আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে স্পাইডারম্যান!!!

আমরা করবো জয় দ্যা অ্যামেজিং স্পাইডারম্যানের দুর্দান্ত সাফল্যের পর স্পাইডারম্যান এখন বাংলাদেশে! সত্যি সত্যি স্পাইডারম্যান চলে এসেছেন। যেসব দেশে দ্যা অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান মুক্তি পেয়েছে তার প্রত্যেকটি দেশে নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করতেই তার বাংলাদেশে আসা। বাংলাদেশে আসা স্পাইডারম্যানের আছে দীর্ঘ প্রস্তুতি। রীতিমতো বাংলা ভাষা শিখেই এসেছেন যাতে কোন ধরনের সিমেন্টিক সমস্যা না হয় কিন্তু সমস্যা একটাই। এদেশে স্পাইডারম্যান একাই এসেছেন তাও আবার এক পোশাকেই, তার বিখ্যাত স্পাইডারম্যানের পোশাকে।

সঙ্গে আনেননি কাউকেই। ঢাকায় চলে এসেছেন স্পাইডারম্যান! এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিংএ ছুড়ে দিচ্ছেন তার সুতা! সুতা ধরে ঝুলে আরেক বিল্ডিংএ! সেই বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিংএ! স্পাইডারম্যানের ধারণা ছিল তাকে এভাবে চলতে দেখে সবাই তাকে দেখার জন্য উপরে তাকাবে। হা হয়ে দাড়িয়ে তাকে দেখবে। কিন্তু নাহ! সবাই এতো ব্যাস্ত সকালবেলায়। বড়রা যে যার কাজে যাচ্ছে, বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে।

এতো সময় কই? উল্টো স্পাইডারম্যানেরই নিচে তাকিয়ে খুঁজতে হচ্ছে কে কে তার দিকে তাকাচ্ছে। দুই একজন যে তাকাচ্ছেনা তা কিন্তু নয়। তাকাচ্ছে কিন্তু বিরক্তির সাথে আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে নিজের রাস্তায়। ভাবখানা এমন এমনি কিভাবে কাজে পৌছাবো তার ঠিক নেই তার উপর তুমি কোন জায়গার কোন স্পাইডারম্যান এখন বান্দরের মতো উৎপাত করছো। এর মধ্যেই নিচে একটা জায়গায় চোখ পড়লো স্পাইডারম্যানের।

মানুষের লম্বা ভীর। কি ব্যাপার? এতো বড় লাইন কিসের? দেখা দরকার। চলে আসলেন মিরপুরে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মাঠে ঢোকার বিশাল লাইন। এতো বড় লাইন কিন্তু কারো কোন চিন্তা নেই।

সবাই খুশি। অবাক হলেন স্পাইডারম্যান। ভুলটা এখানেই করে আপনি। স্পাইডারম্যান মোটেও দর্শকের লাইন ধরার ধৈর্য দেখে অবাক হননি। তিনি অবাক হয়েছে লাইনে থাকা বেশিরভাগ দর্শকের গালে আঁকা পাকিস্তানি পতাকা! আজব ব্যাপার! লাল সবুজের পতাকাও আছে কিন্তু চাঁদ তারার পতাকাই তার কাছে বেশি মনে হলো।

তবে কি তিনি ভুল করে পাকিস্তানে চলে আসলেন নাতো? সর্বনাশ! কে জানে কোথা থেকে বোম উড়ে আসে! আর এক মুহূর্ত থাকা যাবেনা! তাড়াতাড়ি বের হচ্ছেন দর্শকের ভিড় ঠেলে। ‘ওই মিয়া, ওই! লাইনে খারান। আমরা দাঁড়ায়া আছি না? লাইনে খারান। ’ লাইনে দাড়িয়ে থাকা কেউ একজন বললেন। স্পষ্ট আঞ্চলিক বাংলা ভাষায়।

