আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভৌতিক অভিজ্ঞতা?

বাক স্বাধীনতা মানে সত্য বলার অধিকার। আমি তখন ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। আমাদের গ্রামের যে প্রাইমারী স্কুলটা আছে তখন আমি সেই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। আমার মা সেখানে পড়াতেন। আমি ছোট ছিলাম বিধায় রাতে মায়ের সাথেই ঘুমাতাম।

গ্রামে ছিলাম বলে ভয়ডর কিছুটা কম ছিলো। তাছাড়া, আমাদের বাড়িতে বাচ্চাদেরকে ভূত বা এই জাতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা থেকে সবসময় দূরে রাখা হয় এবং শেখানো হয় যে, ভূত বলে কোন কিছু নেই। যদিও অনেকে বলে, “ভূত বলে কোন কিছু নেই” কিন্তু তার সাথে একটা লেজুড় জুড়ে দেয়, -“তবে জ্বিন আছে”। আমাদের যখন বলা হত, “ভূত বলে কিছু নেই”- এর সাথে “তবে জ্বিন আছে” কথাটা কখনও জুড়ে দেয়া হত না। ফলে ভূত বা জ্বিন কোনকিছু নিয়েই তেমন একটা ভয় মনের মধ্যে দানা বাঁধতে পারে নি।

ফলে রাত বিরাতে ঘর থেকে বের হয়ে উঠোনে হাঁটাহাঁটি করতে তেমন একটা ভয় লাগতো না। যদিও রাত কালে বাড়ির বাইরে কখনো যেতাম না তখন। বাসার সবাই ঘুমাতে যেত রাত দশটার মধ্যে। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। আমাদের উপর নির্দেশ ছিলো ঘুমোতে যাবার আগে অবশ্যই যেন প্রাকৃতিক কাজটা সেরে নেই।

আমিও ঘুমোতে যাবার আগে প্রাকৃতিক কাজটা সেরে নিতাম। কিন্তু এগুলো প্রকৃত অর্থেই প্রাকৃতিক বিষয় বলে কখন কোনটার প্রয়োজন পড়ে সে ব্যাপারে আগে থকে কোন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। এক রাতের ঘটনা। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমোতে গেছি দশটার দিকে। ঘন্টাখানেক পরে ঘুম ভেঙে গেল।

ঘুম ভাঙার পরই পেটে প্রচন্ড চাপ অনুভব করলাম। প্রকৃতির ডাক। তাও বড়টা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে যে সেরে নেব তার উপায় নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে এগারোটা বাজে।

গ্রামাঞ্চলে রাত সাড়ে এগারোটার সময় নবদম্পতিরা ছাড়া সাধারণত সবাই ঘুমায়। আমার বাবা সেদিন বাসায় ছিলেন না। মা সারাদিন স্কুলে পরিশ্রম করেন আমি সেটা বুঝতাম বলে কাঁচা ঘুম থেকে তাকে ডেকে তুলতে ইচ্ছা হল না। তাই একা একায় টয়লেটে যাব বলে ঠিক করে ফেললাম। আমাদের বাড়ির টয়লেটটা তখন একেবারে পেছনের দিকে ছিল।

আমি যে ঘরে ঘুমাতাম তার পেছনে আছে আমার দাদির ঘর, তার পেছনে আছে সেজ চাচার ঘর, তার পেছনে আছে রান্না ঘর, তার পেছনে আছে গোসলখানা এবং সবচেয়ে পেছনে আছে টয়লেটটা। টয়লেটের পেছনে আছে পাট শোলার বেড়া ও এই বেড়ার পেছনে আছে একটা আম বাগান। এই আম বাগানে অনেক পুরনো কিছু গাছ আছে। যদিও এখন ঘরের সাথে সংযুক্ত টয়লেট কাম গোসলখানার ব্যবস্থা করা হয়েছে; কিন্তু তখন এগুলো ছিলো না। টয়লেটে যেতে হলে একটা তেঁতুল গাছের নিচ দিয়ে যেতে হত।

সেই তেঁতুল গাছটি এখন আর নেই। বিশাল গাছ ছিলো সেটি। যা হোক, ঠেলায় পরেছিলাম বলে তখন এত কিছু চিন্তা করার সময় পাইনি। ঘরের দরজা খুলে ঐ অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে হেঁটে টয়লেটে গিয়ে ঢুকলাম। কিছুক্ষণ পর একটা আশ্চর্যজনক শব্দ শুরু হলো।

টয়লেটের পেছনে যে পাট শোলার বেড়াটা আছে, শব্দটা আসছিলো সেখান থেকে। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন পাট শোলা গুলো ভাঙছে। মট মট শব্দ হচ্ছিলো। আমি বেশ অবাক হলাম। ভয় তখনও পাইনি।

