আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিস্তার পানি চুক্তি ঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশ ভারতের মোট ৫৪টি আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী আছে। তিস্তা নদী তার মধ্যে একটি অন্যতম আন্তর্জাতিক নদী। বহুকাল হতে ভারত উৎসারিত নদীটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পানি বিধৌত ও পলি সরবরাহ করে জমি ঊর্বরা করে এসেছে কোন প্রকার বাঁধা ছাড়াই। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পর্ণ ভিন্ন। ভারতের একক হস্তক্ষেপে তিস্তা নদীতে শুষ্ক মওসুমে এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

নদীর নাব্যতা হারাতে বসেছে। জলসেচের তো কথাই আসে না। এ নদীটির উৎপত্তি ভারতের সিকিমের সোহামো লেক থেকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডিমলা উপজেলা দিয়ে এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার, ইহা লালমনিরহাট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফুলছড়ি ঘাটে এসে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

বৃটিশ সার্ভেয়ার মি. রেনলি এ নদীর ম্যাপ তৈরি করেন ১৭৬৪-১৭৭৭ সালে। ইতোমধ্যে যদিও তার গতিপথের অনেক পরিবর্তন হয়েছে সালল ভূমির নদীর কারণে। এ নদী বাংলাদেশে ‘‘লাইভ ক্লর্ড’’ আমাদের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও আশপাশের উচ্চ ভূমি এ নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। বিগত ৪ যুগ ধরে উত্তরাঞ্চলকে দেশের শস্যভাণ্ডার হিসেবে গণ্য হয়ে এসেছে। এর প্রধান কারণ এ অঞ্চলে প্রচুর ইরি-বোরো ধানের চাষ হয়।

আমন ধানের যেমন বন্যার কারণে মার খাওয়ার আশঙ্কা থাকে ইরি-বোরোতে সে আশঙ্কা থাকে না। তাই সারা বাংলাদেশের ফসল ফলায় এ অঞ্চল। এদিকে লক্ষ্য রেখেই দেশপ্রেমিক নিবেদিতপ্রাণ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সত্তরের দশকের শেষের দিকে এ অঞ্চলে নিয়মিত জল সেচের জন্য তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প হাতে নেন। তিনি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর কড়া শর্তের ঋণ বাদ দিয়ে মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি বন্ধু প্রতীম মুসলিম দেশ হতে অর্থের ব্যবস্থা করে এই তিন্তা ব্যারাজ আশির দশকের প্রথম দিকে চালু করে উত্তরাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব আনেন। আরো শাখার কথা এ প্রকল্পটির প্ল্যান, ডিজাইন ও নির্মাণকাজ বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা করেন।

এর জন্য কোন বিদেশী বিশেষজ্ঞের কোন সহায়তা নেয়া হয়নি। ফলে দেশের অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে এই বৃহৎ প্রকল্পে খরচের পরিমাণ খুবই কম হয়েছে। কোন কড়া শর্ত ছাড়াই এ প্রকল্পের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসে। কিন্তু প্রতিবেশী মহা শক্তিধর ভারত ইহা সহ্য করতে পারেনি। তারা বাংলাদেশকে পানিশূন্য করে মারার জন্য ফারাক্কা বাঁধের মত, তিস্তাকে পানিশূন্য করার জন্য বাংলাদেশের ডোমার থেকে ১০০ কিলোমিটার উজানে গজল ডোবায় বিরাট বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার শুরু করে।

ইহা একটি আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভাটির দেশ বাংলাদেশের সাথে আলোচনার তোয়াক্কাই করলো না ভারত। ভারত আন্তর্জাতিক বিধান হলো আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহার করতে হলে যে সব দেশের ওপর দিয়ে নদীটি প্রবাহিত সে সব দেশে সমতার ভিত্তিতে সে নদীর পানি ব্যবহার করতে হবে। ইউরোপের হাসিয়ুর নদীটি ১৩ রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এবং তারা সবাই সমতার ভিত্তিতে পানি ব্যবহার করছে। সর্বশেষ হোয়াংহো নদীর পানি ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লাওস ও কম্পুচিয়া ৫টি দেশ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করে সবাই উপকৃত হচ্ছে। এরূপ নীলনদ, আমাজান, সিন্দু নদীসহ বিশ্বে শত শত নদীর পানি প্রতিবেশী দেশ ব্যবহার করে আসছে।