বুঝলেন তিনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। কিন্তু কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারলেননা কেন বাংলাদেশের থেকে পাকিস্তানি পতাকা বেশি। এখানে আসার আগেই শুনেছেন এদেশের মানুষ বেশ অতিথিপরায়ণ। কে জানে এটাও হয়তো তাদের কোন আতিথিয়তা। কিন্তু স্পাইডারম্যান তো খেলা দেখতে আসেননি।

এখানে সময় নষ্ট করা যাবেনা। সিনেপ্লেক্স বলে একটা সিনেমা হল আছে। যেখানে তার ছবি দেখাচ্ছে। সিনেপ্লেক্সেই যাবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু বড্ড তেষ্টা পেয়েছে।

একটু গলা ভেজানো দরকার। সামনেই চোখে পড়লো একটা শরবতের দোকান। রাস্তার পাশেই। একটাই গ্লাসে একেকজন কে শরবত দিচ্ছেন দোকানি। ‘৫ টাকা, ৫ টাকা, ৫ টাকা।

’ খুব সম্ভব শরবতের দাম বলছেন দোকানি। স্পাইডারম্যান চিন্তা করছেন শরবত খাবেন কিনা। গ্লাস মোটেও পরিষ্কার লাগছেনা। এর মধ্যেই দেখলেন এক লোক শরবত মুখে দিয়েই হাঁচি দিলেন গ্লাসে ভিতরে। আর দেখতে ইচ্ছা করলোনা।

সামনে এগুতেই দেখলেন একটা বিল্ডিংকে ঘিরে বেশ ভিড়। কি ব্যাপার? খেয়াল করে দেখলেন বিল্ডিংএ আগুন ধরেছে! একটুও দেরি করলেননা। ছুড়ে দিলেন তার স্পাইডারের সুতা! সুতা ধরে চলে গেলে বিল্ডিং এর ভিতরে। ‘ওই দেখেন ভাই, ফায়ার সার্ভিসের লোক চলে এসেছে সময়মতো। ’ পাশে দাড়িয়ে থাকা একজন কে বললেন আরেকজন।

তার সাথে দুটি বাচ্চা। ‘আব্বু, উনি ফায়ার সার্ভিসের লোক নয়। উনি হচ্ছেন দ্যা অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান 3D। কিন্তু উনি এখানে কেন? উনার তো সিনেপ্লেক্সে থাকার কথা। ’ ‘বুদ্ধু, এখন সিনেপ্লেক্সে কেন থাকবে? সিনেপ্লেক্সে থাকবে শুধু সিনেমার সময়।

অন্য সময় তো বাইরেই থাকবে। ’ ‘চুপ, কোন কথা না। দেখো। ’ লোকটি বাচ্চাদের চুপ করতে বললেন। বের হয়ে আসলেন স্পাইডারম্যান।

সাথে দুটি বাচ্চা। উপস্থিত জনতা হাত তালি দিয়ে স্পাইডারম্যানকে স্বাগত জানালো। ‘ভাই, আপনি কি ফায়ার সার্ভিসের লোক?’ স্পাইডারম্যান লোকটির দিকে তাকালেন। মনে পড়লো ভিতরে আরও কয়েকজন মানুষ আছে। কোন কথা না বলে ছুড়ে দিলেন তার সুতা।

মুহূর্তের মধ্যেই ফিরে আসলেন আরও দুইজনকে নিয়ে। এভাবে আরও কয়েকবার ভিতরে গেলেন। সবাইকে নিরাপদে ফেরত নিয়ে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির সাইরেনের শব্দ শুনলেন। তাড়াহুড়া করে গাড়ি থেকে নামলেন কর্মীরা। ‘আরে, স্পাইডারম্যান!’ দুই তিনজন কর্মী ছুটে আসলেন স্পাইডারম্যানের দিকে।

‘ভাই, আমার বাচ্চা আপনার খুব বড় ভক্ত। অনুগ্রহ করে যদি একটা অটোগ্রাফ দিতেন। ' স্পাইডারম্যান হাসলেন। লোকটির কাছ থেকে কলম নিয়ে অটোগ্রাফ দিতে যাবেন ততোক্ষণে বাকিরা থাকে ঘিরে ধরেছে। ‘ভাই, আমাকে একটা।

