াতে নিয়ে বসতেন। সকাল নটা পর্যš- পড়াশোনা চলত মা ছেলের তারপর দুজনে গোসলের জন্য তৈরী হতো। মা তাকে গোসল করিয়ে দিতেন। সাবানের ফেনা অপুর চোখে ঢুকে গেলে সে কান্না শুরু করতো আর মা বলতেন চোখে জলুনী হলেই যদি কাঁদতে হয়ে মনরে জলুনী হলে কি বরবে খোকা। মনের জ্বলে উঠা বড় বেশী কষ্টকর।

সে প্রশ্ন করতো মন আবার কিভাবে জ্বলে মা। মা বলতেন সে তুমি এখনই বুঝবে না খোকা সময় এলেই বুঝবে। খোকা নামক অপু কি বুঝতো না বুঝতো সে জানেনা। সে তার চোখ জ্বলা থামানোয় ব্যা¯- হয়ে যেতো। পানির ঝাপটা দিতো চোখে মুখে।

ভাত খেয়ে মা ছেলে মিলে স্কুলে রওয়ানা হতো অপু। এমনই তার জবিনটা বেশ ভালোই কাটছিলো কেন তুমি চলে গেলে মা। আমি আজ অনার্সটা শেষ করলাম মাত্র কিছুদন পরই রেজাল্ট বেরুবে কিন্তু তুমি দেখে যেতে পারলে না মা। তার চোখে জল। সে বুঝতে পারছে কেউ একজন তার পাশে এসে দাড়িয়েছে।

চোখটা মুছে নিতে হবে। চোখে ঝাপসা দেখছে সে। চোখটা মুছে সে দেখলো ইমাম সাহেব দাড়িয়েসে বলল আপনার কাছেই এসেছিলাম আপনাকে না পেয় এখানে বসে আছি। একা একা থাকলে অতীত স্মৃতিরা আক্রমন করে ফেলে। --------- খুশী হলাম বাবা খুবই খুশী হলাম।

চলো ভেতরে চলো, চা এনেছি দুজনে বসে খাবো আর গল্প বরবো চলো। অপু ইমাম সাহেবের পিছু পিছু চলতে শুরু করলো। কবর স্থানের পাশেই মসজিদ পূর্ব দিকের দুটো কামরার একটিতে ইমাম সাহেবের সাথে অপু ঢুকলো। তাকে বসতে বলে ইমাম সাহেব কাপটা ধোয়ে নিলেন বালতিতে রাকা জমানো পানিতে। চা ঢেলে এক কাপ অপুকে দিয়ে নিজে এক কাপ চা নিলেন।

তা বাবা আমি তোমার কাছে যা যা জানতে চাইবো জানাতে তোমার আপত্তি নেইতো? --------- না তা থাকবে কেন। কি জানতে চান? --------- শুনো আগে আমার কথাই বলি। ঐ যে কবরটা তুমি তোমার নানীর কবর বলছো উনি এ মসজিদে প্রচুর সাহায্য করতেন। আমার খাওয়া দাওয়া তার ওখানেই ছিলো যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন ততোদিন। আমি তোমাকে সেই ছোট বেলা দেখেছি তাই চিনতে পারছিনা।

তুমি এখন বেশ বড় হয়েছ। তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো? --------- না মানে ঠিক চিনতে পারছি না তবে নামটা মনে আছে মাওলানা লুৎফুর রহমান, ঠিক আছে। --------- তা ঠিক আছে বাবা, তুমি নামটা মনে রেখেছো খুবই শুশীর কথা। তোমার কাছে কি তোমার নানী, মা এবং তোমার ছোট বেলার কোন ছবি আছে বাবা? কতকাল পর তোমাকে দেখলাম। ছবি থাকলে মিলিয়ে দেখে নিতাম কতটা কদলে গেছো তুমি।

--------- হ্যা আছে মানিব্যাগে এই ছবিটা সব সময়ই থাকে চাচা। বলেই সে ছবিটা ইমাম সাহেবের দিকে বাড়ালো। ইমাম সাহেব ছবিটা যেন ছু মেরে হাতে নিলেন। ছবিটা দেখতে দেখতে ার চোখদুটো সজল হতে চলল। এটা আন্দের অশ্র“।

