আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরিবের ঘরে হাতির পারা । গোমস্তার পিছু পিছু হাজির পেয়াদা।

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল এক সময় কালা জাহাঙ্গির টাইটেল পাওয়া মার্কিন রাস্ট্রদুত একটি ভবিষ্যতবানী করেছিল। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে নাকি তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা দখল করে নেবে। যখনকার কথা বলছি, তখন বিগত জোট সরকারের আমল। সরকার হাচি কাশি শুনলেও বিরোধী দল (আঃলিগ) জঙ্গি হরতাল দিচ্ছে। ওদিকে আবার মইত্যা মাহাফুইজ্যা সহ বিশেষ সুশিল সমাজ কখনও চুপিচুপি কখনও প্রকাশ্যে ফিরিঙ্গিদের নিয়ে ফিসফাস শুরু করেছে।

আনোয়ার চৌধুরি সহ বাকি ফিরিঙ্গি দেশের রাস্ট্রদুতরা টুইসডে গ্রুপ বানিয়ে প্রকাশ্যেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন রাজনীতি নিয়ে উপদেশ বানী বিতরণ করছে। রাজনৈতিক বিচারে আমরা একটি আত্মসম্মানবোধহীন তৃতীয় শ্রেণীর জাতি বৈত নয় ! নইলে ভিয়েনা কনভেশন অনুযায়ি যেখানে এই ধরণের কার্যক্রমের কারণে পাছায় লাত্থি দিয়ে দেশ থেকে বিদায় করার কথা, সেখানে আমরা বিদেশি রাস্ট্রদুতদের কথাকে বেদ বাদ্য জ্ঞান করে মাথা ঝাকিয়েছি। সাংবাদিকরা তো আরো এক কাঠি সরেস। দেশে আলু ক্ষেতে পটল চাষ করলে কেমন হবে, সে বিষয়েও ফিরিঙ্গি রাস্ট্রদুতদের মতামত নিয়ে ছ্যাচড়ের মত ওদের পিছু পিছু ঘুরে। সেদিনের মার্কিন রাস্ট্রদুতের "ভবিষ্যতবানী" অক্ষরে অক্ষরে ঘটে যাওয়াকেই আমরা ১/১১ বলে জানি।

এর পরর পদ্মা যমুনা মেঘনা দিয়ে কত জল গড়িয়ে গিয়েছে। অবশ্য দাদাদের বদন্যতায় যতটা পানি পাওয়া গিয়েছ ততটুকুই আর কি ! বিগত সাড়ে তিন বছরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ্যের শক্তি বলে দাবিকৃত আঃ লিগের শাসনমল দেখে ভুলে যাওয়া পাবলিক কিংবা অপরিণত মস্তিস্কের আবেগি অবার্চিনরা বাকশালের ফ্যসিজমের স্বাদ পেতে শুরু করেছে। মোহমুক্তিও ঘটতে চলেছে। ফলে চাপা ক্ষোভ বাড়ছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটলে ভয়ংকর আরেকটি পরিণতি ঘটার তুমুল সম্ভাবনা রয়েছে। এই দোলাচলের মধ্যে এক সাথে মার্কিন পররাস্ট্রমন্ত্রি আর ভারতের অর্থমন্ত্রির ঢাকা সফর নতুন একটি অঘটন ঘটার পুর্বাভাস কিনা বলা মুশকিল।

এর আগে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সহধর্মিনি হিসাবে হিলারি বাংলাদেশ এসেছিলেন তাদের পারিবারিক বন্ধু ড: ইউনুসের আমন্ত্রনে। ক্ষমতার দম্ভে সেই ইউনুসকেই লাথি দিয়ে বের করে দেয়াতে হিলারি সহ মার্কিন প্রশাসনে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বেশ উস্মা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অজানা কারণে সেই উস্মা গলে জল হয়ে গিয়েছে বলেই হিলারি বাংলাদেশে আসছেন। মার্কিনিরা পৃথিবির মধ্যে সবচেয়ে কট্টরপন্থি জাতিয়বাদি বলেই পরিচিত। অন্যের ১০০ টাকা লোকসানে যদি নিজেদের ১ পয়সাও লাভ হয় তাহলে সেই রকম পদক্ষেপ গ্রহন করতে ওরা এক মুহুর্তও দেরি করে না।

