আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তরাষ্ট্রে ‘ঘরোয়া সন্ত্রাস’ আল-কায়েদার নবকৌশল

সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র তার প্রচেষ্টা জোরদার করার প্রেক্ষাপটে দেশটিতে হামলার কৌশলে পরিবর্তন এনেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা। গোষ্ঠীটি মনে করে, সন্ত্রাসবিরোধী জোরালো পদক্ষেপের কারণে ৯/১১-এর মতো এখন সমন্বিত হামলা চালানো বেশ কঠিন। তাই নতুন কৌশলের অধীন এই গোষ্ঠীর নেতারা কয়েক বছর ধরেই তাঁদের অনুসারীদের যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নিজ উদ্যোগে ও ছোট আকারে হামলায় অনুপ্রাণিত করছেন। হামলার প্রশিক্ষণের ধরনেও তাঁরা পরিবর্তন এনেছেন।
আল-কায়েদার ইয়েমেন শাখার প্রয়াত সদস্য সামির খান।

তিনি একজন মার্কিন বংশোদ্ভূত নাগরিক। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক নেতা আল-কায়েদার অন্যতম শীর্ষ নেতা আনওয়ার আল-আওলাকির সঙ্গে হামলায় অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী একটি পত্রিকায় যৌথভাবে নিবন্ধ লিখে যান। এতে তিনি লেখেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসা সব ভাইবোনের প্রতি আমার পরামর্শ, আপনারা আমেরিকার পৃষ্ঠদেশে হামলার (কৌশলী হামলা) বিষয় বিবেচনা করুন। ’
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন ড্রোন হামলায় আল-কায়েদার সদস্য ও প্রভাবশালী আইনজীবী সামির খান নিহত হন। তিনি এক অনলাইন প্রকাশনায় লেখেন, ‘এ রকম হামলার প্রভাব হবে ব্যাপকতর।

এ হামলা সব সময়ই শত্রুর জন্য বিব্রতকর। ব্যক্তি-উদ্যোগে পরিচালিত এমন হামলা প্রতিরোধ করা শত্রুর জন্য প্রায় অসম্ভব। ’
মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা, বোস্টন ম্যারাথনে ওই প্রকাশনা অনুসরণ করেই বোমা হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় প্রাণহানি কম হলেও আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা এবং সৃষ্ট আতঙ্ক বিবেচনায় এর প্রভাব ব্যাপক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আড়াল করে সহজেই কত শক্তিশালী হামলা চালানো সম্ভব, এটি তার এক দৃষ্টান্ত।

এ ধরনের হামলার আগে ষড়যন্ত্রকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব কি না, বোস্টন হামলার পর তা নিয়েও দেখা দিয়েছে বড় প্রশ্ন।
বোস্টন হামলায় নিহত হয়েছেন তিনজন। ২০০১ সালের হামলায় (৯/১১) নিহত তিন হাজারের তুলনায় এ সংখ্যা নগণ্য। তবে সে তুলনায় এ হামলা গণমাধ্যমে মোটেও কম গুরুত্ব পায়নি। হামলার আশঙ্কা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন মার্কিন কর্মকর্তারাও।


নিজস্ব স্টাইলে ওই হামলা চালানো হয়েছে উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘আমরা এখন স্বপ্রণোদিত ব্যক্তিপর্যায়ের সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিপদের সম্মুখীন। তারা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ঘাঁটি গেড়েছে। ’ তিনি স্বীকার করেন, কোনো কোনো দিক থেকে এদের প্রতিরোধ করা অধিকতর জটিল।
বিশ্লেষকেরা বলেন, বোস্টন হামলার সন্দেহভাজন সারনায়েভ সহোদর দৃশ্যত জঙ্গি হামলায় উৎসাহ এবং এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বিদেশি কোনো প্রশিক্ষণ শিবির থেকে পাননি, বরং তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অবস্থান করে এবং ইন্টারনেট থেকে এগুলো পেয়েছেন।
হামলায় তাঁরা যে বোমা ব্যবহার করেছেন, তা-ও প্রচলিত কোনো বোমা নয়।

রান্নাঘরের একটি প্রেশারকুকারকে সাধারণ বিস্ফোরক দিয়ে নিজেরাই এক শক্তিশালী বোমায় পরিণত করেছেন। বিস্ফোরণ ঘটাতেও ব্যবহার করেছেন সামান্য খেলনার রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্রকে। লক্ষ্যস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন উন্মুক্ত স্থানকে।
কর্মকর্তারা জানান, এ হামলার মাত্র এক মাস আগে আল-কায়েদার ইয়েমেন শাখা অনলাইনে ‘নিঃসঙ্গ মুজাহিদের পকেটবুক’ শিরোনামে একটি সংকলন প্রকাশ করে। এতে নিজ উদ্যোগে হামলার কৌশল নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও উঁচু মানের নকশাসংবলিত লেখা সরল ইংরেজিতে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

এসব লেখার অনেকগুলো হঠকারী মনে হলেও এতে বোমা তৈরির যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা একেবারে নিখুঁত।
মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের সন্ত্রাস দমন কর্মকর্তা ফিলিপ মুড বলেন, সারনায়েভ সহোদরের সারল্যে তিনি দারুণ বিস্মিত। তাঁরা বোমা হামলার মুহূর্তে ছদ্মবেশ ধারণের প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেননি। ‘ঘরোয়া স্টাইলে’ তাঁরা যে এ হামলা চালিয়েছেন, তা এতে পরিষ্কার। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.