আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাথিং ইজ ইমপসিবল হিয়ার

নাথিং ইজ ইমপসিবল হিয়ার। এই দেশে যে কোন সময় যে কোন কিছু হতে পারে। সেটা হতে পারে আমার, আপনার, অন্য যে কোন মানুষের, যে কোন প্রতিষ্ঠানের, যে কোন প্রাণীর, কোন বস্তুর, কোন স্থানের, রাজনৈতিক দলের, আইন-আদালতের, চুক্তির। এমনকি সরকারের। এককথায় সবকিছুর।

ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন মনে হয় নাই। আমি আপনাদের তিনটি ঘটনা বলবো। খুব বেশী দিন হয়নি এই ঘটনাগুলি ঘটেছে। আমার ধারনা ঘটনাগুলো সম্পর্কে সবাই কমবেশী জেনেও গেছেন। তবে এটুকু নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে ঘটনাগুলো সম্পর্কে আগে যেভাবে কোথাও (সংবাদপত্রে) পড়েছেন বা দেখেছেন (টিভি চ্যানেলে) তার থেকে একটু অন্যভাবে আমি বলবো।

ঘটনা এক. নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার চকগোপাল মাঠে গত ৪ মে ধান কাটতে গিয়ে ৪ জন আদিবাসী সাঁওতালকে (থুক্কু সরকারি ভাষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়। তাদের কি অপরাধ ছিল জানিনা। শুধু জানতে পেরেছি তারা নিত্যদিনের মতো তাদের পরিবারের জন্য দুমুঠো খাবার কিনতে যে কয়েকটা অল্প টাকা লাগে সেটার জন্যই চকগোপাল মাঠে ধান কাটতে গিয়েছিল। কিন্তু সব সম্ভবের দেশে তাদেরকে সেখানে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে। যারা মেরেছে তারা বলছে ঐ সাতালরা তীর ধনুক নিয়ে এসেছিল।

যখন সংঘর্ষ হয় তখন নাকি তারাও তীর ছুড়েছিল এবং তাদের এক জন তীরের আঘাতে আহত হয়েছে। তবে সেই আহত ব্যক্তিকে তারা দেখাতে পারেনি। ঘটনার সময় মাঠে আরো যে সেব শ্রমিক কাজ করছিল তারাও অবশ্য বলতে পারেনি যে সাঁওতাল লোকগুলো তীর এনেছিল। এবার বলছি যারা আদিবাসী সাঁওতালদের কাজের জন্য দিনমজুর (কামলা) হিসেবে ধান কাটতে নিয়ে গিয়েছিল তাদের কথা। তারাও বেশ ভালোই আছে।

মারা যাবার আগে যে ধানগুলো আদিবাসীরা কেটেছিল তা এখন তাদের দখলে আছে। যখন কলেজে পড়তাম তখন পরিসংখ্যান বিষয়টা আমার ছিল। সেখানে সম্ভাবনা বা এই ধরনের কিছু অংক ছিল। যেমন, একটি ঝুড়িতে ৫টি বল আছে। তার মধ্যে ৩টি লাল আর ২টি সবুজ।

সেখান থেকে বল তুললে কোন রং এর বল উঠার সম্ভাবনা বেশী। এর উত্তর ছিল লাল। পাঠকরা বলবেন কোথায় থেকে কোথায় চলে গেলরে। এ মনে হয় পাগল হবে। আপনারাই বিবেচনা করেন ঘটনাস্থল চকগোপাল মাঠে মাত্র ৫জন আদিবাসী ও আরো প্রায় ১৫ জন বাঙ্গালি মুসলিম একসাথে ধান কাটছিল।

যারা হামলা করেছিল তারা সবাই বাঙ্গালি মুসলিম ছিল (অবশ্য তারা নানা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছিল)। তাহলে মারামারিতে সম্ভাবনার অংক অনুযায়ি বাঙ্গালি মুসলিমরাই বেশী মারা যাবার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনা ভিন্ন রকম। বেচারা অংকের হিসাব এখানে মেলেনি। সব সম্ভবের দেশে অংক কি সবকিছুরই হিসাব গড়বড় হয়ে যেতে পারে।