’ ‘ভাই, আমাকে একটা অটোগ্রাফ দেন ভাই। প্লিজ’ মানুষের চাপাচাপিতে অবস্থা থারাপ স্পাইডারম্যানের। ছুড়ে দিলেন তার সুতা! মুহূর্তেই উধাও হয়ে গেলেন স্পাইডারম্যান! চলে আসলেন মিরপুর ১০ নাম্বার বাস স্ট্যান্ডে। যাক বাবা। মানুষ গুলোকে তো বাচানো গেলো।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন স্পাইডারম্যান। সিনেপ্লেক্সে যাবেন। পকেট থেকে সিনেপ্লেক্সের ঠিকানা বের করলেন। বসুন্ধরা সিটি, পান্থপথ। কয়েকটা সিএনজি দাড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে।

স্পাইডারম্যান এগিয়ে গেলেন। ‘যাবেন? বসুন্ধরা সিটি, পান্থপথ’ ‘না, এতো কাছে যাবোনা। ’ এধরনের উত্তর আশা করেননি স্পাইডারম্যান। ‘ভাই, কই যাবেন? এদিকে আসেন। ’ আরেকজন সিএনজি চালক ডাকলেন।

‘বসুন্ধরা সিটি, পান্থপথ। ’ ‘যাবো, কিন্তু মিটারে যা উঠবে তার থেকে ৩০ টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে। ’ অবাক ব্যাপার। কিছুটা দ্বিধায় পরে গেলেন স্পাইডারম্যান। আরও দুই একজন সিএনজি ওয়ালার সাথে কথা বললেন।

কেউ চায় ২০০ টাকা কেউবা ১৫০। ঠিক করলেন বাসেই যাবেন। এতো মানুষ তো যাচ্ছে। কিন্তু বাসে চড়তে যেয়েও অবস্থা খারাপ। মানুষ জন ঝুলছে।

আপনার মনে হতে পারে স্পাইডারম্যান তো তার সুতা ধরে ঝুলে ঝুলেই যেতে পারেন। কিন্তু ভুলে যাবেননা। স্পাইডারম্যান বাংলাদেশে নতুন। রাস্তা ঘাট সব কিছুই তার অচেনা। এছাড়া অবশ্য আরেকটা কারনও আছে।

তা হচ্ছে এভাবে অযথা চলাচল করে মানুষকে চমকে দিতে চাননা স্পাইডারম্যান। এমনকি সাধারণ পোশাকেই তিনি আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু যেহেতু এক কাপড়ে আসছেন কম সময়ের জন্য, যদি সুতার সাথে চলাচলের প্রয়োজন পড়ে? তখন? সাধারণ পোশাকে যে তিনি ওভাবে চলতে পারেননা তা কিন্তু নয়। চলতে পারেন কিন্তু স্পাইডারম্যানের পোশাকেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আর করবেন নাই বা কেন? তিনি যে স্পাইডারম্যান! বহু কষ্টে একটা বাসে বানরের মত ঝুলে কাওরান বাজার আসলেন স্পাইডারম্যান। এভাবে ঝুলে আসতে মাঝে মাঝে নিজেই ধাঁধায় পরে গেলেন, তিনি কি আসলেই স্পাইডারম্যান? নাকি মাঙ্কিম্যান? বিশাল ট্রাফিক জ্যামে আটকা পরে অস্থির।

কিন্তু এভাবেই থেমে থেমে আসতে হলো তাকে। বাস থেকে নামার সময় বাম পা আগে দিয়ে নামতে হলো পিটার পার্কার ওরফে স্পাইডারম্যানকে। একটু এগোতেই চোখে পড়লো বসুন্ধরা সিটি। আসার আগে ইন্টারনেটে বসুন্ধরা সিটির ছবিও দেখে এসেছেন বলে চিনতে অসুবিধা হলোনা। কিন্তু সিনেপ্লেক্সের সামনে এসে স্পাইডারম্যান চোখে অন্ধকার দেখলেন।