আজ তার প্রতীার প্রহর শেষ হতে চলেছে। তার উপর ন্যা¯- দায়িত্বটা সরে যাচ্ছে তার ঘাড় থেকে তিনিতো খুশী হবেনই। হবারতো কথাই যে দায়িত্বের জন্য নিজের সংসার করা হলোনা। সে গুরু দায়িত্ব আজ পালন করা হবে, তিনি শাšি-তে মরতে পারবেন। তিনি তৃপ্তির সাসি হাসলেন।

বাবা তুমি অনেক বদলে গেছো। অনেক অনেক বদলে গেলো তুমি। তোমার পুরো নামটা যেন কি বুড়ো হয়েছিতো মনে করতে পারছি না। --------- আহমেদ জুবায়ের হাসান অপুচাচা। অপু আমার ডাক নাম।

--------- তা জানি বাবা। অপু ল করল নামটা পুরোপুরি শু নে ইমাম সাহেবের চেহারাটা উজ্জল হলো আরো একটুখানি। সে ভাবলো নিশ্চয়ই তিিন তাকে খাতির করছেন হয়ত পরিবারের সাথে তার ভালো সম্পর্কের খাতিরে। হয়তবা তাকে নানী খুব ভালোবাসতেন বলেই তিনি মা নানীর কবরে নাম ফলক লাগিয়েছেন। আমাকে খুব খাতির করে যতœআত্তি করছেন।

--------- কি ভাবছো বাবা। - ইমাম সাহেব প্রশ্ন করলেন তাকে। --------- না তেমন কিছু না চাচা আপনার বয়স হয়েছে আপনি বাসায় থকাটা ভালো চাচা। রাতে বাড়িতে চলে গেলইতো পারেন। --------- এখন থেকে তাই যাবো বাবা আমার দায়িত্ব শেষ হয়েছে।

ভাবছি একজন নতুন ইমাম সাহেব এলেই আমি বিশ্রামে চলে যাবো তবে এখানের মায়াটা কাটতে সময় লাগবে। --------- কিসের দায়িত্ব চাচা? ইমামতির? --------- না বাবা, তোমাকে সবই বলবো। বসো আমি দু’রাকাত নামাজ পড়ে নেই। খোদার দরবারে শুকরিয়া জানাতে হবে। অপুকে কোন বাক্য বলতে না দিয়েই জায়নামাজটা বের করে তিনি বিছানায় রাখলেন।

তিনি এখন নামাজ পড়বেন। অপু কি তার নামাজ পড়াটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। সে বাহিরে চলে এলো। পুকুরের ধারে বসে আরাম করে সিগারেট ধরালো। অনেকন পর সিগারেট টানতে বেশ ভালোই লাগছে তার।

সে ধোঁয়ার রিং বানিয়ে বাতাসে ছাড়তে লাগলো। সে ইমাম সাহেবকে নিয়ে ভাবছে কত নামডাক ছিল তার। ইচ্ছে করলেই তিনি গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও ভালো বেতনে চাকরি করতে পারতেন। কিন্তু ভদ্রলোক এখানকার মায়াটা কাটাতে পারলেন না বলেই আজও ইমামতি করছেন। বিয়েটা করেননি কি এমন দায়িত্ব ছিলো তার তিনিই ভালো জানেন।

ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করে তাকে খুজতে বেরুচ্ছেন বোধ হয়। চপ্পলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে যে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে কামরা মূখো হলো। তিনি বললেন বাবা অপু আমি এতন আসলে নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম তুমি সেই অপুকী না, যার জন্য আমার এতকাল অপো। যাক বাবা আমি নিশ্চিত হলাম তুমিই সেই হারিয়ে যাওয়া অপু। জানি তোমর মনে প্রশ্ন জাগছে আমি তোমার জন্য অপো করবো দুঃখে।