তাই কোন গুরুতর লাভের কারণেই বন্ধুত্বের কথা শিকেয় তুলে হিলারি বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে দেখে করতে আসছেন, এ কথা বলা যেতে পারে। এমন কি সেই লাভ? কথায় বলে মার্কিন সংবিধান অনুযায়ি ভোটে জয়ি হয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়ে ক্ষমতাসীন হলেও আসল ক্ষমতা থাকে একটি বিশেষ গোষ্ঠির হাতে। তাদের এজেন্ডা হুবুহু বাস্তবায়ন করার জন্যই কোটি কোটি ডলার ব্যায় আর পৃথিবির জটিলতম নির্বাচনি ব্যাবস্থায় নির্বাচিতদের একমাত্র কাজ। সেই শৃংখল ভাঙ্গার মত দুঃসাহস ওদের রাজনীতিবিদদের কারো নেই। এর বাইরে পথ চলতে গিয়ে শেষ টার্মে বিল ক্লিন্টনকে বেশ অপ্রস্তত অবস্থায় পড়তে হয়েছিল।

নেহায়েৎ বিশাল জনসমর্থনের কারণে ১৪ শিকের ভেতরে যাওয়া থেকে তিনি রেহাই পেয়েছিলেন। আর বেসুরে গাইতেগিয়ে নোয়াম চমেস্কি ব্রাত্য। সাংবাদিক পিটার আর্নেটের মুলধারা থেকে ছিটকে যাওয়া, কিংবা গুন্টার গ্রাসের কোনঠাসা হওয়া, এসবই আলামত হিসাবে গ্রাহ্য করার অবকাশ রয়েছে। হিলারির কর্মতৎপরতার কারনেই মার্কিনি স্বার্থরক্ষাকারি গোষ্ঠি আরব বসন্তের ধাক্কায় পড়ে গেলেও কুপোকাৎ হয়নি। হোসনি মোবারক জামাই আদরে আছে।

মিসরে গণতন্ত্র বিহীন সামরিক সরকার গণতন্ত্র দেবো দিচ্ছি করে সময় ক্ষেপণ করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে। । ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট চামড়া বাচিয়ে নিরাপদে আছেন। বেচারা গাদ্দাফির সেই রকম সৌভাগ্য হয়নি বলেই খুনিদের হাতে মর্মান্তিকভাবে খুন হতে হয়েছে। আর বাহরাইনে তো আরব বসন্তের মৃদু হাওয়া লাগতেই, এমন কি সৌদি আরব থেকে বাহিনী ধার করে হলেও বিক্ষোভকারিদের নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে।

অথচ একই কাজ করে বাশার আল আসাদকে নিন্দিত এবং সামরিক আগ্রাসনের হুমকিতে পড়তে হয়েছে। মোদ্দা কথা সুন্দর মুখের হাসির পেছনে থাকা মানুষটি খুব সোজা কেউ নন। সেই মানুষটিই যখন গরিব বাংলাদেশে পা রেখেছেন, তার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যটিকে সোজা বলার অবকাশ নেই। মার্কিন পররাস্ট্র দফতর থেকে বলা হচ্ছে যে, দুই দেশের পারস্পরিক নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস দমন বিষয়গুলি নিয়ে "আলাপ আলোচনা" করার জন্যই হিলারির আগমন। ব্যাপারটি এমন যে, হাতির নিরাপত্তার জন্য মশকের সাথে আলোচনা।

