আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"নদীর এক কূল ভাঙ্গিয়া গেলে কি আর এমন যায় আসে, হাসিতে হাসিতে নদীর আরেক কূল ভাসে" তেমনই কূলের সন্ধান দেয় ~পিতা (২০১২)~

I am the master of my fate, I am the captain of my soul. আসেন সবাই আগে একটা গান শুনি। নদীর এক কূল ভাঙ্গিয়া গেলে কথা ও সুরঃ সংগ্রহ সিনেমাঃ পিতা কন্ঠঃ পান্থ কানাই নদীর এক কূল ভাঙ্গিয়া গেলে কি আর এমন যায় আসে, হাসিতে হাসিতে নদীর আরেক কূল ভাসে। । (হায়রে) রাঙ্গা বউয়ের ভাঙ্গা বুকের পাড়ে মেঘ থম থম করে আহা মেঘে সাতার কাটে লক্ষ্মীন্দর জাগিয়া দেখে বেহুলা তার নাই পাশে। ।

দুঃখী কন্যার কালো চোখের কোনে সুখ ঝলমল করে আহা সুখে উড়াল মারে কিসের আশায় বান্ধে বাউল কান্দে বাউল কার আশে। । Click This Link গানের এই লাইন গুলি মাথায় ঘুরতেছে। অনেকদিন কিছু না লেখতে লেখতে হাতে আর মস্তিষ্কে জং ধইরা গেছে। কিছুই মনে আসে না কি লিখি।

তবে এই ২-৩ টা লাইন ভালো কইরা আঘাত করবে সবাইকে। কথা ও সুর সংগ্রহীত গান ব্যাবহৃত হয়েছে “পিতা” সিনেমায়। আমি এখনো বাইর হইতে পারি নাই এইটা থেকে। কথা গুলো সাধারণ হলেও সিনেমার ঐ পর্যায়ে বেশ আঘাত করবে দর্শকদের। “পিতা” সিনেমা হলে গিয়ে দেখার ইচ্ছা ছিল সবচেয়ে বেশি।

সময় মিলাতে পারিনি বলে দেখা হয়ে ওঠে নি। তাই ডিভিডি/সিডি বের হওয়ার পরে আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। যোগার করলাম সিডি (ডিভিডি পাই নাই)। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা হলেও সিনেমার মূল কাহিনী এর নামেই রচিত হয়েছে। নামেই অন্তর্নিহিত সব গল্প।

নামকরণ শুধু সার্থক বললে ভুল বলা হবে, অসাধারণ। “পিতা” দুই অক্ষরের ছোট শব্দ। কিন্তু এর বিস্তৃতি কাউকে বলে দিতে হবে না আশা করি। পিতার স্নেহ, ভালবাসা, সন্তানকে নিয়ে সংশয় সহ অনেক আবেগীয় ব্যাপার ফুটে উঠেছে এই সিনেমায়। পিতা সন্তানের জন্যে যেমন কোমল অথবা কখনো কখনো কঠোর ঠিক তেমনি সন্তানের জন্যে পিতা যে কোন পরিস্থিতি তে হিংস্রও হয়ে উঠতে পারে।

এইটা সিনেমার সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয়। এইটা নিয়ে আর কিছু বলবো না। তাহলে যারা দেখেননি তাদের মজা নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়াও আরো একটা বিষয় যা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত তা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। সম্প্রদায় কি?? ধর্ম কি মানুষকে আলাদা আলাদা সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে?? কোন ধর্মে কি মানুষকে মানুষ বলতে না করেছে কিনা আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে জানিনা।

তবে সৃষ্টিকর্তা এত তুচ্ছু বিষয়ে সৃষ্টির সেরা জীবের মাঝে বিভক্তি তৈরী করেন বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু মানুষ তাদের নিজেকে সবসময়েই শীর্ষে দেখতে চায়। এই শীর্ষে উঠার তাড়ণা থেকেই বিভেদ আর বিভক্তির সূচনা হয় বলে মনেহয়। এই সাম্প্রদায়িক শব্দটার প্রতি আমার এক রকমের ঘৃণার জন্ম হয়েছে। কারো মুখে শুনলেই বিরক্ত লাগে।

এই সিনেমাতে তারও চিত্রায়ণ হয়েছে। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তাই সেই সাম্প্রদায়িকতা অবশ্যই তাকে কেন্দ্র করেই চিত্রায়িত করা। যুদ্ধ একটা দেশের কি পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে তার ক্ষুদ্র একতা অংশ ফুটে উঠেছে এই সিনেমাতে। কিন্তু এইরকম আরো শত শত গল্প জোড়া দিলেও বোধকরি ’৭১ এর গল্প শেষ হবেনা। ’৭১ সালের দুই দিনের কাহিনীকে পরিচালক চিত্রায়িত করেছেন তার সিনেমায়।