প্রম্নটা তোমার মনে জাগতে পারে স্বাভাবিক ভাবেই। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে তোমার শ্রদ্ধেয় নানীজান খুব স্নেহ করতেন তিনি আমাকে বিরাট বড় একটা দায়িত্ব দিয়েছিলেন সে দায়িত্ব আজ শেষ হবে হয়ত। --------- কি দায়িত্ব দিয়েছিলেন চাচা? --------- শনো বলছি, আগে বলো তোমার কোন ব্যাংক একাউন্ট আছে? --------- না নেই প্রয়োজনও নেই। কিন্তু ব্যাংক একাউন্ট দিয়ে কি হবে চাচা? --------- তুমিতো জানতেই তোমার নানী সব সম্পত্তি বিক্রি করে গেছেন। তার পুরো টাকাটা তিনি আমাকে দিয়েছিলেন তোমাকে মানুষ করে তোলবার জন্য।

তুমি হারিয়ে গেলে তাই টাকাটা ব্যাংকে জমা রেখেছিলাম। এতোদিনে বোধ হয় অনেক বেড়েছে। বাবা কাল আমার সাথে ব্যাংকে চলো তোমার পাওনাটা তোমাকে বুঝিয়ে দেই। খোদার কাছে কত কেঁদেছি তিনি যেন তোমাকে মিলিয়ে দেন। আমার দোযা তিনি কবুল করেছেন।

এবার আমি শাšি-তে মরতে পারবো বাবা। --------- টাকা! কত টাকা চাচা? তাহলে জমি জমা সত্যি সত্যি তিনি বিক্রি করেছিলেন? --------- হ্যা হরেছিলেন। মসজিদের জায়গার পাশের শুধু দুটো কামরা তিনি তুলেছিলেন তার ইচ্ছে ছিলো তুমি পাশের কামরায়ই থাকবে। একটা কামরা আমার জন্যও ছিলো। তিনি আমাকে পঞ্চাশ ল টাকা লিখে দিয়েছিলেন, সাথে একটা চিঠি তোমার জন্য।

সবই ব্যাংকে জমানো আছে। চিঠিটা তোমাকে পড়তে দেই তুমি জানতে পারবে সবই। --------- অপু হতবাক তার মুখে কোন শব্দ জুটলো না। সে তাকিয়ে আছে ইমাম সাহেবের দিকে। তার চোখে অশ্র“ আনন্দের না বেদনার ইমাম সাহেব বুঝতে পারছেন না।

তিনি চিঠিটা তার হাতে তুলে দিলেন। অপু পড়তে আরম্বকরলো। সে কাঁদছে, তার অবাক লাগছে তার নানী মানুষ চিনতে কোন ভুল করেন নি। পঞ্চাশ ল টাকা পেয়েও লোকটা প্রতিা করেছেন সতেরটি বসš-। নিজে বিয়েটা করেন নি পাছে তাকে তার অভাব গুলো লোভী করে তুলে।

দ্ধায় তাকে পা ছোঁয়ে সালাম করতে ইচ্ছে হলো অপুর। নানী লিখেছেন- অপু ভাই দোয়া নিও। আমি তোমার মঙ্গল চাই বলেই এ সম্পত্তিটা বিক্রি করে দিলাম। বিশ্বাস করো এর পুরোটার মালিক তুমিই তাই এখান থেকে একটা টাকাও আমি খরছ করিনি। পুরো পঞ্চাশ ল মাওলানা লুৎফুরের কাছে রেখে দিলাম।

আমি চলে গেলে লোকে তোমাকে মেরে ফেলে হলেও জমিজম াতাদের করে নেবে এই ভয়ে সব কিছু বিক্রি করে দিলাম। তোমার পড়াশোনা এবং থাকার ব্যবস্থা মাওলানাই বরবেন। তাকে আমার সবই বলা হয়েছে। তার পাশের রুমেই তুমি থাকবে। তার কথামতো তুমি চলবে সে খুব ভালো মানুষ।

আমার বিশ্বাস তুমি ঠকবে না। একদিন আবার তুমি বিষয় সম্পত্তি করতে পারবে। দুঃখ করোনা তোমার থাকার জন্যও একটা ভীটেও রেখে গেলাম না বলে। মসজিদের পাশে তো দুটে কামরার একটিতে তুমি থাকবে এটা তোমারই নামে থাকবে যতদিন এই ইমাম সাহেব আছেন। আমার অছিরত নামায় এ ইমাম সাহেবকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যš- চাকুরিচ্যূত করা যাবে ান মর্মে শর্ত রাখা আছে।