বাঙ্গালি মুসলিম বন্ধুরা হয়তো এতোক্ষনে আমাকে হাজারটা গালি দিয়ে দিয়েছেন। বেটা বলে কি। এমনিতে ৪টা গেছে। বাঙ্গালি মুসলিমসহ আরো শ্রমিক মরলে হয়তো আমি খুশি হতাম এরকমটা ভাবছেন আর নিশ্চয় গালিগালাজ দিতে শুরু করেছেন। না বন্ধুরা আমি এই কথাগুলো দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে, ইচ্ছে করেই শুধুমাত্র আদিবাসী শ্রমিকদের বেছে বেছে সেখানে মারা হয়েছে।

এর বেশী কিছু না। যারা মেরেছে তারা হয়তো ভেবেছে এই সাতালদের মারলে কি হবে। এরাতো বোকা মূর্খের দল। কয়েকদিন গেলে টাকা পয়সা দিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেওয়া যাবে। আর তাছাড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্র, প্রশাসন এগুলোওতো আদিবাসীদের পক্ষে নাই।

সো নো চিন্তা, ডু ফুর্তি। ঘটনা দুই. আমাদের দেশে চার পাঁচ বছরের শিশুকেও ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে এরকম ঘটনা অনেক আছে। তাও ভালো এবার যে ঘটনা বলবো সেই ঘটনায় মাত্র ১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলায় উত্তর ইয়ারাংছড়ি গ্রামের চোট্ট শিশু সুজাতা চাকমা গত ৯ মে তারিখে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেটা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ দেখেছি।

দেশের বেশ কিছু জনপ্রিয়, স্বনামধন্য গণমাধ্যমে দেখেছি ঐ ঘটনাকে অন্য খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন, যে ধর্ষণকারী ও হত্যাকারী সে সেটেলার কিনা, সে হিন্দু না মুসলিম ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক করা হয়েছে। মনে হয় আমাদের দেশ তার্কিকদের তীর্থস্থল। আশা করি দূর্নীতির পরে দেশ এবার বিশ্ব বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম হবে। ঘটনা তিন. ১৬ মে রাজশাহী থেকে একটা ফোন পেলাম।

শুনলাম মারিয়াম মুর্মু হত্যা মামলার রায় হয়েছে। রায়ে ৩ জনের ফাঁসি ও এক জনের যাবজ্জীবন হয়েছে। ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত ২ জন আদিবাসী সাঁওতাল, ১ জন বাঙ্গালী মুসলিম ও যাবজ্জীবন দন্ড প্রাপ্ত অন্যজন আদিবাসী সাঁওতাল। শুনে আশ্চর্য হলাম যে এতো তাড়াতাড়ি মামলার রায় হলো এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হলো। মনে একটা প্রশ্নও তৈরি হলো হয়তো আদিবাসীরাই জড়িত ছিল তাই এতো তাড়াতাড়ি এই মামলার রায় হলো।

কেননা এরকম অনেক ঘটনাই আছে যেগুলোর মামলা লোকাল ট্রেনের মতো যুগ যুগ ধরে চলছে তো চলছে। কোন রেজাল্ট নেই। দেখা যাক নওগাঁয় ৪ জন হত্যা মামলার রেজাল্ট কতদিনে আসে। প্রিয় পাঠকগণ আগেই বলেছি সব সম্ভবের দেশ এটা। এখানে সবই সম্ভব।

কড়া নিরাপত্তার ভেতরেও গণভবনে যে কেউ ঢুকে যেতে পারে, আবার ইলিয়াসের মতো গুম হয়ে যেতে পারে আবার সাগর-রুনির মতো কারো বাসায় ঢুকে কাউকে মেরে ফেলাও সম্ভব হতে পারে। নাথিং ইজ ইমপসিবল হিয়ার। ১৭ মে ২০১২। রাত ১১টা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.