আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তরাষ্ট্রে নাফিজের ৩০ বছর জেল

'ঢাকায় ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় সহপাঠীর অনেকেই ইসলামিক উগ্রপন্থি ছিলেন এবং সেটি আমার ওপর প্রভাব ফেলেছে এহেন অপকর্মে প্রবৃত্ত হতে'-এমন বক্তব্য দিয়েছেন কাজী রেজওয়ানুল আহসান নাফিজ। নাফিজ তার সমাপনী বক্তব্যে উল্লেখ করেন, 'আমি অত্যন্ত লজ্জিত, দুঃখিত, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি সত্যিই দুঃখিত যে, উগ্রপন্থি ইসলামিক আদর্শে ধাবিত হয়েছিলাম। একই সঙ্গে আমি খুবই কৃতজ্ঞ এ জন্য যে, আমি যে মারাত্দক অপকর্মের চেষ্টা করেছি সেটি সত্যিকারের বিস্ফোরক ছিল না। আমি ক্ষমা প্রার্থী আমেরিকানদের কাছে, আমার অভিভাবকের কাছে, আমি তাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছি, আমাকে মাফ করে দেবেন।

তিনি আরও বলেন, অপকর্মটি ছিল আমার একান্তই নিজস্ব। আমি আবারও আদালতের কাছে নিবেদন করছি আমাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য, নতুন জীবন শুরুর সুযোগ দেওয়ার জন্য। ' শুক্রবার সকাল ১১টা ৭ মিনিটে বাংলাদেশি এই যুবক নাফিজের (২২) বিরুদ্ধে ৩০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয় এবং মুক্তি লাভের পর বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন ততদিনই কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে থাকতে হবে। রায়ের এ সংবাদ মিডিয়াগুলোতে প্রচারের পর বাংলাদেশি-আমেরিকানদের প্রায় সবাই নাফিজকে ধিক্কার দিচ্ছেন এবং ৩০ বছরের শাস্তি যথাযথ বলেও মন্তব্য করছেন।

এ রায় ঘোষণা করেন ব্রুকলিনে অবস্থিত ফেডারেল কোর্টের মুখ্য বিচারক ক্যারল অ্যামন। নাফিজ গত বছরের ১৭ অক্টোবর এফবিআইয়ের পাতা ফাঁদে নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ভবন গাড়ি ভর্তি ১০০০ পাউন্ড বিস্ফোরণ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার হন। সেই থেকেই তাকে জেলে রাখা হয়েছে এবং গ্রেফতারের দিন থেকেই তার দণ্ড গণনা করা হবে। পিনপতন নীরবতায় মাননীয় জজ এজলাসে প্রবেশ করেন সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে। এর পরই পৃথক দরজায় ঢুকানো হয় কাজী নাফিজকে।

কাজী নাফিজ বসেন ফেডারেল ডিফেন্ডার হেইডি সিজারের পাশের চেয়ারে। তাদের সামনে বসেন এ মামলা পরিচালনায় নেতৃত্বদানকারী সহকারী ইউএস অ্যাটর্নি জেমস লুন্যাম এবং ট্রায়াল অ্যাটর্নি ব্রিজেট বেহলিং। দর্শক গ্যালারিতে ছিলেন নাফিজের বিরুদ্ধে পাতা ফাঁদে অভিনয়কারী এফবিআই এবং নিউইয়র্ক পুলিশের চৌকস সদস্যরা। ছিলেন কয়েকজন মানবাধিকার আইনজীবী এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম। সাংবাদিকদের বসতে দেওয়া হয় মাননীয় জজের নিকটে জুরিবোর্ডের সদস্যদের জন্য নির্ধারিত আসনে।

এ প্রতিনিধিসহ ৪ বাংলাদেশি সাংবাদিক ছাড়াও ছিলেন ডজনখানেক মার্কিন সাংবাদিক। নাফিজের পক্ষের অ্যাটর্নি হেইডি সিজার সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং নাফিজের বয়স বিচেনা করে সর্বোচ্চ শাস্তি ২০ বছর প্রদানের আবেদন জানান।

হেইডি সিজার এ সময় সরকার পক্ষের অভিযোগ খণ্ডন করে মাননীয় আদালতকে অবহিত করেন যে, নাফিজ কখনোই আল-কায়েদার সদস্য ছিলেন না। তবে আল-কায়েদার কর্ম তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। নাফিজ কোনো জিহাদি গ্রুপের সদস্য ছিলেন না বলে উল্লেখ করেন হেইডি সিজার।