এই মসজিদ, কবরস্থান এগুলো তোমার নানার সম্পত্তি থেকে আমিই দান করেছিলাম বলে লোকজন আমাকে বেশ শ্রদ্ধা করে। তুমি বড় হয়ে অন্য কোথাও চলে গেলেও মাওলানার খেয়াল রাখবে। তাকে আমি এবং তোমার নানাজান খুবই স্নেহ করতাম। আমার জন্য দোয়া করো। ইতি তোমার নানী----------------- পুরো চিঠিটা সে বেশ কবার পড়লো মনোযোগ দিয়ে।

তার খুব কান্না পাচ্ছে সে ইমাম সাহেবকে কাল আসার কথা বলে চলে আসতে চাইলো কিন্তুইমাম সাহেব বললেন বাবা কাল আসবে বলে চলে যেওনা। আমি তোমাকে নিয়ে আজই ময়মনসিং যেতে চাই। তুমি কি তোমার বন্ধুর কাছ থেকে বলে আসতে পারবে। ব্যাংকে কত আছে জানা দরকার। টাকটা তোমার নামে লিখে দিতে হবে।

কাল সকালেই আমি ওসব সেরে ফেলতে চাই। তুমি কি বলো? অপু খানিক ভেবে বলল- শহরতো বেশী দূরে না চাচা আমরা বরং কাল সকালেই যাই তাতে কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয়না। তিনি বললেন তা যাওয়াতো যায়ই। ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছে আমরা কালই যাচ্ছি আমিও এ সময়টাতে একজন ইমামের ব্যবস্থা করে নিতে পারবো। এবার তাহলে তুমি যেতে পারো বাবা কাল সকাল ন’টায় আমরা রওয়ানা হচ্ছি তুমি তার আগেই চলে এসো।

ভালো যদি সেভান থেকে সোজা ঢাকায় চলে যাৗ। তাতে কারো কোন সন্দেহও থাকবে না। গ্রামের মানুষ সবতো আর এক রকম না। সবই বদলে যাচ্ছে বাবা বুঝলে সব খানেই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। অপু আর কোন কথা বাড়ালো না তার েিধ লেগেছে চলে আসা উচিত।

ও বাড়ীর লোকেরা এতণে বোধ হয় খুজতে রেুলো। সালাম দিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল। কবর স্থানের পাশ দিয়েই তকে যেতে হয় সে নীরবে কিছুন তার মা, নানীর কবরের পানে তাকিয়ে থেকে মনেপ্রাণে তাদেরকে ধন্যবাদ জানালো সে আবার চলতে শুরু করলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখানে পৌছাতে হবে। আঁকা বাকা গ্রাম্য মেঠোপথ ধরে ও হাটতে হাটতে এগুচ্ছে তার একাš- সঙ্গি তারই প্রতিমূর্তীটি। দুপুরে খাবাটা বেশ ভালোই হলো তার।

খাওয়াটা শেষে অভ্যাসমতো একটু শোয়ে থাকার ইচ্ছে হলো কিন্তু বিছানার চাঁদর বালিশের কাভার কোটাই লাগানো নেই। সম্ভবত ওগুলো ধোয়ে রোদে শুকাতে দেয়া হয়েছে পরে তুলে আনতে ভুলে গেছেন। হয়ত এখনও শুকায়নি। সে সিগারেট ধরিয়ে চেয়ারে বসল ঠিক আরাম করে বসাও যাচ্ছে না। গ্রামের কারখানাতে তৈরী চেয়ারগুলো এখানকার মিস্ত্রীরা বিজ্ঞানের জটিল হিসাবের ধার ধারে না হয়ত।

