আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভৌতিক

অচিন পথের সন্ধানে......

সাল ১৯৬৭..... কুমিল্লা জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৪৫ কি মি ভিতরে , জায়গাটা আসলে দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত একটা প্রত্যন্ত গ্রাম। ঐ গ্রামেরই সুলতান চৌধুরীর বড় ছেলে সোলায়মান চৌধুরী, তার বয়স ১৮ বছর, সে স্হানীয় হাই স্কুলে পড়ে। তবে কিনা তার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব অনেক বেশী হওয়ায় সে বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে তার এক চাচার বাড়ীতে থেকে পড়াশুনা করতো। যা স্কুল থেকে কাছে ছিল। প্রসংগত উল্লেখ্য যে এই বাড়িটি ছিল নদীর পাড়ে।

তখনকার দিনে গ্রামে বড় বাড়িগুলা বেশ খানিকটা বিশাল আয়তন নিয়েই । মানে ভিতর বাড়ি আর বাহির বাড়ির মধ্যে ছিল অনেকটা পথের ব্যবধান। আমাদের আলোচ্য গল্পের মূল চরিত্র সোলায়মান থাকতো বাহির বাড়ির একটি ঘরে। যে সময়কার কথা বলছি সে সময়ে ঢাকা শহরে ও ঠিকমত বিদ্দুৎ ছিলনা। আর অজ পাড়াগাঁয়ের কি অবস্হা তা আর নাই বা বললাম।

এবার মূল ঘটনায় আসি। তখন শীতকাল। নদীর তীরবর্তী ঐ অঞ্চলে ভালই শীত পড়েছে সেইবার। সোলায়মান এবং তার সমবয়সী চাচাত ভাই রহমান ঐ বাহির বাড়ীতে বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেবার বাড়ির কি একটা কাজে - রহমান কে ঢাকা যেতে হল।

মাঝেমধ্যেই যেতে হ্য়। তবে একটা ব্যাপার পরিস্কার যে তখন কেউ ঢাকা যেতে চাইলে শুধু যেতেই ২ দিন লাগতো । পথ ঘাট / যান বাহন এর তেমন সুবিধা ছিলনা তাই। সেদিন ছিল বুধবার। ঐ দিন সকালে অন্য মাসের মত এই বারও বাড়ির কাজে ঢাকা রওনা হতে হল।

তো সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ল রহমান। সেদিন বিকাল থেকেই আকাশ অনেক মেঘলা । এই শীত কালে ঝড়ের পূর্ভাবাস। খুব দূর্যোগপূর্ণ রাত সন্দেহ নেই। অন্য দিনের মতই সোলায়মান রাতের বেলা বাহির বাড়িতে পড়ছে তবে আজ সে একা।

রাত তখন বারোটা। হঠাৎ বাইরে থেকে ডাক পড়ল, "কই হে সোলায়মান দরজা খোল। " এর মধ্যে বলে রাখা ভাল যে বাহির বাড়ীর চারপাশে ঘন বাঁশবাগান। তাই রাতের বেলা একটু ভয় সবাই পেত। নিতান্ত নিরূপায় না হলে কেউ অত রাতে ঘর থেকে বের হতনা।

যাই হোক সোলায়মান কিছুটা বিস্মিত হঠাৎ রহমান এর এই আকস্মিক আগমনে । কারণ আজকে সকালেই তো সে রওনা দিয়েছে । শিরশির করে আতংকের একটা স্রোত বয়ে যায় তার শরীরে হঠাৎ। অনেক কল্পকাহিনী তে শোনা গল্পই বুঝিবা মনে পরে যায় তার। কিন্তু পরক্ষণেই রহমানের ধৈর্য্যচূত্য কন্ঠ শোনা যায় ,"কি রে দরজাটা খোল না , শীতে তো জমে গেলাম।

" দ্বিধা টা কেটে যায় হঠাৎ সোলায়মান এর। ভাবে আরে রহমানই তো। সে দরজা খুলে দেয়। সামনেই রহমান দাড়ানো। কিছুটা অন্যরকম কি লাগছেনা আজকে রহমান কে।

যাই হোক সোলায়মান ইতঃস্তত করতে থাকা রহমানের দিকে তাকায়, "কিরে এত রাতে ....আজকেই ফিরে এলি?" সোলায়মানের বিহ্বল প্রশ্ন। রহমান বাইরে দাড়িয়েই বলে ,"আর বলিসনা , এদিকে বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে, তাড়াতাড়ি গাংপাড়ে (নদীর তীর) চল। " সোলায়মান বলে এত রাতে আবার গাংপাড়ে কেন? "সব বলছি , তুই তাড়াতাড়ি আয়" তাগাদা দেয়ার সুরে বলে রহমান। কিছুটা কৌতূহলী বা কিছুটা ঘটনার আকস্মিকতায় রহমানের পিছু নেয় সোলায়মান। ঘর থেকে বের হয়ে এগিয়ে যেতে থাকে নদীর পাড়ের দিকে ।

বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর ঘোর খানিকটা কেটে যায় বোধহয় সোলাময়মানের। সে এবার রহমানের দিকে ভাল করে তাকায়, ততক্ষণে নদীরও বেশ কাছাকাছি চলে এসেছে তার। পরক্ষণেই বাকরূদ্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড় হয় সোলায়মান । এতক্ষণ সে কার পিছু নিয়ে এতদূর এসেছে? বড় বড় চোখ, রক্তের মত লাল, দুইটি দাঁত বের হয়ে আছে, সারা গায়ে বড় বড় লোম এবং আঁশটে গন্ধ যুক্ত এই প্রানীটি কে? বিকট একটা চিৎকার দিয়ে উঠে সোলায়মান। প্রানীটি এইবার রক্তচক্ষু মেলে সোলায়মানের দিকে তাকায়।

....... এরপর কি হয়েছিল তা সোলায়মানের ভাল মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে সে আল্লাহ রাসূল এর নাম নিতে নিতে দৌড়ে এসে ঘরের ভিতর পর্যন্ত ঢুকে বেহুঁশ হয়ে পড়ে। সকালে সারা গ্রামের লোকজন আসে। ঘটনা শুনে সবাই বলে যে সোলায়মান ঘর থেকে বের হয়ে কাজটা ভাল করেনি। অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারত।

যাই হোক নিশি রাতে ঘর থেকে কারো ডাকে বের হতে হলে যার সাথে বের হচ্ছেন তাকে অন্তত একবার ঘরের ভিতরে আসতে বলবেন। সে যদি কোনরকমেই ঘরে ঢুকতে না চায় তাহলে আপনার যা মনে করার আপনি মনে করে নিতে পারেন। পরিশিষ্ট: এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র এবং ঘটনা সত্যি। জীবিত এবং মৃত অনেকের সাথেই এই ঘটনার মিল পাওয়া যেতে পারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।