আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানব জীবনে মিডিয়ার প্রভাব

ভালবাসি বাংলা ভাষাকে (প্রথম পাতায় লেখা ছাপানোর সুযোগ পেয়ে গেছি, হুররে..................। ) আমরা সবাই জানি বর্তমানে মিডিয়া কিভাবে আমাদের জীবনে স্থান করে নিয়েছে। কিভাবে মিডিয়া নারী-পুরুষ, যুবা-বৃদ্ধ, শিশু-কিশোরদের জীবনাচারে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। পোশাক-আশাক, চলন-বলন, হেয়ার স্টাইল, নারী-পুরুষের সম্পর্কসহ সকল ক্ষেত্রে আধুনিক মিডিয়ার সুপরিব্যাপ্ত প্রভাব আজ আমাদের সবারই জানা। মিডিয়ার প্রভাবেই আজ মুসলমানদের ছেলে-মেয়েরা বন্ধুত্বের নামে গড়ে তুলছে অবৈধ সম্পর্ক।

মিডিয়ার প্রভাবেই নারীরা আজ বর্জন করে চলেছে হিজাব-পর্দার শাশ্বত বিধান। মিডিয়ার প্রভাবেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আমাদের চির-আদৃত, পূতপবিত্র জীবনধারার অনেক কিছুই। একসময় তো এমন ছিল যখন নাটক-সিনেমার অভিনেত্রীদেরকে মানুষ ঘৃণার চোখে দেখত, কিন্তু আধুনিক মিডিয়া তাদেরকে বানিয়ে দিয়েছে সমুজ্জ্বল তারকা, শত শ্রদ্ধা ও ভক্তির পাত্র, যাদের অটোগ্রাফ নিতে পারলে কেউ নিজেকে মনে করে ধন্য। আধুনিক মিডিয়া এমনকি সমাজ কলুষিতকারী ব্যাভিচারিণী নারীদেরকেও দিয়েছে মর্যাদাকর খেতাব। আধুনিক মিডিয়া মানুষের হৃদয় থেকে শুষে নিচ্ছে লজ্জার অনুভূতি।

মানুষকে করে দিচ্ছে নির্বোধ পশুর মতোই নির্লজ্জ-বেহায়া। আমাদের মিডিয়াযন্ত্রের কেন এই বেহাল দশা। এর উত্তর একটাই, তাহলো বিজাতীয় মিডিয়ার অন্ধ অনুকরণ যা প্রবল আঘাতে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-তাহযীব-তামাদ্দুন। এ পরিস্থিতি আমাদের জন্য কখনোই সুখকর হতে পারে না। প্রতিটি মুসলমানের জন্য এ পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক।

আধুনিক মিডিয়াযন্ত্রের এই সর্বগ্রাসী পরিস্থিতে আমরা যারা আলাহর দীনের মহব্বত লালন করি, আমরা যারা মনুষত্বের অপমৃত্যু দেখতে কখনো রাজি নই, আমরা যারা সত্য ও ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত দেখতে আগ্রহী, আধুনিক মিডিয়াযন্ত্রে আমাদের অবস্থান কোথায়? নিশ্চয় সর্বশেষ কাতারে। অথচ হওয়ার কথা ছিল ঠিক তার উল্টো। কেননা আমাদের হাতে রয়েছে তাওহীদের আমানত, বিশ্বমানবতার কল্যাণকামী জীবন-বিধান ইসলামের আমানত, যা পৃথিবীর সকল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া আমাদের পবিত্রতম দায়িত্ব। ইরশাদ হয়েছে- আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আলাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত (সূরা ফুসসিলাত : ৩৩ আলাহ তাআলা অন্য এক আয়াতে ইরশাদ করেন- ‘বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আলাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও।

আর আলাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ : ১০৮)। নবী সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেন আল্লাহর কসম। আলাহ যদি তোমার মাধ্যমে একজনকে হেদায়েত দেন তবে তা লাল উটের চেয়ে উত্তম (বুখারী)। উলেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে বলা যায়, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য ইসরলামের অমীয় বাণী সর্বত্র পৌঁছে দেয়া; আম্মিয়ায়ে কেরাম ও দীনের দাঈগণ যেভাবে স্ব স্ব যুগের প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করেছেন, ঠিক সেভাবেই আমাদের যুগের প্রচার মাধ্যমগুলো যথার্থরূপে ব্যবহার করা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে সমকালে মানুষের জীবনযাপনের ধরন বদলেছে।

