আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিশি, আমি এবং ললিপপ

ভাবনার জালে বন্ধী,তুমি-আমি ললিপপটা মুখে নিতে গিয়ে থেমে গেল নিশি। আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেল। ইদানীং এই একটা ঝামেলা হয়েছে, মানুষের সামনে ললিপপ খেতে গেলেই সবাই কিভাবে যেন তাকায়। প্রভার কারনে এই সমস্যাটা হয়েছে। ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এর মধ্যে নিশির দুইবার মেকআপ ঠিক করা হয়ে গেছে।

চোখের কাজল অতিরিক্ত পরিমাণে পড়ে যাওয়ায় লেপ্টে গেছে। নিশিকে দেখাচ্ছে হনুমানের মত। এটা নিশিকে বলতে খুব ইচ্ছে করছে। বলতে সাহস হচ্ছেনা। গেলবার নিশি শাড়ি পরে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, কেমন লাগছে বল।

আমি বলেছিলাম, রহিমার মায়ের মত লাগছে। নিশি সেদিন খুব রাগ করেছিলো। নিশিকে আমি অনেক বুঝিয়েছি, শাড়ি পড়লে রহিমার মাকে আর কাজের বুয়া মনে হয়না। মা মা একটা ভাব এসে পড়ে তার চেহারায়। এর বুঝানোটাই কাল হয়েছে।

সেদিন আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি নিশি। এরপর থেকেই কেমন যেন বদলে গেল নিশি। একের পর এক ছেলের সাথে ডেট ঠিক করে আমাকে সাথে নিয়ে তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। ভাগ্যিস, কাউকে তার পছন্দ হচ্ছেনা। হলেই নাকি বিয়ে করে ফেলবে।

আমি তাই খুব সাবধানে কথা বলছি। এখন খুব ইচ্ছে করছে তাকে হনুমান বলতে। আমি খুব সাবধান তাই কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললাম, -নিশি, তুমি কখনো হনুমান দেখেছ? -না। এই কথা কেন বলছ? -এমনি বলেছি। তুমি আমার মনে করনা, তোমাকে হনুমানের মত দেখাচ্ছে।

তুমি অনেক সুন্দর। -হনুমানের মত মানে? -না মানে, কাজল লেপ্টে গেছে। তাই মনে হচ্ছে। নিশির চোখের দিকে তাকানোর আর সাহস হচ্ছেনা। মাথা নিচু করে রাখলাম।

আমরা দুইজনে বসে বসে এগারো কাপ কফি খেয়ে ফেললাম। ছেলেটা না আসলে ভয়ানক বিপদ হয়ে যাবে। আমার পকেটে সব মিলিয়ে ১৭ টাকা আছে। এখানে এক কাপ কফির দাম ১৩০ টাকা করে। নিশিকে জিজ্ঞেস করা যায়, তার কাছে কত আছে।

তার কাছে ১১৩ টাকা হলেই হয়ে যায়। -নিশি, ১১৩ টাকা হবে? -কেন? টাকা দিয়া কি করবা? -কফির বিল দিতে হবে। আমার কাছে ১৭ টাকা আছে। -আমার কাছে ৭০ টাকার মত আছে। চিন্তা করোনা।

আবীরে এসে বিল দিয়ে দিবে। আবীরের সাথে পরিচয়টা অনেক অদ্ভুত। ফেসবুকে গ্রুপ চ্যাটে আড্ডা দিতে দিতেই নিশির সাথে আবীরের পরিচয়। নিশি বেশ উপভোগ করেছিলো সেদিন। আবীরের ফেসবুক প্রোফাইলের ছবিটা ছিলো বড় অদ্ভুত।

একটা ছেলে মাথায় টুপি দিয়ে উল্টো হয়ে বসে আছে, পিচ্চি একটা ছেলে। গ্রুপ চ্যাটে আবীরকে ইশারা করে বলেছিলো “গ্রুপে আরও কিছুক্ষন থাকতে পারি?" -হুমম পারো সেখান থেকে শুরু। কিন্তু আবীর বহুত ত্যাড়া ছিলো। কোন মতেই নিশিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠাচ্ছিলো না। নিশি ধরলো আমাকে।

ছেলেটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে চা খাবার অফার দিয়ে নিশিকে রিকোয়েষ্ট পাঠাতে বাধ্য করলাম। শর্ত ছিলো নিশি আমাকে একটা চুমু খাবে। কিন্তু কেউ কথা রাখে না, নিশিও না। ভাঙ্গা মন নিয়ে নিশির ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে টানা ৩৩ টা চুমু খেলাম। না এই চুমুর নেটওয়ার্ক বাস্তব চুমুর মত শক্তিশালী না।

-নিশি কলা খাবা? নিশি আমার দিকে বজ্রদৃষ্টি হানলো। ও কি টের পেয়ে গেছে, আমি মনে মনে ওকে হনুমান ভাবছি! এই যা সেরেছেরে। এতটা চিন্তা আমিতো করিনি। নিশি আমাকে জিজ্ঞেস করল, -কলা খাওয়ার কথা তোমার মাথায় আসলো কিভাবে? -দেখো নিশি, কলা খাওয়াটা অবশ্যই ললিপপ খাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি শালীনতার ব্যাপার। -ললিপপ খাওয়া শালীন না? নিশি আমার দিকে আবার বজ্রদৃষ্টি হানে।