প্রথমে ভাবলাম গরু টরু হতে পারে। যদিও এত রাতে সেখানে গরু থাকার কথা না। তবে নেই যে, এমন কথাও নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। তাই প্রথমে তেমন একটা গুরুত্ব দিলাম না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শব্দটা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো।

বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে গেল যে, মনে হচ্ছিলো বেড়াটাকে মাটিতে ফেলে দশজন মিলে যেন ওটার উপর লাফাচ্ছে। মুড়মুড় শব্দে কান পাতা দায়। আমি তখন ভয় পেয়ে গেলাম। টয়লেট থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছি না। অবশ্য ইতিমধ্যে সৌচকাজ সম্পন্ন করে ফেলেছি।

আমি টয়লেটের ভেতর দাঁড়িয়ে রয়েছি আর ওদিকে মুড় মুড় শব্দ হয়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বেড়াটাকে কেউ দুমড়ে মুচড়ে একাকার করে ফেলছে। খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ আমার মনে পড়ল যে, টয়েলেটের পেছনের দেয়ালে অর্থাৎ আমার পেছনের দেয়ালে একটা ছিদ্র আছে যেটা আম বাগানের সাথে উন্মুক্ত। এটা মনে হবার পর আমার ভয় আরও বেড়ে গেল। জানি আমার পুরোই কল্পনা- কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলো ঐ ফুটো দিয়ে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

যেন এক্ষুনি হাত বাড়িয়ে আমার ঘাড়টা চেপে ধরবে। এরকম মনে হবার পর আমি ভাবলাম, যাই হোক না কেন, আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে। ওদিকে শব্দ তখনো হয়েই যাচ্ছে। আমি বের হবার জন্য দরজার ছিটকিনিতে হাত দিলাম। আমাকে আবারও অবাক করে দিয়ে হঠাৎ করে সব শব্দ থেমে গেল।

আমি ছিটিকিনিতে হাত রাখার সাথে সাথে সব শব্দ থেমে গেল। এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম আমি। আমার মনে হতে লাগলো যেন, অশরিরী কিছু ঠিক দরজার ওপাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আবার থমকে গেলাম আমি। এখন আর বের হবার সাহস পাচ্ছি না।

কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। কিন্তু এক সময় আবার বেড়াতে শব্দ হতে শুরু করলো। মট মট করে ভাঙছে যেন পাটশোলা গুলো। এবার খুব দ্রুতই শব্দের মাত্রা বেড়ে গেল। আমি বুঝলাম যে, আমার এখন এখান থেকে বের হতেই হবে।

‘যা থাকে কপলে’ চিন্তা করে ছিটকানি খুলে দরজায় কষে একটা লাথি মেরে খুলে ফেললাম। না, সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই। টয়লেট থেকে বের হয়ে ঘরে আসতে হলে বেড়ার পাশ দিয়ে খানিকটা হাঁটতে হয়। অথবা গোসলখানা ও রান্না ঘরের মধ্যকার চিপা দিয়ে আসতে হয়। অন্ধকারে আমার ঐ চিপা দিয়ে আসার সাহস হল না।

তাই বেড়ার পাশ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। তখনও শব্দ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তাকানোর সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু মানুষের কৌতুহল নিবারণ করা বড় কঠিন। তাই তাকাবো না তাকাবোনা করেও এক পর্যায়ে আমার চোখ চলে গেল বেড়ার দিকে।

স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওটা। যেন কিচ্ছু হয়নি। অথচ শব্দ থেমে নেই। বিস্ময় আর ভয়ের সংমিশ্রিত অনুভুতি নিয়ে একতা দৌড় দিয়ে ঘরে চলে আসলাম। ঘরের দরজাটা লাগিয়ে সোজা বিছানায় গিয়ে কোলবালিশখানা পিঠের সাথে নিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ।

মা তখনও ঘুমাচ্ছে। পরিশিষ্টঃ এই ঘটনা আমি অনেক দিন পর বাসার লোকজনের সাথে শেয়ার করেছিলাম। আমার দাদির জীবনেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছিলো। সেই গল্প শোনার পর আমারটা শেয়ার করেছিলাম সবার সাথে। সাথে সাথে সবাই বলেছিলো, “ভূত বলে কিছু নেই- ওটা তোমার কল্পনা।

“ আমার সারা জীবনে একটা মাত্র ঘটনা। এটাকে কেউ যদি কল্পনা বলে উড়িয়ে দেয় তাহলে কেমন লাগে আপনারাই বলুন?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।