আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চাদের সাথে ক্ষমতার লড়াই

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself. আমার বড়মেয়ে জাইনাকে নিয়ে কোথাও যেতে গেলেই সে জিজ্ঞেস করে “আম্মু আমি কি ওদের চিনি? ওদের বাসায় কি কোনও বাচ্চা আছে? ওহ্‌ কী বোরিং, আমি তাহলে কোনও খেলনা সাথে করে নিয়ে যাই?” আমার ছোটটাও এখন ওর দেখাদেখি একই তাল করে। “আম্মু ওমুকের বাসায় যাবোনা, বো-রিং!!” সে আরও এককাঠি সরেস, কোথাও যাওয়ার পরে হয়তো বলে বসবে “আম্মু ওরা মেহমানদের নাস্তা দিতে দেরী করছে!! আমি তাহলে এখন কী করবো?” মানে ঐ বাসায় নাস্তা খাওয়া ছাড়া যেন তার কোনও কাজ নেই। নাস্তা খাওয়া শেষ হলে “আম্মু নাস্তা খাওয়া শেষ, চলো এখন বাসায় যাই?” মেয়েদের স্কুলটা আমেরিকান স্কুল। সেই স্কুলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন তাঁরা কেউই বাংলাদেশী নয়। সারাক্ষণই তাদের মুখে হাসি।

আমরা অচেনা লোক দেখলে এড়িয়ে যাই, কিন্তু এই স্কুলের শিক্ষকদের রাস্তাঘাটেও মাঝে মাঝে দেখি, যাকে দেখছেন সবার সাথেই হাসি, যেন কতো পরিচিত!! আমাদের বাসার আশেপাশেই মেয়ের ক্লাস-টিচার এসেছিলেন পরিচিত কারো সাথে দেখা করতে, আমি আর জাইনা তখন ঘরে ফিরছিলাম এক আত্মীয়ের বাসা ঘুরে। টিচারকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে আমার মেয়ে বাসায় আসতে বল্লো, আমিও ওনাকে অনুরোধ করলাম ঘরে আসতে, উনি ঘড়ি দেখে হেসে রাজি হয়ে গেলেন। বাসায় এসে উনি অনেক গল্প করলেন। ওনার সাথে কথা বলে অনেক না-বলা কথা হজম করে ফেল্লাম। বুঝতে পারলাম আমি যেভাবে বাচ্চা পালি কিংবা পালতে চাই সেটা উনি শুনলে হয় আমাকে রাক্ষস-খোক্কস গোছের কিছু ভেবে বসবেন, নাহয় পুলিসে দেবেন।

আমার মেয়ের এত প্রশংসা উনি করলেন, আমি নিজেই হতবাক হয়ে গেলাম!! এ আবার কেমন টিচার-রে বাবা!! আমরা এখনও আমাদের স্কুলটিচারদের দেখলে সসম্ভ্রমে দূর থেকে সালাম করি কিংবা পদধুলি নেই। আমার মেয়েদের দেখি টিচার-দের “হাগ” করে। আমি যদি শাসন করতে যাই তখন আম্মু ভিলেইন, টিচার ভালো। মহা যন্ত্রণায় পড়লাম!! একদিন এক বাঙ্গালী টিচার আমার কাছে মেয়ের নামে খুব ভয়ে ভয়ে কিছু নালিশ করলেন। এমন ইনিয়েবিনিয়ে করলেন, যাতে আমি সেটাকে আবার “নালিশ” ভেবে না-বসি।

মহিলা বাংলা পড়ান। আমার মেয়ে বরাবর বাংলায় অন্য-বাচ্চাদের চেয়ে ভালো। কোনও এক পরীক্ষায় সে কম নাম্বার পাওয়াতে টিচার তাকে জিজ্ঞেস করলেন কেন সে কম পেয়েছে, কারণ টিচারের ধারণা ছিল সে এবারও ভালো করবে। এই কথা জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে নাকি আমার মেয়ে জাইনা এমন ক্রন্দন শুরু করে দিলো যে পাশের ক্লাসরুম থেকে হেড-টিচার মিস-জে দৌড়ে আসলেন। এসে আমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে।

