আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের হুমকি একেবারে উৎখাত হয়ে যায়নি-ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

গত ৪ মে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা নিরাপদেই আছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর উচ্চপর্যায়ের ৭ জন নেতা ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশপ্রেমিক মুসলিম ও হিন্দুদের হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-৭৫)।

বাংলাদেশ সরকারের হিসাব মতে, এই যুদ্ধে ত্রিশ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছে। এই দুঃখজনক অধ্যায়ের বিচারের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে সরকারের সদিচ্ছাই প্রকাশ পায়। এতে দেখা যায়, সরকারকে ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা ব্লাকমেইলের শামিল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিচার বিঘ্নিত করছে। এ কারণে বাংলাদেশ ইসলামী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যোদ্ধা হিসেবে অহংকার করতে পারে। সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের হিসাব মতে, ২০০৮ সালের শেষদিকে হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের পর মাত্র ৯ জন প্রাণ হারিয়েছে।

এসব হল চার বছর আগের কথা। সন্ত্রাসীদের দাবি এখানে প্রাণ হারিয়েছে ৫৬ জন। বাংলাদেশের সন্ত্রাসী গ্র“প হরকাত-উল-জিহাদ আল-ইসলামী (বা হুজি-বি) ভারতে বড় ধরনের একাধিক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের কারণ হল দেশটি জাতিগতভাবে এই অশুভ শক্তির মোকাবিলা করতে পেরেছে। পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ এটাকে শুধু বিশ্বাস হিসাবে দেখেনি।

কোনও বৈপরিত্য ছাড়াই বাংলাদেশের সকল মানুষ মুসলমান ও বাঙালি হিসেবে গর্ব অনুভব করে। আত্মবিশ্বাসই দেশটিকে সে ক্ষমতা দিয়েছে। উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার এমন ক্ষমতা অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে নেই। এভাবেই দেশটির উন্নয়ন ঘটছে। গত ৫ বছরে প্রতি বছর ৬ শতাংশ হিসেবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।

ভারতে সমাজতান্ত্রিক যুগের শ্রম আইন নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, সেসব পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বমানের পোশাক শিল্প দাঁড় করিয়েছে এবং সেখানে প্রায় ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন লোক কাজ করছে। তারা এইচঅ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট এবং টমি হিলফাইজার কোম্পানিকে পোশাক সরবরাহ করছে। প্রস্তুত পোশাকের রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে অর্থাৎ চীনের পরেই। বাংলাদেশ যদি এ অবস্থা ধরে রাখতে পারে তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যেকোনও দেশের চাইতে সস্তায় শ্রমিক পাওয়া এ দেশটি চীনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে। গোল্ডম্যান সাচ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ‘নেক্সট ১১’ দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে তালিকাভুক্ত করেছে।

গেল কয়েক বছর প্রতিবেশী বড় দেশটির সঙ্গে স্নায়ুবিক যুদ্ধের পর বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি বাস্তববাদী এবং ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করে এনেছে। দেশ দুটি ইতোমধ্যেই সীমান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছে এবং ব্যবসা শুরু করেছে। ট্রানজিট চুক্তি উত্তর-পূর্ব ভারত ও সদ্য গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটা বার্মার করিডোর হিসেবে বাংলাদেশকে গতিশীল উন্নয়নের দেশে পরিণত করবে। বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতিবিদ মমতা ব্যানার্জির কারণে দুদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে পানি চুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।

এই চুক্তির বিষয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা যদি হয় তাহলে এতদঞ্চলে নতুনভাবে শান্তির পথ প্রশস্ত হবে। তবুও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের বিপরীত। এতে পাশ্চাত্যের দিকে তাকিয়ে বলা তাদের নির্জোট কথাটি আর ঢেকে থাকে না। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।

এতে ইসলামিক মৌলবাদ ও হাটু-কাঁপানো বিরোধী ভারতের দিকে অনেকটা থুতু মারার মতোই দেখায়। বোঝা যায়, বাংলাদেশ কদাচিৎই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের খালেদা জিয়া রাজনীতিতে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বর্তমান সময়ে যা আরও প্রবল হয়ে উঠেছে। গত মাসে একজন নেতা গুম হয়ে যাওয়া নিয়ে বিএনপি সোচ্চার হয়ে উঠেছে।

তারা অভিযোগ করছে এটা ক্ষমতাসীন দলই করেছে। গত মাসে তারা গোটা দেশ অচল করে দিয়ে চারবার হরতাল দিয়েছে। বিএনপির এই নেতা কীভবে গুম হলেন তা কেউ বলতে পারছেন না। এভাবে অব্যাহত গুম থেকে বোঝাই যাচ্ছে, আইনশৃংখলার চরম অবনতি হয়েছে। হয় অতিরিক্ত বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ হচ্ছে বা কেউ বলতে পারছেন না তারা ঝুঁকিমুক্ত।

কোনওটাই উৎসাহব্যঞ্জক নয়। ইতোমধ্যে ইসলামপন্থীদের হুমকি অনেকটা কমে এসেছে। কিন্তু একেবারে উৎখাত হয়ে যায়নি। বিএনপি আছে দোদুল্যমানতায়। ইসলামপন্থী শক্তিগুলোর প্রতি তাদের একটা বেদনাদায়ক অনুভূতি রয়েছে।

এই ইসলামপন্থীরাই পাকিস্তানকে তলিয়ে ফেলছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ২০০৮ সাল থেকে নিজেদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য কৃতিত্বের দাবিদার হতে পারে। তবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে সাড়ে ৩ বছরের গণতন্ত্রচর্চা বহাল থাকবে। সেনাবাহিনী প্রথম ক্ষমতা দখল করে ১৯৭৫ সালে। তারপর এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

এসব এখন পেছনের ঘটনা। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলে যে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তারই উত্তরসূরী এবার এসে দেখলেন তিনি কত বড় ভুল মন্তব্য করেছিলেন। বিস্তারিত_ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.