কিন্তু ভারত একমাত্র দেশ যে আন্তর্জাতিক নদীর পানি এককভাবে গ্রাস করছে। তারা আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার চক্রান্তে লিপ্ত। আর এ দেশের কিছু ভারতীয় সেবাদাস ও হাসিনার সরকার ভারতকে তুষ্ট করার জন্য একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে যা দেশের জন্য মারাÍক ক্ষতিকর হচ্ছে। শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের সময়ই এ চক্রান্ত বাস্তবরূপ নেয়। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ৬-৭ সেপ্টেম্বরে এসে যে সব চুক্তি করে তার প্রত্যকটিই বাংলাদেশের স্বার্থের বিপক্ষে।

তবে মনমোহন যেনতেনভাবে একটা তিস্তা চুক্তি করে তিনি বাংলাদেশ থেকে ৭টি করিডোর, ২টি সমুদ্র বন্দর ব্যবহার, একতরফা বাণিজ্য চুক্তি করার চক্রান্ত নিয়েই তিনি বাংলাদেশে আসেন। তিনি ভারতের দাবি আদায় করে নেন। কিন্তু তিনি তিস্তা চুক্তি করতে পারেননি এক পাতানো খেলার কারণে। অনেক অভিজ্ঞজন ও পানি বিশেষজ্ঞ মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা মুখোপাধ্যার এ চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ভারতের চাণক্য নীতির প্রয়োগের কারণে। তবে আমি মনে করি মমতা ব্যানার্জি দ্বারা অত্তিনা পেতে চুক্তিটি করলে ভারতেরই লাভ হতো।

কারণ ভারত বাংলাদেশের সাথে কত চুক্তিই করছে তার কোনটি তারা মেনে চলেনি বা কার্যকরী করেনি। তেমনি কাগজে কলমে তিস্তা চুক্তি করলে ভারত তা মেনে চলতো না যেমন করছে না পানি সংক্রান্ত ফারাক্কা চুক্তিতে। তাই এ চুক্তি করলে সাথে সাথে ট্রানজিট, করিডোর চুক্তি করে ফেলতে পারতো ভারত। আর এ চুক্তি হলে বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির যে ভয়াবহ ঝুঁকি নিতে হতো তা বাংলাদেশের সকারের কোন বোঁধোদয় আছে বলে মনে হয়। এসব নিয়ে বহুদেশ প্রেমিক লেখকের ও বুদ্ধিজীবীর মত এ কলামিস্টও পত্রিকায় বহু টকশোতে বক্তব্য তুলে ধরেছে।

ভারতের এক হাইকমিশনার কোন এক সভায় দাবি করেন যে, ফাক্কা পয়েন্ট ভারত বাংলাদেশকে তার প্রাপ্য শতাংশ অংশ অপেক্ষা বেশি পানি দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রাপ্য ৪৮% অথচ ভারত নিয়েছে ৫১.৫% কথাটা মিথ্যা নয়। তবে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রাপ্তি গঙ্গার সব পানির মাত্র ৩৩%। তাই তার শতকরা ৬০ ভাগ বাংলাদেশকে দিলেও তাতে আমাদের লাভ কি? শুষ্ক মওসুমে আমার দেশ মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে পানির অভাবে। আর তিনি কি সুন্দর শুভংকরের ফাঁক দিয়ে বোঝাতে চাচ্ছেন যে বাংলাদেশ বেশি পানি পাচ্ছে।

একেই বলে চাণক্য নীতি। কিন্তু বাংলাদেশেও যে কিছু পানি বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবী আছেন, তারা কথা বলার সময় তা বেমালুম ভুলে যান এবং বাংলাদেশে বেকুফ লোকের বাস বলে তাদের কথায় ও কাজে প্রতীয়মান হয়। এর দ্বারা দুই দেশের সৌহার্দ হতে পারে না। ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ, রাতারাতি সিংগাপুর হবে সে কল্পনার কারণ তেমন সরকারি দলেরও অনেকেই বিশ্বাস করে না। আমি এক লেখায় বলেছি ভারতের ২০-২৫ টনি ট্রাক বাংলাদেশের রাস্তা দিয়ে চলতে দিলে প্রতিবছর রাস্তা রিফেয়ারও ও পুননির্মাণে এক লাখ টাকা খরচ করতে হবে।

কারণ আমাদের রাস্তাগুলো পলি মাটির ওপর নির্মিত বলে ১০ টনের বেশি লোড বহন করতে পারে না। ইহা চেক করার জন্য সরকারকে বিভিন্ন পয়েন্টে ওয়েয়িং মেশিন বসাতে হয়েছে। আর ভারতের রাস্তাগুলো হার্ডব্লকের ওপর তৈরি বলে সেখানে ২০-২৫ টনি ট্রাক চললেও তাতে কোন ক্ষতি হচ্ছে না। যাক আসল কথায় ফিরে আসি। মমতা ব্যানার্জি তিস্তা ব্যারাজ চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার যে সব পয়েন্ট তুলে ধরেছেন তা যেমন ধোঁয়াশে তেমনি অবাস্তব।