চেয়ারে হেলান দিয়ে কিছুণ বসে থাকলেই মেরুদন্ডে ব্যাথা করছে। সে খুবই বিরক্ত হলো। পরনেই বারোতেরো বছরের একটি মেয়ে এসে চাঁদর ও বালিশের কাভারগুলো লাগিয়ে দিলো। মেয়েটির লজ্জা একটু বেশী বলতে হবে সে তার চোখ জোড়াটাকে শুধু উড়নার ফাঁকে রেখেছে আপাদম¯-ক ঢেকে আছে নিজেকে। অপু তাকে জিজ্ঞেস করলো খুকী তোমার নাম কি? মেয়েটি তার আশে পারেশ কি যেন খুজতে লাগলো।

তারপর বলল আপনি কি আমাকে বলছেন? অপু একটু মজা পেয়ে বলল আশে পাে তো অন্য কেউ নেই যে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করা যায়। আমি রিমা আপনি যার সাথে এখানে বেড়াতে এসেছেন তিনি আমার ছোট চাচা। ও আচ্ছা তা রিমা, তুমি কোন কাসে পড়ো? কাস সিক্সে, কিন্তু আমাকে দেখে আনার মনে হবে কাশ নাইনে পড়ি আমি। দাদাজানই আমাকে ওমন ভাবে থাকতে বলেন। উনার কড়া নিষেধ আছে আমি নে বোরকা ছাড়া কোথাও না বেরুই।

এজন্য আমার কোন ব্নাধবীও নেই। আমি সারাণ বাসায়ই থাকি। আমি যাই দাদাজান আমাকে ডাকছেন। ছুটে পালালো সে। অপু শুধু বলল তাই নাকি, আমি তোমার দাদাজান বলবো।

রিমা আবার ফিরে এসে বললো তার সাথে কথা বললে আমার কথা বলবেন না। তিনি মহা রাগী মানুষ আমাকে আ¯- রাখবেন না। আমি যাই। অপু আরাম করে শুয়ে থাকলো আজ রাতটা শুধু এগ্রামে থাকবে। কালই ঢাকা ফিরে যাবে সে।

সে ঠিক করলো মাসে অš-ত একবার এসে কবরটা দেখে যাবে। তার মা কি তাকে দেখছেন? নানী? হয়ত তারা তাকে দেখেন। সে ঘুমিয়ে থাকলো। আজ রাতটা এখানে থাকবো কাল আমাকে ঢাকা ফিরতে হবে বুঝলি। আমার যাওয়াটা খুব দরকার।

রফি না সূঁচক মাথা নাড়তে নাড়তে বললো তোমেতো গ্রামটাও দেখাতে পারলামনা। বিয়ে নিয়ে এত ব্য¯- ছিলাম তোর খোজটা ঠিকমতো নিতে পারিনি। তোর কষ্ট হয়েছে তাই না। কি করবো বল সব ঝামেলা যেন আমার জন্য রাখা ছিল। অপু বলল- আমার কোন অসুবিধা হয়নি রফি।

আমি দিব্যি এ গ্রামটা চষে ফিরেছি। পাশের গ্রামটা আমার জন্ম স্থান। প্রায় প্রতিদিন ভোরে আমি হেটে হেটে ঐ গ্রামটাতে চলে যেতাম দুপুরের আগে আগেই ফিরে আসতাম। তাইতো বলি তোকে এত রোগা লাগছে কেন? সারাদিন শুধু রোদের মাঝে ঘুরাঘুরি করতিস নাকিরে? --------- না তা ঠিক না মসজিদের ইমাম সাহেব মাওলানা লুৎফুর রহমান চাচার ওখানেই তার সাথে গল্প করে কাটাতাম দুপুর পর্যš-। তুই তাকে চিনিস নাকি? --------- কি যে বলিস তাকে চিনেনা এমন মানুষ একটাও নেই।

আশেপাশের আট দশটা ইউনিয়নের সব কিছুতেই তিনি আবশ্যক। তাকে ছাড়া কোন কিছুই যেন ঠিকঠাক হতে চায়না। বেশ ভালো লোক জীবনে একটা কথাও মিথ্যে বলেননি। --------- তোকে অনেক কিছু বলার ছিলো রফি কিন্তু অনেক রাত হয়েছে তুই ঘুমুতে যা। কাল সকালে আমি মাওলানা সাহেবের সাথে সকাল নটায় দেখা করতে যাবো।

