আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুধের বোতল

একজন মৃত "মা" নিদারুণভাবে তার ক্ষুধার্ত শিশুর জন্য খাবার জোগাড় করছে; যে মা'কে যখন কবরস্থ করা করা হয় তখন তার গর্ভে একটি জীবিত সন্তান ছিলো; যা কবরেই জন্ম গ্রহণ করেছে। সে ছিল অন্যরকম একজন গরিব, কাদা মাটিতে নোংরা হওয়া কাপড় পড়া একজন মহিলা, যে তার একটি ছোট্ট বাচ্চার খাবার জোগাড় করার জন্য যুদ্ধ করছে। একজন দোকানদার, সে এই মহিলার মতো নিঃস্ব আরো অনেক মানুষকে প্রায়ই দেখছে, তাদের মুখমন্ডল চিন্তাক্লিষ্ট, জীবিনে না পাওয়া অপূর্ণতার ছাপ। মুখ মন্ডলের বিষাদগ্রস্ততাই বলে দেয় যে, তাদের নিত্য দিনের অভাব অনটন ও দুঃখ-কষ্টের করূণ চিত্র। সে ছিল তাদের মধ্য থেকে একজন খুবই ভাগ্যবান যার এখনও একটি মুদি দোকান আছে, যার মাধ্যমে টাকা আসছে নিজের পরিবারকে সচল রাখার জন্য।

গরিব মহিলাটি একদিন দু'টি শূণ্য দুধের বোতল নিয়ে তার দোকানে এলো। নীরবে দোকানদারের সামনে কাউন্টারের উপড় শূণ্য বোতল দু'টি রাখলো। দোকানদার শূণ্য দু'টি বোতল নিয়ে, দুধে পূর্ণ দু'টি বোতলে পরিবর্তণ করে দিয়ে তাকে বললো, "দশ সেন্টস দিন প্লীজ। " মহিলা কোন উত্তর দিলো না। সে কেবল দুধের বোতল দু'টি হাতে নিয়ে চলে গেলো।

দোকানদার তার পিছে পিছে যেতে পারত তার টাকা দাবী করার জন্য, অথবা পুলিসকে কল দিতে পারত, কিন্তু না, সে কোনটাই করলো না। মহিলার চেহারাই তার অভাবের করুণ চিত্র বলে দিচ্ছে। এবং দোকানদার প্রায়ই নিজের মনে অপরাধবোধ অনুভব করছে। কারণ তার একটি মুদি দোকান থাকায় ভাগ্যবান হওয়া স্বত্বেও ওই মহিলাদের জন্য কিছু একটা করতে পারছে না বলে। মহিলাটি হয় তো বা তার দোকানে কাজ করতে পারতো, দোকানদার সিদ্ধান্ত নিলো যে, দোকানে কোন একটি কাজ করতে দিয়ে তাকে সাহায্য করবে।

মহিলাটি পরের দিন দু'টি খালি বোটল নিয়ে আবার এলো। সে আবার দুধে পূর্ণ দু'টি বোতল দিয়ে তা পরিবর্তণ করলো। বোতলগুলো নিয়েই মহিলা তাড়াতাড়ি করে দোকান থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছে। তাকে এতোটাই চিন্তাক্লিষ্ট দেখা গেলো যে দোকানদার বিস্মিত হলো এবং তার জন্য মনে মনে সহানুভূতি অনুভব করলো, "আহ! তার একটা যদি চাকরী থাকতো!" যদি মহিলাটি আবারও আসে, তবে তার স্টোর রোম পরিষ্কার করার জন্য একটি কাজ দেওয়ার অফার করবে তাকে, সে মনে মনে ভাবলো। মহিলা পরবর্তী সকালে আবারও এলো, এবং বিনা বাক্যে পরিবর্তণ করে দিলো তার খালি দু'টি দুধের বোতল।

দোকানদার তার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করলো, পার্ট টাইম তার দোকানে সে কাজ করতে চায় কী না, জানার জন্য। কিন্তু আগের মতোই সে দুধের বোতল নিয়ে দোকান থেকে খুব দ্রুত চলে গেলো, তার জরুরী অবস্থা তাকে দ্রুত চলে যেতে বাধ্য করছে মনে হলো। দোকানদার আশ্চর্য হয়ে তার পিছু পিছু ছুটলো, যদি সে তার সাহায্যের জন্য কিছু একটা করতে পারে! দোকানদারের বিস্ময়াবস্থা দেখে, মহিলা এই অভিবাসি কাম্প থেকে দূরে টাউনের বাইরে চলে গেলো। মহিলা কোন লোকালয়ে না গিয়ে নদীর পাড়ে একটি কবরস্থানে গিয়ে ঢোকলো। যখন সে তাকে পিছন থেকে দেখছে, মহিলা খুব দ্রুত একটি কবরে খুদাই করে নাম লিখা পাথরের নিকট গিয়েই মাটির নিচে অদৃশ্য হয়ে গেলো।

দোকানদার অবিশ্বাস্য হয়ে তার হাত দিয়ে নিজের চোখ দু'টি কচলালো। তারপর সে ছোট শিশুর কান্না শুনতে পেলো। যা খুদাই করা পাথরের নিচ থেকে ভেসে আসছে। সে দৌড়ে তার দোকানে ফিরে এসে পুলিসকে কল করলো। অল্পসময়ের মধ্যেই কবরস্থানটি এলাকার লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠলো।

পুলিসের নির্দেশে কিছু কাজের লোক কবরটি খুঁড়তে লাগলো। যখন কবরটি খোলা হলো, দোকানদার সেই মহিলাকেই দেখতে পেলো যে প্রতিদিন তার দোকান থেকে ময়লা কাপড়ে দুধের বোতল আনার জন্য যেতো; মৃত দেহ কবরে শোয়ে আছে। বাহুতে তার একটি ছোট বাচ্চা এবং দুধে পূর্ণ দু'টি বোতল পাশে রাখা আছে। বাচ্চাটি তখনও জীবিত। ----------- কেলিফুর্নিয়ার একটি গল্প-- অনূদিত ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.