অভূতপূর্ব বিপব সাধিত হয়েছে প্রযুক্তির সকল শাখায়। ফলে মানুষের ওপর সরাসরি ছাপ রাখার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে আমূল। বিশ্বজুড়ে ভিন্নতা এসেছে দাওয়াত ও প্রচার কৌশলে। আগে দাঈগণ বাজারে, বিভিন্ন লোকসমাগম স্থলে গিয়ে মানুষকে আলাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে একজন দাঈ (আলাহর পথে আহ্বানকারী) ঘরে বসেই রেডিও, টিভি, সিডি, বই ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদির মাধ্যমে দাওয়াত পৌঁছাতে পারেন কোটি কোটি মানুষের দুয়ারে।

এটিকে সহজ ও গতিশীল করেছে আন্তর্জাতিক তথ্যবিনিময় মাধ্যম ইন্টারনেট। তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান যুগে যাদের কাছে তথ্য রয়েছে তারাই হবে আধুনিক পৃথিবীর প্রভাবী শক্তি, কথাটি আমাদের অনেকেরই জানা। আর এটা নিঃসন্দেহ যে ইসলামের তথ্যভাণ্ডার সুবিশাল ও সুদূরবিস্তৃত এবং পবিত্রতম। তাই ইসলামী তথ্যভাণ্ডারের বিশ্বময় প্রবাহ সুনিশ্চিত করতে পারলে আমরাই হবো বর্তমান পৃথিবীর সেরা এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করার কোনো অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। আমাদের কাছে পবিত্র ওহীর যে তথ্য রয়েছে তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে যখন কোনো আধুনিক মিডিয়ার জন্ম হয়নি, তখনই রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম আমাদের ঘাড়ে অর্পন করেছেন।

তিনি বলেছেন- তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও (আহমদ, সহীহ) কুরআন-সুন্নাহর বাণীসমগ্রে মিডিয়ার ব্যবহার বিষয়ক বহু উদাহরণ পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে ইউসুফ আলাইহিস সালামের যুগে সাধারণ ঘোষণার নমুনায় মিডিয়া ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- ‘ তারপর একজন ঘোষক ঘোষণা করল, ‘ওহে কাফেলার লোকজন, নিশ্চয় তোমরা চোর’। ‘তোমরা কী হারিয়েছ’? তারা বলল, ‘আমরা বাদশাহ্র পানপাত্র হারিয়েছি, যে তা এনে দেবে, তার জন্য রয়েছে এক উট বোঝাই পুরস্কার। আর আমিই এর যামিন (সূরা ইউসুফ : ৭০-৭২)।

এরও আগে সুলাইমান আলাইহিস সালামের যুগে দেখুন তথ্য সংগ্রহের জন্য (এটিও মিডিয়ার কাজ) একটি পাখি কাজ করেছে। যেমন জানা যায় রানী বিলকিসের ঘটনা থেকে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে আর সুলাইমান পাখিদের খোঁজ-খবর নিল। তারপর সে বলল, ‘কী ব্যাপার, আমি হুদহুদকে দেখছি না; নাকি সে অনুপস্থিতদের অন্তর্ভুক্ত? অবশ্যই আমি তাকে কঠিন আযাব দেব অথবা তাকে যবেহ করব। অথবা সে আমার কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসবে।

তারপর অনতিবিলম্বে হুদহুদ এসে বলল, আমি যা অবগত হয়েছি আপনি তা অবগত নন, আমি সাবা থেকে আপনার জন্য নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি। ‘আমি এক নারীকে দেখতে পেলাম, সে তাদের ওপর রাজত্ব করছে। তাকে দেয়া হয়েছে সব কিছু। আর তার আছে এক বিশাল সিংহাসন’ (সূরা নামল : ২০-২৩)। মিডিয়ার দায়িত্ব ও কর্তব্য: মিডিয়ার দায়িত্ব ইসলামী মূল্যবোধ প্রচার করা।

