আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেকার রাত

একা একা হাঁটছি। আচ্ছা কয়টা বাজে এখন? হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালাম। মাত্র পৌনে ১ টা। এখন একটা জিনিস উঠেই গেছে। এখন কেউ হাতে ঘড়ি পড়ে না।

মুঠোফোন নামক যন্ত্রটার ব্যাবহার বেরে যাওয়ার পর মানুষের আর হাতে ঘড়ি পড়ার কোনো দরকারই পড়ে না। আচ্ছা কি সব চিন্তা করছি। মানুষ হাতে ঘড়ি পড়লেই আমার কি আর না পড়লেই আমার কি। অলস মানুষের চিন্তা শুধু আজেবাজে জিনিসের দিকেই যায়। আমার চেয়ে অলস আর কে আছে।

কোনো কাজকর্ম নাই। আগে চাকুরির জন্য কিছু চেষ্টা তাও করতাম। কিন্তু এখন তাও আর করছি না। এমন একখানা ভাব নিয়ে চলছি যে চাকরি আমার কাছে হেটে এসে এসে বলবে যে আমাকে বরণ কর । কি করব এখন! বাসায় ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না।

বাসায় ফিরে যাওয়ার পরই হয়ত মা আমাকে সংসারের নানা অসুবিধার কথা বলবে। হয়ত বলবে যে তোর ভাইয়া আর একা পারছে না। বাবা, ছোট একটা কিছু হলেও কর। ভাল লাগে না। এর চেয়ে এই নির্জন রাস্তায় একা একা হাঁটাও অনেক ভাল।

অন্তত কিছু সমস্যা থেকে তো নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি। ভেবে অবাক হই যে আমি এখন সমস্যা থেকে দূরে থাকি। সমস্যার মুখোমুখি হতে ডরাই। এই আমি কি এমন ছিলাম? কই না তো, এমন তো ছিলাম না। সারা রাত আমার বাইরে থাকার ইচ্ছা টা ঠিক আছে।

কিন্তু সমস্যা হল পকেট তো একবারে ফাঁকা। দুপুরে ও কিছু খাওয়া হয় নাই। রাত এও কি তাহলে না খেয়েই থাকতে হবে। অবশ্য এইটা ও আমার মত ছেলেদের জন্য খুব বড় সমস্যা না। বেকারদের জন্মই হয় না খেয়ে থাকার জন্য।

কিন্তু তার চেয়েও বড় সমস্যা হল কিছুক্ষন আগে দেখলাম প্যাকেটে একটা মাত্র সিগারেট বাকি আছে। এই জিনিস ছাড়া একটা নির্জন রাত পার করা অসম্ভব ব্যাপার। এখন একটাই করনিয় আছে। ইফাদের কাছে যেতে হবে। এস. এম. হল থেকে ইফাদকে বের করতে হবে।

ইফাদের পড়াশুনা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেলেও আমার মত বেকার হওয়ায় এখনো তাকে হলেই পড়ে থাকতে হচ্ছে। এখন ইফাদকে বের করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ওকে বের করলে ৩ টা লাভ হবে। প্রথমত, রাতের সিগারেটের যোগান হবে। দ্বিতীয়ত, পলাশীর মোড় থেকে চাইনিজ নামক অতি উৎকৃষ্ট খাবার খাওয়া যাবে।

তৃতীয়ত, সারা রাতের জন্য আরেকজন বেকার পাওয়া যাবে। যেহেতু ইফাদের কাছেই যাচ্ছি তাই সাহস করে শেষ সিগারেটটা ধরিয়েই ফেললাম। খালি পেটে ও যে কি ভাল লাগল। হাতে জলন্ত সিগারেটটা নিয়ে হাটতেও ভাল লাগতেছে। আচ্ছা এমন কেন হয়ে গেলাম।

এই আমি ই তো এক সময় খুব স্বপ্ন দেখতাম। এই আমিই তো এক সময় বন্ধুদেরকে নিয়ে কোন পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকার বাইরে যেকোনো জায়গায় ঘুরতে চলে যেতাম। এই আমি তো এক সময় ঘরে ঢুকেই মাকে গিয়ে দৌড়ে জড়িয়ে ধরতাম। মা, আমাকে কপট রাগ দেখিয়ে বলত, “কি হচ্ছে এই সব। এতো বড় হয়েছিস, তারপর ও ছেলেমানুষী গেল না।

“ এই আমিই বাবার সাথে টিভিতে খেলা দেখার সময় আটঘাট বেধে বাবার সাথে ঝগড়া করতাম। ভাইয়া বাসায় আসলেই শুরু করত আমারে টিটকারি মারা। আমার কোন বান্ধবীর ফোন ভাইয়ার সামনে আসলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা মিচকি হাসি দিত। কোথায় আমার সেই দিনগুলি। খোদা, তোমার কাছে চিৎকার করে সেই দিনগুলি ফিরত চাইতে ইচ্ছা করছে।

কিন্তু কেন জানি মনে হয় আমার মত অভাজনদের জন্য তোমার দুয়ারটা হয়ত সব সময় ই বন্ধ। আসলেই সেই দিনগুলির কথা খুব মনে পড়ছে। তোমার কাছে যদি চিৎকার করে সব ফিরত চাই তুমি কি আমার আগের দিনগুলি আমাকে ফিরত দিবে??? ইফাদকে ফোন করেছিলাম কিছুক্ষন আগে। এস. এম. হল এর গেটে দাঁড়িয়ে আছি। ওই যে ইফাদকে দেখা যাচ্ছে।

হাতের সিগারেটটি সেই পরিচিত ভঙ্গিতে টানতে টানতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।