বিশাল লম্বা লাইন। সবাই তার দ্যা অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান 3D দেখার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে। ‘এক্সকুইজ মি। নেক্সট শো কয়টায়?’ লাইনে দাড়িয়ে থাকা একজনকে জিজ্ঞাসা করলেন মাকড়সা-মানব। ‘দুপুর ২টায়।

’ ঘড়ি দেখলেন স্পাইডারম্যান। ‘কিন্তু এখনই তো বাজে ১ টা ৫০। টিকিট পাওয়া যাবে?’ ‘কেন যাবেনা? অবশ্যই যাবে। তবে কাল অথবা পরশুর। আজকের কোন টিকিট নেই।

’ ‘এখানে যারা দাড়িয়ে আছে তারা সবাই কালকের টিকিট কাটছেন?’ ‘জি না। কেউ কেউ ৩-৪ পরের টিকিটও কাটছে। ’ কি বলবে বুঝতে পারলেননা স্পাইডারম্যান। এতো সময় নেই। সামনের বার এসে দেখা যাবে।

কিছু খাওয়া দরকার। যথেষ্ট ক্ষুধা পেয়েছে। এখানে খাবে নাকি বাইরে কোথাও? নাহ, এখানে না। বাইরেই খাবে। বসুন্ধরা সিটির বাইরে আসলেন স্পাইডারম্যান।

এখন হোটেলে ফিরতে হবে। দু পা এগোতেই কিছু মেয়ে তাকে ঘিরে ধরলো। শাড়ি পড়া সবাই। হাতে কাঠের বাক্স। নিশ্চই অটোগ্রাফ নিতে এসেছে।

মনে মনে খুশিই হলেন স্পাইডারম্যান। ‘এ ভাই, এই গরীব বইন রে কয়টা টাকা দে। দেখ ভাত খাইনা অনেক দিন। ’ ওয়ালেট বের করতে পকেটে হাত দিলেন স্পাইডারম্যান। আশ্চর্য! ওয়ালেট টা নেই।

‘আমার ওয়ালেট টা হারিয়ে ফেলেছি। ’ আরও কয়েকটা মেয়ে চলে আসল। ঘিরে ধরলো স্পাইডারম্যানকে। ‘ভাই টাকা দে। আল্লাহ তোরে অনেক দেবেনে।

’ ঘাবড়ে গেলেন স্পাইডারম্যান। ‘বিশ্বাস করুন। আমার টাকা হারিয়ে ফেলেছি। ’ ‘এ ভাই, দে নারে। এই বইন কিছু খায়নি সকাল থেকে।

’ সর্বনাশ! এরা তো বিস্বাসই করছেনা। এখন? সুতা ছুড়ে দিলেন স্পাইডারম্যান। সুতা আঁকড়ে মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেলেন বেদেনীদের চোখের সামনে থেকে। হা করে তাকিয়ে থাকলো বেদেনীরা। স্পাইডারম্যান ঝুলে ঝুলে যাচ্ছেন।

এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিংএ। হঠাৎ এক ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বললেন। যাক বাবা, ভালোই হলো। এবার ওয়ালেট হারানো নিয়ে একটা কমপ্লেইন দেওয়া যাবে। হাফ ছাড়লেন স্পাইডারম্যান।

‘এই যে মিয়া, সমস্যা কি আপনার? এইভাবে লাফাইতেসেন কেন?’ ‘আমি স্পাইডারম্যান...আমিতো এভাবেই...’ ‘তা আপনি স্পাইডারম্যান ই হোন বা ম্যানহোল-ই হোন। এইভাবে চলতেসেন, এইটা কেমন গাড়ি? লাইসেন্স আছে?’ ‘লাইসেন্স?’ ‘আলবৎ। লাইসেন্স বাইর করেন নয়তো কিছু ছাড়েন। কিছু ছাড়লে আমিও আপনেরে ছাইড়া দেই। ’ ‘হ্যা হ্যা।

অবশ্যই!!’ সুতা ছাড়লেন স্পাইডারম্যান। মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেলেন বিশ্ব বিখ্যাত এই মাকড়সা মানব। ছবিঃ অনির্বাণ বিশ্বাস  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.