আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তরাষ্ট্রে লেখক ধর্মঘট



যুক্তরাষ্ট্রে লেখক ধর্মঘট ফকির ইলিয়াস ---------------------------------------------------- যুক্তরাষ্ট্রে লেখক ধর্মঘট, ঘটনাটি শুনতেই অন্যরকম মনে হয়। হ্যাঁ, সত্যিই তাই। নিউইয়র্কের বিভিন্ন ক্যাটাগরির বেশ কিছু লেখক, অনুবাদক ধর্মঘট পালন করছেন। তারা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনার সামনে অবস্থান করছেন। তাদের দাবি, তাদের প্রাপ্ত সম্মানীর ভাগ দিতে হবে কড়ায় গণ্ডায়।

এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, নিউইয়র্কের শো বিজনেসে। মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে থিয়েটারগুলো। ‘ব্রডওয়ে শো’ দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন নিউইয়র্কে। সেই ‘ব্রডওয়ে শো’তে এখন মানুষের ভিড় নেই। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে যেসব নিয়মিত শো চালিত হয়, তাতেও ভাটা পড়েছে।

কারণ স্ক্রিপট রাইটাররা স্ক্রিপট জমা দিচ্ছেন না। লেখকদের ইউনিয়ন ‘লোকাল ওয়ান’ বলেছে, লেখকদের দাবি মানতে হবে। তাদের উপযুক্ত সম্মানীর অংশ দিতে হবে। লেখকরা দাবি করছেন তারা যেসব বিভিন্ন শো, সিরিজের জন্য স্ক্রিপট লিখে দেন, তার জন্য তারা এককালীন সম্মানী পান। কিš' পরে এসব অনুষ্ঠানগুলোর অডিও, ভিডিও, ডিভিডি, সিডি তৈরি করে নির্মাতা সংস্থাগুলো।

তা থেকে তারা মিলিয়ন ডলার মুনাফা করে। এমন কি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আইপড বা অন্যান্য ইকেট্রনিক মাধ্যমের জন্য মিউজিক, শো, সিরিজ ডাউনলোড করে নেওয়া হয়। এ জন্যই ডাউনলোডকারীকে বিভিন্ন পরিমাণের অর্থ মূল্য দিতে হয়। ওয়েবসাইটের মালিক সংস্থা, প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে ভালো অঙ্কের মুনাফা লুটে নেয়। অথচ লেখকদেরকে তা থেকে কোনো প্রকার লভ্যাংশ সম্মানী হিসেবে প্রদান করা হয় না।

লেখকরা দাবি করছেন, বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে তাদের লেখা কর্মগুলোকে কাজে লাগিয়ে যে মুনাফা লাভ করা হচ্ছে, লেখকদেরকে এর অংশ দিতে হবে। বিষয়টি নিউইয়র্কের শোবিজপাড়ায় এতোই প্রভাব ফেলেছে যে বিভিন্ন সংস্থার মালিক-প্রযোজকরা কয়েক দফা লেখক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেও এখনো কোনো সুরাহা করতে পারেননি। তবে উভয়পক্ষই আশা করছেন, খুব শিগগিরই একটি সম্মানজনক সমাধান হবে উদ্ভূত সমস্যাটির। ইউরোপ আমেরিকায় এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে, মাত্র একটি সিডি যদি কোনো শিল্পীকে প্রতিষ্ঠার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়, তবে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় না। আর লিরিক লেখার জন্য একজন গীতিকার যদি সামান্য পরিমাণ সম্মানী প্রতিটি সিডি থেকে পান তবে ওই গীতিকারও সহজে হয়ে যেতে পারেন মিলিয়নিয়ার।