তিনি আমার সাথে শহরে যাবেন। আমি ওখান থেকেই ঢাকায় ফিরবো। তুই ঢাকায় ফিরলেই তোকে সব বলবো। যা এবার ঘুমুতে যা আমাকে ও ঘুমুতে দেয়। আমার চোখ বুঝে আসছে।

--------- তাহলে তুই কালই ফিরে যাচ্ছিস? হ্যা যাচ্ছি আমাকে যেতেই হবে। যা ভাগ ঝামেলা করিস না। আগামী মাসেই আবার ফিরবো এখানে ঠিক আছে। অপু কথাগুলো বলে লফিকে প্রায় ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজার বাহিরে পাঠালো খিলটা এটে ঘুমিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিলো। সকাল সাতটা নাগাদ তার ঘুমটা ভাঙ্গলো।

সে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নিজের কাপড় চোপড় গুছাতে লাগলো। না¯-া সেরে সে রওয়ানা হবার আগে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো। রিমা তাকে আবার আসার কথা বলল এবং রফিকে আমাকে বাসে তুলে দিত বলল। রফি ইমাম সাহেবের কামরায় এলো অপুর সাথে। মাওলানা সাহেব তাদেরকে বসতে দিলেন ফাক্স থেকে চা দিলেন তাদেরকে।

তারা তিনজন রা¯-ায় চলে এলো এখন শুধু বাসের জন্য অপো। রফি দু’তিন দিন পরই ঢাকায় ফিরার কথা বলল। বাসে মাওলানা ও অপুকে তুলে দিয়ে তারপর রফি বিদায় নিলো। তারা দুজনে নিঃশ্চুপ। কোন কথা না বলে তারা বাসে বসে থাকলো।

বাসে উঠার আগে অপু সুমনকে ফোন করলো। সুমন কিছুন বকে নিয়ে তারপর ভালোমন্দ জানতে চাইলো। অপু তাকে ময়মনসিং শহরের সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় যতদ্রুত সমভব চলে আসতে বলল। সুমন কি ব্যাপার জানতে চাইলো অপু কোন কিছু না বলেই ফোনের সংযোগটা বিচ্ছিন্ন করে দিলো। ঘন্টা দেড়েক পর অপু ও মাওলানা সাহেব দু’জনে শহরে পৌছে।

রিক্সা করে ব্যাংকের সামনে এসে নামলেন। মাওলানা সাহেব তার একাউন্টের হিসাব নিতে গেলেন এবং কিছুনের ভেতর ফিরে এলেন একটি চেকবুক হাতে নিয়ে। তিনি টাকার অঙ্কটা অপুকে বসাতে বললেন চুয়ান্ন ল আশি হাজার সাতশ বিরাশি টাকা। অপু তাকে একটু অপো করতে বলল। সে আবারও সুমনকে কল করলো।

সুমন তাকে বলল আর মাত্র দশ মিনিটেই সে পৌছাবে। সে ফিরে এসে মাওলানা সাহেবকে নিয়ে পাশের রেষ্টুরেন্টে চা খেতে ঢুকলো। সে এমন জায়গায় বসলো যাতে সুমন এলেই চোখে পড়ে। সে ইমাম সাহেবকে বলল- চাচা বাড়তি টাকাটা আপনি রাখুন, ওটাতো আমার না। আপনি ব্যাংকে জমা না রাখলে তা বাড়তো না তাই এগুলো আপনারই।

--------- না বাবা তা কি করে হয়। আমার টাকা পয়সার কোনই প্রয়োজন নাই। তোমার নানী আমাকে যা দিয়ে গেছেন তা খেয়েই আমার বেশী থাকে। মাঝে মাঝে মসজিদের কাজে ব্যয় করি। এগুলো তুমিই রাখেঅ্ ভালো একটা ব্যবসা শুরু করতে পার।

--------- চাচা তাহলে আমার একটা কথা রা বেন আমি এসে আপনাকে নিয়ে যাবো কিছুদনি পর। আপিন আমার কাছে থাকবেন। আপনার কথা নানীজানের চিঠিতে লেখা আছে। তিনি আপনাকে খুবই স্নেহ করতেন। এ কথাটা ফেলবেন না চাচা।