তিনি পশ্চিমবঙ্গের পানি সম্পদের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে একটি টিমের মাধ্যমে যে সার্ভে করিয়েছেন তাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন : (১) বাংলাদেশ যে ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত ব্যবহার করছে তাতে ভারতীয় অংশের পানির স্তর পশ্চিম বঙ্গে অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। (২) তিস্তা প্রকল্প এলাকার ৩ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে ভারত পানি দেবে। ইহা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পানি সম্পদ দফতরের প্রতিবেদন। তারা ইহা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে। এসব অবাস্তব ও অযৌক্তিক প্রস্তাব।

বাংলাদেশ এতে রাজি হতে পারে না আন্তর্জাতিক পানি সম্পদ ব্যবহারের বিধিবিধান অনুসারে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিবেচনা করলে ভারত ও বাংলাদেশের তিস্তা নদীর ব্যাসিন এলাকা ভিত্তিক বিবেচনা করতে হবে। তাতে বাংলাদেশ তিস্তা নদীর মোট প্রবাহের শতকরা ৫০ ভাগের দাবি অতি যৌক্তিক। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য শতকরা ২০ ভাগ পানি সংরক্ষণ করার পর ভারত বাংলাদেশ শতকরা ৮০ ভাগ পানির অর্ধেক ভাগাভাগি করতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশকে মাত্র শতকরা ২৫ ভাগ পানি দিতে রাজি।

অর্থাৎ নদীর প্রবাহের জন্য ২০ ভাগ সংরক্ষিত রাখলে বাংলাদেশ পাবে মাত্র শতকরা ৫ ভাগ পানি, যা একটি অবাস্তব প্রস্তাবনা। তিস্তা নদীর পানি ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দেন-দরবার সেই ১৯৫২ সাল থেকেই হয়ে আসছে। ১৯৮৩ সালে উভয় দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে চুক্তি হয় যে তিস্তা নদীর পানির ৩৬% শতাংশ বাংলাদেশ এবং ভারত পাবে ৩৯% শতাংশ। আর নদী প্রবাহের জন্য ২৫% শতাংশ পানি সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু পরবর্তী আলোচনায় উভয় দেশের বিশেষজ্ঞ ও জেআরসির মতবিনিময় সভায় এরূপ ধারণার উদ্ভব হয় যে ভারত-বাংলাদেশ উভয় ৪০% শতাংশ পানি নেবে।

আর নদী প্রবাহের জন্য ২০% পানি সংরক্ষিত থাকবে। মনমোহন সিং-এর সেপ্টেম্বরে (২০১১) ঢাকা সফরের সময় এই রূপরেখায় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা শেখ হাসিনার মহাপন্ডিত উপদেষ্টা ড. রিজভী মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করে। কথা ছিল মনমোহন সিং-এর সফর সঙ্গী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা হবেন। কিন্তু যখন তিনি এ তথ্য জানতে পারলেন তখন তিনি আর প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সফরসঙ্গী হতে অস্বীকার করেন এবং হুমকি দেন বাংলাদেশকে ২৫% এর বেশি পানি দিলে সে চুক্তি পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানবে না। এতে মনমোহনের নড়বড়ে যৌথ সরকার এ চুক্তি করতে সাহস পায়নি।

কারণ তাহলে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস দল কেন্দ্রীয় সরকার থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছিলেন। পূর্বেই বলেছি, মমতা ব্যানার্জির বিশেষজ্ঞরা যে প্রশ্ন তুলেছেন তার কোন ভিত্তি নেই। নদীর বেসিন এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি নির্ভর করে ঐ এলাকায় কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় বা বন্যার পানির ওপর। বাংলাদেশ গভিড় নলকূপের মাধ্যমে যে পানি উত্তোলন করে তার মধ্যে এখানকার বৃষ্টি পাতের হার অনেক কম। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশকে নির্দেশ দিতে পারে না যে, সে কত এলাকায় তিস্তার পানি ব্যবহার করবে।

ইহা বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার। পানি প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ তার এলাকায় জলসেচ কার্য চালাবে। কথা হলো তিস্তা নদীর পানির পরিমাপ কিভাবে হবে। বাংলাদেশ অবশ্য দাবি করবে তিস্তা নদীর মোট প্রবাহের শতকরা ৪০ ভাগ পানির। সেখানে যদি ভারত-বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পানির শতকরা ৪০ ভাগ দিতেও রাজি হয়, বাংলাদেশের জন্য তা যোগ্য হবে না।