ধরা যাক একজন শিল্পীর গাওয়া হিট করা একটি সিডি যদি চার মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়, আর একজন গীতিকার যদি সিডি প্রতি মাত্র পঁচিশ সেন্ট (অর্থাৎ কোয়ার্টার ডলার) পান তবে চার মিলিয়ন সিডি থেকে গীতিকার পাবেন এক মিলিয়ন ডলার। প্রকাশনার সংখ্যা যদি বাড়ে তবে আয়ের পরিমাণও বেড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। আর তা হচ্ছে একজন লেখকের ন্যায্য পাওনা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে কপিআইন স্বত্বাধিকারের খুব কড়াকড়ি। অবৈধভাবে কিছু কপি করে বিক্রি করাটা এখানে দণ্ডনীয় অপরাধ বলেই বিবেচিত।

তাই বলে যে পাইরেসি হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। নিউইয়র্কের ফুলটন স্ট্রিট, ব্রংনকস কাউন্টির ফোর্ডহাম রোড এসব পাইরেসির কেন্দ্রবিন্দু বলে পরিচিত। গোয়েন্দারা এসব স্থানে অভিযান চালায় প্রায় প্রতিনিয়ত। চলে আইনের কড়া শাসন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে; সাধারণ কাস্টমাররা সব সময়ই অরিজিন্যাল কপি কিনতে বেশি আগ্রহ দেখান।

ফলে পাইরেসিকারী নিরুৎসাহিত হয় বারবার। শিল্প সংস্কৃতিকে লাভজনক অবস্থানে রেখে তা মানুষে মানুষে পৌঁছে দেওয়ার এই যে প্রচেষ্টা তাই বাঁচিয়ে রাখে শিল্পী-লেখককে। ইউরোপ-আমেরিকায় একটি শিল্পকর্ম মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হতেও আমরা দেখি। স্বল্প পরিচিত চিত্রশিল্পী, ফটোগ্রাফাররা তাদের নিজ নিজ কর্ম দিয়ে ক্যালেন্ডার বানিয়ে বিক্রি করেন বছরের শুরুতে। এ থেকেই কারো কারো জীবন চলে।

তাছাড়া সারা বছর ধরে পার্ক, স্ট্রিট ফেয়ার, বিভিন্ন উপলক্ষ, উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে শিল্পকর্ম বিক্রি। শিক্ষানবিস চিত্রশিল্পীরা অনেক সময় বিভিন্ন চ্যারিটি ফান্ডের জন্যও দান করে দেন তাদের কর্মগুলো। ক্রিসমাস শুরু হতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। বড়দিন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের শোবিজপাড়া আবারো রমরমা হয়ে ওঠে। রেডিও সিটি মিউজিক হলের মতো দুনিয়াখ্যাত হলগুলো হয়ে যায় প্রতিটি শোতেই হাউজ ফুল।

কিন্তু এবারের লেখক ধর্মঘটের প্রভাব তাতেও পড়তে পারে। তাই ‘রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা’সহ বিভিন্ন লেখক সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রযোজক-নির্মাতাদের বুঝাপড়া, দরকষাকষি অব্যাহত রয়েছে। লেখক সম্মানী একজন লেখককে তার মহান কর্মে আরো দায়িত্বশীল হতে শক্তি জোগায়। মেধা এবং মননের মূল্যায়ন করা না হলে একটি জাতি পরিশুদ্ধ চেতনা নিয়ে কখনোই দাঁড়াতে পারে না। সাহিত্য এবং সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার অন্যতম কাজটি হচ্ছে লেখককে বাঁচিয়ে রাখা।

ইউরোপ-আমেরিকার আর্ট এন্ড কালচার মিনিস্ট্রিগুলো প্রতি বছরই নিজ নিজ সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টি লালনে এবং উপাত্ত সংগ্রহে নানা কর্মসূচি প্রণয়ন করে। নতুন প্রজন্মকে নিজ সংস্কৃতির পাশাপাশি, ভিন্ন সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পাঠায় দেশে-দেশে শিক্ষা সফরে। সংস্কৃতির এই যে আদান-প্রদান তাই বিশ্ব মানবসভ্যতার ভিতকে মজবুত করে ক্রমশ। ================================== দৈনিক ভোরের কাগজ ডিসেম্বর ০১, ২০০৭, শনিবার : অগ্রহায়ণ ১৭, ১৪১৪

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.