মানুষের কাছে সঠিক তথ্য ও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা। মানুষের মধ্যে সঠিক জীবনবোধ তৈরি করা। মতা যাদের হাতে, তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, মানুষের সমস্যার কথা তাদের সামনে তুলে ধরা, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও প্রান্তিক মানুষের যাবতীয় দুঃখ-বেদনা ও প্রয়োজনের কথা তুলে ধরা। যা কিছু কল্যাণকর তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। যা কিছু অকল্যাণকর তা থেকে হুঁশিয়ার করা।

তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। আপনাদের মাধ্যমে আমি সাংবাদিক ভাইদের বলতে চাই, আপনারা আলাহ তাআলাকে ভয় করুন। ঘটনাস্থলে না গিয়ে, ঘটনার গভীরে না পৌঁছে আপনারা সংবাদ পরিবেশন করবেন না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সাংবাদিকরা কারো প হয়ে, কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। অনেকেই আবার তথ্য সন্ত্রাস চালান।

আলাহ মাফ করুন। সাংবাদিকদের উচিত মানুষের সামনে সঠিক সংখ্যা ও পরিসংখ্যান দিয়ে সংবাদ তুলে ধরা। সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা রা করা। কারো ক্রিড়নক হয়ে বা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কারোও বিরুদ্ধে অপপ্রচার না চালানো। দেখুন আলাহ তাআলা কীভাবে আপনাদের আমাদের সতর্ক করছেন আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না।

নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৬)। সুতরাং, যাচ্ছে তাই লেখা যাবে না। যা শুনবেন তাই প্রচার করা যাবে না। এমন কিছু আপনি প্রচার করতে পারেন না, যাতে মন্দ ছাড়া ভালো কিছু নেই। আপনি হয়তো অনেক মতাধর, আপনি সাংবাদিক বলে আপনার কলমকে সবাই ভয় পায়, তাই আপনি যারতার বিরুদ্ধে লাগবেন না।

আপনি ভুলবেন না হিসাব কিন্তু একদিন আপনাকেও দিতে হবে। আলাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘আর তাদেরকে থামাও, অবশ্যই তারা জিজ্ঞাসিত হবে’ (সূরা সাফফাত : ২৪)। কারও প্রশংসা করতে গিয়ে অতিরঞ্জন করা যাবে না। তেমনি কারো কুৎসা গাইতে গিয়েও সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। কথা বলবেন সততা ও নিরপেক্ষাতার সাথে।

আপনি কারো পক্ষ নন। হ্যাঁ,কেবল একজনের তা হলো, ন্যায় ও ইনসাফের। ইরশাদ হয়েছে - আর যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ইনসাফ কর (সূরা আনআম : ১৫২)। যা বলবেন, যা লিখবেন বা যা-ই দেখাবেন সেখানে ইনসাফ ও ন্যায়ের সার রাখবেন। সত্য ও সততার প্রতি নিষ্ঠা দেখাবেন।

আরেকটি কথা আমি বক্তব্যের শুরুতেই বলেছি, সাংবাদিক বন্ধুদের জন্য আবারও তার পুনরাবৃত্তি করছি, তা হলো নেতিবাচকতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। ইতিবাচকতাকে অগ্রাধিকার দিন। খারাপ শব্দ ও খারাপ দৃশ্য এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করুন। অশীলতা ও বেলেলপনা থেকে দূরে থাকুন। মার্জিত শব্দ ও নির্দোষ চিত্র তুলে ধরতে সচেষ্ট হোন।

দেখুন আলাহ তাআলাতাঁর নবীর মাধ্যমে আমাদের বলছেন- আর আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন এমন কথা বলে, যা অতি সুন্দর (সূরা বনী ইসরাঈল : ৫৩)। আলাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর (সূরা আন-নাহল : ১২৫) আর মানুষের মধ্য থেকে অশীলওমন্দ কথা এবং অপ্রয়োজনীয় কথা ও কর্মের সমালোচনা করে আলাহ তাআলা বলেন- কেউ কেউ না জেনে আলাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে (সূরা লুকমান : ৬)। এখানে বেহুদা কথা বলে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রকে বুঝানো হয়েছে। এর মধ্যে আরও রয়েছে নীতি নৈতিকতাহীন যাবতীয় প্রচারণা যা মানুষকে আলাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে। আলাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।