গঙ্গা নদীর পানির ভাগাভাগি ফারাক্কা পয়েন্টে প্রাপ্ত পানির ওপর নির্ভর করে হাসিনা সরকার ভারতের সাথে ৩০ বছরের গ্যারান্টি ক্লোজ ছাড়াই চুক্তি করে। আর ভারত গঙ্গার উজানে ৩০টি বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় ফারাক্কা পয়েন্টে এক-তৃতীয়াংশ পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই তার অর্ধেক বা তারও বেশি বাংলাদেশকে দিলেই বা কি? একথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। মূল পানি প্রবাহের এক তৃতীয়াংশ পানিও বাংলাদেশ শুষ্ক মওসুমে পাচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল আজ মরুকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের বৃহত্তম জলসেচ প্রকল্প জি-কে প্রজেক্ট আজ মাঠে মারা যাচ্ছে। সেখানে সুষ্ঠুু পানি সঙ্কটের জন্য গভিড় নলকূপ বসিয়ে জলসেচের কাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ঐ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নদীর নাব্যতা হারিয়ে হাজার হাজার চর জেগে ওঠছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন অতিরিক্ত লবণাক্ততায় মরে যাচ্ছে।

পদ্মার ইলিশ মাছসহ অন্যান্য মাছ প্রায় শূন্য। নদীর লবণাক্ততা নগরবাড়ি ঘাট পর্যন্ত পৌঁছেছে। একই কার্যক্রম ভারত তিস্তা নদীতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত জল ঢাকা থেকে ১০০ কিলোমিটার উজানে গজলডোবায় ইতোমধ্যে ড্যাম তৈরি করে সমানে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করছে। ইহা ছাড়াও ভারত সরকার আরও ৫/৬টি ড্যাম তৈরির পরিকল্পনা করছে।

তিস্তা নদীর সাথে যেসব উপনদী সংযুক্ত হয়েছে সেগুলোতে ৪১টি বাঁধ দিয়ে (৩০টি সিকিমে ও ১১টি পশ্চিমবঙ্গের অংশে) মোট ৫০,০০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। আগামী ১০ বছরে তা বাস্তবায়িত হবে। তাই দুই দেশের সীমান্তে তিস্তা নদীতে পানি প্রাপ্তি হবে অতি নগণ্য। তার শতকরা ৬০ ভাগও বাংলাদেশকে দিলে তাতে আমাদের তিস্তা প্রজেক্ট বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তাই প্রথম সিদ্ধান্ত হতে হবে সমগ্র তিস্তা নদীতে যে পানি (উৎপত্তিস্থল থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত) পাওয়া যাবে তার ৪০ শতাংশ বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তা কোন দিন মেনে নেবে না- তাই তিস্তা চুক্তি আদৌও হবে কিনা সে ব্যাপারে রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিশেষজ্ঞ মহলে যথেষ্ট সন্দেহের কারণ আছে। আর যেন তেনভাবে হাসিনার সরকার যদি ভারতের সাথে তিস্তা চুক্তি করে তা হবে আÍঘাতী তার চেয়ে চুক্তি না হওয়াই ভাল। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হচ্ছে যে, হাসিনা-সরকার বাহবা নেয়ার চেষ্টা করছে এই ব্যর্থ হয়ে যেহেতু ভারত তিস্তা চুক্তি করে নাই, তাই তার সরকারও চিটাগাং ও মংলা সমুদ্রবন্দর ভারতের ব্যবহারের জন্য চুক্তি করে নাই। আÍসম্মান বোঁধসম্পন্ন সরকার এ দুটি বিষয় এক করে দেখতে পারে না। তিস্তা নদীর পানির ওপর বাংলাদেশের দাবি আন্তর্জাতিক আইনেই স্বীকৃত।

তাই তার বিনিময়ে চিটাগাং ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের চুক্তি হতে পারে না। তবে হ্যাঁ ভারত যদি বাংলাদেশের জন্য ভুটান ও নেপালে রফতানির ব্যাপারে স্বীকৃত হয় এবং ওই বন্দরদ্বয় ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক ট্যাক্স ভারত দিতে রাজি থাকে ও বাস্তবে তা কার্যকরী হয়, তবে এ ব্যাপারে চুক্তি হতে পারে। তবে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীর মহাপন্ডিত উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও ড. রিজভিড় মত ভারতের সেবাদাশদের দ্বারা ইহা আশা করা যায় না। যে উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলতে পারে ভারতের নিকট থেকে নৌরুটের মাধ্যমে তাতে সাত কন্যা রাজ্যে পাঠানো পণ্যের ওপর শুল্ক আদায় অসভ্যতার শামিল। তারা কি করে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা হতে পারে? বা এ বক্তব্যের পরে উপদেষ্টা হিসেবে বহাল তবিয়তে থাকতে পারে! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.