গাজীপুরের কাপাসিয়া নামের ছোট গ্রামে দুই দিনে ঘটে যাওয়া কাহিনীর চিত্রায়ন করা হয়েছে যেই গ্রাম প্রযুক্তি থেকে অনেক পিছিয়ে। গ্রামে মাত্র একটি রেডিও রয়েছে। গ্রামের সকলেই হিন্দু। তাদের মাঝে একজন মাত্র মুসলমান। হঠাৎ পাকিস্তানিদের আক্রমণে নিরীহ মানুষদের জনজীবন বিপর্যস্ত কিভাবে হয় তাই ফুটিয়ে উঠিয়েছেন পরিচালক।

পরিচালক মাসুদ আখন্দ এর কথা বললাম এতক্ষণ। তবে অভিনেতা হিসেবেও যে তিনি অসাধারণ তা সিনেমার প্রথম থেকেই বুঝতে পারবেন। জয়ন্ত চট্টপাধ্যায় তার সাবলীল অভিনয়ে ভালোই ছিলেন। কল্যান ও ভালোই ছিল। তবে নারী চরিত্রে শায়নার অভিনয় বেশ ভালো লাগলেও কেমন যেন শিশু শিশু ভাব ছিল প্রথম দিকে।

পরে এসে তা আর পাইনি। এটা বোধহয় মেকআপ বা অন্য কোন কারণে হতে পারে, আর একটা ছোট চরিত্রে বন্যা মির্জা বেশ ভালো ছিলেন, কিন্তু পাকিস্তানি মেজরের চরিত্র মানানসই হয়নি। কোন ভাবেই এই চরিত্রের সাথে এইরকমের কাউকে আশাকরিনি। এইটা বেশ বলিষ্ট কোন অভিনেতা হলে বোধকরি বেশি ভালো হত। তবে এক কথায় সেরা চরিত্র মাসুদ আখন্দ।

কোথায় যেন দেখলাম কল্যান কন এক জায়গায় মনোনীত হয়েছেন এই সিনেমার জন্যে সেরা পুরুষ চরিত্রে। কিন্তু মাসুদ আখন্দের সামনে এই সিনেমায় যে কোন চরিত্রই ম্লান (শুধু দুই চরিত্রের তুলনায়)। তবে পোষ্ট প্রডাকশনের এডিটিং তেমন পছন্দ হয় নাই। শর্ট ফিল্মের ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শেষে তারাহুরা করে যেই আউটপুট দেই, অনেকটা সেই গোছের এডিটিং। বন্দুকের গুলি আর ছুড়ি/দা এর কোপে রক্ত জঘন্য ভাবে চোখে লাগে।

সিনেমার কাহিনী বেশ আক্রমণাত্মক। বে এই আক্রমণাত্মক শুধুই আবেগী দিক থেকে। ভাইবেন না মারামারি কাটাকাটি শুধুই। যেটুকু কাটাকাটি আছে তারচেয়ে বেশি রক্তাক্ত করতে পারে আপনাকে বা আপনার আবেগকে এই কাহিনী। শেষ অংশ বেশি আঘাত করেছে আমাকে।

যারা দেখেননি তাদের ক্ষেত্রে কি হবে জানিনা। তবে অবশ্যই দেখা উচিৎ সকলেরই। যারা এখনো দেখেননি, এখনই ডিভিডি/সিডি যোগার করুন। আর দেখে ফেলুন সিনেমাটি। সিনেমার নাম : পিতা কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : মাসুদ আখন্দ সঙ্গীত পরিচালনাঃ ইমন সাহা ও এরশাদ ওয়াহিদ প্রযোজনা : ইমপ্রেস টেলিফিল্ম কারিগরি পার্টনার : জাজ মাল্টিমিডিয়া শ্রেষ্টাংশে: জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শায়না আমিন, কল্যাণ কোরাইশী, উপমা, মইন, বন্যা মির্জা সহ আরও অনেকে।

। ✘✘✘ দয়া করে কোন বাংলাদেশী মুভির ডাউনলোড লিংক শেয়ার করবেন না। বাংলা মুভি সিনেমাহলে গিয়ে অথবা অরিজিনাল ডিভিডি কিনে দেখুন। দেশের চলচ্চিত্র রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন। প্রথম প্রকাশঃ http://moviepagol.info/?p=465 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.