আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার আব্বু

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়। ঘন্টা পেরোলেই বাবা দিবস, তার আগেই সবাই যার যার বাবা'র গুনগান করছে, বলছে ওদের বাবা নাকি ওদের কাছে সুপারম্যানের মতোন! আমারও কি কখনো আমার আব্বুকে সুপারম্যান মনে হয়েছে? সম্ভবত না। ব্যবসায়িক কাজে আব্বু সারাদিন অ্যাতোই ব্যস্ত থাকে যে রাত ছাড়া আব্বুর সাথে আমার সারাদিনে দ্যাখাই হয় না। ছোটবেলা থেকেই অ্যামনটা দেখে আসছি, মাঝে মাঝে অ্যামনো হয়েছে আব্বুর সাথে আমার টানা কয়েকদিন দ্যাখাই হয়নি। এখন প্রতিদিন দেখা হলেও কথা হয়, সেটা কিন্তু না! আমার আব্বু কখনো বই নিয়ে আমাকে লিখাপড়া করিয়েছে অ্যামনটা মনে পরে না।

প্রায় চৌদ্দ বছর ইশকুল-কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ছি, আব্বু মাত্র চারদিন আমাকে ইশকুলে নিয়ে গেছে। অ্যামনকি কলেজের নাম জানলেও আমি এখন কোন ভার্সিটিতে পড়ি সেটাও আব্বু জানেনা! সেটাতে আমার কোন আফসোস নেই। আব্বুর আমাকে ইশকুলে নিয়ে যেতে হবে, সন্ধ্যা হলে বই নিয়ে পড়তে বসাতে হবে, ভার্সিটির নাম জানতে হবে অথবা থীম পার্কে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে, এইসব ব্যাপার কখনো আমার মাথায় আসেনি। আমার ধারণা ছিলো (এখনো আছে) এইসব শুধু আম্মুর কাজ। এইরকম “হঠাৎ দেখা” সম্পর্ক হলেও ছোটবেলা থেকে আমি কোন জিনিস চেয়েও পাইনি, সেটা দুঃস্বপ্নেও অসম্ভব ছিলো।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাওয়ার আগেই চলে এসেছে। খুব কম দ্যাখা হলেও আব্বুর কাছ থেকে যা শিখেছি তার একটা হলো হাতে টাকা রাখা যাবেনা - আবজাব জিনিসে টাকা খরচ করতে হবে, অন্যের জিনিসে লোভ করা যাবেনা – আব্বুকে বললেই সেটা পাওয়া যাবে, চুরি টাইপের কিছু ভুলেও মাথায় আনা যাবেনা – যতো টাকা দরকার আব্বু দিবে, ঠিক এই কারনে আব্বুকে সুপারম্যান মনে না হলেও বিজনেজ ম্যাগনেট মনে হতো (তখন আমার কাছে বিজনেজ ম্যাগনেট শব্দটার অর্থ ছিলো এইরকম, “যেই বিজনেজম্যান ছেলেমেয়ের জন্য বস্তায় বস্তায় টাকা খরচ করেন”)। আরো জেনেছি বিপদে পরলেও মাথা আগের মতোই উচু রাখতে হবে, কাউকে অসম্মান করা যাবে না, সবসময় সৎ থাকতে হবে, বড়দের সামনে তো দূরে থাক পিছনেও বেয়াদবি করা যাবে না। সব যে ভালো জিনিস পেয়েছি সেটাও কিন্তু না, আম্মু বলে আমার ঘাড় ত্যাড়া স্বভাব আব্বুর থেকেই পেয়েছি, চিল্লাচিল্লি করা স্বভাবটাও আব্বুর থেকেই আসা। আব্বুর একটা প্রিয় কাজ রাতের খাবারের সময় দুনিয়াশুদ্ধ লোক শুনতে পারবে অ্যাত্তো জোরে জোরে খেতে ডাকা, খাওয়ার সময় জোরাজুরি করা আর খাওয়া শেষে বকা দেয়া।

বকা দেয়াটা খাওয়ার আগেও হতে পারে, যদি শুনে ফেইসবুকাচ্ছিলাম। আব্বুর থেকে যেই কথাটা বেশি শুনি সেটা হলোঃ “ছেলেটা কার মতোন যে হইসে!”, “তোমার মতো” - আম্মু উত্তর দিতে দেরি করে না। আব্বুকে পছন্দ করি, নাকি করিনা, করলে কতটুকু করি, আম্মুর চে’ বেশি নাকি কম, সেটা মনেহয় আব্বুকে বলার দরকার নাই। (আম্মুব্বুকে কিছু বলতে হয়না!) আব্বুর প্রচন্ড ব্যস্ত জীবনের দীর্ঘায়ু কামনা করি, দোয়া করি আমাদের নিয়ে য্যানো আরো বেশী ব্যস্ত হয়ে পরেন! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।