মনে মনে বলিলাম, এভাবে বজ্রদৃষ্টি হানলে আমিও তোমার মত মুখপোড়া হনুমান হয়ে যাব। মুখে লাজুক হাসি হেনে বললাম, -দেখো, প্রভার ঘটনার পর থেকে ললিপপ খাওয়া প্রথম শ্রেণীর অশালীনতা। -তাহলে কলা খাওয়াও অশালীন। কলা খায় তোমার মত বাদর শ্রেণীর ছেলেরা। নিশিকে আমার মনভাবনা জানিয়ে দিতে খুব ইচ্ছে হল।

কিন্তু তাকে হনুমান বলার অপরাধে আমার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, এই ভয়ে চুপ করে গেলাম। -তোমাকে কি আমি সাধে ছাগল বলি? নিশির এই কথা শুনে নিজের উপর কনফিডেন্স যা ছিলো সব চলে গেল। ভেবে খুঁজে পেলাম না পৃথিবীতে কোন ছাগল মানে অরজিনাল ছাগল যেটাকে গোট বলি আরকি সে কাকে কলা খাওয়াইতে চাইছে? প্রভার উপর রাগ উঠে গেল। সে কেবল ললিপপ খাওয়া শিখিয়েছে, কলার প্রতি তার বিরাগের কারন খুঁজে পেলাম না। প্রসঙ্গ বদলাতে নিশিকে বললাম, -তোমার আবীর কবে আসবে? বিলতো বিলগেটসের দিকে যাচ্ছে।

-শোন তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আবীর ডিবিবিএল এর একটা বুথের ইনচার্জ। বুঝছো? -বাপরে বুথের ইনচার্জ। একটা কথা বলি ডিবিবিএল এর বুথ দেখলে আমার পাবলিক টয়লেট মনে হয়। -তুমি নিজে কি? কিছু করতে পারছো এই জীবনে? গাধাই রয়ে গেলা।

নাহ এভাবে আর পারা যায়না। এভাবে চলতে থাকলে প্রানীজগতের সবার নামে আমার নামকরণ হবে। তখন হয়ত নাম বদলে অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট রাখতে হবে। ভাবনার মাঝখানে সুন্দর একটি ছেলের আগমন। নীলচে শার্টের নিচে নেভি ব্লু প্যান্টে বেশ দেখাচ্ছে।

এত স্মার্ট দারোয়ান খুব কম দেখেছি। তবে এটা নিশিকে বলা যাবে না। নিশির চোখ দুটো দুই ইঞ্চি বেরিয়ে গেল। সাথে ক্যামেরা থাকলে ছবি তুলে ফেসবুকে ইমোটিকনস হিসাবে ব্যবহার করতাম। হ্যান্ডশেক করে আবীর বললো “আপনারা খেয়েছেন”।

এবার আমার জিহব্বা ইমোটিকনস এর মত চার ইঞ্চি বেরিয়ে গেল “হ্যাঁ খেয়েছি ১৭ কাপ কফি, নিশি দুইটা ললিপপ আরে ভাই ললিপপ মানে অরজিনাল ললিপপ” “ইয়ে হয়েছে কি বুথে টাকা না পেয়ে কিছু ডাকাত ছাত্র বুথ ভেঙ্গে দিয়েছে, আমার মানিব্যগ কেড়ে নিয়েছে। প্যান্ট আর শার্টটা বাঁচিয়ে কোনমতে ফিরে এসেছি। বিলটা দিও দাও, আমিও এক কাপ কফি খাই” চোখ,মুখ সব কিছু শরীর থেকে বেরিয়ে গেল, নিম্নচাপে ক্রমশই চাপ প্রয়োগ করছে। এতগুলা কফির দাম কে দিবে? ছাগল হয়ে দুদিন ঘুরলেওতো হবে না। নিশি তুই ছাগল বানাও,বানর বানাও, গাছে উঠাও কিন্তু আমার ইজ্জত লোটার দায়িত্ব কেবল তোমার, হোটেল ম্যানেজারের না।

আবীর চাল্লু মাল আমার আর নিশির বিল নিয়ে যৌথ আলোচনার মধ্যখানেই পালিয়েছে। এতে করে আমার অবশ্যই ভালো হয়েছে। নিশি কেবল আমাকেই ছাগল ডাকবে। খুশী লাগছে ঠিকই তবে, বিলের সমাধান কিভাবে করবো তা নিয়ে বিরাট চিন্তায় পড়ে গেলাম। লজ্জায় রাগে ভয়ে হাত পা রীতিমত কাঁপছে।

বিল না দেয়ার অপরাধে যদি টয়লেট পরিস্কার করতে হয় তাহলে কি করবো? কি দিবো আজকের ফেসবুক স্ট্যাটাস? নিজের চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। নিশি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো। ব্যাগ থেকে চকচকে একটা ১০০০ টাকার নোট বের করলো। খুশীতে আমার নিম্নচাপ আবার উপরের দিকে উঠে গেল। আমার খুশি আরো বেড়ে গেল যখন শুনি নিশি বলছে, -ওই ওয়েটার আরও দুই কাপ কফি।

তুমি কিছু খাবা? আমি কি খাব? খুশিতে নিশিকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেটা নিশিকে জানালে, অন্যকিছু খাওয়ার সম্ভাবনা আছে  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।