এর পর ইউএস অ্যাটর্নি জেমস লুন্যাম এবং ট্রায়াল অ্যাটর্নি আসন থেকে উঠে হেইডি সিজারের কাছে গিয়ে ৩ জনে কানে কানে কথা বলেন মিনিট পাঁচেক। এর পর কী যেন সমঝোতা হয় সরকার পক্ষ ও নাফিজের পক্ষে।

৩১ জুলাই সরকার পক্ষের প্রস্তাবালি সম্পর্কে হেইডি সিজারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মাননীয় জজ। সে প্রস্তাব ঠিকমতো পাঠ করেছেন কিনা এবং সেগুলো কাজী নাফিজও পর্যালোচনা করেছেন কিনা তা জানতে চান মাননীয় জজ। নাফিজ 'জি' বলেন এবং হেইডি সিজারও তার মতামত দেন।

হেইডি সিজার দাবি করেন, জিহাদি গ্রুপের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না নাফিজের। তবে জিহাদি কর্মকাণ্ডে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। এরপর সহকারী ইউএস অ্যাটর্নির মতামত জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেমস লুন্যাম আদালতে উপস্থাপন করেন যে, নাফিজ যে জঘন্য অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিল তা মারাত্দক অপরাধের শামিল। তার ওই হামলায় নিহত হতেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। অসহায় নারী ও শিশুও মারা যেতেন।

সম্প্রতি বোস্টনের ম্যারাথনে যে ধরনের হামলা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেন তিনি। অ্যাটর্নি জেমস উল্লেখ করেন, স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগেই নাফিজ এ ধরনের সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করেছিলেন। মিজৌরিতে ক্লাস শুরুর পরের মাসেই তিনি ট্র্যান্সফার নিয়ে নিউইয়র্কে আসেন এবং সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা শুরু করেন। নাফিজ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সময়ই অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তৈরির পদ্ধতি রপ্ত করেন এবং একটি ডিভাইসও ছিল তার কম্পিউটারে। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার জন্য এফবিআইয়ের ছদ্মবেশী এজেন্টের মাধ্যমে বিস্ফোরক দ্রব্য ক্রয় করার পর তা কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে সেটিও জানা ছিল নাফিজের এবং তিনি নিজে তা প্রস্তুত করে মোবাইল ফোনের সঙ্গে সংযোগ করেছিলেন।

গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত নাফিজ আমেরিকাকে ধ্বংসের ভয়ঙ্কর একটি পরিকল্পনায় ছিলেন। আমেরিকার অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত এবং জানমালের ক্ষতিসাধনে লিপ্ত ছিলেন। এখন অনুতাপ প্রকাশ করে লাভ নেই। সুতরাং তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি মাননীয় আদালতে। রায় শোনার পর ভাবলেশহীন ছিলেন কাজী নাফিজ।

তার ধারণা ছিল ২০ বছর সাজা হবে। কারণ তিনি প্রথম থেকেই তদন্ত কর্মকর্তাদের সর্বাত্দক সহায়তা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি একই জজের সামনে কাজী নাফিজ দোষ স্বীকার করেন। সে অনুযায়ী এই রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের কোনো সুযোগ নেই। এ সত্ত্বেও জজ আবারও উল্লেখ করেন, ৩০ বছরের যে শাস্তি ঘোষণা করা হলো সেটি যদি তিনি মানতে রাজি না হন তাহলে ১৪ দিনের মধ্যে যেন দরখাস্ত করা হয়।

রায় ঘোষণার পর ফেডারেল কোর্টের বাইরে হেইডি সিজারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব না। এ সময় তার পাশে ছিলেন বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার তাকে আইনজীবী দিতে চেয়েছিল। কাজী নাফিজ নেননি অর্থাৎ হেইডি সিজারের পরামর্শ উত্তম বলে কাজী নাফিজ মনে করেছেন। জজের সামনেও কাজী নাফিজ এটি স্বীকার করেছেন।

এ নিয়ে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়ে তিন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হলো। এর আগে ২০০৭ সালে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এহসানুল সিফা সাদেকীকে (২৭) যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং দণ্ডভোগের পর আরও ৩০ বছর কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারিতে জীবনযাপন করতে হবে বলে ফেডারেল কোর্ট তার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেছে। এর পরের বছর ২০০৮ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনিতে বসবাসরত এবং মসজিদ আস-সালামের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়ে। তাকে গ্রেফতার করা হয় এফবিআইয়ের পাতা ফাঁদে। সূত্র : এনা।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.