উনাদের নিরাপত্তা মানে একান্ত উনাদেরই নিজস্ব স্বার্থের নিরাপত্তা রক্ষা। এমনি উনাদের সন্ত্রাস দমন মানে, উনাদের যা খুশি করাদের বিরুদ্ধাচারণকারিদের দমন। এত ছোট এবং দুর্বল একটি দেশ বাংলাদেশের পক্ষ্যে কি করে তাদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব? এই প্রশ্নটির উত্তর কি উনাদের জানা নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু ওই যে ! তাদের বৃত্ততর স্বার্থে তারা মশককেও দলে টানার ঔদার্য্য দেখাতে পারেন। সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর অনেকদিন এককভাবে ছড়ি ঘোরাতে পারলেও, খুব নিকট ভবিষ্যতে চীন তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতার পথে কাটা হয়ে দাড়াতে পারে।

এই আশংকা অংকুরেই ধবংস করার লক্ষ্যে চীনকে বেশি বাড়তে না দেবার উদ্দেশ্যে যে দাবার ঘুটি সাজানো হচ্ছে, বাংলাদেশ তারই একটা অংশ মাত্র । আফগানিস্তানে সৈন্য মোতায়ন রেখে এবং কোটি কোটি ডলার দিয়ে শাসন ক্ষমতার নেপথ্যে থাকা পাকিস্থানি বাহিনীকে সোজা বা বাকা পথে নিজের পক্ষ্যেই রেখেছে তারা। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান গোষ্ঠির সাথে আতাত করে ভারত অস্ট্রেলিয়ার উপকুল থেকে শুরু করে আগফগানিস্তান পর্যন্ত রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর। ভারতের স্বপ্নকে এক্সপ্লয়েট করে ওদের গলায় কুকুরেরর পাট্টা বাধাটা তাই খুব কঠিন কিছু হয়নি। সাথে দঃ এশিয়ায় পরাশক্তির একমাত্র বরকন্দাজ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে ভারতকে একেবারে মগডলে বসানোর কাজটি তো অনেক আগেই করা হয়ে গিয়েছে।

চীনেরর এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মিত্র বার্মাতেও পশ্চিমাদের হাতের পুতুল অং সং সুচিকে মঞ্চে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বাকি রইলো বাংলাদেশ ! সাড়ে তিন বছরের কঠিন দুঃশাসনে সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে। এখন গণরোষ থেকে পিঠ বাচানোর জন্য মরিয়া আওয়ামি লীগ যে কোন শর্তেই রাজি হতে বাধ্য। এভাবে চতুর্দিক থেকে চীনকে ঘেরাও করে ফেলে কোনঠাসা করার "মহান" উদ্দেশ্য নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসাবে গরিবের ঘরে হাতির পারা।

তো প্রণব মুকুজ্জে একই সময় কেন? পুরানো আমলের ঘটনার উপর লেখা বা নির্মিত চলচিত্রে তো দেখেছেন যে গোমেস্তার সাথে পেয়াদা ঘুরে। বাংলাদেশের স্বার্থের মুখে লাথি দিয়ে হাসিনা তো ভারতের সাথে চুক্তি করে এসেছিল। কিন্তু বুকে পিঠে শত ঘা খাবার আতংকে সে সব পুর্ণ মাত্রায় বাস্তবায়ন করতে আঃ লীগ কুণ্ঠায় ভুগছে। সাথে অন্যায় অবিচার দেশদ্রোহিতা লুন্ঠন হত্যা দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে জনরোষে বেঘোরে প্রাণটা হারানোর ভয় তো রয়েছেই। তাই গোমেস্তার সাথে পেয়াদার আগমন।

যদি ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া দিয়ে খাওয়া যায়, ক্ষতি কি? মানে জনগণের লাত্থি খেয়ে আঃ লিগের বিদায়ের আগেই যদি নিজের কাজটা হয়ে যায়। গোমেস্তা আর তার পেয়াদা কতটা সফল হতে পারবে, সেটা নির্ভর করছে আমরা দেশপ্রেমের পরিক্ষায় কতটা সফলভাবে উত্তির্ণ হতে পারবো সেটার উপর।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।