আমি একমাস আগে আপনাকে জানাবো আপনি প্রস্তুতি নেবেন। একমাস পর এসেই আপনাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরবো। আপনার সাহায্য আমার খুব কাজে লাগবে। --------- ঠিক আছে বাবা আমারতো আর কেউই নেই, তোমারও নেই। আমি তোমার সাথেই থাকবো।

চলুন চাচা ঐযে আমার বন্ধু চলে এসেছে। ঐ যে কালো গাড়ীটা দেখছেন এটাই। তার বাবাই আমাকে তুলে নিয়ে পিতৃ স্নেহে মানুষ করেছেন। সে সুমনকে মাওলানার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারা তিনজন মিলে ব্যাংকে ঢুকলো আবারো।

সুমন কোন বলতে চাইলে অপু তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো তুই শুধু দেখে যা কোন কথা বলবি না। তোকে আমি একটু পরেই সব গুছিয়ে বলছি। মাওলানা সাহেব তাকে চেক বইটা দিলেন এবং বললেন বাবা আমি তোমার নামে পুরো টাকা লিখে দিচ্ছি কিন্তু ম্যানেজার সাহেবের কথা হলো টাকাটা তুমি ক্যাশ তুলতে পারবেনা। কলছিলাম কি তুমি এখানে একটা একাউন্ট খোলে ফেলো তাতে তোমার একাউন্টে আমি টাকগুলো ট্রান্সফার করে দিতে পারি। ম্যানেজার সাহেবও তাতে সম্মতি দিয়ে বললেন আপনি চাইলে পরবর্তীতে টাকাটা অন্য যে কোন স্থানে ট্রান্সফার করতে পারবেন।

সুমনও অপুকে এ কথাগুলো বলল। অপু তাই বললো। তাই আনুষ্ঠানিকতা শেষে অপু সুমনকে মাওলানা সাহেবের গš-্যব্যে পৌছে দেবার কথা বলায় সুমন সানন্দে রাজী হলো। ইমাম সাহেবের কাছে তারা বিদায় নেবার আগে তারা তার ওখানে চা না¯-া খেলো এবং ঢাকায় রওয়ানা হলো। পথিমধ্যে সুমনের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে কাš- অপু বলল- রাখতো তোর প্রশ্ন টশ্ন।

সেই কবে থেকে মাষ। টারী করে যাচ্ছিস এবার থাম। আমি তোকে সব বলছি কোন প্রশ্ন করার আবশ্যকতা নেই। সে পেছনের সব কথা সুমনকে খোলে বলল। সুমন সবশুনে শুধুমুখে বলল- এতো সাাৎ মহামানব রে অপু আগে বললি না শালা পদধূলী নিতাম।

এমন বোকা টাইপের মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা আজও সদর্পে টীকে আছে। আজ মঙ্গলবার। এদিনটা নীতু একটু দেরী করে অফিসে যায়। তার জন্ম হয়েছিলো এই মঙ্গলবারেই এজন্যই বোধ এদিন তার কাছে বরাবরই একটু বেশী ভালোলাগে। ঘুম থেকে উছে সে বাথরুমে নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখতে দেখতে ভাবছে সে যেন একটু বেশী ঘুময়েছে আজ।

চোখমুখ কেমন ফুলাফুলা। তবে তার চেহারা দেখে তাকে খুব মিষ্টি মনে হচ্ছিল। কে বলবে এই মেয়েটি কিছুণ পরেই একজন জাঁদরেল বস হয়ে অনেকগুলো অফিসের ম্যানেজারদের টানা ঘন্টার পর বকে যেতে পারে। সে মুচকী হাসলো এই হাসিটা তাকে বেশ মানিয়ে যায় ওটা অপুর কথা। ও বলতো এমন একটি হাসির জন্য তার হাজার বছর অপোও তুচ্ছ।

গোসলটা সেরে সে তৈরী হয়ে না¯-ার টেবিরে এলো। বাবা পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে নাস্তা করছেন তবে আজ তাকে খুব মনোযোগী হয়ে পড়তে দেখলো নীতু।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।