আমার মেয়ে নাকি বাংলা টিচারের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে আরো জোরে কান্না। তখন মিস-জে বাংলা টিচারকে তিরস্কার করলেন, বাংলা টিচার পড়লেন মহা-বিপাকে!! সেই ঘটনা যখন আমাকে তিনি কাঁচুমাচু হয়ে জানালেন, আমি ওনাকে বল্লাম আপনি আমার মেয়েকে একটা চড় দেন!! (যেহেতু উনি বাঙ্গালি, আমি সাহস করে কথাটা ওনাকে বলেই ফেল্লাম)। হতবাক হয়ে উনি আমাকে বল্লেন “আপনি এসব কী বলছেন? বাচ্চাদের মারতে হয়না!!” আমি বল্লাম “কেন আপনার স্কুলের টিচারের হাতে কি বেৎ ছিলোনা? আপনার বাবা/মা কি কখনও মারেনি আপনাকে? আচ্ছা সত্যি করে বলেন তো আপনার নিজের বাচ্চাকে আপনি বাসায় মারেননা?” ভদ্রমহিলা হেসে ফেল্লেন। বল্লেন “আপনার মত করে কিন্তু অন্য গার্জিয়ানরা বলে না। ” এই স্কুলের প্রিন্সিপালকে বলা হয় এডমিনিস্ট্রেটিভ হেড, তাঁর নাম মিস লং।

সুযোগ হয়েছিলো মিস-লং এর সাথে মতবিনিময় করার, যখন আমি তাঁকে বলেছিলাম আমাদের বাচ্চা বড় করার সিস্টেমের কথা। আমি তাকে একটু অভিযোগের সুরেই বলেছিলাম “আমার ৭ বছরের মেয়ে সবকিছুতেই নিজের ওপিনিয়ন দেয়, যেটা আমার জন্যে বেশ অস্বস্তিকর ব্যাপার। ” তখন মিস লং যথারীতি মুখভরা হাসি নিয়ে বল্লেন “আমরা তো চাইই বাচ্চাদের ওপিনিয়ন থাকুক! তুমি নিশ্চিন্তে এই ব্লেইম আমাদের উপর ছেড়ে দিতে পারো, আমি এতে খারাপ কিছু দেখছিনা। ” বুঝলাম বেশি তর্ক করে লাভ হবেনা, এরা হয়তো আমাকে পাগল-টাগল ভাবতে পারে। যাহোক, স্কুলের এক কন্সাল্টেন্ট এসেছেন বিদেশ থেকে।

অন্যান্য অনেক কাজের মধ্যে তাঁর কাজ অভিভাবকদের সাথে কথা বলা। মিস লং আমার সাথে এই কনসাল্টেন্টের ১০ মিনিটের এক সেশন জুড়ে দিলেন। ওনার সাথে কথা টথা বলে আমি কিছুটা বুঝতে পারলাম ওনাদের বাচ্চা মানুষ করার ধরণ কিছুটা না-বুঝেও ওনার মতই সদাহাস্যমুখে, মাথা নেড়েচেড়ে বুঝার ভান করলাম। আজকে আপার সাথে এই নিয়ে কথা বলছিলাম। আজকাল বাচ্চাদের বোঝা খুবই দুরূহ।

কিছু বিষয় নিয়ে উনি পড়াশুনা করতে বল্লেন (সত্যি, বাচ্চাদের “বোঝার” জন্যে আজকাল আবার পড়াশুনা করা লাগে, আমার আম্মু-আব্বু কত্তো লাকি ছিলেন, তাইই ভাবি বসে এখন)। তেমন একটা বিষয় নিয়ে পড়তে গিয়ে আমি একটা বেশ উপকারী প্রবন্ধ পড়লাম। আমি লিঙ্কটা এখানে দিয়ে দিচ্ছি। যদি চান তো আমি বাংলায় তর্জমাও করে দিতে পারি। খুবই অসাধারণ লেখা।

প্যারেন্টিং নিয়ে আমার ধ্যানধারণার ব্যাপক পরিবর্তন আসলো এই লেখা পড়েই। আমি বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম। আমি তাই ভাবলাম আপনারা যারা অভিভাবক কিংবা হবু-অভিভাবক তাঁদেরও এই লেখা পড়া উচিৎ। আমার ফেইসবুকেও এই লিংক শেয়ার করেছি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.